আমাদের কথা

আমাদের শরীরে লেপটে আছে আদিগন্ত কবিতা কলঙ্ক । অনেকটা প্রেমের মতো । কাঁপতে কাঁপতে একদিন সে প্রেরণা হয়ে যায়। রহস্যময় আমাদের অক্ষর ঐতিহ্য। নির্মাণেই তার মুক্তি। আত্মার স্বাদ...

কিছুই তো নয় ওহে, মাঝে মাঝে লালমাটি...মাঝে মাঝে নিয়নের আলো স্তম্ভিত করে রাখে আখরের আয়োজনগুলি । এদের যেকোনও নামে ডাকা যেতে পারে । আজ না হয় ডাকলে মহুল...মহুল...

ছাপা আর ওয়েবের মাঝে ক্লিক বসে আছে। আঙুলে ছোঁয়াও তুমি কবিতার ঘ্রাণ...

একক কবিতা সন্ধ্যা



kobitadiwas

তরুণ কবির কবিতা উৎসব



Card image

তরুণ কবির কবিতা উৎসব
তরুণ কবির কবিতা উৎসব ।। রজত গোস্বামী
Card image

তরুণ কবির কবিতা উৎসব
তরুণ কবির কবিতা উৎসব ।। নিরঞ্জন জানা
Card image

তরুণ কবির কবিতা উৎসব
তরুণ কবির কবিতা উৎসব ।। মোনালিসা পাহাড়ী
Card image

তরুণ কবির কবিতা উৎসব
তরুণ কবির কবিতা উৎসব ।। সৌমন্তী সিনহাবাবু
Card image

তরুণ কবির কবিতা উৎসব
তরুণ কবির কবিতা উৎসব ।। সুজিত কুমার পাল
Card image

তরুণ কবির কবিতা উৎসব
তরুণ কবির কবিতা উৎসব ।। কৌশিক দাস
Card image

তরুণ কবির কবিতা উৎসব
তরুণ কবির কবিতা উৎসব ।। আগমনী রাজ
Card image

তরুণ কবির কবিতা উৎসব
তরুণ কবির কবিতা উৎসব।। মোহিত ব্যাপারী
Card image

তরুণ কবির কবিতা উৎসব
তরুণ কবির কবিতা উৎসব ।। কবিতা সামন্ত
Card image

তরুণ কবির কবিতা উৎসব
তরুণ কবির কবিতা উৎসব ।। শান্তময় গোস্বামী

 nandalal basu

ভারতীয় শিল্প, ভাস্কর্য, স্থাপত্য, প্রাচীর ও গুহাচিত্র ইত্যাদির ইতিহাস আর বৈশিষ্ট্য শুধু অন্যতম প্রাচীনই নয়, তার একটি বিশেষ ছন্দনৈপুণ্য আছে। সেই ধারাবাহিকতা থেকে ভারতীয় শিল্পশৈলীর চর্চার বিচ্ছেদ ঘটেছিল বিশেষভাবে মোঘল সাম্রাজ্যের পর দীর্ঘদিন ব্রিটিশ শাসন ও তারই পাশাপাশি দুটি বিশ্বযুদ্ধ এবং ইউরোপের আধুনিক শিল্পের বিভিন্ন মতবাদগত আন্দোলন প্রভৃতির চাপে। পরম্পরা থেকে প্রায় ছিন্ন হয়েছিল আমাদের প্রাচীন ঐতিহ্যবাহী শিল্পের স্বাভাবিক ধ্যানধারণা ও সৃষ্টিশীলতা। তাই ভারতের আধুনিক চিত্রকলার ইতিহাস ইউরোপের তুলনায় একান্তই নবীন।

ক্ষমতার প্রতি অনুগত একটি বিশেষ শ্রেণি গড়ে তোলার উদ্দেশ্যেই ব্রিটিশরা ভারতের সমগ্র শিক্ষাব্যবস্থার ছাঁচটি তৈরি করেন। শিক্ষার এই ব্যবস্থার বিরুদ্ধে ছিলেন কবিগুরু রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর। তিনি মনে করতেন, নিজস্ব বোধশক্তির ক্ষমতাতেই মানুষ প্রকৃতি এবং শিক্ষায়তন থেকে লব্ধ বিভিন্ন ধারণাকে বা জ্ঞানকে সূত্রায়িত করতে সমর্থ। এই আগ্রহই প্রাকৃতিক, সামাজিক এবং আত্মিক, এই তিন নৈর্ব্যক্তিক পরিবেশের সঙ্গে সম্পর্ক স্থাপনে ক্রিয়াশীল এক শক্তি যা শিক্ষা বা শিল্প উদ্দীপনার সহায়ক।

১৯০১ সালে পূর্ব ভারতের শান্তিনিকেতনে কবি যে বিদ্যালয় স্থাপন করেছিলেন, পরবর্তী সময়ে ১৯১৯ সালে সেই বিদ্যালয় একটি উদারমনা বিশ্ববিদ্যালয়ে উন্নীত হয়। এই বিশ্ববিদ্যালয়ের লক্ষ্য ছিল কর্মমুখী বাজার-চলতি শিক্ষার বিপ্রতীপে সব মানবিক দক্ষতার বিকাশমুখী শিক্ষা। সেই প্রথম রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর প্রকৃতির কোলে সৃজনশীল ক্ষমতা বিকাশের উপযোগী একটি পরিবেশ সহায়ক বিশ্ববিদ্যালয় ভারতীয় ছাত্রছাত্রীদের সামনে উপস্থাপিত করলেন। একেবারে নিজস্ব আর্থিক ক্ষমতায় বলীয়ান এই বিশ্ববিদ্যালয় ভারতবর্ষে সেই প্রথমবার কলা অন্যান্য বিভাগের সঙ্গে শিল্পকলাকেও উচ্চতর জ্ঞানের একটি বিষয় হিসেবে স্বীকৃতি দিয়েছিল। তাঁর খ্যাতনামা ভাইপো শিল্পী অবনীন্দ্রনাথ ঠাকুরের সম্ভাবনাময় ছাত্র, তরুণ চিত্রকর নন্দলাল বসুকে তিনিই ১৯১৯ সালে শান্তিনিকেতনে নিয়ে আসেন। সেখানকার নান্দনিক পরিবেশের বিকাশ এবং শিল্প বিভাগ, যার নাম তিনি দিয়েছিলেন ‘কলাভবন’ অর্থাৎ শিল্পের আবাসগৃহ, সেই কলাভবন সংগঠনের দায়িত্ব দেন নন্দলালকে। কলাভবনের ভ্রূণাবস্থায় নন্দলাল সেখানে যোগ দেন। তাঁর দীর্ঘ সময়কালে কলাভবন ভারতের সবচেয়ে প্রাণচঞ্চল একটি শিল্পকেন্দ্র হয়ে উঠেছিল।

পরম্পরানির্ভর ভারতবর্ষের হস্তশিল্পের ক্ষেত্রে দরকার ছিল নতুন অভিমুখ, নতুনতর মাত্রা। আচার্য নন্দলালের দৃষ্টিভঙ্গিতে, প্রতিটি হস্তশিল্পী একজন স্ব-নিযুক্ত শ্রমিক ও তার স্টুডিও বা কর্মস্থল একটি কারখানা। ঔপনিবেশিক ও পরাধীন ভারতবর্ষের আমজনতার সবচেয়ে বেশি প্রয়োজন ছিল এই আত্মপ্রত্যয় ও স্বনির্ভরতা।

ঘটনাচক্রে শান্তিনিকেতনে প্রথমে কলাবিভাগে ছাত্রীদেরও ভর্তি করা হতো এবং শিক্ষকতার কাজেও মহিলাদের নিয়োগ করা হতো। নতুন অভিমুখ এবং আরও বেশি কাজের সুযোগ সৃষ্টির জন্য সেই প্রথম কোনো কলা শিক্ষায়তনের পাঠক্রমে সূচিশিল্প এবং হস্তচালিত তাঁত অন্তর্ভুক্ত হলো এবং শান্তিনিকেতনের গ্রাম্য হস্তশিল্পীরাই গ্রাম্য নকশা, নানা কর্মপদ্ধতি এবং প্রয়োগ-শৈলী সম্পর্কে প্রশিক্ষণ দিত। শিল্প, জীবনের সঙ্গে যুক্ত হওয়ার মানুষের যে স্বাভাবিক তৎপরতা তাকেই পাঠক্রমের শীর্ষে স্থান দেওয়া হয়েছিল।

কর্মজীবনের শুরুতে নন্দলালের ঝুলিতে পরিপূর্ণ  পাটনা, রাজগির, বুদ্ধগয়া, বারাণসী, দিল্লি, আগ্রা, মথুরা, বৃন্দাবন, 
এলাহাবাদ ভ্রমণ সহ উত্তর ভারতের শিল্প ঐতিহ্যের অভিজ্ঞতা। প্রায় একই সময়ে পুরী থেকে কন্যাকুমারিকা পর্যন্ত প্রায় সমগ্র দক্ষিণ ভারত তিনি ভ্রমণ করেন এবং কোনারকের সূর্য মন্দির তাকে প্রভাবিত করে। ১৯২১ সালে তিনি বাগ গুহার নষ্ট হয়ে যাওয়া চিত্রগুলি পুনরুদ্ধারের দায়িত্ব নেন আবার তিনি ভগিনী নিবেদিতার " হিন্দু-বৌদ্ধ পুরাকাহিনী " বইটির অঙ্গসজ্জা করেন এবং ঠাকুর বাড়ির চিত্রকলার তালিকা তৈরিতেও সাহায্য করেন। প্রসঙ্গত ,
ভারতীয় সংবিধানের সচিত্র মূল সংস্করণটিও নন্দলাল বসু তাঁর নিজস্ব স্বকীয়তায় অলংকৃত করেন। শেষ জীবনে নন্দলাল বসু তুলি-কালি এবং ছাপচিত্রের প্রতি বিশেষ মনোযোগী হন এবং এক্ষেত্রে সাফল্যের পরিচয় দেন।

আমাদের অনেকের বালকবয়সের অবশ্যপাঠ রবিঠাকুরের সহজপাঠ। লেখাগুলির পাশাপাশি
সাদাকালো ছবিগুলির এক অদ্ভুত অদম্য আকর্ষণ আজও আমাদের মনের মধ্যে ঘুরে বেড়ায়। এই ছবিগুলো নন্দলালের আঁকা। সেই অর্থে তিনি আমাদেরও অক্ষরের সাথে প্রথম ছবি দেখার শিক্ষাগুরু।

শান্তিনিকেতনের বিশ্বভারতীর বিবেচনায় ভারতীয় প্রেক্ষাপটে হাতের ভাষা অনেক বেশি গুরুত্বপূর্ণ। হাতে তৈরি শিল্পের কদর বা অর্থ হলো হাতের স্পর্শে মানুষে-মানুষে ভাব-বিনিময়। ভারতের গ্রামই হলো আসলে সমগ্র দেশ। তাই গ্রামীণ শিল্পের পৃষ্ঠপোষকতার অর্থ হলো গ্রামনির্ভর ভারতীয় অর্থনীতিকে নৈতিক এবং আর্থিকভাবে সাহায্য করা। শিক্ষক নন্দলাল সমাজের একেবারে নিচের তলার বঞ্চিত মানুষের কাছ থেকেই তাঁর ভাবনা, ও উদ্দীপনা আহরণ করেছিলেন। শান্তিনিকেতনে তাঁর বত্রিশ বছরের শিক্ষক জীবন তিনি অতিবাহিত করেছিলেন। তারপরও পনেরো বছর, তাঁর মৃত্যুর আগে পর্যন্ত তিনিই ছিলেন প্রেরণার মূল উৎস। আজও তিনি ভারতীয় শিল্পীদের অনুপ্রাণিত করেন। কোন একটি ক্ষেত্রে বিশেষ দক্ষতা প্রদর্শন না করে, শিল্প ও হস্তশিল্প এবং শিল্প ও সমাজ – এদের মধ্যে গভীর আত্মিক সম্পর্ক গড়ে তোলাই ছিল তাঁর লক্ষ্য ।

শিক্ষক নন্দলাল নিজ সময়কালের পরিবেশ পরিস্থিতি সম্পর্কে সচেতন ছিলেন। তিনি মনে করতেন সমাজ-অর্থনীতির পরিবর্তিত প্রেক্ষাপটে শিল্প-শিক্ষার প্রথাগত কাঠামো একেবারে অপ্রাসঙ্গিক হয়ে গেছে। তিনি এই নতুন ধারণার ভিত্তিতে স্বাধীনভাবে কাজ করার সুযোগ পেয়েছিলেন। নিজের দেশের ঐতিহ্যবাহী প্রথাগুলোকে তাঁরা নতুন করে আবিষ্কার করেছিলেন। রাষ্ট্রীয় নিয়ম-কানুনের বিপ্রতীপে তাঁরা সংবেদনশীলতার এমন একটি নতুন সত্তার সৃষ্টি করেছিলেন, যাতে শিল্পকে আরো একবার সমাজে প্রাসঙ্গিক করে তোলা যায়। ইউরোপীয় রেনেসাঁসের পর থেকেই ক্রমশ ললিতকলা এবং ফলিতকলার মধ্যে যে মিথ্যা বিভাজন সৃষ্টি করা হয়েছিল, তিনি তাকে বর্জন করেছিলেন। নিজের চারপাশের জগৎ এবং মানুষজনের নান্দনিক দৃষ্টিভঙ্গির গভীরতর সত্তার বাস্তবতাকে প্রতিফলিত করার মাধ্যম হলো শিল্প, এটাই ছিল তাঁর শিল্প-দর্শন। নন্দলাল তাঁর এই প্রগতিশীল ধ্যান-ধারণাকে শিক্ষাদানের মূল্যবান অভ্যাসে নিয়োজিত করেছিলেন।

শান্তিনিকেতনের প্রাক্তনী ও প্রয়াত প্রধানমন্ত্রী ইন্দিরা গান্ধীর আচার্য প্রসঙ্গে সামান্য কটি কথা, এক কথায় অনবদ্য। " নন্দলাল বসু ছিলেন একজন যথার্থ আচার্য। তিনি শুধু নিজে প্রতিষ্ঠা অর্জন করেননি, আরও অনেককেই প্রতিষ্ঠা অর্জনে সাহায্য করেছেন। শিল্পী হিসাবে তিনি সকল বস্তুতেই তাদের অন্তর্নিহিত তাৎপর্য ও সৌন্দর্যের সন্ধান করতেন, এবং জনসাধারণের জীবনে শিল্পের প্রভাব যাতে আরও গভীর হয় সেদিকে সব সময় তাঁর সজাগ দৃষ্টি ছিল।... অজন্তা ও বাগ-গুহার চিত্রাবলি থেকে শুরু করে সাঁওতালদের তৈরি মাটির পাত্র ও তালপাতার বাঁশি পর্যন্ত যে-বস্তুতেই তিনি যেরকম সৌন্দর্যের প্রকাশ দেখেছেন তাই ছিল তাঁর কাছে পরম আদরের।..."

এবার গুরু - শিষ্য পরম্পরা প্রসঙ্গে দুটি ঘটনার
কথা উল্লেখ করবো। গুরু নন্দলাল, যাঁকে রামকিঙ্কর অনায়াসে মাস্টার বলে ডাকেন আর নন্দলাল তাঁর প্রিয় শিষ্যকে কিঙ্কর বলে ডাকেন।

কলাভবনের ছাত্রী হিসেবে দক্ষিণভারত থেকে এলেন জয়া আপ্পাস্বামী। কৃষ্ণাঙ্গ, দীর্ঘকায়া ছাত্রী জয়াকে খুব পছন্দ শিক্ষক রামকিঙ্করের।
মনে মনে গড়ে চলেছেন মূর্তি, নামকরণ হবে
" জয়া " । ইউক্যালিপ্টাসের ঘন সবুজে মূর্তি প্রাণ
পেতে লাগলো। প্রায় শেষের দিকে, একদিন এলেন শিক্ষক নন্দলাল। শিষ্যের মুখ থেকে মনের কথা জানলেন, কিন্তু পাল্টে দিলেন সমস্ত স্বপ্ন। নারীমূর্তি মাথায় একটি হাঁড়ি, একহাতে ধরা। জয়া হয়ে গেল " সুজাতা " , চলেছেন পরমান্ন নিয়ে তপস্যাক্লান্ত মগ্ন গৌতমের কাছে , বোধিত্ব প্রাপ্তির জন্য যিনি উদগ্রীব। একটা ব্যক্তিগত ভাবনা মুহূর্তে দেশকালপাত্র ছাড়িয়ে
চরাচরে ছড়িয়ে পড়লো।

আমরা শান্তিনিকেতনে রামকিঙ্করের বিখ্যাত ভাস্কর্য " কলের বাঁশি " সম্পর্কে প্রায় সবাই জানি,  অনেকেই দেখেছি। এই ভাস্কর্য তৈরির
গোড়ার কথা তুলে ধরলাম। কারখানার সাইরেন বা কলের বাঁশি বেজে উঠেছে, দৌড়ে চলেছে এক পুরুষ ও এক নারী। রামকিঙ্কর চাইছেন, গতি বোঝাতে নারীর আঁচল হাওয়ায়
ওড়াতে কিন্তু বারবার ভারি হওয়ার কারনে কাঁকর আর সিমেন্ট খুলে পড়ছে। আঁচল আর উড়ছে না, ব্যর্থ হচ্ছেন রামকিঙ্কর। একটুদুরে, ফাঁকা মাঠে চারচালায় বসে আছেন নন্দলাল। শিষ্যের ব্যর্থতা দেখে হাঁক পাড়লেন। আয় কিঙ্কর, ছায়ায় বসে একটু জিরিয়ে নে। দুটো বিড়ি ধরা। কিঙ্কর মাস্টারের পাশে এসে বসলেন। একটু চিন্তা করে নন্দলাল শিষ্যকে বললেন, একটা ঠেকনা (সাপোর্ট) দে কিঙ্কর। ঠিক দাঁড়িয়ে যাবে। বেশ কিছুক্ষণ দুজনে চুপচাপ বসে। হঠাৎ কিঙ্কর লাফ দিয়ে
বললো, মাস্টার পেয়েছি। দৌড়ে গিয়ে নারীর আঁচলে একটা বাঁশের টুকরো দাঁড় করিয়ে দিল।
ক্রমে ক্রমে সেই বাঁশটি একটি শিশুতে পরিণত হল, যে তার মায়ের আঁচল ধরে রেখে মাকে যেতে দিতে চাইছে না। গতি আর আর্তি মিলে একটি স্বপ্নময় স্থাপত্য অনেক না বলা কথা বলে উঠলো।

আচার্য নন্দলাল শিল্প-শিক্ষায়তনের প্রথাসিদ্ধ রীতিকে অনুসরণ করতে অস্বীকার করতেন আবার পাশ্চাত্যের অন্ধ অনুকরণ তাঁর অপছন্দ ছিল। সাধারণ রুচি বিকৃতির বিরুদ্ধে দাঁড়িয়ে তিনি গভীর অন্তর্দৃষ্টিতে তাঁর সময়কে অতিক্রম করে দূর ভবিষ্যতের সমাজকে দেখতে পেয়েছিলেন যা ভারতীয় শিল্পরীতির স্বকীয়তা তুলে ধরতে সমর্থ হয়েছিল।

অবনীন্দ্রনাথ ঠাকুর, পার্সি ব্রাউন প্রমুখ শিক্ষক আর আর্ট স্কুলের আশ্রিত হয়েও নন্দলাল বসু ছিলেন স্বয়ংসম্পূর্ণ শিল্পী ও শিক্ষক। ভারতীয় দর্শন, জীবনবোধ, প্রকৃতি পরিবেশ ও নন্দনবোধ আর জীবন সারল্যের মধ্যে দিয়ে একদিকে প্রকৃত শিল্পী অন্যদিকে অতুলনীয় শিক্ষক হিসেবে ভারতীয় আধুনিক চিত্রকলার অন্যতম শ্রেষ্ঠ পথিকৃৎ আচার্য নন্দলাল বসু। রবীন্দ্রনাথের দূরদর্শিতা তাঁকে চিনে নিতে ভুল করেনি। পরবর্তীকালে আমরা দেখতে পাই রবীন্দ্রসৃষ্টির রবীন্দ্রস্বপ্নের অন্যতম যে শিক্ষাঙ্গন তার রূপ ও রুচি প্রস্ফুটিত হয়েছিল নন্দলাল বসুর রূপশৈলীর মাধ্যমে।

বিশ্বভারতী বিশ্ববিদ্যালয়ের যে নান্দনিক বিশিষ্টতা তা নন্দলাল বসুর শিল্পবোধ, সৃষ্টিশীলতা আর ছাত্রছাত্রীদের উদ্দীপ্ত করার প্রভাবে ছড়িয়ে পড়েছিল অসংখ্য ছাত্রছাত্রীর মাধ্যমে। তখনও ভারতবর্ষে চারুকলার কোনও যৌথ আন্দোলন সংগঠিত হয়নি। দেশের বিভিন্ন স্থানে কিছু ব্যক্তিশিল্পীর অবদান তা একান্তই ইউরোপীয় শৈলীতে রচিত হত। সেদিক থেকে নন্দলাল বসু আর তাঁর শিল্পগুরু অবনীন্দ্র ঠাকুরকে ঘিরে ভারতীয় আধুনিক শিল্পে বেঙ্গল আর্ট মুভমেন্টের অগ্রণী ভূমিকা অনস্বীকার্য।
ভারতের আধুনিক শিল্প আন্দোলনের রূপ ফুটে উঠেছিল তাঁরই ছাত্রদের মাধ্যমে। বিনোদবিহারী, রামকিঙ্কর বেইজ, শঙ্খ চৌধুরি, কে জি সুব্রহ্মনিয়াম, চিন্তামণি করেরা ছড়িয়ে পড়েছিলেন শিক্ষক হিসেবে, শিল্পী হিসেবে।

অবনীন্দ্র–নন্দলালকে কেন্দ্র করে বাংলা তথা ভারতীয় আধুনিক চিত্রকলার যে আন্দোলন, ঐতিহ্যের পরম্পরা থেকে ব্যক্তিশিল্পীর আধুনিক মনস্কতার প্রকাশ ও জাগরণ, লোকশিল্প থেকে শিল্পের রসদ ও আঙ্গিক গড়ে তোলা, তা থেকে পরবর্তীকালে বিচ্যুত হয়েছে শিল্পসমাজ।
নন্দলাল বসুর শিল্পভাবনায় চারুকলা যেভাবে সাধারণ মানুষকে প্রভাবিত করত, সমৃদ্ধ করতো শিল্পচেতনাকে, যা মনকে স্পর্শ করে জীবন ও সমাজকে বর্ণময় করতে পারে— সেই গভীর বোধ থেকে আমরা সরে এসেছি ক্রমশ।

চারুকলা এখন বুদ্ধি বা মস্তিষ্কের চমক হয়ে দাঁড়িয়েছে, ঘোষণাপত্র দেখে শিল্পবস্তুকে বুঝে নিতে হয়। উপলব্ধির জন্য একান্ত মনের ঘ্রাণ নিতে হয় না।

Ankan ।। অঙ্কন

রথযাত্রা



Card image




রথযাত্রা  দেখেছেন : 1357

মেদিনীপুরের তিয়রবেড়িয়ার পেতলের রথ ।। কেশব মেট্যা
Keshab Metya ।। কেশব মেট‍্যা

মেদিনীপুরের তিয়রবেড়িয়ার পেতলের রথ ।। কেশব মেট্যা     শৈশবে মেলার প্রতি আকর্ষণ থাকবে না, এটা ভাবাই যায় না। কচি পায়ে হাঁটা দিয়ে মেলা দেখতে যাওয়া আর ছোট্ট ছোট্ট জিনিসের জন্য আবদারই তো মেলার প্রাণ। খেলারমাঠ আর মেলারমাঠ পেলেই শিশুরা ডানা মেলতে চায়…

Jun 19, 2023
Card image




রথযাত্রা  দেখেছেন : 1195

মাহেশের রথে ঘাটাল যোগ ।। সন্দীপ দে
Sandeep Dey ।। সন্দীপ দে

মাহেশের রথে ঘাটাল যোগ ।। সন্দীপ দে   বোন সুভদ্রা বেড়াতে যাবার বায়না ধরলে তাকে ভোলাতে মাসির বাড়ির উদ্দেশ্যে গমন করেছিলেন দুই দাদা - জগন্নাথ ও বলরাম। সেই যাত্রাই রথযাত্রা। বাংলার বুকে দাঁড়িয়ে রথযাত্রা নিয়ে বলতে প্রথমেই যেটা মাথায় আসে- “রাধারাণী নামে একটি…

Jun 22, 2023
Card image




রথযাত্রা  দেখেছেন : 1179

দাসপুরের খাঞ্জাপুরের প্রাচীন রথ ।। দেবাশিস কুইল্যা
Debasish Kuila ।। দেবাশিস কুইল্যা

দাসপুরের খাঞ্জাপুরের প্রাচীন রথ ।। দেবাশিস কুইল্যা   সে কবেকার কথা। সংস্কৃত পণ্ডিত চতুষ্পাঠীতে ন্যায়শাস্ত্র শিখিয়ে চলছেন ছাত্রদের। আর পণ্ডিতের পরিচয় ছড়িয়ে পড়েছে দূর বহুদূরে। তখন সময়টা দ্বাদশ শতকের শেষ দিকে। বর্ধমান মহারাজ কীর্তিচন্দ্র মহাতাব। সংস্কৃত মনস্ক মহারাজের একান্ত ইচ্ছায় চেতুয়া পরগনার…

Jun 19, 2023
Card image




রথযাত্রা  দেখেছেন : 1104

রথযাত্রা: যাত্রার বোধনের দিন ।। শুভদীপ গোস্বামী
Subhadip Goswami ।। শুভদীপ গোস্বামী

রথযাত্রা: যাত্রার বোধনের দিন ।। শুভদীপ গোস্বামী   রথযাত্রা মানেই যাত্রার বোধনের দিন। ষষ্ঠী থেকে জষ্ঠি যাত্রার মরশুম হলেও জগন্নাথদেবের রথের চাকা গড়ানোর সঙ্গে সঙ্গেই শুরু হয়ে যায় প্রায় ৫৫০ বছরের পুরাতন লোকশিল্প যাত্রার যাত্রাপথ। অনেকে আবার এই দিনটিকে যাত্রার নতুন খাতার…

Jun 23, 2023
Card image




রথযাত্রা  দেখেছেন : 941

রথ দেখবি নাড়াজোল, জাত দেখবি কানাশোল ।। উমাশঙ্কর নিয়োগী
Umasankar Neogi ।। উমাশংকর নিয়োগী

রথ দেখবি নাড়াজোল, জাত দেখবি কানাশোল ।। উমাশঙ্কর নিয়োগী ভগ্ন রাজপ্রাসাদ আছে রাজা নেই, রাজার রাজত্বও নেই কিন্তু রাজকীর্তির সব কিছু জনসাধারণের মন থেকে মুছে যায়নি। রাজকীর্তিকে নিজেদের অতীত গৌরব বলে মনে করেছে। সাধারণ মানুষের একটি অংশ নিজেদের অর্থ শ্রম আন্তরিকতা…

Jun 21, 2023
Card image




রথযাত্রা  দেখেছেন : 1089

গুপ্তিপাড়ার রথযাত্রা ।। শৌভিক বন্দ্যোপাধ্যায়
Souvik Bandopadhyay ।। শৌভিক বন্দ্যোপাধ্যায়

গুপ্তিপাড়ার রথযাত্রা ।। শৌভিক বন্দ্যোপাধ্যায় উষ্ণতা এবং ভক্তির একটি প্রাচীন ঐতিহ্য, ভারতের পশ্চিমবঙ্গ রাজ্যের হুগলি জেলার গুপ্তিপাড়ার রথযাত্রা ২৫০ বছরেরও বেশি সময় ধরে এই অঞ্চলের একটি গুরুত্বপূর্ণ উৎসব। গুপ্তিপাড়া পশ্চিমবঙ্গের হুগলী জেলার একটি প্রাচীন জনপদ। এই জায়গাটি চুঁচুড়া সদর মহকুমার বলাগড় ব্লকে অবস্থিত। গুপ্তিপাড়ার পাশ…

Jun 21, 2023
Card image




রথযাত্রা  দেখেছেন : 1050

মহিষাদলের রথযাত্রা ।। ড. নীলোৎপল জানা
Dr.Nilotpal Jana ।। ড. নীলোৎপল জানা

মহিষাদলের রথযাত্রা ।। ড. নীলোৎপল জানা     মহিষাদলের রথযাত্রায় মহিষাদল রাজ পরিবারের ভূমিকাই এক সময় প্রধান ছিল। এই রথ ২০০ বছরের প্রচীন। মহিষাদলের রথযাত্রার সূচনাবর্ষ নিয়ে অল্প হলেও বিতর্ক আছে। কোনো কোনো প্রাবন্ধিক মনে করেন ১৭৭৬ সাল নাগাদ মহিষাদল রথযাত্রার প্রবর্তন করেছিলেন  রানি…

Jun 19, 2023
Card image




রথযাত্রা  দেখেছেন : 1180

মেদিনীপুরের রথযাত্রা ।। ভাস্করব্রত পতি
Bhaskarbrata Pati ।। ভাস্করব্রত পতি

মেদিনীপুরের রথযাত্রা ।। ভাস্করব্রত পতি   অবিভক্ত মেদিনীপুর জেলার বিভিন্ন এলাকায় অসংখ্য রথযাত্রার আয়োজন করা হয়। ধারে ভারে এগুলো বেশ কয়েক কদম এগিয়ে। তবে জেলার মধ্যে বিখ্যাত মহিষাদলের রথ, রঘুনাথ বাড়ির রথ, নাড়াজোলের রথ, বগড়ির রথ, মহাপ্রভু মন্দিরের রথ ইত্যাদি। এছাড়াও বিভিন্ন…

Jun 19, 2023
আরও পড়ুন

সর্বাধিক জনপ্রিয়



একক কবিতা সন্ধ্যা



সহজ কবিতা সহজ নয় কঠিনও নয়



মহুল ওয়েব প্রকাশিত বিভিন্ন সংখ্যা



করোনা Diary



আমাদের কথা

আমাদের শরীরে লেপটে আছে আদিগন্ত কবিতা কলঙ্ক । অনেকটা প্রেমের মতো । কাঁপতে কাঁপতে একদিন সে প্রেরণা হয়ে যায়। রহস্যময় আমাদের অক্ষর ঐতিহ্য। নির্মাণেই তার মুক্তি। আত্মার স্বাদ...

কিছুই তো নয় ওহে, মাঝে মাঝে লালমাটি...মাঝে মাঝে নিয়নের আলো স্তম্ভিত করে রাখে আখরের আয়োজনগুলি । এদের যেকোনও নামে ডাকা যেতে পারে । আজ না হয় ডাকলে মহুল...মহুল...

ছাপা আর ওয়েবের মাঝে ক্লিক বসে আছে। আঙুলে ছোঁয়াও তুমি কবিতার ঘ্রাণ...