প্রচ্ছদ - সৌমেন মাজী       

 

ম্পা দ কী

মন...
যখন আছে। তার কেমনও আছে...

হুস করে বাতাস নিয়ে গেল তোমার গন্ধ।
কেউ পাচ্ছে কোথাও...। একবার ভাবো!

অপেক্ষা নিয়ে দাঁড়িয়ে আছো যে!
যাবো?
উঁহু, যাবো না।
...
এক বিবর্ণ নামতার কোজাগরি ।। লক্ষ্মী কান্ত মণ্ডল


এক বিবর্ণ নামতার কোজাগরি
লক্ষ্মীকান্ত মণ্ডল

পাখিরা এমন ডাকাডাকি করল , না জাগলে নিজেকে ভীষণ অপরাধী লাগে , কয়েকদিন কানে বালিশ চাপা দিয়ে পড়ে ছিলাম , কিছুতেই চোখ মেলব না । আরও কিছু সময় দেবে তো , দাও দাও। আরও কিছু অলসতা দাও। যে যা ভাবুক ভাবতে দাও , আমি শুধু কান চেপে শুয়ে থাকি। গাছের পাতা থেকে সরাসরি হাওয়া এসে লাগছে। যতই বলি না কেন - নাহ্ , আর তো শুয়ে থাকা যায় না। রাতে স্বপন দেখা সুব্রত কবিতা নিয়ে দাঁড়িয়েছে। হাঁসটঙ থেকে হাঁসেরা দৌড়ে যাচ্ছে পুকুরের কাছে। আর নারান দাদুর বৌমা কোমরে সায়ার খুঁট গুঁজে গতরাতের বাসি ভাত বাটিতে নিয়ে ঘাট গোড়ায় দাঁড়িয়ে আছে। - আয় হাঁস আয় , জল থেকে খুঁটে বেছে নে ভাত। আমি কী করে ঘুমিয়ে থাকব ? হে এবড়ো খেবড়ো পথ। বলতে পারি না কাওকেই , ভিটের নিচে রাস্তাটায় সব মোরাম ধুয়ে গেছে , আমার পরিশ্রম বৃথা , বৃথা আমার সরকারি প্রতিনিধিদের উৎকোচ দেওয়া। যতই সততার বড়াই করি না কেন আমাদের রাস্তার জন্য উৎকোচ দিতেই হয় - আর তাদেরও উৎকোচ চাইতেই হয়। নতুবা চাকার গতি নেই - নেই কোন মসৃণতা। বিছানায়ও নেই কোন মসৃণতা। ফনিমনসার কাঁটায় বিঁধে থাকা এক বিন্দু সূর্যালোকের জন্য জানি না কে কার বিছানায় শুয়ে থাকে , কে কার পায়ে পা ঠেকিয়ে ঝগড়া বাঁধায়। সুলোচনার মা শুয়ে থাকে বিছানায় , তিয়াত্তরটি বছরের পর সারা শরীর
ফুলে ঢোল , এবার নাম সংকীর্তন হবে। সুলিস দিয়ে এত জল গড়ানোর এতকাল পরে বিঘে খানিক ঝোপ আর সাপের কুঁড়েঘর ছেড়ে স্বর্গের পথ মসৃণ হবে।

কোনো কোনো ভোর থেকেই দিন সুরু হয়ে যায় অজান্তেই । কোনো হলুদ পাখি জানালায় আসে না। দুঃস্বপ্নের বলাই নেই। কেবল ঝাঁক ঝাঁক পিঁপড়ের মিছিল ঘিরে ধরে আমাকে , মৃত মানুষের মাংস নাকি জমিয়ে রাখতে বেশি পচ্ছন্দ করে ওরা। শীতের জমাটি আহার জন্য। আমি কি মরে যেতে পারি , আমি কি যন্ত্রণায় কাতরাতে পারি কোনদিন ? সবই জানি , সবই জানি এর উত্তর। কিন্তু , জানি -একথাটাই মানতে পারি না। তাই সেদিন পাতার শিশির শুকিয়ে যায়। শুকনো পাতায় কেবল সাদা সাদা মাটির দাগ , অস্তিত্বের প্রতি স্থিতিশীল সমস্ত ঘটনাই উদ্দেশ্যহীন ভাবে ইচ্ছাশূন্য হয়ে যায় । তখনই ধূ ধূ ফাঁকা মাঠ - তখনই দরদরে ঘামের গুমোট। পূব থেকে উত্তরে বেঁকে যাওয়া খালের ধারে খালিগায়ে বাতাস খায় দুলাল , চুমু খায় শালিক পাখির মতো আর কলমির বেগুনিফুল ফুটে যায়। তারপর ছায়া ছায়া পায়ে হাঁটা পথ। কত দূরে সেই প্রনয়লোক ? কোনো বিশেষ রাজা মুখের দেখা পাওয়া যায় না আর। সারাদিন ম্যাদম্যাদে রাস্তা থেকে ফ্যাকাসে ধুলো উড়তে উড়তে ঘিরে ধরে ফাটা ফাটা গাছের বাকল।

এদিকে কত না আড়মোড়া। জেগে উঠছে হারু জেলের কবিতা। তার গায়ে সাঁতারের গন্ধ। আমি কত চেষ্টা করেছি , টুকটাক সাঁতারও কেটেছি। কিন্তু কখনো গায়ে সাঁতারের গন্ধ পাই নি। নিজের গন্ধ নিজে পাওয়া যায় কি। কেউ পাক না পাক আমিতো কখনো পাই না - তা নিয়ে কত না আক্ষেপ ছিল আমার মধ্যে। এভাবেই একদিন বৃষ্টি দেখব বলে এক তিনমাথার বটগাছের তলায় দাঁড়িয়েছি ভর দুপুরে , ঝাঁপবন্ধ দোকানের দোকানদারকে ডেকে বিড়ি কিনেছি - দুটান মেরে ফেলে দিয়েছি - তখনও রাস্তায় শুনশান , কেউ চলাফেরা করেনি , চলেনি কোন অমোঘ সংক্রমণ , জীবন পল্লবিত হবে কিনা জানেনা কেউ। শাখায় শিকড়ের আর পাতায় শত্রু নিয়ে সাবলীল আর সহজ থাকতে থাকতে
কেউ ভেজায়নি গায়ের কাপড়। কেবল নেতাজির স্ট্যাচুর গায়ে লেখা পড়ছি - 'তোমরা আমাকে রক্ত দাও , আমি তোমাদের স্বাধীনতা দেব '। তা দেখেই জনগনতান্ত্রিক নির্বাচন থেকে দুটো দলের কাটাকাটি শুরু হয়েছে। সবাই স্বাধীনতা চাইছে। এবং রক্ত দিচ্ছেও দলে বিদলে। মাটি কালো হয়ে যাচ্ছে শুকিয়ে যাওয়া রক্তে। এদিকে খরা বাড়ছে খু্ব। পিপাসাও বাড়ছে তিনমাথা চারমাথা পাঁচমাথায় - যারা কেবল কথায় কথায় নিন্দা করে - কাঁটা বেঁধায় চোখের তারায় - আমি তাদের রাধি পিসির মতো বলতে পারি - যা , এখান থেকে দুর হয়ে যা। টুকরো টুকরো কিছু হাড় মাস নিয়ে অস্তিত্ব শিখেছি আমি - পরিচ্ছন্ন আলের ভেতর জেগে উঠলেই সমস্ত সাপ কেমন মিইয়ে যায়। লাল মোরগ ডাকে আগুন ঝুটিতে। সারি সারি খড়গাদার পাশ দিয়ে চলে যায় বিন্দু বিন্দু সংগ্রাম আর প্রাণ। কনকনে ঠাণ্ডা নিয়ে হাঁটতে থাকি ভোরের সাথে- পারি না তাও - যুবতী মৌসুমি পিসি এত ভোরে কোথা থেকে ফিরে আসছে ? ঘরের দিকে এখনও তো অন্ধকার ! - কখন বেরিয়ে ছিল কে জানে?

ছোটবেলায় ঠাকুমার বেঁধে দেওয়া তাবিজটা হারিয়ে ফেলেছি কবেই। হারিয়ে ফেলেছি , নাকি আধুনিক হবো বলেই নিজেই খুলে ফেলেছি তামার তাবিজ , মনে করতে পারছি না কোনমতেই। তবে কি আমি কোন অসুখ জড়িয়ে ধরেছি , না কি অজানা পথের দিকে চোখ মেলতেই ভুলে যাচ্ছি জানার নরম ছোঁয়া। বুকের বাঁদিকে হাত রেখে আমি আজও ভীষণ রকম লালায়িত। যদিও শরীরে দাউ দাউ সীমান্ত রক্ষী , আমিও ভয়ঙ্কর ভাবে ঝাঁপিয়ে পড়তে পারি অন্ধকার খাদের মধ্যে , সেখানেই ঝিরঝিরে নদী। তারপরের ব্যবধান টুকুর জন্য আমি রক্ত দেব আমি মাংস দেব। খান খান করে দেব সম্মুখের সব মেশিন গান। সমস্ত সময় এইসব কাঁচের টুকরোভরা রোদ। মৃত্যু যন্ত্রণার সমূহ আশ্বাসে সিক্ত থাকে অক্ষত স্বপ্নেরা। সেসব পরোয়া করা দূর্বিষহ সমস্যার মতো । এর বেশি ভাববার মতো মস্তিষ্ক নেই আমার। পৃথিবীর আহ্নিকগতি কিংবা বার্ষিকগতির একবুক পিপাসা নিয়ে বাতাসে কাছে কথা লুকিয়ে রাখে আলপথ নামের পুরুষ। কিংবা ডাইনে বাঁয়ে সুবিশাল ধানমাঠ রেখে বাসনা জেগে ওঠে ভীষণ চড়াইয়ে । আমার রাত্রি জাগা প্রতিবাদের পরও তাবিজটা থাকলে জড়িয়ে ধরতে পারতাম পিসিকে , জানতে চাইতাম আমায় সঙ্গে নিয়ে যাওনি কেন ?

একক কবিতা সন্ধ্যা



সহজ কবিতা সহজ নয় কঠিনও নয়



মহুল ওয়েব প্রকাশিত বিভিন্ন সংখ্যা



করোনা Diary



আমাদের কথা

আমাদের শরীরে লেপটে আছে আদিগন্ত কবিতা কলঙ্ক । অনেকটা প্রেমের মতো । কাঁপতে কাঁপতে একদিন সে প্রেরণা হয়ে যায়। রহস্যময় আমাদের অক্ষর ঐতিহ্য। নির্মাণেই তার মুক্তি। আত্মার স্বাদ...

কিছুই তো নয় ওহে, মাঝে মাঝে লালমাটি...মাঝে মাঝে নিয়নের আলো স্তম্ভিত করে রাখে আখরের আয়োজনগুলি । এদের যেকোনও নামে ডাকা যেতে পারে । আজ না হয় ডাকলে মহুল...মহুল...

ছাপা আর ওয়েবের মাঝে ক্লিক বসে আছে। আঙুলে ছোঁয়াও তুমি কবিতার ঘ্রাণ...