প্রচ্ছদ - সৌমেন মাজী       

 

ম্পা দ কী

মন...
যখন আছে। তার কেমনও আছে...

হুস করে বাতাস নিয়ে গেল তোমার গন্ধ।
কেউ পাচ্ছে কোথাও...। একবার ভাবো!

অপেক্ষা নিয়ে দাঁড়িয়ে আছো যে!
যাবো?
উঁহু, যাবো না।
...
মনকেমনিয়া ।। অন্তরা দাঁ

মনকেমনিয়া
অন্তরা দাঁ 

বিষাদ রঙের মনখারাপ জড়ো করি দুঠোঁটে, মন ভালো নেই তাই। গুছিয়ে তোলা জীবন যেন ওভারহেডের তারে লেগে থাকা বৃষ্টিফোঁটা, এই ঝরে পড়বে টস করে। এবছর এই মাঝ-শ্রাবণেও মেঘ জমেনি তেমন, এ পাড়ার কড়া নাড়েনি বৃষ্টিফোঁটার বালিকারা। দল বেঁধে তারা সেই যে গেছে জষ্টিমাসের শেষের দিকে, আর পাত্তা নেই। তাদের ঘুঙুরকথা শুনব বলে পুরো আষাঢ় মাস জানলা খুলে তাকিয়ে রইলাম। কোথায় তারা? বৃষ্টিবিহীন মনখারাপ। কতদিন মেঘ মাখিনি, খোয়াইয়ের হাটে জীবনে ভরপুর সাঁওতাল মেয়েদের মদালসা তালে তালে ছুঁয়ে দেখিনা জীবন, সস্তার বিকিকিনি, গাঁয়ের লালমাটির আন্তরিক গন্ধমাখা, সবই কি হারিয়ে যায় সময়ের মস্ত হাঁ-মুখে?

বদলে যাচ্ছে সব —জীবন, ইচ্ছে, সময়, মূল্যবোধ। ভাগ্যিস বদলাচ্ছে না হলে যে থমকে যেত সব। পুনরাবৃত্তি তো সৃজন নয়। সৃজনের সাথে বদলের সম্পর্ক যে ধরতাই ধরা দম্পতির মত অম্ল-মধুর। মনকেমনের যে কোন মানে হয় না, অকারণ বলেই তা সততই মনের ঘর একই সাথে দুঃখসুখে ভরিয়ে তোলে। রূপকথার রাজপুত্তুর সোনার রথে চড়ে একদিন ঠিক হাজির হবে মায়ারাজ্যের রাজকন্যের কাছে, কেঁদে কেঁদে তার চোখমুখ লাল টসটসে, রাজপুত্র তার বাগানের সেরা লাল গোলাপটি কন্যের এলোচুলে গেঁথে, কানে কানে ফিসফিস করে বলবে "ভালোবাসি"। এর অন্যথা হলেই যে মনখারাপ।

শাসন শাসন চোখের সোনার বরণ মা দুগ্গা দশমীতে জলে পড়লেই মনখারাপ। জমিদারবাড়ির দরদালান একেবারে খাঁ খাঁ। বাবা-কাকারা মুখ ভারী করে বিজয়ার কোলাকুলি সারে। মায়েদের মনখারাপের সময় কোথায়? সামনে কোজাগরীপুজোর জোগাড়যন্ত আছে না! তবে কিনা
বাপের বাড়ির ঠিকানায় পোস্টকার্ড একখানা, সেতো কবেই উঠে গেছে, ফোনে ফোনেই বিজয়া সারে সব। আবার দেখাও যায় ভিডিও কলে। মনখারাপের জো টি নেই, তাই বুঝি এত মনখারাপ সবার? সতেরো বছরের কিশোর ছেলে ড্রাগ-পেডলার, মুঠো মুঠো এ্যন্টিডিপ্রেশনের ওষুধ
খায় বছর উনিশের তরুণী ছাত্রীটি। সাবেক বাড়ি ভেঙে বহুতল আবাসন, ঘড়র ঘড়র লোহার ফ্যানের বদলে এ.সি. র ফুরফুরে হাওয়া, দলবেঁধে পিকনিক, চড়ুইভাতির বদলে লেট-নাইট পার্টি, জোম্যাটো, সুইগী। শালপাতার দোনা হাতে ফুচকা-আলুকাবলির দোকানে আর ভীড়
জমায় না দুবিনুনী হরিদাস ইস্কুলের মেয়েরা, আরো চাপা জীনস, বয়কাটরা, মোমো খায়, ফ্লেভার্ড পপকর্ন। গাঁয়ে-গঞ্জে, মিউনিসিপ্যালটির মাঠে এখন আর সাদা কাপড়ে প্রোজেক্টার ফেলে সিনেমা হয় না, ইউ-টিউবে থ্রিডি মুভি দ্যাখে স্মার্ট জেনারেশন।

তা হ্যাঁ গো মনখারাপের বদলি কিছু পেলে নাকি?!মনখারাপ করার উপায় না থাকাটাই যে মস্ত মনখারাপ। ছোটদের শৈশব নেই, স্বার্থপর লোভী মা বাপ তাদের সেলেব বানানোর অসুস্থ ইঁদুর দৌড়ে নামিয়ে দিয়েছে সস্তা হাততালির মোহে। গোলগাল বাচ্চা মেয়েটি রাতদিন গলা সাধছে। টিভিতে বিজ্ঞাপন —জীবন মানে... কি যেন বাংলা! তরুণী মা, শপিংমলে হঠাৎ দেখা দূর আত্মীয়ের কাছে বেশ ঘ্যাম নিয়ে বলে "ওতো নেক্সট পারফর্ম করছে মুম্বাইয়ে"। এদিকে মনখারাপের অবাধ্য গিঁট দড়ি হয়ে চেপে বসে প্রথম না হতে পারা মেয়ের গলায়। এ বাবা! এবারও সেই মনখারাপ। দুত্তোর শালা! ভিলেন মনখারাপ।

অথচ তোমার-আমার মনখারাপ হয় বলেই বিষাদকাব্য লিখি, অন্ধ বাউল সুর তোলে একতারায়। কন্যাশ্রী পাওয়া মেয়ে থানায় যায় বিয়ে আটকাতে, কোটিপতির বখে-যাওয়া ছেলে বডি অরগ্যান ডোনেট করে। খোঁড়া কুকুরকে খেতে দেয় ভ্যানে শুয়ে রাত-কাটানো
লেবার,ডিউটি সেরে ফেরার পথে রাস্তায় পাওয়া মানিব্যাগ ফেরত দেয় রাতের আয়া, পেশায় সুপারি-কিলার বছর পঞ্চাশের, মুখে কাটা-দাগ, নিষ্ঠুর কসাই, ডাস্টবিন থেকে বুকে করে কুড়িয়ে আনে ফেলে দেওয়া শিশুকন্যা।

মনখারাপ বড় বালাই। " এই তো জীবন কালীদা " বড় জড়ানো মড়ানো মনভোলানো মনখারাপের জীবন। বড্ড মনখারাপ।

একক কবিতা সন্ধ্যা



সহজ কবিতা সহজ নয় কঠিনও নয়



মহুল ওয়েব প্রকাশিত বিভিন্ন সংখ্যা



করোনা Diary



আমাদের কথা

আমাদের শরীরে লেপটে আছে আদিগন্ত কবিতা কলঙ্ক । অনেকটা প্রেমের মতো । কাঁপতে কাঁপতে একদিন সে প্রেরণা হয়ে যায়। রহস্যময় আমাদের অক্ষর ঐতিহ্য। নির্মাণেই তার মুক্তি। আত্মার স্বাদ...

কিছুই তো নয় ওহে, মাঝে মাঝে লালমাটি...মাঝে মাঝে নিয়নের আলো স্তম্ভিত করে রাখে আখরের আয়োজনগুলি । এদের যেকোনও নামে ডাকা যেতে পারে । আজ না হয় ডাকলে মহুল...মহুল...

ছাপা আর ওয়েবের মাঝে ক্লিক বসে আছে। আঙুলে ছোঁয়াও তুমি কবিতার ঘ্রাণ...