প্রচ্ছদ -  সুকান্ত সিংহ      
 
স ম্পা দ কী য়
 
জীবন বিচিত্র এই
হাসি সুখ দুঃখ...
মরমে ধরতি হবে
অনুভূতি সূক্ষ্ম।
 
ভাষার কান্না কী
জেনেছ কি সত্যি?
শিকারস্বভাব ছাড়ো
...
ভাসমান ভাষা ।। শুভশ্রী পাল

 

আমরা ভাষা দিবস পালন করি। একটা নির্দিষ্ট দিনে তার আড়ালে থাকা ইতিহাসকে সামনে রেখে গায়ে কাঁটা দেওয়া স্মৃতিদের তুলে এনে আমাদের ভাষাদিবস পালন হয়। অথচ কেউ উদযাপনের দিকে নজর দিই না।
ভাষা একটা যোগাযোগ মাধ্যম হয়ে রয়ে গেছে মধ্যবিত্ত (মানসিকতার) বাঙালীর ঘরে। এখানে ভাষা আবেগ অথবা নস্টালজিয়ার স্বাদ চেনেনি। আর সেজন্যই কোনও ভাষাগত পিছুটান আমাদের বাঁধতে পারে না। বাসি পোশাকের মতোই আমরা বদলে ফেলি মাতৃভাষার আটপৌরে বাঁধন। ঝাঁ চকচকে অথবা স্মার্ট পোশাকের মতো জড়িয়ে নিই ভিনভাষা। পুরোনো সম্পর্কের মতো মনের দেওয়া-নেওয়া না থাকায় এই বদলের জন্য কোনও মনখারাপ কিমবা অপরাধবোধ আমাদের থাকে না। এভাবেই...
আমরা পরবর্তী প্রজন্মকে কুকুরের ছবি চিনিয়ে তার কানে ছবি সম্পর্কিত শব্দ হিসাবে তুলে ধরি ডগি।
গ্রীষ্মের অতিপ্রিয় সরস ফল হাতে তুলে বলি, ম্যাঙ্গো খাও। 
আমরা ভাষাকে নস্টালজিয়ায় মেশাতে পারি না বলেই আধো উচ্চারণে কুকুর কে কুকুল বলতে শোনার যে সুখ সেসব ছুঁতে পারি না।
মাতৃভাষা জন্মগতভাবে যোগাযোগের সাবলীল মাধ্যম। অথচ বাঙালী বাবা-মা সন্তানের অর্থবোধক বাক্যের মধ্যে অন্য ভাষার আগ্রাসন প্রকট না হলে নিশ্চিন্ত হতে পারে না তার উন্নয়নের বিষয়ে।
 
যেটুকু মাতৃভাষার প্রতি সচেতনতা আছে সেসবও আমাদের নাক এত বেশি উঁচু করে দিয়েছে যে, আমরা ভাষায় আঞ্চলিকতার প্রভাব কে অস্বীকার করে দুয়ো দিই আঞ্চলিকতাদুষ্ট শব্দবন্ধের প্রতি।
 
আমার ছোটবেলা ভাষাগতভাবে একটা জগাখিচুরি পরিবেশে কেটেছে। বাবার বাড়িতে এদেশীয় গ্রাম্য রীতির সাথে মিলেমিশে লুচি কে নুচি বলা হতো। মামা বাড়িতে খোদ বাংলাদেশের ভাষা এবং যে পাড়ায় আমি থাকতাম সেখানে খেলার মাঠে হিন্দী ছাড়া আর কিছুই প্রায় চলত না। আমি জলের স্বভাবে উল্টোদিকের মানুষের ভাষায় সাবলীল হতে হতে নিজের উচ্চারণশৈলি সম্পর্কে একটা আলাদা পরিচিতি করে নিতে পেরেছিলাম। নির্ভুল বানান এবং স্পষ্ট উচ্চারণের জন্য। ভাষা আর আবেগের একটা মাখামাখি ছিল বলেই আমি মামাবাড়ির উচ্চারণে ওপাড় থেকে নিয়ে আসা ছাপের সাথে মায়ার বাঁধনে বেঁধে আছি আজও।
 
আমাদের সমস্যা হল আমরা পরবর্তী প্রজন্মকে ভাষার কোনও শিকড় চেনাই না। কোনও মায়ায় বাঁধি না। শুধুমাত্র যোগাযোগ মাধ্যম হয়ে আছে ভাষা৷ যেখানে কোনও আন্তরিকতা নেই, নস্টালজিয়া নেই, শুধু কাজ চালিয়ে নেওয়ার ফ্যাকাশে মনোভাব রয়ে গেছে। মাতৃভাষা এখন আর আগ্রহ বা আবেগের সাথে জড়িয়ে নেই বরং অন্য ভাষায় সাবলীল হওয়ায় আমরা স্মার্টনেস খুঁজে পাই। সেইজন্যই হয়ত বিষয় হিসাবেও মাতৃভাষার কদর কমছে।  ভাষার প্রতি ভালোবাসা থেকে নয় চাকরির বাজারের দরের হিসাবে মাতৃভাষা নিয়ে উচ্চ শিক্ষার কথা বিবেচনা করা হয়। 
 
মধ্যবিত্ত মানসিকতার সব থেকে বড় সমস্যা হল তারা নিজেদের বুনিয়াদ সম্পর্কে আগ্রহী তো নয়ই বরং সেটা অস্বীকার করার মধ্যে সুখ খুঁজে পায়। অনেক অভিভাবকদের দেখা যায় তার সন্তান মাতৃভাষা লিখতে-পড়তে পারে না এই কথা কী অবলীলায় গর্বের সাথে বলে চলেন। একটা দেশ,সমাজ,সংস্কৃতি কে গভীরে তলিয়ে জানতে গেলে মাতৃভাষার প্রতি মমত্ববোধ থাকা জরুরি। 
 
শেষে একটাই কথা বলার, আমরা ছোটবেলায় শিখেছিলাম শিশুর মা যে ভাষায় কথা বলে, তাই তার মাতৃভাষা। আজ যে শিশুকে মাতৃভাষা থেকে দূরে সরানো হচ্ছে, যাকে বোঝানো হচ্ছে মাতৃভাষাকে অস্বীকার করার মধ্যেই কৃতিত্ব আছে সেই শিশু এই শিক্ষায় বেড়ে উঠে যদি কালের নিয়মে তার মা কে অস্বীকার করে তাহলে কিন্তু অবাক হওয়ার কিছু থাকবে না। তাই না?!
 
 
 
লেখকের অন্যান্য লেখা

একক কবিতা সন্ধ্যা



সহজ কবিতা সহজ নয় কঠিনও নয়



মহুল ওয়েব প্রকাশিত বিভিন্ন সংখ্যা



করোনা Diary



আমাদের কথা

আমাদের শরীরে লেপটে আছে আদিগন্ত কবিতা কলঙ্ক । অনেকটা প্রেমের মতো । কাঁপতে কাঁপতে একদিন সে প্রেরণা হয়ে যায়। রহস্যময় আমাদের অক্ষর ঐতিহ্য। নির্মাণেই তার মুক্তি। আত্মার স্বাদ...

কিছুই তো নয় ওহে, মাঝে মাঝে লালমাটি...মাঝে মাঝে নিয়নের আলো স্তম্ভিত করে রাখে আখরের আয়োজনগুলি । এদের যেকোনও নামে ডাকা যেতে পারে । আজ না হয় ডাকলে মহুল...মহুল...

ছাপা আর ওয়েবের মাঝে ক্লিক বসে আছে। আঙুলে ছোঁয়াও তুমি কবিতার ঘ্রাণ...