মার্চ ২০২০                                                  প্রচ্ছদ–ঋত্বিক ত্রিপাঠী    

স্বাদহীনতা অথবা স্বাধীনতা ।। সমর দেব

 swadhinota
 
স্বাধীনতা মানে তো নিজের অধীনতা। এই সরল বয়ানে প্রশ্ন ওঠা স্বাভাবিক এই যে, মানুষ কী সত্যিই নিজের অধীনে ছিল কোনোকালেই? অথবা, মনীষী বাক্য, মানুষ  স্বাধীন হয়েই জন্মায় এবং পরে সে পরাধীনতার বশীভূত হয়। সেটাও পুরোপুরি ঠিক নয় বোধহয়। জন্মমুহূর্তেই শুরু হয়ে যায় পরাধীনতা। এমনকি, তারও আগে, জীবনের একেবারে সূচনায়, কোনো ব্রাহ্মমুহূর্ত, যখন সম্ভাবনামাত্র, তখনই তো সে প্রকৃতির দাস। কিন্তু নির্বোধ নিকষ অন্ধকারে হয়তো স্বাধীনতার প্রশ্নই উঠতে পারে না। অর্থাৎ চেতনার স্ফূরণ এক গুরুত্বপূর্ণ ঘটনা। সেকারণেই স্বাধীনতার বহুস্বর, বহুকৌণিক মাত্রা বিশিষ্ট। তবু জীবন অবিরত, অনন্ত সম্ভাবনা নিয়ে প্রতিদিন অমৃতের পানে ধাবিত। সেখানে স্বাধীনতার চেয়েও গুরুত্ববাহী হয়ে ওঠে জীবনের স্বাদ অথবা স্বাদহীনতা। উপনিষদ বলছে, আত্মানাং বিদ্ধি। এই নিজেকে জানার সচেতন অথবা অচেতন প্রচেষ্টায় স্বাধীনতা, স্বাধীনতাহীনতায় জীবনের স্বাদহীনতার অনুভব, উপলব্ধি—পুরোটাই চেতনাসঞ্জাত। প্রাণীজগতে সম্ভবত জীবনের স্বাধীনতা বোধের সীমায় ততটা ধরা দেয় না। অতএব, স্বাদহীনতাও।
আমরা, সচেতন মানুষরাই স্বাধীনতার কথা বলি। অথচ, কথাটা নিয়ে সেভাবে তলিয়ে ভাবি না। স্বাধীনতার বোধ একজীবনে বহুমাত্রিকতা নিয়ে হাজির হতে পারে। ব্যক্তিগত ও সমষ্টিগত মাত্রাও তাতে প্রায়ই সন্নিবিষ্ট থাকে। প্রচলিত ব্যবস্থায় নেশন স্টেট তার বিকাশের স্বার্থে স্বাধীনতার যে উদাত্ত আহ্বান একদা জানিয়েছিল একটি পর্বে সেই রাষ্ট্রীয় স্বাধীনতার মধ্যেই অচেতন অবগাহন করে ঘুমিয়ে পড়ে মানুষের চেতনা। অথচ, জন্মমুহূর্ত থেকে যে পরিস্থিতির মুখোমুখী হতেই হয় মানুষকে, সেখানে প্রতি পদে তার স্বাধীনতা ক্ষুণ্ণ হলেও সে অনুভব করতে পারে না জীবনের স্বাদহীনতা। জীবনের এই ট্রমা প্রায়ই তাকে স্পর্শ করে না। আধুনিক বিশ্বে সিংহভাগ মানুষই রাষ্ট্র নামক প্রতিষ্ঠানের স্বাধীনতাকেই নিজের স্বাধীনতা বলে জেনেছে। ফলে, সেখানে তার স্বাদহীনতার প্রশ্ন নেই। যে আমৃত্যু অনুভব করেনি স্বাদ বা সুস্বাদের অনন্ত সম্ভাবনা, তার কাছে স্বাদহীনতার অভিজ্ঞতা অনুপস্থিত।
কী চাই, কেমন করে চাই, তার সঙ্গে জড়িয়ে থাকে স্বাধীনতা ও তার মাত্রা। যেটা কখনোই চাইনি, সেটা পাইনি বলে তো কারও বোধে ধরা দেবার কথা নয়। অথবা, সেটা কতটা পেলে স্বাদু মনে হয়, কতটা স্বাদহীনতা। যেমন স্বাধীনতা। আসলেই কেউ স্বাধীন নই আমরা, অন্তত এই সময়ে। আমাদের প্রতিটি পদক্ষেপই পরনিয়ন্ত্রিত। দৈনন্দিন জীবনের প্রতিটি পর্বেই এই নিয়ন্ত্রণ। সেটা রাষ্ট্রীয় সীমানার সঙ্গে সম্পর্কিত নয়। মানুষের সম্পূর্ণ ভূগোল জুড়েই এই নিয়ন্ত্রণ। তাহলে আর স্বাধীনতা থাকে না। ব্যক্তি আমি যা করতে চায় তার সবটাই কারও না কারও অথবা অনেকের নির্দেশিত। আর আছে আমাদের প্রভুত্বকামিতা। অন্যের সমস্ত ইচ্ছে অনিচ্ছেকে নির্বিচারে দ’লে, মাড়িয়ে আমাদের অনন্ত সুখ। অন্যের স্বাধীনতা হরণে নিজের প্রভুত্ব প্রতিষ্ঠার দুর্মর আকাঙ্ক্ষা।
জীবনের বাধ্যবাধকতায় ঘনিয়ে ওঠা অন্ধকারে জীবন বড় বিস্বাদ ঠেকে। স্বাদহীনতা চরম অতৃপ্তির দিকে ঠেলে দিতে পারে। সেরকম ক্ষেত্রেই কি মানুষ, ব্যক্তি মানুষ আত্মবিনাশের কথা ভাবে! আপাত সামঞ্জষ্য, সুশৃঙ্খলার আড়ালে কোথাও যেন ব্যত্যয় ঘটে যায়। সবটা আমাদের অনুভবে ধরা দেয় না। সেখানেই জীবনের গভীর, জটিল রহস্য। তবু জীবন অনন্ত, জীবন অবাধ, আগাধ। সবটাই একটেরে অন্ধকার নয়। সেখানে নানা সূক্ষ্ণ টেক্সচার। তবে, দেখতে জানতে হয়, অনুভব করা শিখতে হয়। জীবনের অপার রহস্য জীবনেরই জারণ রসে সিক্ত হয়ে উঠতে পারে। তখন আর স্বাদহীনতার প্রশ্ন নেই। ‘অহং’ অনুপস্থিত। তখনই উপলব্ধি এসে ধরা দিতে পারে জীবনের মায়া, সে বড় সুস্বাদু। জীবনের এই মায়া, এই অনন্ত সম্ভাবনা থেকে সরে যেতে থাকলে স্বাধীনতা থাকে না। আর, তখনই দুর্মর লড়াইয়ের ক্ষেত্র প্রস্তুত হতে থাকে। সেই লড়াইয়ের পরতে পরতেও নিহিত থাকে জীবনের স্বাদ এবং বহুবিধ স্বাদহীনতা।   
 
 

একক কবিতা সন্ধ্যা



সহজ কবিতা সহজ নয় কঠিনও নয়



মহুল ওয়েব প্রকাশিত বিভিন্ন সংখ্যা



করোনা Diary



আমাদের কথা

আমাদের শরীরে লেপটে আছে আদিগন্ত কবিতা কলঙ্ক । অনেকটা প্রেমের মতো । কাঁপতে কাঁপতে একদিন সে প্রেরণা হয়ে যায়। রহস্যময় আমাদের অক্ষর ঐতিহ্য। নির্মাণেই তার মুক্তি। আত্মার স্বাদ...

কিছুই তো নয় ওহে, মাঝে মাঝে লালমাটি...মাঝে মাঝে নিয়নের আলো স্তম্ভিত করে রাখে আখরের আয়োজনগুলি । এদের যেকোনও নামে ডাকা যেতে পারে । আজ না হয় ডাকলে মহুল...মহুল...

ছাপা আর ওয়েবের মাঝে ক্লিক বসে আছে। আঙুলে ছোঁয়াও তুমি কবিতার ঘ্রাণ...