মার্চ ২০২০                                                  প্রচ্ছদ–ঋত্বিক ত্রিপাঠী    

শিশুর স্বাধীনতা– শিশুর অধিকার ।। সহদেব প্রধান

swadhinota

এক.

সিংহাসনে সাদা চামড়ার বদলে বাদামি চামড়ার বসাটা স্বাধীনতা নয়। স্বাধীনতা হলো মানুষের কিছু মৌলিক অধিকার পূরণ। শিশুদের ক্ষেত্রেও এই কথা প্রযোজ্য। আন্তর্জাতিক আইন অনুসারে ১৮ বছর বয়সের নীচে সবাই শিশু। জীবন, স্বাস্থ্য, শিক্ষা, নিরাপত্তা, বিকাশের উপযুক্ত পরিবেশের অধিকারগুলি শিশুর মৌলিক অধিকার। শিশুই সভ্যতার ভবিষ্যত। এই কথাটা যেসকল দেশ ভালো বোঝে তারা সবচেয়ে সুখী দেশও বটে। যেমন আইসল্যান্ড । শিশুর অধিকার রক্ষায়  প্রথম স্থানে রয়েছে (দ্য কিডস রাইটস ইনডেক্স)। ‘দ্য ইনস্টিটিউট ফর ইকোনমিকস অ্যান্ড পিস’ —আইইপি’র তত্ত্বাবধানে তৈরি ‘গ্লোবাল পিস ইনডেক্স’ অনুসারে  আইসল্যান্ড গত দশ বছর ধরে সবচেয়ে সুখী দেশ। 
ভারতবর্ষের সংবিধানও পিছিয়ে নেই। যেমন—
♦ ৬ থেকে ১৪ বছরের মধ্যে প্রত্যেক শিশুর অবৈতনিক বাধ্যতামূলক প্রাথমিক শিক্ষার অধিকার (অনুচ্ছেদ—২১ ক)।
♦১৪ বছর বয়স পর্যন্ত যেকোনো জটিল ও ঝামেলার কাজ না করার অধিকার (অনুচ্ছেদ—২৪)।
♦বয়স বা শক্তির পক্ষে উপযুক্ত নয় এমন কোনো কাজে অর্থনৈতিক প্রয়োজনীয়তার কারণে যোগ দেওয়া এবং নিগৃহীত  হওয়া থেকে রক্ষা পাওয়ার অধিকার (অনুচ্ছেদ— ৩৯ঙ)।
♦ স্বাধীনভাবে ও মর্যাদার সঙ্গে এবং সুস্থভাবে বেড়ে ওঠার জন্য সবরকম সুযোগসুবিধা পাওয়ার অধিকার এবং নৈতিক ও বস্তুগত পরিত্যাগ ও নিগ্রহের বিরুদ্ধে শৈশব ও যৌবনকে রক্ষা করার অধিকার (অনুচ্ছেদ—৩৯ চ)।

এসব ছাড়াও যেকোনো প্রাপ্তবয়স্ক নারী বা পুরুষ যেসব অধিকার রয়েছে, ভারতীয় নাগরিক হিসেবে শিশুদেরও সেইসব অধিকার রয়েছে।
♦ সাম্যের অধিকার (অনুচ্ছেদ—১৪)।
♦ বৈষম্যের বিরুদ্ধে অধিকার (অনুচ্ছেদ—১৫)।
♦ব্যক্তিস্বাধীনতা ও আইনের যথাযোগ্য প্রক্রিয়ার অধিকার (অনুচ্ছেদ—২১)।
♦বেগার শ্রমিক হিসেবে কাজ করা এবং পাচার হওয়া থেকে বাঁচার অধিকার (অনুচ্ছেদ —২৩)।
♦ দুর্বল শ্রেণির মানুষদের সামাজিক অন্যায় ও সবরকম শোষণ থেকে রক্ষা পাওয়ার অধিকার (অনুচ্ছেদ—৪৬)।

১৯৯২ সালে ভারতবর্ষ শিশু সুরক্ষার বিশ্বব্যাপী আবেদনে সাড়া দিয়ে ১৯৮৯ সালে রাষ্ট্রপুঞ্জের অধিবেশনে গৃহীত শিশুর অধিকার সনদে স্বাক্ষর করে।

এছাড়া এখন শিশুদের সুরক্ষার জন্য নানা আইন রয়েছে। উন্নতির জন্য নানা প্রকল্প রয়েছে।

এতকিছু থাকা সত্ত্বেও কিডস রাইটস ইনডেক্স(২০১৯) অনুসারে শিশুর অধিকার রক্ষায় ভারতের স্থান—১১৩ ! বিশ্বের মধ্যে সবচেয়ে বেশি শিশুশ্রমিক ভারতে। প্রতি এগারো জনে একজন শিশু শ্রমিক। ৪০ ভাগ শিশু রয়েছে বিপজ্জনক অবস্থায়। স্কুলছুটের সংখ্যা দিনকে দিন বাড়ছে। অপুষ্টি, অশিক্ষা, ভ্রুণ হত্যা, শিশুবিক্রি, অবহেলা, শারীরিক মানসিক যৌন নির্যাতন, আইনের জালে জড়িয়ে থাকা শিশু, শিশুদের অপরাধ প্রবণতা বাড়তেই আছে। এছাড়া শারীরিকভাবে অক্ষম শিশুদের এবং দুর্যোগপিড়ীত শিশুদের অবস্থাও খুব একটা ভালো জায়গায় নয়।

সরকার জানাচ্ছে, তাদের সবরকম প্রচেষ্টা চলছে। সত্যিই কি তাই ?
সরকার বলতে মূলত ক্ষমতায় থাকা দল হলেও তার সিংহভাগ জুড়ে আছে যেকোনো ক্ষমতাধর ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠান।  প্রত্যেকে সমাজের প্রতি যে যার কর্তব্যে তৃপ্ত। সেইসব লোকদেখানো দায়িত্বের ফাঁকিগুলি না তুলে ধরতে পারলে শিশুরা তাদের অধিকার কোনোদিনও ফিরে পাবে না।

দুই.

শিশুর অধিকার রক্ষায় সবচেয়ে চর্চিত বিষয়— শিশুশ্রমিক । আমাদের দৃষ্টিকোণ থেকে শিশুশ্রমিক দু’প্রকার—১) নিম্নবিত্ত এবং নিম্নমধ্যবিত্ত পরিবারের শিশু ২) মধ্যবিত্ত এবং উচ্চবিত্ত পরিবারের শিশু।  প্রথমভাগটি প্রধান হলেও শেষেরটি উপেক্ষা করা যায় না।

আগেই বলেছি, পৃথিবীর সবচেয়ে বেশি শিশুশ্রমিক ভারতে। মোট শ্রমিকের পাঁচ শতাংশ শ্রমিক শিশু। রাজস্হান বিহার উত্তরপ্রদেশ ঝাড়খণ্ডে আরও বেশি— ছ শতাংশের উপর। পশ্চিমবঙ্গে  ৪- ৫  শতাংশ। কেরালা, তামিলনাড়ু, ত্রিপুরাতে অনেক কম। যথাক্রমে ০-৯, ২-৪, ২-৯ শতাংশ। (- পয়েন্ট চিহ্ন, সূত্র—আনন্দবাজার পত্রিকা, ২৬ মার্চ ২০১৫)

২০০৭ এ সেভ দ্য চিল্ডরেন-এর একটি সমীক্ষা থেকে দেখা যাচ্ছে শুধু কলকাতাতেই ৫০ ০০০ শিশু (বেশিরভাগই মেয়ে) গৃহশ্রমে যুক্ত। এখন সংখ্যাটা কত অনুমান করা যায়!

শিশুশ্রম (রোধ ও নিয়ন্ত্রণ) আইন ১৯৮৬ অনুযায়ী ১৪ বছর পূর্ণ হয়নি এমন ব্যক্তি মাত্রই শিশু। ওই আইনের ক এবং খ তফশিলে তালিকাভুক্ত ১৮ টি পেশা ও ৬৫ রকম কাজে শিশুদের নিয়োগ আইন অনুযায়ী নিষিদ্ধ (ধারা ৩)।
এই আইন লঙ্ঘন করে কোনও শিশুকে নিয়োগ করলে তার তিন মাস থেকে ১ বছর পর্যন্ত কারাবাস অথবা ১০০০০ থেকে ২০০০০ টাকা পর্যন্ত জরিমানা হতে পারে (ধারা১৪)।

১৯৮৭ সালের আগস্ট মাসে প্রণীত শিশুশ্রম সংক্রান্ত জাতীয় নীতিতে শিশুশ্রম সমস্যার মোকাবিলায় একটি অ্যাকশান প্ল্যান তৈরি করা হয়। এতে আছে—
♦ একটি আইনি অ্যাকশান প্ল্যান।
♦যেখানে যেখানে সম্ভব সেখানে সাধারণভাবে শিশুদের উন্নতিকল্পে কর্মসূচি গ্রহণ।
♦যেখানে বহু শিশু কাজের সঙ্গে যুক্ত সেখানে শিশুদের জন্য প্রকল্পভিত্তিক অ্যাকশান প্ল্যান তৈরি এবং রূপায়িত করা।

জাতীয় শিশুশ্রমনীতি অনুসারী পদক্ষেপ হিসেবে শিশুশ্রমিকদের পুনর্বাসনের লক্ষ্যে ১৯৮৮ সালে শুরু হয় এন সি এল পি পরিকল্পনা। এই পরিকল্পনা প্রাথমিকভাবে  বিপজ্জনক কাজ ও পেশায় নিযুক্ত শিশুদের পুনর্বাসনে নজর দেয়।

কয়েকদিন আগে জাতীয় শিশুসুরক্ষা অধিকার কমিশনের চেয়ারপার্সন প্রিয়াঙ্কা কানুনগো বলেছেন , ‘শিশুশ্রমিক দেখামাত্র পুলিশে এফ আই আর করতে হবে। এটা আমাদের সবার কর্তব্য। চুপ করে বসে থাকলে হবে না। ’
ইতিমধ্যে সরকার ‘ন্যাশানাল প্রজেক্ট ফর চাইল্ড লেবার’(এন পি সি এল) শুরু করেছে। যার দ্বারা শিশু শ্রমিকদের পুনর্বাসনের ব্যবস্থা করা হবে।

এবার একটা গল্প বলি। বনের শাসক বাঘ—বাঘের দল। প্রতিদিন বাঘের দল অন্যান্য পশুদের ধরে খায়। একদিন প্রজা-পশুদের কয়েকজন বাঘ রাজার কাছে প্রতিবাদ জানাতে গেল। বাঘ-রাজা কিছু না জানার ভান করে দোষীদের শায়েস্তা করবেন প্রতিশ্রুতি দিলেন। সামনের গাছের চারপাশে বার দশেক পাক খেয়ে প্রতিবাদের হুঙ্কারে ঘাম ঝরিয়ে ফেললেন। প্রজারা দেখে ভাবল, রাজা খুব কাজ করছে। খুশি হয়ে তারা চুপ হয়ে গেল।

শিশুশ্রমিকদের জন্য সরকারের ভাবনাটাও বাঘরাজার মতো।

ঠিকঠাক খাওয়া পরা থাকার ব্যবস্থা থাকলে কোনো শিশু শখ করে শ্রমিক হয় না। সরকার সেই প্রতিশ্রুতি কতটা পূরণ করেছে ? যে কাজগুলোর ওপর নিষেধাজ্ঞা জারি হয়েছে সেই কাজেই তো প্রায় সব শিশুশ্রমিক জড়িয়ে। কার শাস্তি হচ্ছে ? কেনই বা শাস্তি হবে ! কাজ করা ছাড়া তাদের কাছে আর কোনো রাস্তা আছে ?
♦ সোনোম ওয়াংচুক লাদাখে এমন বিদ্যালয় তৈরি করেছেন যেখানে স্থান পায় ফেল করা শিক্ষার্থীরা। তারা পড়াশুনোর সাথে কাজও করে। নিজের প্রয়োজন নিজেই মিটিয়ে নেয়। ভবিষ্যতে তারা স্ব স্ব ক্ষেত্রে সফল। রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরও চেয়েছিলন এমন স্বনির্ভর আবাসিক শিক্ষা ব্যবস্থা। কেন সরকার সারা দেশে সেই মডেল চালু করছে না ?
এমন আনন্দময় শিক্ষার পরিবেশ, থাকা খাওয়া পরার সুবন্দোবস্ত, স্বনির্ভরতা থাকলে কোন শিশু শ্রমিক হতে চায় ?
♦ শিশুশ্রমিকের প্রধান কারণ আমরা মনে করি  উচ্চবিত্ত — মধ্যবিত্ত  মানুষ এবং মিডিয়া বুদ্ধিজীবীদের এ বিষয়ে নিস্পৃহতা । পরোক্ষে উৎসাহদান। এদের কাছে দুঃস্থ পরিবারের শিশুদের পাশে দাঁড়ানো মানে তাদের কিছু দান করা।
এরা সবসময় শঙ্কিত থাকে, এই বুঝি সমাজে তাদের উচ্চাসন হাতছাড়া হয়ে গেল। এরা ভাবে, সবাই শিক্ষিত হয়ে গেলে কম টাকায় মজুর খাটবে কে! এরা মনে করে, বৈষম্য ঈশ্বরের সৃষ্টি। তাকে বদলানো যায় না।

কৈলাস সত্যার্থী শিশুদের অধিকার রক্ষার কাজের জন্য নোবেল পুরস্কার পেয়েছেন ২০১৪ তে। বহু শিশুকে তিনি শ্রমিকের পথ থেকে মূলধারায় এনেছেন। অনেক এন জি ও সংস্থাও এই কাজ করছেন। কিন্তু যা করলে শিশুশ্রমিক থাকবে না, সে বিষয়ে টুঁ শব্দ করেন না। তাহলে পুরস্কার জুটবে কীভাবে !

শিশুশ্রমিকের মূল কারণ এবং সমাধান আমরা উল্লেখ করলাম। এছাড়া শিশুশ্রমের আরও কিছু কারণ  তুলে ধরছি। এই সমস্যাগুলি নিয়েও বিশদে আলোচনা করা উচিত এবং সেক্ষেত্রে সমাধানের রাস্তা আমাদের কাছে স্পষ্ট হবে।
১) দারিদ্র্য।
২) পিতা-মাতার অশিক্ষা, অসচেতনতা।
৩) শিক্ষা একটি অ-লাভজনক কাজ— এই ধারণা।
৪)ভবিষ্যতে পেশা বা চাকুরির অনিশ্চয়তা।
৫)অনাথ বা অভাবগ্রস্ত শিশুদের জন্য সরকারি বা বেসরকারি কী ব্যবস্থা রয়েছে সে বিষয়ে কারোর স্পষ্ট ধারণা না থাকা।
৬) গরিব পরিবারে বহু সন্তান।
৭)অল্প বয়স থেকে নেশাগ্রস্ত হয়ে মূলধারায় না যাওয়ার প্রবণতা।
৮) কম টাকায় মজুর পাওয়ার জন্য মালিকদের উৎসাহ দান।
৯)পারিবারিক বিপর্যয়।
১০)প্রাকৃতিক বিপর্যয়।

প্রাকৃতিক বিপর্যয় ২০২০ সালে অন্য অর্থ নিয়ে এসেছে। বিশ্বব্যাপী করোনা সন্ত্রাসে বিদ্যালয় বন্ধ হয়ে যাওয়ার কারণে শিশুশ্রমিকের সংখ্যা হু হু করে বাড়ছে। এরপর তারা কি আবার স্কুলে ফিরবে ? এই করোনা সন্ত্রাস কি প্রাকৃতিক না পরিকল্পিত ? এই বিতর্কও চলছে। সময় সঠিক হিসেব দেবে। আমরা আশাবাদী। সব বিপর্যয় ঠেলে একদিন ঘুরে দাঁড়াবই।

তিন.

মানব সম্পদ উন্নয়ন মন্ত্রনালয়ের  অধীনে একটি স্বায়ত্তশাসিত সংস্থা ন্যাশানাল ইনস্টিটিউট অফ এডুকেশানাল প্ল্যানিং অ্যান্ড অ্যাডমিনিস্ট্রেশন বা এন আই ই পি ’র রিপোর্ট (২০১৮) বলছে, প্রাথমিক, মাধ্যমিক, উচ্চমাধ্যমিক—সমস্ত বিদ্যালয়গুলিতেই স্কুল ছুটের হার বৃদ্ধি পেয়েছে।
একটি সংবাদপত্রের রিপোর্ট অনুযায়ী সরকারি এবং সরকার পোষিত বিদ্যালয়ে শতকরা চল্লিশভাগ শিক্ষার্থী ঠিকঠাক লিখতে পড়তে পারে না।

ইউনিসেফের পরিসংখ্যানে (২০১৯) ভারতে ২৭ শতাংশ মেয়ের বিয়ে হয় ১৮ বছরের কমে। ৭ শতাংশ মেয়ের বিয়ে হয় ১৫ বছরের কমে। পশ্চিমবঙ্গ বিহার রাজস্থানে ৪০ শতাংশ মেয়ের বিয়ে হয় ১৮ বছর বয়সের কমে। তামিলনাড়ু কেরালায় ২০ শতাংশের কম।

বিশ্ব ক্ষুধা সূচকে (হাঙ্গার ইনডেক্স) ভারতের স্থান —এক শত দুই। দ্য স্টেট অব দ্য ওয়ার্ল্ডস চিল্ডরেন, ২০১৯’শীর্ষক রিপোর্টে বলা হয়েছে, ভারতে প্রতি হাজারটি শিশুর মধ্যে ৩৭ টি শিশুর মৃত্যু হয় অপুষ্টি সহ নানা কারণে। ইউনিসেফের রিপোর্ট অনুযায়ী ২০১৮ তে ভারতে ৯০০০০০ শিশুর মৃত্যু হয়েছে অপুষ্টির কারণে। বিশ্বের ৪০ শতাংশ অপুষ্টিতে ভোগা শিশু ভারতেই রয়েছে।

যখন সুস্থ শিশুরাই অবহেলিত তখন প্রতিবন্ধী বা বিশেষভাবে সক্ষম শিশুরা কতটা বঞ্চনার মধ্যে বেঁচে আছে সহজেই অনুমেয়। ইউনেস্কো’র রিপোর্ট (২০১৯) অনুযায়ী ভারতে ৭৫ শতাংশ প্রতিবন্ধী শিশু স্কুলে যায় না।
যদিও বর্তমানে তাদের জন্য মাসিক ১০০০ টাকা ( কেউ কেউ ৬০০ টাকা পাচ্ছে, যেটা রাজ্যসরকারের আওতায় ছিল, এখন ১০০০ টাকা পাওয়ার প্রক্রিয়ার মধ্যে রয়েছে) ভাতার ব্যবস্থা রয়েছে তবে তাদেরকে স্বনির্ভর করে তোলার মতো উপযুক্ত ব্যবস্থা প্রায় নেই বললেই চলে। মানসিক প্রতিবন্ধীদের আরও খারাপ অবস্থা। যাদেরকে একটু চিকিৎসা করলেই সুস্থ হয়ে যেত তারাও আজীবন পাগল বা পাগলি হয়ে রয়ে যায়।

ন্যাশানাল হিউম্যান রাইটস অফ ইন্ডিয়া’র রিপোর্ট অনুযায়ী ভারতে প্রতি বছর চল্লিশ হাজার শিশু পাচার হয়। তার মধ্যে এগারো হাজার শিশুর খোঁজ কখনোই পাওয়া যায় না।

ন্যাশানাল ক্রাইম রেকর্ড ব্যুরো’র রিপোর্ট(২০১৮) অনুযায়ী, ভারতে প্রতিদিন ১০৯ জন শিশুকে ধর্ষণ বা যৌন হেনস্থা করা হয়। শুধু মেয়ে শিশু নয়, অনেক কম হলেও ছেলে শিশুর পরিসংখ্যানটাও চোখে পড়ার মতো।
এ তো শুধু নথিভুক্ত হয়তো এর বাইরে রয়েছে আরও বড় পরিসংখ্যান। যৌনহেনস্থা নিয়ে অন্য যে বিষয়টি এড়িয়ে যাওয়া হয় তা হলো আজকের মোবাইল টিভির খোলামেলা অনুষ্ঠান বা ভিডিও শিশুদের খুব কমবয়সেই  যৌনআগ্রহী করে তুলছে। যেটা শিশুর প্রকৃত বিকাশকে বিকৃত করে দিচ্ছে।

এছাড়া অনুন্নত আর্থ-সামাজিক পরিস্থিতির জন্য গৃহ বিদ্যালয় বা কাজের ক্ষেত্রে শিশুদের যে দৈহিক ও মানসিক অত্যাচারের সম্মুখীন হতে হয় তার সঠিক তথ্য না থাকলেও  সমস্ত শিশুকেই কোনো না কোনো সময় সেই অভিজ্ঞতার মুখোমুখি হতে হয়।

এই যে নানা ক্ষেত্রে শিশুবঞ্চনার পরিসংখ্যান তুলে ধরলাম , প্রতিটি ক্ষেত্রেই সরকারি আইন প্রকল্প পদক্ষেপ রয়েছে, বেসরকারি সংস্থার কাজ রয়েছে যাতে শিশু অত্যাচারিত বা বঞ্চিত না হয়। শিশু তার বিকাশের যথার্থ অধিকার পায়। তা সত্ত্বেও বঞ্চনা আরও বেড়ে চলছে। আইন বা পদক্ষেপগুলির  ফাঁকি এবং বঞ্চনার ভয়াবহ ফল— সমাধান নিয়ে বিস্তারিত আলোচনা করতে গেলে একটি বই লিখতে হয়।
আমরা এই প্রবন্ধে সংক্ষেপে সমাধানের মূল জায়গাতে আলোকপাত করব ।

চার.

সমস্ত সমস্যার মূলে দারিদ্র্য — একথা সবাই স্বীকার করলেও , বেশিরভাগই স্বীকার করে না দারিদ্র্য , অধিকারের বৈষম্য ইচ্ছাকৃতভাবে তৈরি করা। কষ্ট করে সেটা যদিও মেনে নেয়, মানতে চায় না রিক্সা চালক ডাক্তার মন্ত্রী বড় ব্যবসায়ীর - - - শিক্ষা স্বাস্থ্য নিরাপত্তায় সমান অধিকার থাকা উচিত। যতই চেষ্টা করা হোক, বোঝানো প্রায় অসম্ভব।

কিন্তু এটা সহজে বোঝানো যায় যে, সব শিশুই সমান সম্ভাবনা তথা কোনো না কোনো প্রতিভা নিয়ে জন্মায়। কারণ এই পরীক্ষিত সত্য প্রত্যেক শিক্ষককে মুখস্ত করে পেশায় প্রবেশ করতে হয়।প্রকৃত শিক্ষার মধ্য দিয়ে শিশুদের যথার্থ মানব সম্পদ করে তোলা যায়।
কিন্তু কীভাবে করা যাবে সেই শিক্ষাব্যবস্থার পরিকল্পনা ক্ষমতার দৌড়ে থাকা কোনো রাজনৈতিক দলের ইস্তেহারে বা মাথায় নেই। যা রয়েছে তা টিউশান নির্ভর কাড়াকাড়ি শিক্ষা ব্যবস্থা। গরিব পরিবারের শিশুদের বঞ্চিত করে পয়সাওয়ালাদের বিকৃত শিক্ষা—ডিগ্রি—পেশা লুটে নেওয়ার দৌড়।
এখানে শিশুদের বন্ধুর সাথে আড্ডা নেই, অবসরের খেলা নেই, দাদু-ঠাকুমার গল্প নেই, কল্পনার অবকাশ নেই, প্রশ্ন করার অভ্যাস নেই, কাজের সাথে—মানুষের সাথে মেশার সংস্কৃতি নেই, সৃজনশীলতা নেই, বিশ্বাস নেই, ভরসা নেই, আদর্শ নেই, শ্রদ্ধা নেই, অনুভূতি নেই...
আছে শুধু দৌড়। প্রথম হওয়ার। শিক্ষা নিয়ে কতোগুলো সিনেমা খুব হিট করল—‘চলো পাল্টাই’, ‘তারে জমিন পর’, ‘ থ্রি ইডিয়টস’। প্রত্যেকটি সিনেমাই শেষে নিজের বিষয়ে প্রথম হওয়াকেই সাফল্য বলে তুলে ধরল। সমালোচনা হলো না।

আমরা প্রথমে মধ্যবিত্ত এবং উচ্চবিত্ত পরিবারের শিশুশ্রমিকদের কথা উল্লেখ করেছিলাম। অসুস্থ প্রতিযোগিতায় যে শিশুদের ঢুকতে বাধ্য করা হয়েছে তারা শ্রমিক নয় কি ?  তফাৎ, ভবিষ্যতে একদল শোষণ করবে। অন্যদল মুখ বুজে শোষিত হবে।

আমরা যে অন্যায়েরই প্রতিবাদ করি না কেন, যে বিষয় নিয়ে ব্যস্ত থাকি না কেন সচেতন মানুষ হিসেবে শিক্ষার সমান অধিকার নিয়ে কথা বলা তথা জনগণকে সচেতন করা প্রথম দায়িত্ব।
পশ্চিমবঙ্গে প্রতীচী ট্রাস্ট শিশুদের অধিকার নিয়ে গবেষণামূলক অনেক কাজ করছেন। কোথায় কারা কীরকম কাজ করছে, কী করলে ভালো হয় তা নিয়ে নিরন্তর খোঁজ করে যাচ্ছে। কিন্তু জনগণকে সচেতন করার কাজ তেমন নেই। এই দায়িত্ব কারা নেবে ? পশ্চিমবঙ্গে এখন লেখক সংখ্যা নাকি ১০ লক্ষ! লিটিল ম্যাগাজিন ৫ হাজার ! আমরা প্রায় প্রত্যেকেই রবি ঠাকুরকে গুরুদেব মানি। অথচ তাঁর মতো কাজের কথা ভাবি না। কোনো সমস্যা নিয়ে স্পষ্ট কথা বলতে শিখিনি। চুপচাপ থাকাটাই শিল্প! শিল্পী হওয়ার মাপকাঠি !
সরকার বা অন্য জনগণ কী করবে সে পরের কথা, প্রথম দায়িত্ব নিতে হবে সংস্কৃতি চর্চার সাথে যুক্ত ব্যক্তিগণকে। তাদের দায়িত্ব নিতে হবে জনগণকে সচেতন করানোর।
আর একটি কথা বলে এই প্রবন্ধ শেষ করবো, তা হলো, বিনোদনমূলক প্রতিবাদের পরিবর্তে পরিকল্পনামাফিক কাজ করা। ধরা যাক পাঁচ জন মিলে পরিকল্পনা করলাম, একটি বিশেষ এলাকায় পাঁচ বছরের মধ্যে সমস্ত শিশু শ্রমিককে পড়াশুনোর অভ্যাসের মধ্যে আনব। তারপর পুরো কাজের মডেলটা সবার কাছে ছড়িয়ে দেব। অন্য কোথাও আরও ভালো পদ্ধতি থাকলে তা জেনে প্রয়োগ করব। এই রকমভাবে শিশুর বঞ্চনার বা অত্যাচারের সমস্ত ক্ষেত্রে কাজ করা উচিত।
সমান অধিকারের দাবিতে কাজ করাটা একটা সংস্কৃতি সেই সংস্কৃতি আনার জন্য আলোড়ন শুরু হোক।

একক কবিতা সন্ধ্যা



সহজ কবিতা সহজ নয় কঠিনও নয়



মহুল ওয়েব প্রকাশিত বিভিন্ন সংখ্যা



করোনা Diary



আমাদের কথা

আমাদের শরীরে লেপটে আছে আদিগন্ত কবিতা কলঙ্ক । অনেকটা প্রেমের মতো । কাঁপতে কাঁপতে একদিন সে প্রেরণা হয়ে যায়। রহস্যময় আমাদের অক্ষর ঐতিহ্য। নির্মাণেই তার মুক্তি। আত্মার স্বাদ...

কিছুই তো নয় ওহে, মাঝে মাঝে লালমাটি...মাঝে মাঝে নিয়নের আলো স্তম্ভিত করে রাখে আখরের আয়োজনগুলি । এদের যেকোনও নামে ডাকা যেতে পারে । আজ না হয় ডাকলে মহুল...মহুল...

ছাপা আর ওয়েবের মাঝে ক্লিক বসে আছে। আঙুলে ছোঁয়াও তুমি কবিতার ঘ্রাণ...