logo corona

গ্রেটা থুনবার্গ : জলবায়ু পরিবর্তন রোধে যৌবনের দূত ।। ভাস্করব্রত পতি

 greata

পুরো নাম গ্রেটা টিনটিন ইলেওনোরা এর্নম্যান থুনবার্গ। ২০০৩ এর ৩ জানুয়ারি জন্মগ্রহণ করেন সুইডেনের এই পরিবেশ কর্মী। জলবায়ু পরিবর্তনের মোকাবিলায় তাঁর আন্দোলন আজ সারা বিশ্বের মানুষ জেনে গিয়েছে। সবাই আজ স্যালুট করে সপ্তদশী এই তরুণীর লড়াইকে।

সাধারণ একজন স্কুল শিক্ষার্থী হয়ে জলবায়ু পরিবর্তন মোকাবিলায় অনতিবিলম্বে যথাযথ কার্যকরী পদক্ষেপ গ্রহণের জন্য সুইডেন সংসদের বাইরে প্রতিবাদ শুরু করেন। তখন থেকে তিনি জলবায়ু কর্মী হিসেবে পরিচিতি পান।

ভূমণ্ডলীয় উষ্ণতা বৃদ্ধি পাচ্ছে। গ্লোবাল ওয়ার্মিং বাড়ছে। অথচ বিশ্বের তাবড় তাবড় দেশগুলোর হুঁশ নেই। অথচ সামান্য একটা ১৭ বছরের বাচ্চা মেয়ের মনে সেই সমস্যা আঘাত করেছে। ছোট্ট মুখে তাঁর আবেদন তা নিরসনে। দ্ব্যর্থহীনভাবে তাঁর আন্দোলন বিশ্বজুড়ে জনপ্রিয়তা পেয়েছে পরিবেশপ্রেমী থেকে শুরু করে সকল মানুষের চোখে। তিনি স্পষ্ট কথা বলার জন্য সুখ্যাত। যেখানেই বক্তব্য রাখেন সেখানে চাঁচাছোলা বক্তব্য রাখতে জুড়ি মেলা ভার।

আমরা চিনি গ্রেটা থুনবার্গ নামেই। সুইডেনের রাজধানী স্টকহোমে তাঁর বাড়ি। বাবা হলেন সোভান্তে থুনবার্গ। অভিনেতা। মায়ের নাম মালেনা এরম্যান। তিনি অপেরা শিল্পী। এক দাদা আছেন, ওলফ থুনবার্গ। তিনি একাধারে অভিনেতা ও পরিচালক। তাঁর এই কাজে সমর্থন জুটেছে পরিবার থেকেও। আজ তিনি বিশ্বজুড়ে পরিচিত এক নাম।

২০১৮ সালের আগস্টে তিনি নিজের উদ্যোগে জলবায়ু পরিবর্তন রোধে প্রতিবাদ শুরু করেন অভিনব ভাবে। তাঁর এই আন্দোলন ‘ফ্রাইডেস ফর ফিউচার’ নামে পরিচিত। খুব সাড়া মেলে চারিদিকে।

United Nations Climate Change Conference (COP24) ২০১৮ তে তিনি বলেন, "The world leaders present were not mature enough to tell it like it is"। এরপর ঐ বছরই নভেম্বরে তিনি জলবায়ু পরিবর্তন মোকাবিলায় স্কুল অবরোধের ডাক দেন প্রথম।

২০১৯ এ সুইডেন পার্লামেন্ট ভবনের বাইরে তাঁর ‘স্কুল স্ট্রাইক ফর ক্লাইমেট’ আন্দোলনে অসংখ্য স্কুলশিক্ষার্থী অনুপ্রাণিত হয়। তাঁর আন্দোলনের সাথে যোগদান করে। ১১২ টি দেশের আনুমানিক ১.৪ মিলিয়ন শিক্ষার্থী তাঁর ডাকে সাড়া দিয়ে জলবায়ু প্রতিবাদ কর্মসূচিতে অংশগ্রহণ করে।

এই বছরের ১৪ - ২৮ শে আগষ্ট টানা ১৫ দিন ধরে তিনি আটলান্টিক মহাসাগরের ওপর দিয়ে ইংল্যান্ডের প্লাইমাউথ থেকে আমেরিকার নিউইয়র্ক পর্যন্ত পাড়ি দেন একটা ১৮ মিটার লম্বা 'মালিজিয়া ২' নামে রেসিং নৌকায়। সম্পূর্ণ সৌর বিদ্যুতের সাহায্যে চলে সেটি। বিশ্বজুড়ে কার্বন নিঃসরণের পরিমাণ বাড়ছে, তা রোধ করা জরুরি -- এটা বোঝাতেই তিনি এই পন্থা অবলম্বন করে সাড়া ফেলে দেন।

এই ২০১৯ এর ২৩ শে সেপ্টেম্বরে নিউইয়র্কে United Nations Climate Action Summit তে তিনি আমন্ত্রিত হন। সেখানে বক্তব্য রাখতে গিয়ে বলেন "This is all wrong. I shouldn’t be up here. I should be back in school on the other side of the ocean. Yet you all come to us young people for hope? How dare you! You have stolen my dreams and my childhood with your empty words. And yet I'm one of the lucky ones. People are suffering. People are dying. Entire ecosystems are collapsing. We are in the beginning of a mass extinction. And all you can talk about is money and fairy tales of eternal economic growth. How dare you!"

ঐ বছরের ২০ - ২৭ শে সেপ্টেম্বর তাঁর উদ্যোগে বিশ্বজুড়ে পালিত হয় "জলবায়ু ধর্মঘট"। তিনি ২৭ শে সেপ্টেম্বর মন্ট্রিলে অংশগ্রহণ করেন Global Climate Strike তে। সেদিন স্লোগান ছিল 'জলবায়ু পরিবর্তন রোধে রাষ্ট্র ব্যবস্থা নাও, প্রতিরোধ করো বিশ্ব উষ্ণায়ন', 'ব্যবস্থাকে বদলাও, জলবায়ু কে নয়', 'দূষনমুক্ত পরিবেশ আমাদের অধিকার, আমাদের প্রজন্মই শেষ নয়, আওয়াজ তোলো বিশ্বময়', 'অপ্রচলিত শক্তির ব্যবহার বাড়াতে হবে, আমাদের একটাই পৃথিবী, আসুন একে রক্ষা করি', 'অ্যান্টার্কটিকায় বরফ গলছে, সুন্দরবনে দ্বীপ ডুবছে, একটি গাছ লক্ষ প্রাণ, উষ্ণায়ণ প্রতিরোধে গাছ লাগান' ইত্যাদি। সারা বিশ্বের হাজারের বেশি শহরের স্কুল কলেজের কয়েক লক্ষ ছাত্রছাত্রীরা সেদিন ধর্মঘটে শামিল হয়েছিল অভিনব ভাবে। বিশাল আলোড়ন পড়ে সর্বত্র।

এ বছরের শুরু থেকেই COVID 19 এ আক্রান্ত সারা বিশ্ব। স্কুল কলেজ বন্ধ। চারিদিকে কোয়ারান্টাইন, মুখাবরণ ব্যবহার, সামাজিক দূরত্ব বজায় রাখার পদ্ধতি চলছে। সারা পৃথিবী যেন থমকে গিয়েছে এক লহমায়। পরোক্ষভাবে গ্রেটা থুনবার্গের Climate Strike কে বাস্তবায়িত করেছে। কমছে দূষণ। কমছে কার্বন নিঃসরণ। কিন্তু তা যথেষ্ট নয়। COVID 19 কিছুটা সমাধান করলেও আগামীর জন্য চাই সঠিক এবং আরও সদর্থক উদ্যোগ। গত ১৩ ই মার্চ তিনি বলেন, "In a crisis we change our behaviour and adapt to the new circumstances for the greater good of society."

চলতি বছরের ২০ শে আগষ্ট তিনি প্রথম স্কুল স্ট্রাইকের বর্ষপূর্তি পালন করেন। দেখা করেন জার্মান চ্যান্সেলর অ্যাঞ্জেলা মর্কেলের সাথে। সঙ্গে ছিলো তাঁর সহযোগী আনুনা ডি ওয়েভার, অ্যাডিলেড চার্লিয়ার, লুইসা নিউবাউয়ের এবং ভ্যান ডার হেইডেন। তাঁরা সিদ্ধান্ত নিয়েছেন, আগামী ২৫ শে সেপ্টেম্বর আবারও জলবায়ু ধর্মঘট পালিত হবে সারা বিশ্বে।

এই অতিমারির দাপট এড়িয়ে গত ২৪ শে আগষ্ট ফের স্কুলে যাওয়া শুরু করেছেন তিনি। গত বছরের জুন থেকে নানা আন্দোলনে জড়িয়ে গিয়ে তিনি আর স্কুলে যাননি। সবাই ভেবেছিল সে বোধহয় পড়া ছেড়েই দিয়েছে। এবছর আবারও কাঁধে বইয়ের ব্যাগ নিয়ে সাইকেল চালিয়ে স্কুলে যাওয়া শুরু করেছেন। পড়াশোনা বন্ধ করে আন্দোলন নয়‌। এটাও বুঝিয়ে দিতে চেয়েছেন বিশ্বের আপামর ছাত্র ছাত্রীদের।

যখন তাঁর মাত্র ১১ বছর বয়স, তখন তিনি একটা মানসিক রোগের শিকার হয়ে পড়েন। খুব হতাশ হয়ে পড়েছিলেন তখন। কথা বলা, খাওয়া বন্ধ হয়ে গিয়েছিল। মাত্র দু'মাসে দশ কেজি ওজন কমে যায় তাঁর৷ এরপর তাঁকে বেশ কিছুদিন চিকিৎসা করা হয়। আসলে তাঁর সবচেয়ে বড় ডিসঅর্ডার ছিল, তিনি কেবল প্রয়োজনের সময়টুকুতেই কথা বলতেন। বাকি সময় চুপ থাকতেন। এক সাক্ষাৎকারে জানা গিয়েছে যে গ্রেটা থুনবার্গ মাত্র আট বছর বয়সে প্রথম জলবায়ু পরিবর্তনের কথা শুনতে পান। কিন্তু তিনি বুঝতে পারেননি যে কেন এ বিষয়ে বিশ্বজুড়ে কোনো রকম সদর্থক পদক্ষেপ নেওয়া হয়নি। খুব হতাশ হয়ে ওঠেন ছোট্ট গ্রেটা। তাঁর যেন মনে হয়েছিল সে যদি এই বিষয়ে প্রতিবাদ না করে, তবে হয়তো ভিতরে ভিতরে শেষ হয়ে যাবে। একটা চরম মানসিক উৎপীড়ন এবং দোলাচলতা তাঁর অন্তরাত্মায় দোলায়িত হচ্ছিল। সেসময় তাঁর বাবা তাঁকে বিদ্যালয়ে যেতে দেয়নি। সেটাও মানা সম্ভব ছিলোনা তাঁর৷ কিন্তু তাঁর বাবা তাঁকে বাধা দেয়নি বাইরে গিয়ে প্রতিবাদ করতে। তিনি এগিয়ে গিয়েছিলেন সামনের দিকে।

তিনি তাঁর পরিবারের লোকজনকে জলবায়ু সংক্রান্ত নানা ধরনের গ্রাফ এবং ডাটা সহকারে দেখানোর চেষ্টা করেছিলেন যাতে তাঁরা পরিবেশের ক্ষতি না করে। কিন্তু এটি কার্যকর হয়নি। তখন তিনি তাঁর পরিবারকে সতর্ক করে বলেছিলেন যে, তাঁরা তাঁর ভবিষ্যৎ নষ্ট করছেন৷ প্রায় দু'বছর ধরে, থুনবার্গ তাঁর পরিবারের পক্ষ থেকে কার্বন নিঃসরণ কমিয়ে দেওয়ার জন্য বলেন এবং তিনি নিজেও নিরামিষাশী হয়ে উঠেন। বিশ্বজুড়ে কার্বনের প্রভাব কমাতে তাঁর পরিবারের সব সদস্যকে বিমানে চড়তে বারণ করেন। তিনি নিজেও বন্ধ করে দেন বিমানে চড়া। অথচ বিমানে চড়া তাঁর মায়ের নিত্য প্রয়োজন ছিল পেশাগত কারণে। সন্তানের আব্দার এবং অকাট্য যুক্তির কাছে হার মানতে বাধ্য হন মালেনা। তিনি তাঁর কর্মজীবন ছেড়ে দেন বিমানে ওঠা থেকে বিরত থাকতে। আজ থুনবার্গ তাঁর বাবা মাকে সম্পূর্ণ কৃতিত্ব দেন এই কারণেই যে, তাঁদের জন্য আজ তিনি জীবনের মহা পরিবর্তন ঘটাতে পেরেছেন। আজ বিশ্বের মানুষ তাঁকে চিনেছে বিশ্বের জলবায়ু পরিবর্তন রোধে লড়াকু আন্দোলনকারী হিসেবে। সারা বিশ্বের অমিত শক্তিধর দেশগুলো আজ তাঁকে সমর্থন করতে বাধ্য হচ্ছে। 'সেন্স ফর্ম দ্যা হার্ট' (২০১৮) বইতে এই কাহিনী বিধৃত।

জলবায়ু পরিবর্তন রোধে তাঁর কাজের নিরিখে তিনি পেয়েছেন ফ্রিট অর্ডার পুরস্কার (২০১৯), রাচেল কারসন পুরস্কার (২০১৯), রাইট লাইভ লাভলিহুড পুরস্কার  (২০১৯), টাইম ম্যাগাজিন বর্ষসেরা ব্যক্তিত্ব (২০১৯), Ambassador of Conscience Award (২০১৯) এবং International Children's Peace Prize (2019)। এই ২০১৯ এর মার্চে নরওয়ের তিন সাংসদ তাঁকে নোবেল শান্তি পুরস্কারের জন্য মনোনীত করলেও তিনি অবশ্য তা পাননি। গ্রেটা থুনবার্গকে আন্ত-সংসদীয় সহযোগিতা বিষয়ক আঞ্চলিক সংস্থা 'নরডিক কাউন্সিল' পরিবেশ বিষয়ক পুরস্কারের জন্য মনোনীত করেছিল। তাঁর পরিবেশ রক্ষায় কাজের জন্য তাঁকে সুইডেন এবং নরওয়ে দুই দেশ থেকেই মনোনয়ন দেওয়া হয়। তবে স্টকহোমে আয়োজিত পুরস্কার প্রদান অনুষ্ঠানের দিন এক প্রতিনিধির মাধ্যমে পুরস্কার না নেওয়ার কথা জানিয়ে দিয়েছিলেন। অথচ এই পুরস্কারের মূল্য ছিল  সাড়ে তিন লাখ ড্যানিশ ক্রোনার তথা প্রায় ৪৩ লাখ ৯১ হাজার টাকা।

‘গুলবেনক্যিয়া প্রাইজ ফর হিউম্যানিটি’ পুরস্কার থেকে পাওয়া ১০ লক্ষ ইউরো থেকে ভারত ও বাংলাদেশের বন্যাদুর্গতদের সাহায্যে এক লাখ ইউরো দিয়েছেন তিনি। আসলে এই মুহূর্তে দক্ষিণ এশিয়ায় ভয়াবহ বন্যায় লাখ লাখ মানুষ ভুগছে। কোভিড ১৯ মহামারি ও সাইক্লোন আমফানেও তাঁরা চরমভাবে বিপর্যস্ত। এই অর্থ সেসব কাজে খরচ করবে ব্র্যাক সংস্থার সঙ্গে অ্যাকশন এইড বাংলাদেশ, অ্যাকশন এইড ইন্ডিয়া ও পরিবেশ বিষয়ক সংগঠন ’গুঞ্জ’। উল্লেখ্য, বাংলাদেশের প্রায় এক-তৃতীয়াংশ এলাকা বন্যায় প্লাবিত। প্রায় ২৮ লক্ষ মানুষ ক্ষতিগ্রস্ত। ভারতের বিভিন্ন এলাকায় প্রায় ৬৮ লক্ষ মানুষ ক্ষতিগ্রস্ত। তাঁদের স্বার্থে গ্রেটার দান অনস্বীকার্য।

তিনি বলেন, পরিবেশ রক্ষায় আমার আর কোনও পুরস্কারের প্রয়োজন নেই। আসলে নরডিক দেশগুলো তথা ডেনমার্ক, ফিনল্যান্ড, আইসল্যান্ড, নরওয়ে এবং সুইডেন জলবায়ু ইস্যুতে তাঁদের সঠিক দিশাতে থাকতে চাইছে না। কেবল সুন্দর সুন্দর কথা সর্বত্র। কিন্তু যখনই সত্যিকারের কার্বন নিঃসরণ এবং পরিবেশ সুরক্ষার আবেদন আসে, তখন তা অন্য গল্পগাথায় পর্যবসিত হয়ে যায়। কারো কোনো ভ্রুক্ষেপ থাকে না। এটাই কষ্টের। এটাই যন্ত্রণার। এখন আমরা সাধারণ নাগরিকরা হয়তো অনেক কিছুই না জেনে গ্রেটা থুনবার্গের লড়াইকে সমর্থন করছি। কিন্তু ঘটনা হোলো, থুনবার্গের লড়াই তাঁর নিজের বাঁচার জন্য নয়। সারা পৃথিবীর মানুষের জন্য। এটা বুঝতে হবে বিশ্বের দেশগুলির শীর্ষকর্তাদের।

WhatsApp Image 2020 09 04 at 61205 PM

একক কবিতা সন্ধ্যা



মহুল ওয়েব প্রকাশিত বিভিন্ন সংখ্যা



করোনা Diary



আমাদের কথা

আমাদের শরীরে লেপটে আছে আদিগন্ত কবিতা কলঙ্ক । অনেকটা প্রেমের মতো । কাঁপতে কাঁপতে একদিন সে প্রেরণা হয়ে যায়। রহস্যময় আমাদের অক্ষর ঐতিহ্য। নির্মাণেই তার মুক্তি। আত্মার স্বাদ...

কিছুই তো নয় ওহে, মাঝে মাঝে লালমাটি...মাঝে মাঝে নিয়নের আলো স্তম্ভিত করে রাখে আখরের আয়োজনগুলি । এদের যেকোনও নামে ডাকা যেতে পারে । আজ না হয় ডাকলে মহুল...মহুল...

ছাপা আর ওয়েবের মাঝে ক্লিক বসে আছে। আঙুলে ছোঁয়াও তুমি কবিতার ঘ্রাণ...