logo corona

ব্যক্তিগত অন্তরকথন ।। অমিত মাহাত

amit heontor mohool

 

 
মা শালপাতা তুলে আনত বন থেকে। সেলাই করত। অন্যের বাড়িতে কখনও ধানসেদ্ধ চাল পাছড়ানো থেকে কাজে ভোজে ছোঁচগোবর সাফসুতরা। আমার তখন অতি অল্প বয়স। মা কাজে চলে যেত। সকালে। ফিরত সাঁঝে । আমার হাতে দেদার সময়। কীভাবে যে খরচা হত   এক একটা দিন। এখন সেসব ভাবি।
খুব ছোটো বয়সে বাবাকে হারিয়েছি। আমার আড়াই বছর বয়সে। বাবার তেমন কোনও স্মৃতি আমার নেই। তবে মা গল্প বলত সেসব দিনের। মা ছেলে   একথালায় ভাত খেতে খেতে সেসব দিনের কথা হত । এই যে ভাত খাচ্ছি। এই ভাত মা পুটলি বেঁধে নিয়ে আসত। কাজের বিনিময়ে। আমার ছোটোবেলায় খুব একটা রান্না হত না ঘরে। সন্ধেবেলা যে ভাতটি আসত জামবাটি চুড়। সে ভাত  থেকেই কিছুটা হাঁড়িতে জল ঢেলে রেখে দিত। পরের দিন বেলার দিকে সে ভাত খেতাম। আবার গোটাদিন অপেক্ষা করতাম। সন্ধ্যের জন্য। মা ভাত নিয়ে আসবে। আমরা মা ব্যাটায় একথালায় খাব আবার। সারাদিনে মাকে পেতাম না। একা একা থাকতাম। 
এই একা থাকতে থাকতে একদিন সত্যিই একা হয়ে গেলাম। ভীষণ একা।
জীবনের খালিহাত কাকে বলে, জানলাম। খালি পা। খালি পেট। যে প্যান্ট জামা পরতাম তখন। অন্যদের দেওয়া। একা একটা কিশোর। এইভাবে বড় হয়ে উঠছে। মানুষ চিনছে। বাস্তবের মাটি কেমন চিনে নিচ্ছে।
নিজের সাথে নিজের সংলাপ। কথাবার্তা।দগ্ধদিনে তৃষাতুর বুনোমাঠময়  কুর্চিফুল যেভাবে পড়ে থাকে সাদা হয়ে। ভাবতাম। এ ফুল যদি ফুল না হয়ে সব ভাত হত?  কী মজা হত।  পাখিদের মতো কুড়িয়ে নিতাম। খেতাম। অন্তর থেকে চাইতাম। পাখি- জীবন। ডানা মেলে উড়ে যেতাম। চেনা মাঠ ছাড়িয়ে। চেনা জীবন ছাড়িয়ে।
একদিন মাঝরাতে দরজায় তালা ঝুলিয়ে বেরিয়ে পড়লাম। সোজা হন্টন। কোথায় যাব জানি না। বেরিয়ে এলাম বাইরের পৃথিবীটাকে দেখতে। চিনতে। চেনা জঙ্গল ছাড়িয়ে দহিজুড়ি অব্দি। মামাবাড়ি গেলাম না। তখন ঢেড়ুয়া ব্রিজ সম্পূর্ণ হয়নি। কাজ চলছে। সেখানে কয়েকটা দিন থেকে কাজ করব ভেবেছিলাম । হলনা। আমার রোগা চেহারা আর অল্পবয়স দেখে কাজে তো নিলই না। তবে দিনদুই থাকতে ও খেতে দিয়েছিল। ওরা। ফের রাত হল। হাঁটা লাগালাম। মেদিনীপুর এর মাটি আমাকে টানত। এই মাটিতে পা পড়ল প্রথম যখন। এতটাই ক্লান্ত হয়ে পড়েছিলাম। আর হাঁটি নি। ট্রেনে চড়ে বসলাম। টিকিট ছাড়াই। আর টিকিট কাটব যে সে পয়সা'ই তো নেই। গাড়ি কোন লাইনের? কোথায় যাবে? হাওড়া কোনদিকে?  আদ্রা কোনদিক? কিছুই জানি না। উঠে পড়লাম।
এই উঠে পড়ার নেশাটি এখনও দারুন উপভোগ করি । এখনও হঠাৎ হঠাৎ দরজায় ছোট্টো তালা ঝুলিয়ে ব্যাগপত্তর আর খাতা কলম সঙ্গে করে আচাক আচাক গা ঝাড়া দিই। গুয়া লোকাল ধরে নির্জন চাইবাসা। বাদামপাহাড়। সরাইকেলা। চান্ডিল। মন চাইলেই উঠে পড়া। বাসের ছাদে দেদার দু পা নাড়াতে নাড়াতে বান্দোয়ান। ইঁট ভাটা জীবন দেখতে। খোলা আকাশ দেখতে। পকেটে দুদিনের খরচ টুকুর পয়সা উসুল করতে একদিন বেরিয়ে পড়া।
আমার ভালোবাসার জোছনাগ্রাম। খড়িডুংরির ধুধু প্রান্তর।খড়িমাটি জীবন।  রামগড়ের রাজার পাগলা ঘোড়ার মাঠ।
পোড়া আলুর সাথে পোড়া লংকা চটকে পান্তাভাত খেতে খেতে যদি না মা বলত - রবি ঠাকুরের জন্মদিনে তোর জন্ম। চিল্কিগড়ে। পঁচিশে বৈশাখে যে জন্মায় তাকে তো কলম ধরতেই হয়। তখন আমার পড়তে ইচ্ছে করত না। আড়ালে আবডালে পাড়া আর স্কুলের বন্ধুদের গোপন প্রেমপত্র তখন লিখে দেওয়ার বয়স। পাড়ার ছেলেটির হয়ে আমার পাশের বাড়ির মেয়েটিকে প্রথম চিঠি লিখে দেওয়া। সেই চিঠির উত্তরে আবার মেয়েটির হয়ে লিখে দেওয়া। যদিও ওদের বয়ঃসন্ধি প্রেম টেকে নি। টিকে গেল আমার লেখার অভ্যেসটি।
মা  বলত - রবি ঠাকুরের স্কুলের বিদ্যে ছিল না। আমিও আমার মুখেভাতে'র  দিন কলম ধরেছিলাম। মা গল্প করত।এইসব।  মুখেভাতে সাজানো ছিল খেলনাপাতি। গোবর। আহার্য সামগ্রী। বইপত্তর। কলম।
মায়ের চলে যাওয়া। আমার একলাদিনে এইসব ভাবনা। মন যা চাইত। যেমনটি ভাবতাম। যেমনটি কাটত আমার খালি হাতের জীবন। রাত জেগে আমার ভেতরের শক্তিটিকে ডান হাতের মুঠোয় বন্দি করতে মন চাইত। ভীষণ ছটফটানি অনুভব করতাম। ভেতরে ভেতরে।
সাদা পাতায় লেখা হতে থাকে দৈনন্দিন অন্তরকথন।

একক কবিতা সন্ধ্যা



মহুল ওয়েব প্রকাশিত বিভিন্ন সংখ্যা



করোনা Diary



আমাদের কথা

আমাদের শরীরে লেপটে আছে আদিগন্ত কবিতা কলঙ্ক । অনেকটা প্রেমের মতো । কাঁপতে কাঁপতে একদিন সে প্রেরণা হয়ে যায়। রহস্যময় আমাদের অক্ষর ঐতিহ্য। নির্মাণেই তার মুক্তি। আত্মার স্বাদ...

কিছুই তো নয় ওহে, মাঝে মাঝে লালমাটি...মাঝে মাঝে নিয়নের আলো স্তম্ভিত করে রাখে আখরের আয়োজনগুলি । এদের যেকোনও নামে ডাকা যেতে পারে । আজ না হয় ডাকলে মহুল...মহুল...

ছাপা আর ওয়েবের মাঝে ক্লিক বসে আছে। আঙুলে ছোঁয়াও তুমি কবিতার ঘ্রাণ...