উৎসবের রং
স্বপন পাল
বেশ কিছু রং যেন পুনর্জন্ম চেয়ে মরে গিয়েছিল,
রং-ছোপা বেশ কিছু সাজের বাহার হয়েছে অমিলও।
তাকে খুঁজে আনতে হবে শীতেঝরা শুকানো সময়,
মরাস্তুপ, পিঁপড়েদের ঘাঁটি ঢুঁড়ে আপৎ সঞ্চয়
সব ছেনে দেখে নিতে হবে কোথায় সে কাদের ভাঁড়ারে,
রাখা আছে যত্নে তোলা অথবা শিকলে বাঁধা দাঁড়ে।
জাতি নয়, ধর্ম নয়, আলাদা আলাদা রং নিজেকে চেনায়,
সগর্বে পতাকা নাড়ে রোদমাখা বসন্ত হাওয়ায়।
রং-মরা গাছেদের কে যে কানে দিয়েছে মন্ত্রণা,
যে যত পেরেছে সাজ রঙিন করেছে খুঁটে ঋতুর বাসনা।
শীতের শাসনে ছিল যে সম্ভবী হিজাবের নীচে,
একদিন সকালে সে দেখতে পায় নিজেকেই রঙিন কামিজে।
জানালার বন্ধ পাট খুলে ঘর ডেকেছে রোদ্দুর,
আশা জাগে দু’ডানায়, দুঃসাহস আর কতদূর ?
জাতি নয়, ধর্ম নয়, আলাদা আলাদা সাজ নিজেকে চেনায়
আঙুল সাহসী হলে, অন্ধকার পিছু হটে যায়।
সাদা-কালো অতীতের গায়ে পড়া শ্যাওলা ঘষে মেজে
রং খুঁজে পেতে হবে, বহু দূরে ফেলে আসা অম্বুরি আমেজে।
ডালের মালসা আর সরা চাপা সুখাদ্যের নিয়ে গন্ধ খিদে,
প্রাচীন যুদ্ধের মাঠ, পাথুরে কেল্লা আর শঙ্খধ্বনি অজানা বিপদে,
এইসব দেখতে হবে খুঁজে, রংচটা মন্দিরের গুপ্তগর্ভ গৃহে,
অপেক্ষায় আছে তারা শ্যাওলা চাপা অভিমান নিয়ে।
জাতি নয়, ধর্ম নয়, আলাদা আলাদা স্থান কাল পাত্র ভেদে
অতীত অপেক্ষা করে, জুড়ে যাবে সব কড়ি হৃদয় সংবেদে।
হৃদয় যে গান গায় সম্বৎসর উৎসবের দিনে,
হৃদয় যে শোকে কাঁদে চিতা, চুল্লি কিম্বা কফিনে।
কত রং ফুটে ওঠে, ছাই হয়ে নিভে যায় কতরং বছরের ভাঁজে,
জীবন খেলেই চলে রং-খেলা বিভিন্ন আন্দাজে।
হৃদয়ের গান আর ক্ষত দিয়ে যে জীবন গড়ি,
তাকেই রাঙাই, এই হাসিকান্না সব আমাদেরই।
জাতি নয়, ধর্ম নয়, বাঁধভাঙা বিপন্নতা এলে,
হাতে হাত মিলে যায়, অন্য রং ফুটে ওঠে নিরন্ন হেঁশেলে।
মরেনি সৌরভ তার, বিজাতীয় যত ঘৃণা জেগেছে অদূরে,
মানুষ ঢেকেছে মুখ সন্দেহের ঘোমটা টেনে প্রশ্নবাণ অনাত্মীয় সুরে।
রংয়ের উৎসব এলে আকাশ উত্তর দেবে উদারসরল
এখানে চাতুরী নেই এ আকাশ দিতে পারে রোদবৃষ্টিজল।
করুণার কণা ঝ’রে যে মাটিতে জন্ম নেয় প্রাণের জোগান
তুমি কে হে ছিন্ন করে দিতে চাও, খোঁজ মৃত্যুবাণ।
জাতি নয়, ধর্ম নয়, ভাগ করে নিতে হবে এ সম্পদ সকলের সাথে
আশ্রয় দিতে হবে ঘরহারা রং-মরা সমস্ত অনাথে।
জ্বলবে তখনই বাতি আমাদের ইষ্টজপা ঈশানের কোণে
মাখবে সোহাগীরং স্বপ্নভোলা মুখগুলি উচ্ছাস সন্ধানে
বসন্ত ডেকেছে দেখো আবীরগুলাল মেখে হাতে
বসন্ত ডেকেছে দেখো পেটে-পিঠে ঠেকে যাওয়া উলঙ্গ হাভাতে
বসন্ত ডেকেছে তাই বসন তো রঙিন পরিধানে
বসন্ত ডেকেছে যাকে বসন্তের অর্থ সে কি জানে ?
জাতি নয়, ধর্ম নয়, বিভেদের গন্ডি টানে অনিবার্য ক্ষুধা
কাকে দিয়েছিলে ভোগ, দুর্ভোগ কাহাকে বসুধা ?
মুছে দিতে পারো গন্ডি, রং গুলে ভ’রে দিতে পারো ?
বসন্তই শুধু নয়, হেসে উঠবে ভ’রা গ্রীষ্ম, দুরন্ত আষাঢ়ও।
আকাশ-বাতাস-গাছ-মাটি-জল ভ’রে যাবে করুণার রঙে,
জাতি ধর্ম ঘুচে যাবে রং মাখা আশা জাগা মায়াবী বিভ্রমে।
বিক্রি হবে কত রং, কিনে নিয়ে যাবে কারা, যাবে কোন দেশে
ফিকে হয়ে যাবেনা তো সেইরং ক্ষুধার্ত আক্রোশে ?
জাতি হীন, ধর্ম হীন, কেউ তো আসুক উঠে ত্রাণে
বসন্ত হাসবে রঙে, বসন্ত জানবে তার রংটার মানে।