মহামারী ও বিদ্যাসাগর ।। মৌসম মজুমদার

 iswarchandra vidyasagar

 
এক অভূতপূর্ব অবস্থার মধ্যে দিয়ে আমরা চলেছি। করোনা আজ মহামারীর রূপ নিয়ে গোটা বিশ্বে জীবনযাত্রাকে স্তব্ধ করে দিয়েছে। দাঁড়িয়ে গেছে বিশ্ব অর্থনীতি। থমকে গেছে বিশ্বের সংস্কৃতি চর্চা। সামাজিকতা আজ প্রশ্নের সম্মুখীন। অন্ধকার ভবিষ্যৎ হাতড়ে আশার আলো খোঁজার আপ্রাণ চেষ্টা। এর মাঝেই একে একে হারিয়ে যাচ্ছে বা স্তব্ধ হয়ে যাচ্ছে ভালোবাসার স্পন্দন। আর এই অভূতপূর্ব অবস্থার মধ্যেই এক মহামানবের জন্মদিন উদযাপন করছি অনাড়ম্বর ভাবেই,  বলা উচিত বাধ্য হচ্ছি। 
 
 সরকারিভাবে বিদ্যাসাগর মহাশয় এর জন্মদিন যদিও ১৮২০ সালের ২৬ সেপ্টেম্বর ধরা হয়,  বাংলা তারিখ অনুযায়ী ১২২৭ বঙ্গাব্দের ১২আশ্বিন তিনি জন্মেছিলেন বলেই  তাঁর নিজের আত্মচরিতে  উল্লেখ করেছেন। তাই এতদিন ধরে তাঁর জন্মভূমি বীরসিংহ গ্রামে  তাঁর জন্মদিন ১২ আশ্বিন দিনটিকে পালন করা হতো কিন্তু এই অভূতপূর্ব পরিস্থিতিতে এই প্রথমবার সরকারীভাবে ট্রাডিশন ভেঙ্গে ২৬ সেপ্টেম্বর পালন করার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। তবে ১২ আশ্বিন অর্থাৎ ২৯ সেপ্টেম্বরও পালিত হবে তাঁর জন্মদিন। আসলে জন্মদিন পালন মানেই তাঁকে স্মরণ করা,  তাঁর চিন্তাভাবনাগুলোকে আলোচনা বা  পর্যালোচনা করা। জেন ওয়াইকে তাঁর সম্পর্কে জানানো। তবে এই মহামানবকে শুধুমাত্র  একদিন বা দুদিন জন্মদিন বা একশো বা দুশো বছর উপলক্ষে এক বছর ধরে জন্মজয়ন্তী পালন করার মাধ্যমে মনে হয়না তেমন কিছু লাভ আছে  কারণ তাঁর দূরদর্শিতা, ভাবনাচিন্তা গভীরতা আত্তীকরণ করতে হলে প্রতিদিনই স্মরণ করা উচিত। আজ এই করোনা অতিমারীর মধ্যে বিদ্যাসাগরের জীবনকাহিনী সকলেরই একবার করে পড়া উচিত বলেই মনে হচ্ছে। দয়ারসাগর বিদ্যাসাগর মশাই আসলে ছিলেন সত্যিকারের একজন মানবরত্ন। তিনি সবসময়ই মানুষের সেবার মাধ্যমে নিজেকে নিয়োজিত করে রেখেছিলেন। 
 
অবাক হতে হয় বর্তমান সমাজের বেশিরভাগ মানুষজন সাড়ম্বরে বিদ্যাসাগর মহাশয়ের জন্মদিন পালন করবেন বলে উদ্যোগী হয়েছেন তাদের অনেকেরই মানসিকতার তাঁর মানসিকতার থেকে সম্পূর্ণ উল্টো। মজার কথা অন্যান্য মনীষীদের জন্মদিন পালনের মতোই তাঁর জন্মদিন পালনের মাধ্যমে অনেক আয়োজনকারীরা তাদের রাজনৈতিক স্বার্থসিদ্ধি না হয় অর্থনৈতিক স্বার্থসিদ্ধি করে চলেছেন, তাঁর সম্পর্কে ন্যূনতম কিছুই না জেনেই। যে সকল মানুষজন আজকের সাড়ম্বরে বিদ্যাসাগর মহাশয় এর জন্মদিন পালন করবেন বলে উদ্যোগী হয়েছেন তাদের অনেকেরই মানসিকতার তাঁর মানসিকতার থেকে সম্পূর্ণ উল্টো।
 
আজ করোনা অতিমারীর সময় একশ্রেণির মানুষ যখন স্বাস্থ্য পরিষেবার নামে সাধারণ মানুষের সঙ্গে ছেলেখেলা করছেন, ভেজাল ওষুধের কারবারে জড়িয়ে পড়ছেন নির্লজ্জভাবে সেখানেও তিনি প্রায় দেড়শো বছর আগে নিঃস্বার্থভাবে তিনি এমন মহামারীর আবহে সাধারণ মানুষের পাশে দাঁড়িয়ে সেবা করেছিলেন তা সত্যিই এই শ্রেণির মানুষদের লজ্জায় ফেলতে পারেন।
স্বাস্থ্যকর জলবায়ুর কারণে বিদ্যাসাগর মশাই মাঝে মাঝেই বর্ধমানে গিয়ে  থাকতেন। একবার স্বাস্থ্য উদ্ধারের জন্য বিদ্যাসাগর বর্ধমানে গিয়ে বর্ধমানের মহারাজার  কমলসায়র বাড়িতে গিয়ে থেকেছিলেন। কিছুদিনের মধ্যেই কমলসায়রের আশেপাশে মুসলমান পল্লীর দরিদ্র মানুষদের তিনি আপনজন হয়ে উঠলেন। তাদের অসুখ-বিসুখে বিদ্যাসাগর সেবা, পথ্য ও চিকিৎসার ব্যবস্থা করেছিলেন। এমনকি অনেক পরিবারকে অর্থসাহায্যের  পাশাপাশি কাউকে কাউকে মূলধন দিয়ে দোকান করতেও সাহায্য  করেছিলেন। ১৮৬৯ সালে হঠাৎ করেই দক্ষিণবঙ্গের অনেক জেলায় 'বর্ধমান জ্বর' এর আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়েছিল । এমন কি বর্ধমান জ্বরের প্রকোপে বীরসিংহে বিদ্যাসাগর প্রতিষ্ঠিত স্কুলগুলি বন্ধ হয়ে গিয়েছিল। সেই সময় বিদ্যাসাগর মহাশয় বর্ধমান গিয়ে একটি বাগানবাড়িতে প্রায় দু'বছর বাস করেছিলেন। বর্ধমানে সরকারি চিকিৎসালয় থাকলেও তার পরিকাঠামো ব্যবস্থা একেবারেই ভালো ছিলো না। বিদ্যাসাগর মহাশয় ছোট লাট গ্রে  এবং অন্যান্য আধিকারিকদের সঙ্গে যোগাযোগ করে সরকারি চিকিৎসা ব্যবস্থার উন্নতির ব্যবস্থা করেন। তাঁর চেষ্টায় বর্ধমানে অতিরিক্ত চারটি ডিস্পেন্সারি একটি ভ্রাম্যমাণ চিকিৎসা কেন্দ্র খোলা হয়। কেবল এই নয় সম্পূর্ণ নিজের ব্যয়ে ডাক্তার গঙ্গানারায়ণ মিত্রের তত্ত্বাবধানে একটি চিকিৎসালয় স্থাপন করেন। এখানে কেবল বিনামূল্যে ওষুধ নয় প্রয়োজনে রোগীকে পথ্যও দেওয়া হতো। অনেক রোগীর পরনে কাপড় ছিল না, তাই তিনি দুই হাজার টাকার কাপড় কিনে দরিদ্র রোগীদের মধ্যে বিতরণ করেছিলেন। এই সময় তিনি প্রথম সিঙ্কোনা বদলে  কুইনাইন দিয়ে ম্যালেরিয়া রোগের চিকিৎসা করার ব্যবস্থা করেছিলেন।  নিজের চাকরি নেই অথচ গ্রামের  বাড়ির বৃহৎ যৌথ পরিবারের আর্থিক দায়িত্বসহ বীরসিংহ গ্রামে তিনটি বিদ্যালয় ও অবৈজ্ঞানিক অবৈতনিক চিকিৎসালয় চালানো ছাড়াও অনেক নিরুপায় অসহায় বৃদ্ধ নারী ও ব্যক্তিবর্গ কে সাহায্য করেই চলেছেন যদিও তার কোন হিসেব নিকাশ তিনি কখনোই করতেন না, বা কাউকে জানাতেন না। আর হাস্যকরভাবে বর্তমান পরিস্থিতিতে একজনকে সাহায্য করে একশোটা ছবি সোশ্যাল মিডিয়ায় আপলোড করি আমরা।
 
১২৭২ বঙ্গাব্দে অর্থাৎ ১৮৬৭ খ্রিস্টাব্দে  দুর্ভিক্ষের কারণে ওড়িশা ও ওড়িশা সংলগ্ন দক্ষিণবঙ্গের কয়েকটি জেলায় নিদারুণ বিপর্যয় দেখা দেয়। সে যুগের কৃষি ছিল সম্পূর্ণ বৃষ্টিনির্ভর অর্থাৎ এখনকার মতো সেচব্যবস্থা ছিল না। সেই বছর অনাবৃষ্টির জন্য ধান ও অন্যান্য ফসল উৎপন্ন হয় নি, ফলে সাধারণ লোকের দৈনিক আহারের সংস্থান করা দুষ্কর ব্যাপার হয়ে উঠেছিল। কৃষকদের ঘরে যেটুকু অবশিষ্ট ছিলো তাও মহাজনরা জোর করে কেড়ে নিয়ে গিয়েছিল কৃষকদের বাড়ি থেকে। দুঃসময় দেখেও  কেউই কৃষি শ্রমিকদের কোন কাজ দেননি। গ্রামের শ্রমজীবীরাও কর্মহীন হয়ে পড়লেন। ফলে সপরিবারে নিত্য উপবাসী হয়ে মৃত্যুর দিন গোনা ছাড়া আর কোনো উপায় ছিল না তাদের।  জাহানাবাদ মহকুমার অন্তর্গত ক্ষীরপাই, রাধানগর, চন্দ্রকোনা প্রভৃতি গ্রামের অধিকাংশ তাঁতীর বাস, যাদের একমাত্র জীবিকা ছিল কাপড় বোনা। পুরুষানুক্রমে তারা এ কাজেই দক্ষ ছিল, অন্য কোনো কাজ জানতোই  না। কাজেই বিদেশ থেকে যখন বিলাতি কাপড় আসা শুরু হয়, তাদের কাপড়ের চাহিদা ক্রমশঃ কমতে থাকলো, এবং ধীরে ধীরে তারা কর্মহীন হয়ে পড়লো। বুনো ওল, কচুশাক খেয়ে বেঁচে থাকার লড়াই শুরু হলো। শত শত মানুষ এই সময় পেটের টানে কাজের আশায় কলকাতায় গেলো। ১২৭৩ বঙ্গাব্দের দুর্ভিক্ষ যখন ভীষণ রূপে প্রকট হলো তখন বিদ্যাসাগরের ভাই শম্ভুচন্দ্র   লিখছেন–‘আমাদের বীরসিংহবাসী অধিকাংশ লোক প্রাতঃকাল হইতে রাত্রি দশটা পর্যন্ত আমাদের দ্বারে দণ্ডায়মান থাকিত, তাহাদিগকে ভোজন না করাইয়া আমরা ভোজন করিতে পারিতাম না। কোন কোন দিন রাত্রিতেও সন্নিহিত গ্রামের ভদ্রলোকের পেটের  জ্বালায় দ্বারে দ্বারে উপস্থিত হয়ে চিৎকার করিতে না দিলে সমস্ত রাত্রি চিৎকার করিত। তাদের খাইতে না দিলে সারা রাত্রি চিৎকার করিত।’
এই ঘটনা বিদ্যাসাগরকে লেখা হলে তিনি ভ্রাতা শম্ভুচন্দ্রকে জাহানাবাদের ডেপুটি ম্যাজিস্ট্রেট ইশ্বরচন্দ্র মিত্রর সঙ্গে দেখা করে বিদ্যাসাগরের নাম করে বলতে নির্দেশ দেন, যেন ম্যাজিস্ট্রেট সাহেব দেশের দুর্দশার কথা কলকাতার কর্তৃপক্ষের কাছে জানান, এবং  ছোটোলাটকে বলে অন্নসত্র খোলার ব্যবস্থা করেন। 
 
 জাহানাবাদের ডেপুটি ম্যাজিস্ট্রেট বিদ্যাসাগরের মেজোভাই দীনবন্ধু ন্যায়রত্নকে সঙ্গে নিয়ে ঘাটাল, ক্ষীরপাই, রাধানগর, চন্দ্রকোনা, রামজীবনপুর, শ্যামবাজার, জাহানাবাদ, খানাকুল প্রভৃতি অঞ্চল সার্ভে করে সরকারকে রিপোর্ট দেন। বিদ্যাসাগরের চেষ্টায় ও অর্থে জাহানাবাদের ডেপুটি ম্যাজিস্ট্রেট ইশ্বরচন্দ্র মিত্র ক্ষীরপাই, চন্দ্রকোনা, রামজীবনপুর, শ্যামবাজার, জাহানাবাদ, খানাকুল প্রভৃতি জনবহুল গ্রামের অন্নসত্র খোলার ব্যবস্থা করেন। 
 
যেসব ব্যক্তি কাজের খোঁজে গ্রাম ছেড়ে কলকাতায় চলে গিয়েছিলেন পথ খরচ দিয়ে তিনি তাদেরকে গ্রামে ফেরান। বিদ্যাসাগর বীরসিংহ গ্রামে সম্পূর্ণ নিজ ব্যয়ে একটি অন্নসত্র খোলেন। এই অন্নসত্রে   অর্জুনআড়ি, বুয়ালিয়া, রাধানগর, উদয়গঞ্জ, কুরান, মামুদপুর, কৌমারসা, প্রভৃতি গ্রামের নিরুপায় মানুষদের খিচুড়ি খাওয়ার ব্যবস্থাও করেছিলেন। আজ অনেকেই অভিনেতা সোনু সুদকে নিয়ে মাতামাতি করছি, এই পরিস্থিতিতে তিনি যেভাবে শ্রমিকদের পাশে দাঁড়িয়ে নিজ অর্থে তাদর বাড়ি ফিরিয়ে দিয়েছেন। এটা সত্যিই তারিফযোগ্য কাজ।  তিনি রিল লাইফ হিরোর ভূমিকা ছেড়ে রিয়েল লাইফ হিরোর মতোই কাজ করছেন। কিন্তু ভাবলে অবাক হতে হয় আজ থেকে প্রায় ১৫০ বছর আগেই বিদ্যাসাগর মহাশয় সেই কাজটি কত অবলীলায় করেছিলেন।  ছিল না কোনো সোশ্যাল মিডিয়ার প্রচার, কোন সংবাদপত্রের সাংবাদিক তুলে ধরেন নি তাঁর এই ভূমিকা। তার জন্য তার জোটেনি কোন অ্যাওয়ার্ড। এইখানেই বিদ্যাসাগর মহাশয় এর প্রাসঙ্গিকতা আজও একই রকম ভাবে রয়ে গেছে।
সেই সময় প্রচুর প্রচুর ক্ষুধার্ত লোক তার বাড়িতে এসে খাওয়া-দাওয়া করতেন। ৩ জন করাতি প্রত্যেকদিন তেঁতুলগাছ কিনেকাঠের যোগান দিতেন। ১২ জন মজুর সেই তেঁতুল গাছের  কাঠ কেটে রান্নার উপযোগী ব্যবস্থা করতেন, ১২ জন ব্রাহ্মণ রান্না করতেন, কুড়িজন স্কুলের ছাত্র ও স্থানীয় লোকজন পরিবেশন করতেন, দুজন ভদ্রলোক ও দুজন শ্রমিক ঘাটাল থেকে চাল ডাল নুন কিনে আনতেন। আধ মন চাল রান্না করা যায় এমন পিতলের হাড়ি কড়াই কেনা হয়েছিল রান্নার জন্য। গ্রামের ভদ্র ব্যক্তিরা যারা অন্নসত্রে এসে খেতে সংকোচ বোধ করতেন তাদের বাড়িতে সিধা পাঠানো হতো । দিনের দিন যত লোকের সংখ্যা বাড়তে লাগল ততই অন্নসত্রের ওপর চাপ বাড়ল। বিদ্যাসাগর আদেশ দিয়েছিলেন কোন অভুক্ত লোক যেন অন্ন না পেয়ে ফিরে যান। অন্নসত্রের সব ব্যয় বিদ্যাসাগর নিজেই দিতেন। যতদিন অন্নসত্র চালু ছিল বিদ্যাসাগর মাসে একবার হলেও কলকাতা থেকে গ্রামে আসতেন। এইসময় অনেক লোকজন নিজের ছোট ছোট ছেলেমেয়েদের ফেলে রেখে অন্যত্র পালিয়ে গিয়েছিলেন সেই সব অনাথ ছেলেমেয়েদের দেখাশোনার জন্যও তিনি  লোক নিযুক্ত করেন। অনেকেই গর্ভবতী স্ত্রীকে ফেলে পালিয়ে গিয়েছিলেন, অন্নসত্রে সেই গর্ভবতী সাধ দেওয়ার ব্যবস্থা করা হয়, এমনকি প্রসবের পর ছেলে মেয়ের জন্য উপযুক্ত খাদ্যের ব্যবস্থা করেছিলেন তিনি। অন্নসত্রে  ভোজনকারী  স্ত্রীলোকেরা কেশচর্চা করতে পারত না অর্থাভাবে। তাদের সেই মহামারীর সময়েও তৈলহীন বিবর্ণ কেশ দেখে বিদ্যাসাগর মশাই প্রত্যেক স্ত্রীলোকের জন্য দু পলা করে তেল বরাদ্দ করেছিলেন। যারা তেল বিতরণ করত তারা যখন নীচু জাতের  স্ত্রীলোককে স্পর্শ না করে দূর থেকে তেল দিতেন, তা দেখে কখনো কখনো তিনি স্ত্রীলোকের মাথায় নিজের হাতেই তেল মেখে দিতেন। 
 তার অন্নসত্র ভোজনকারীরা একদিন তাকে অনুরোধ করলেন রোজ রোজ খিচুড়ি খেয়ে  প্রাণ বাঁচানো যাচ্চে  সত্য কিন্তু দয়াময় যদি সপ্তাহে একদিন ভাত আর মাছ খাওয়ানো যেত ভালই হতো। হলোও তাই । সপ্তাহে একদিন ভাত ডাল পোনা মাছের ঝোল দই দেওয়া হতে থাকলো। এদিকে সরকারের অন্নসত্রে লোকেদের রাস্তা তৈরি বা অন্য কাজ করিয়ে অন্ন দেওয়া হতো। ফলে ক্রমশঃ সরকারি অন্নসত্র থেকে বিদ্যাসাগরের অন্নসত্রে লোক বাড়তেই থাকলো। এখানে তিনি তাদের বিনামূল্যে চিকিৎসার ব্যবস্থা করেছিলেন। এছাড়া কুড়িটি পরিবার প্রত্যহ সিধা নিতে লজ্জিত হতেন, সেজন্য তাদের গোপনে অর্থ দেওয়া হতো এখানেই বিদ্যাসাগরের মাহাত্ম্য বোঝা যায়।  এখনকার দিনে ব্যাপারটা ভাবলে মনটা  কেমন হয়ে ওঠে এখন অনেকেই দান করার পর সেটিকে প্রকাশ্যে আনেন রাজনৈতিক স্বার্থে ব্যবহার করেন। বিদ্যাসাগর মহাশয় কিন্তু সেগুলি গোপনেই  কাজ করতেন। এই অবস্থায় বিদ্যাসাগর মশাই যেভাবে পাশে দাঁড়িয়েছিলেন ঠিক একইভাবে এই সময় আমাদের অনেকেই অনেকের পাশে দাঁড়িয়েছেন আবার যারা দাঁড়াননি তারা তাদের সমালোচনাও করেছেন নির্লজ্জভাবে। বিদ্যাসাগর মহাশয় শেষজীবনে সাঁওতালদের হোমিওপ্যাথি চিকিৎসা করতেন বিনামূল্যে। তাদের মলমূত্র নিজের হাতে পরিষ্কার করেও দিতেন। এহেন মহামানবকেও জীবদ্দশায় বারবার অপমানিত হতে হয়েছিল। এমনকি নিউটনের কাছে অপমানিত হয়ে যখন চিরতরে জন্মভূমি ত্যাগ করেছিলেন তখন তাঁর কিছু পড়শি বাজনা বাজিয়ে গোবরজল ছিটিয়ে আনন্দ প্রকাশ করেছিলেন। আজ অতিমারীর আবহে করোনা আক্রান্ত রোগীর পরিবারের সঙ্গেও তাদের প্রতিবেশীরা ভয়জনিত কারণে মনুষ্যত্ব বিসর্জন দিয়ে একঘরে করে দিয়ে যে মানসিক যন্ত্রনার সম্মুখীন করছেন তাতে নিজেদের উন্মত সামাজিক জীব হিসেবে ভাবতে লজ্জাই লাগছে। শারিরীক  কারণে সামাজিক দূরত্ব বজায় রাখতে গিয়ে মানসিকতার দ্রুত পরিবর্তন হয়ে যাচ্ছে। অনিশ্চয়তার আবহে আমরা আমাদের পরিচিত আবেগকে হারিয়ে ফেলছি বিস্ময়করভাবে।
একদিন, দুদিন  বা সারা বছর নয়, বছরের পর বছর ধরে যদি মানুষটির জীবন চর্চা করা যায় তাহলে হয়তো অনেকটাই আমাদের নিজস্ব মনুষ্যত্ববোধকে ফিরিয়ে আনা যেতে পারে। মনের মধ্যে বিদ্যাসাগর রেখেও আজকে অনেকেই কিন্তু বিদ্যাসাগরের ছবিতে মালা দেওয়ার পরেই হিন্দু মুসলমানের লড়াইয়ে সামিল হচ্ছেন বা ইন্ধন যোগাচ্ছেন। সবক্ষেত্রেই তাঁকে স্মরণ ভীষণ ভীষণ প্রয়োজন আজ।
 

একক কবিতা সন্ধ্যা



মহুল ওয়েব প্রকাশিত বিভিন্ন সংখ্যা



করোনা Diary



আমাদের কথা

আমাদের শরীরে লেপটে আছে আদিগন্ত কবিতা কলঙ্ক । অনেকটা প্রেমের মতো । কাঁপতে কাঁপতে একদিন সে প্রেরণা হয়ে যায়। রহস্যময় আমাদের অক্ষর ঐতিহ্য। নির্মাণেই তার মুক্তি। আত্মার স্বাদ...

কিছুই তো নয় ওহে, মাঝে মাঝে লালমাটি...মাঝে মাঝে নিয়নের আলো স্তম্ভিত করে রাখে আখরের আয়োজনগুলি । এদের যেকোনও নামে ডাকা যেতে পারে । আজ না হয় ডাকলে মহুল...মহুল...

ছাপা আর ওয়েবের মাঝে ক্লিক বসে আছে। আঙুলে ছোঁয়াও তুমি কবিতার ঘ্রাণ...