আমাদের ঘুড়িবসন্ত ।। সুদীপ চক্রবর্তী

আমাদের ঘুড়িবসন্ত
সুদীপ চক্রবর্ত্তী

তোর মনে পড়ছে কিনা জানিনা আমাদের এক সাথে কাটানো ঘুড়ি বয়সের কথা। জানিস আজ খুব বৃষ্টি পড়ছিল। ঝাপসা হয়ে আসছিল চারপাশ। সেই ঝাপসা হয়ে আসা সময়ে দেখতে পেলাম দুটি ভিজে যাওয়া মুখ। একটা তুই অন‍্যটা আমি। বলনা রে তোর কি মনে পড়ে বামুন পুকুরের পাড়ে পেয়ারা বাগানের কথা? চুপিচুপি আমাকে ডেকে নিয়ে গিয়ে পেয়ারা পেড়ে দিতিস। মনে পড়ে সেই মাছরাঙা পাখিটার কথা, ছোঁ মেরে একটা মাছ তুলে নিয়ে ফুড়ুৎ । তারপর দুজনে মিলে কতদিন দখিন মাঠের আল ধরে ঘুরেছি। হাতে থাকত মুড়ির ঠোঙা, শশা, কাঁচা লঙ্কা। মনের সুখে ঘুরতাম দুজনে। দেখতাম ফিঙে পাখিরা উড়ে উড়ে বসছে আলের গায়ে লাগানো কলমি গাছে। চাষীরা বৃষ্টিতে ভিজে জমিতে ধান রুইছে। পৌষ মাসে ধান উঠে যাওয়ার পর দুজনে ঘুড়ি নিয়ে দৌড়াতাম। মনে আছে? ছুটতে ছুটতে তোর পা কেটে গিয়েছিল শামুকের খোলে, তা দেখে আমার চোখে জল এসে গিয়েছিল। তুই বলছিলি– পা কাটল আমার‚ আর তোর চোখে জল? সত‍্যি সেদিন সে জলের কারণ বুঝিনি‚ আজ বুঝি।
কখনও বাড়ির সবার আড়ালে জমিয়ে রাখা দশ পয়সা অথবা কুড়ি পয়সা নিয়ে দৌড় দিতাম জেঠুর দোকানে লজেন্স কিনতে। আজ জেঠু নেই দোকানটাও নেই। জানিস‚ সময়ের নিষ্ঠুরতায় কীভাবে ছিটকে গেছি আমরা! দেখতে দেখতে কতগুলো বছর আমাদের সোজাসাপটা জীবনকে কীভাবে এরকম পাল্টে দিল। এখন কতদিন ছাড়া দুজনের দেখা হয়‚ ঠিক সেভাবে দেখা হয়নাও। এখন আর কেউই দেখতে যাই না মাছরাঙাটা আর বামুনপুকুরের পাড়ে বসে কিনা। আলের ধারে কলমিশাক ও ফিঙে পাখিটা কেমন আছে। মুড়ির ঠোঙা হাতে আমাদের শৈশব আজ কোন পথে গেছে...
চলনা রে আরেক বার খোঁজ করি সেই ঘুড়িটার‚ যা কেটে গিয়ে কোন গাছের মগডালে অসহায় ভাবে আমাদের ছেলেবেলা কে ঝুলিয়ে রেখেছে...!
যাবি?

লেখকের অন্যান্য লেখা

একক কবিতা সন্ধ্যা



মহুল ওয়েব প্রকাশিত বিভিন্ন সংখ্যা



করোনা Diary



আমাদের কথা

আমাদের শরীরে লেপটে আছে আদিগন্ত কবিতা কলঙ্ক । অনেকটা প্রেমের মতো । কাঁপতে কাঁপতে একদিন সে প্রেরণা হয়ে যায়। রহস্যময় আমাদের অক্ষর ঐতিহ্য। নির্মাণেই তার মুক্তি। আত্মার স্বাদ...

কিছুই তো নয় ওহে, মাঝে মাঝে লালমাটি...মাঝে মাঝে নিয়নের আলো স্তম্ভিত করে রাখে আখরের আয়োজনগুলি । এদের যেকোনও নামে ডাকা যেতে পারে । আজ না হয় ডাকলে মহুল...মহুল...

ছাপা আর ওয়েবের মাঝে ক্লিক বসে আছে। আঙুলে ছোঁয়াও তুমি কবিতার ঘ্রাণ...