ও জীবন রে... ।। শ্রীজিৎ জানা

বিকেলর রোদপিয়ন উঠোনে রেখে যায় মনখারাপ। আজও সিঁথি থেকে মেটে সিঁদুর মোছেনি বাসনা। সেই কবে বিহারের ওমপ্রকাশ বিয়ে করে রেখে চলে গেছে,আর ফেরেনি। গাঁয়ে বলে বাসনি শকুন্তলা। বাপের ভিটেয় ভাইদের ফরমাশ খাটতে খাটতে চোখের পাতা ভারী হয়। অপেক্ষমান তারায় ঘর বাঁধার আকুলতা। লখি বাগদীকে চেনো না বোধ হয়? পাকুরদানার বাগপাড়ায় বাড়ি। স্বামী সুখ কপালে নেই। দু'দুবার বিয়ে। সাতজনের পেট। কাকভোরে পাঁশকুড়া বাজার থেকে সব্জী এনে কাজীরহাটে বেচে। এরা দিদি নম্বর ওয়ান না । জি বাংলা এদের ডাকবে না। মিনিটে দশটা ফুচকা গিলে ফ্রিজ পুরস্কার পাওয়া শোকেসে সাজানো পুতুল পুতুল গৃহবধুই বঙ্গের স্বয়ং সিদ্ধা।
           চাঁদখাঁপীদের  দরগা থেকে যখন আজানের সুর ভেসে আসে, তখন ঝুমঝুমির ভরত দাস আড়বাাঁশিতে সুর তোলে 'রাই জাগো রাই জাগো বলে...'। একবার ঘোষবাবুদের রাসমেলায় পদক পেয়েছিল সে। আজকাল কলিজায় তেমন জোর নেই। হাভাতে সংসারে হাড়খাটুনি সব রস নিগড়ে নেয়। দিনান্তে তবু বাঁশির সুর আজও পাড়াময় মন ভালো করা উদাসী হাওয়া ছড়িয়ে দেয়। ডোভার লেনে সে সুর পৌঁছোবে না কোনোদিন।
          ছোটিদিকে দেখেছো? ছটি পাগলি। পরনে ছেঁড়া নোংরা কাপড়, জটপরা চুল। আচমকা সামনে দাঁড়িয়েই বলে উঠবে - ভালবাসবি? আতা দেব। ভালোবাসা পায়নি ছটিদি। ভরভরন্ত সংসার ছিল তার। কেন যে পাগল হল কেউ বলতে পারে না। তাছাড়া পুরুষ মানুষের চরিত্রের দোষ ধরতে নেই। শোনা যায় তাকে দু-একবার ছিঁড়ে খুবলে খেয়েছে যেন কারা। ছটিদিকে সবজায়গায় দেখতে পাবে। মুখখানি তার বড্ড মায়াময়। ভাসানের দুগ্গা প্রতিমার মতো। তাবলে শোভাবাজার রাজবাড়ীর দুর্গাদালানে ওর ঠাঁই হবে না কোনোদিন।
          পাথরকুমকুমির জ্যোৎস্না টুডু। দশম শ্রেণী। শ‍্যামাঙ্গী। বড় হয়ে স্কুলের দিদিমনি হওয়ার স্বপ্ন। ভালবাসায় সাড়া দেয়নি বলে মুখে অ্যাসিড‌ মেরেছে যুবক। আইন আইনের রাস্তায় হেঁটে চলেছে, লালগড় পেরিয়ে রূপনারান তারপর তিলোত্তমা শহরে। জ্যোৎস্নার মুখের দিকে আজকাল আর কেউ তাকায় না। দুব্বোঘাসের মতো নরম মুখ, টানা চোখ সব দুমড়ে মুচড়ে একাকার। স্বপ্নটা ফুঁপিয়ে ফুঁপিয়ে কাঁদে। ওকে তিলোত্তমা সাজে সাজাবেনা কেয়া শেঠ? ওর স্বপ্নপূরণের সঙ্গী হবে না তিলোত্তমা?
          স্মৃতির পাতায় দুপুরের চিলেকোঠা। ছেলেবেলায় বরবউ আদর। মিতুল নামের মেয়েটি আর মুঠোভরা হিজলফুল দেবে না দেবদুলালকে। আচমকা বেজে ওঠা রিংটোন ফিরিয়ে দেবে না নরম আদর। মন ভালো নেই, মন ভালো নেই। গাঁয়ের সরল কিশোরী মুহূর্তে অশ্লীল হয়ে উঠছে আন্তর্জাল দুনিয়ায়। রাত করে ফেরা ডলি কাকিমার গায়ে লাগছে বেইজ্জতের দাগ। রুপোলি পর্দার নগ্ন শরীরে নন্দনতত্ত্ব। শিল্পসুষমার পোস্টমর্টেম নিষ্ফলা মাঠ আর ব্যাঙ্কের লাল চিঠি কৃষকের দুয়ারে মৃত্যুর প্ররোচনা। রাজপথে লাঠিপেটা কর্মহীন যুবকের চোখে নামে ঘোর অন্ধকার। সিরিয়ালের জবার দুঃখে কেঁদে ওঠা বঙ্গবধূরা বেলপাহাড়ীর ঝুনি মান্ডির দুঃখে কাঁদবেনা কোনোদিন। চারিদিকে মুখোশের উৎপাত। অযোগ্যদের আস্ফালন। সুজনের ইশারায় গুপ্তচাল। মনমরা বালিশের চোখে নোনা জলের পদ্য। বিছানার মাঝখানে পাথুরে দেয়াল, নির্জন ফ্ল্যাটে একা মেঘ। ছায়া ভরা কোল নেই, স্নেহভরা ডাক নেই, শীতলকুচি আদর নেই, শুধু মঞ্চকান্না,শুধু বিপণন। চোখ ভোলানো যাত্রাপালা, মন ভোলানো কথার ছয়ালাপ। শুধু পর্ণমোচি মানুষের দল। তবু শ্রাবণ আসে, গন্ধরাজ ফোটে, বৃষ্টিরা জানালায় রেখে যায় জলছবি প্রেম। জীবনটাকে তখন  জাপ্টে ধরতে ইচ্ছে করে। গলা বেয়ে ওঠে গান - 'ও জীবন ছাড়িয়া যাস নে মোরে...'

একক কবিতা সন্ধ্যা



মহুল ওয়েব প্রকাশিত বিভিন্ন সংখ্যা



করোনা Diary



আমাদের কথা

আমাদের শরীরে লেপটে আছে আদিগন্ত কবিতা কলঙ্ক । অনেকটা প্রেমের মতো । কাঁপতে কাঁপতে একদিন সে প্রেরণা হয়ে যায়। রহস্যময় আমাদের অক্ষর ঐতিহ্য। নির্মাণেই তার মুক্তি। আত্মার স্বাদ...

কিছুই তো নয় ওহে, মাঝে মাঝে লালমাটি...মাঝে মাঝে নিয়নের আলো স্তম্ভিত করে রাখে আখরের আয়োজনগুলি । এদের যেকোনও নামে ডাকা যেতে পারে । আজ না হয় ডাকলে মহুল...মহুল...

ছাপা আর ওয়েবের মাঝে ক্লিক বসে আছে। আঙুলে ছোঁয়াও তুমি কবিতার ঘ্রাণ...