‘চিরটাকাল সঙ্গে আছে জড়িয়ে লতা’ ।। প্রিয়াঙ্কা

priyanka heontor mohool

 

 
 
শব্দের অভাব বোধ হয়, সমুদ্রের বা আকাশের মতো অনন্তের সামনে গিয়ে দাঁড়ালে। তাঁকে নিয়ে কিছু না লিখতে যাওয়া মানে ঠিক তাই। যাকে বাঙালীর বেশ বড় একটা অংশ একটা অলিখিত ব্যাকরণ বইএর ভেতর রেখে দিয়েছে।  স্বরলিপির অক্ষরের মধ্যে রেখে দিয়েছে। পাঞ্জাবী আর লাল পাড় শাড়ি কিংবা জুঁই ফুলের মধ্যে রেখে দিয়েছে। একটু ত্রুটি বিচ্যূতি ঘটেছে কী সেই ‘বাসি কাপড়ে ঠাকুরের বাসন ছুঁয়ে ফেলল রে’ – র মতো তেড়ে আসেন তাঁরা।  খুব স্থূল কিছু উপাদানের মধ্যে আবদ্ধ করে ফেলার মতো যে কোনও স্পিরিট তিনি নন, এটা ধরতেই পারেন না, এরকম বহু রবীন্দ্র অনুরাগী কে দেখেছি। যে কোনও উৎকৃষ্ট জিনিষ কে কঠিন বা দুরূহ করে রাখা আমাদের পরম্পরা। যাকে  ছোঁয়া যাবেনা। নাম মুখে আনতে গেলেও শুদ্ধ হয়ে নিতে হবে। কিন্তু এই শুদ্ধিকরণ কিন্তু বেশিরভাগই বাহ্যিক। অথচ আমরা যারা  তাঁকে ভালবেসেছি খুব সহজ ভাবে মনে প্রাণে, আমাদের কাছে খুব সহজ ভাবেই জীবনের যে কোনও বাঁকে তাঁকে পেয়েছি ধ্রুবতারার মতো। ব্যক্তিগত ভাবে দেখলে তিনি কিন্তু  চিরকাল আমার এবং আমাদের খুব বিশ্বাসযোগ্য একজন থেরাপিস্ট এর ভূমিকা পালন করে এসেছেন।  
ঋণ স্বীকার করে নিতে হয় কয়েকজন ব্যক্তিত্বের কাছে,  পরবর্তীকালে যাঁদের মাধ্যমে রবীন্দ্রনাথ অব্দি পৌঁছোনোর মসৃণ রাস্তাটুকু  চিনতে পেরেছিলাম।
এক, ঋতুপর্ণ ঘোষ। ফার্স্ট পার্সনের বিভিন্ন লেখায়, কিংবা তাঁর কোনও ইন্টারভিউ তে খুব স্বতঃস্ফূর্ত ভাবে উঠে এসেছে রবীন্দ্রনাথের কথা, তিনি নিজের জীবন কে একটা ত্রিভুজের মাধ্যমে বিশ্লেষণ করে বলেছেন, ত্রিভুজের  এক  কোণে যদি রবীন্দ্রনাথ থাকন আরেক কোণে মহাভারত থাকে আরেক কোণে তাঁর নিজের অবস্থান। নিজের জীবনের  33.33 %  জুড়ে যে রবীন্দ্রনাথ তাঁর মজ্জায় মজ্জায় ছিলেন, যে রবীন্দ্রনাথ কে নিয়ে তথ্য চিত্র নির্মাণ করতে গিয়ে শেষের শুটিং এর আগের দিন রবীন্দ্রনাথের বিচরণ ক্ষেত্র ছেড়ে আসার সময়  তাঁর মনের মধ্যে তৈরি হওয়া আবেগের সঙ্গে আমরা পাঠকরাও ভেসে চলে গেছি, সেই রবীন্দ্রনাথ কে জানতে জানতে মনে হয়েছে রবীন্দ্র গবেষক মানেই রবীন্দ্র প্রেমী নয়।
দুই, ড. অনুত্তমা ব্যানার্জী। "সোম থেকে রবি" শীর্ষক লেখা পড়ে চমকে গেছিলাম। জীবনের শুরুতে রুটিন মাফিক রবীন্দ্রচর্চা করতে গিয়ে সূক্ষ্ম রসবোধের অধিকারী লেখিকা তথাকথিত রবীন্দ্র চর্চাকে এমন এক পর্যায়ে নিয়ে যান যে যেকোনো পাঠকের মনে যা অনাবিল আনন্দ তৈরী করবে। কিন্তু, পরবর্তীকালে জীবনের বিভিন্ন স্তরে কীভাবে রবীন্দ্রনাথ  ঢুকে পড়েন তাঁর অন্দরমহলে কিংবা অন্তর মহলে সেই অভিজ্ঞতা পাঠক কে আরেক নতুন জানলা খুলে দেয়।  বিশেষ করে তথাকথিত রবীন্দ্র ঘরানা শীর্ষক বিশুদ্ধতা নিয়ে তাঁর অন্তর্নিহিত বক্তব্য একবার ভেতরে তাকাতে বাধ্য করবেই। এই বিশুদ্ধতার যে অদৃশ্য চশমা আমাদের পরানো হয়, সে চশমা খসে যাবে, নিদেনপক্ষে পাওয়ার  বদল হবেই।   
তিন, বিক্রম সিং খাঙ্গুরা। তাঁর গান হয়ত শুধু গান নয়, জীবনবোধের / রবীন্দ্রবোধের সংগীতময় বিশুদ্ধ বহিপ্রকাশ।  শ্রবণতন্ত্রী থেকে হৃদয়ের গভীরতম স্থান যে অনায়াসে স্পর্শ করে ফেলতে পারে। এবং যার অস্তিত্ব চিরন্তন।  
তাঁকে নিয়ে চর্চার কোনও অভাব নেই বরং পৃথিবীর দীর্ঘতম সময় জুড়ে যিনি আমাদের আচ্ছন্ন করে রেখেছেন সেই সেলিব্রিটি নিঃসন্দেহে রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর। তবে আজকাল বিপন্ন বোধ করি মাঝে মাঝে। কারণ যিনি আমাদের নিভৃত প্রাণের দেবতার সান্নিধ্য পাওয়ার রাস্তা দেখিয়েছেন, আমরা তাঁকে কতটা ধারণ করতে পেরেছি, সে নিয়ে আমার সন্দেহ নেই, কারণ আমি নিশ্চিত এই নিভৃতির এবং গূঢ় আত্ম অনুসন্ধানের  রাস্তা চোখের সামনে থাকলেও আমরা তাকে বুড়ো আঙুল দেখাতে  পেরেছি।  আমরা যতক্ষণ না ঢাকঢোল পিটিয়ে অশ্বমেধ যজ্ঞ করে সাড়ম্বড়ে তাঁকে মূর্তি পূজার মতো প্যান্ডেল নির্মাণ করে পুজো করতে পারি, আমরা ভাবি, তাঁকে কিংবা আমার ভক্তিকে যথাযথ সম্মান দেওয়া হলনা।
অনেক তো হল কোলাহল, এবার যদি কথা কানে কানে  বলতে না পারি তাহলে এক ধরনের উত্তরণের স্বাদ থেকে আমরাই বঞ্চিত থাকব। প্রত্যাশা, আমাদের প্রতিদিন শুভ ‘রবি’ বার হয়ে উঠবে একদিন।

একক কবিতা সন্ধ্যা



মহুল ওয়েব প্রকাশিত বিভিন্ন সংখ্যা



করোনা Diary



আমাদের কথা

আমাদের শরীরে লেপটে আছে আদিগন্ত কবিতা কলঙ্ক । অনেকটা প্রেমের মতো । কাঁপতে কাঁপতে একদিন সে প্রেরণা হয়ে যায়। রহস্যময় আমাদের অক্ষর ঐতিহ্য। নির্মাণেই তার মুক্তি। আত্মার স্বাদ...

কিছুই তো নয় ওহে, মাঝে মাঝে লালমাটি...মাঝে মাঝে নিয়নের আলো স্তম্ভিত করে রাখে আখরের আয়োজনগুলি । এদের যেকোনও নামে ডাকা যেতে পারে । আজ না হয় ডাকলে মহুল...মহুল...

ছাপা আর ওয়েবের মাঝে ক্লিক বসে আছে। আঙুলে ছোঁয়াও তুমি কবিতার ঘ্রাণ...