—এদেশ শুধু আমাদের।
—তা কী করে হয়? আমরা তো সাতপুরুষ ধরে এখানেই বসবাস করছি।
—জানিস না! তোরা তো দেশ ভাগ করে নিয়েছিস! পাকিস্তান তোদের দেশ। ভারত শুধু আমাদের।
—তা আমি মানি না। এখানেই জন্মেছি, এখানেই বড় হয়েছি। আমার সাতপুরুষের নাম পর্যন্ত বলে দিতে পারি। আমার পূর্ব পুরুষ ব্রাহ্মণ ছিলেন। নবাবের আমলেই ধর্মান্তরিত হন।
—কিন্তু আমরা চাই এটা হিন্দুরাষ্ট্র হবে। অন্যকোনও সম্প্রদায়কে এখানে থাকতে দেবো না।
—আমি কিন্তু পাকিস্তান যাব না। আমাকে মেরে ফেললেও না।
—আগামী মাসের দশ তারিখ আমাদের রাষ্ট্রীয় যুবদলের কর্মসূচি ঘোষণা হবে। সেখানেই সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে তোদের জন্য কী ব্যবস্থা হবে।
মহম্মদ শফি ভাবতে পারে না, তারই বাল্যকালের বন্ধু শ্রীসঞ্জীব দাস তাকে এরকম কথা বলবে। কতদিন সুখদুখে, বিপদে-আপদে একসঙ্গে কাজ করেছে। কলেজ পর্যন্ত একসঙ্গে পড়াশোনাও। যে কোনও কাজেই উভয়ে আগে পরামর্শ করে নিত ওরা। কিন্তু আজ কী এমন হল যে, জাত-ধর্ম নিয়ে উভয়ে আলাদা হয়ে গেল? অথচ উভয়েই তেমনভাবে ধর্মে বিশ্বাস রাখে সেটাও কোনওদিন স্পষ্ট হয়ে ওঠেনি। বরং মানুষকে ভালবাসাই তাদের কাছে একমাত্র ধর্ম ছিল। তাহলে ধর্মান্ধ ছদ্মবেশী রাজনৈতিক দলেরই কোনও প্রভাব?
শফি ভাবতে ভাবতে ব্যাকুল হয়ে উঠল। বাড়ি ফিরে বেশ কয়েকটি প্ল্যাকার্ড তৈরি করল। প্রতিটি প্ল্যাকার্ডে হাতের শিরা পেঁচিয়ে রক্ত দিয়ে লিখল “আমি ভারত সন্তান । ভারত আমার গৌরব।" কোনওটাতে লিখল “আমাকে মেরে ফেললেও দেশ ছাড়ব না।" প্ল্যাকার্ডগুলি মঞ্চের চারিপাশে দেবে আগামী মাসের দশ তারিখ। সেদিন সঞ্জীবকে সে একটা কথাই বলেছিল : সঞ্জীব, আমিও মানুষ। আমি শুধু মুসলমান নই, হিন্দুও। তোর সঙ্গে আমার কোনও তফাত নেই।
সঞ্জীব হা হা করে হেসেছিল। বলেছিল : অনেক তফাত আছে। সেদিন দেখিয়ে দেবো।