মাসের শেষ। পকেটে পড়ে রয়েছে কুড়িটি টাকা। সামান্য কটি টাকায় গোটামাস টেনে নিয়ে যাওয়া যে কী ঝামেলার। মাসের শেষে টের পেয়ে যাই।
আমার মেস-জীবন। ইউনিভার্সিটির পাততাড়ি গোটাতে আরও কয়েকটা বছর। এদিকে পেট জ্বলতে শুরু করেছে। রোদ চিড়বিড়িয়ে উঠতে না উঠতে। অগত্যা বউদির হোটেল।
--ও বাপি ভাই একটান বিড়ি হবে? চিরচেনা সমুদা। একগাল দাড়ি। পরিপাটিহীন চুলের ভেতর ডুবে থাকা একটা মানুষ। প্রথম যখন মেসে থাকতে শুরু করেছি মেদিনীপুর শহরে। তখন থেকে দেখতাম। এ গলি ও গলি চক্কর দেওয়া একটা মানুষ। মিছিলের ভিড়ে জিন্দাবাদে গলা মেলানো কিংবা বন্ধ দোকানের দরজায় পোস্টার সাঁটানো, সবেতেই সমুদা। এই সমুদাকে প্রথম চিনি বউদির হোটেলে।
তখন বউদির হোটেলের খুব রমরমা। খদ্দেরপাতির ভিড় এঁটুলির মতো। লেগে থাকত। কি সকাল কি দুপুর কি সন্ধ্যে। এমন কি রাতেও খোলা বউদির হোটেল।
সমুদা তখন কাজই করত। গুল ফ্যাক্টরিতে। কাঁসাইএর ওপারের কোনও এক গ্রাম থেকে একটি মাডগার্ড ভাঙা সাইকেলে আসত। পেছনের ক্যারিয়ারে গুল বোঝাই বস্তা। বউদির হোটেলে নামিয়ে দিত সে বস্তা। বেশ ক'বছর চলেছিল। দোকানে ওভেন গ্যাস সিলিন্ডারের ব্যবহার শুরু হতেই সমুদার কাজ চলে যায়। বন্ধ হয়ে যায় গুল ফ্যাক্টরি। এক কাজ বন্ধ তো অন্যকাজ রাস্তা খুলে দেয়।
সমুদা সেই থেকে এ শহরে পোস্টার সাঁটায়।
--অ বাপি ভাই বিড়ি কি পাব লাই? সমুদা ফের বিড়ির জন্য তাগাদা দেয় বাপিকে। বাপি বউদির দোকান সামলায়। চা গরমজল থেকে ডালভাত। সবই।
বউদি খিঁচিয়ে ওঠে। চেল্লাস কেনে? দেকছিস তো হাত জোড়া। বটি চালাচ্ছে।
--সে তো দেকিছি।
--তবে? আজ কি জোটেনি কিছুই?
--নআ গো। তবে জুটে যাবে ঠিক।
--অন্য কাজ করবি? একটা কাজ ছেল।
--কাজ ট কী?
--তেমন জোরের না। ফেলাটবাড়ির গুটি বালি পাহারা দিতি হবে রাতে।
সমুদা দাড়ি চুলকে নিয়ে বলে -করব। ছিনিমাহল গুলা যদ্দিন ছিল, বেস্পতিবার এলে ডাক এইসে যেত। পোস্টার সাঁটাতুম।
--তোর পার্টিরও তো দাঁত ভেঙি গেল। ইবার ভোটে।
--হুঁ। ইবার অন্যপার্টি।
--তো? কী করবি ইবার?
--অন্যকাজ দেকতি হবে। খুঁজতি হবে।
তারপর একসন্ধ্যায় দেখা গেল --- সমুদা'র সাঁটানো পোস্টার চাপা পড়ে গেছে। অন্য পার্টির পোস্টারে।