পৌষ সংক্রান্তির রাত । জয়দেব মেলা । বিভিন্ন আশ্রমের অস্থায়ী ছাউনিতে বসেছে কীর্তন বা বাউল গানের আসর । তেমনি এক আসরে মঞ্চে ওঠার আগে প্রস্তুতি নিচ্ছেন কীর্তনীয়া রসমঞ্জরী দাসী ।
অনেক বছর আগে জয়দেব মেলাতে গান গাইতে এসেছিল মালতী দাসী ও তার মেয়ে টগর । ওই গানের আসরেই তাদের পরিচয় হয়েছিল যুবক কীর্তনীয়া সুবল দাসের সঙ্গে । মন দেওয়া নেওয়া করেছিল সুবল ও টগর ।ব্যাপারটা বিয়ে অব্দি গড়িয়েছিল ।
গরম খিচুড়ি প্রসাদ পাওয়ার লোভে সুবল দাস একটা ছেঁড়া কম্বল জড়িয়ে আসরের এক কোণে বসে ঝিমোচ্ছিল ।
রসমঞ্জরীর গান শুরু হতেই চমকে ওঠে সে ।
রসমঞ্জরীর গান শেষ হতেই সুবল লাঠিতে ভর দিয়ে মঞ্চের কাছে পৌঁছে যায় ।চীৎকার করে ওঠে, টগর! চমকে ওঠেন রসমঞ্জরী । একমাথা পাকা চুল, চোয়াল ভাঙা, লাঠিতে ভর দিয়ে কে দাঁড়িয়ে?
এই সুবল দাসই তো বছরকয়েক আগে এই জয়দেবের মেলাতে অসুস্থ অবস্থায় তাকে ফেলে পালিয়েছিল যুবতী বিধবা বৃন্দার হাত ধরে । তারপর দীর্ঘ সংগ্রামের পরে সে হয়ে উঠেছে আজকের রসমঞ্জরী । রসমঞ্জরীর ইঙ্গিত পাওয়া মাত্র স্বেচ্ছাসেবকেরা সুবলকে জোর করে সরিয়ে নিয়ে যায় ।
গভীর রাত । মাথায় ঘোমটা দিয়ে নিজের তাঁবু থেকে বেরিয়ে এলেন রসমঞ্জরী । আসরের এক কোণে কুণ্ডলী পাকিয়ে
শুয়ে আছে সুবল। সঙ্গে করে নিয়ে আসা একটা দামী চাদর অতি সন্তর্পণে সুবলের গায়ে চাপিয়ে দিলেন । দ্রুতপায়ে ফিরে যেতে যেতে শাড়ীর আঁচল দিয়ে চোখের কোণ মুছে নেন নিঃশব্দে ।