বলা হয়, ‘যে ফুল আর শিশু ভালোবাসে না, সে নাকি মানুষ খুন করতে পারে’। আমাদের সান্যালবাবু কখনও মানুষ খুন করেছে কিনা জানা নেই তবে তিনি যে ফুল জিনিসটাকে দু’চক্ষে দেখতে পারেন না, সে প্রমাণ অনেক আছে ।
ফুলশয্যার রাতে খটখটে বিছানা দেখে স্ত্রী আশ্চর্য হওয়াতে তিনি সাফ জানিয়ে দিয়েছিলেন ‘ওসব ফুল টুল আমার সহ্য হয় না একদম । ওসব জিনিস কখনও অঙ্গে তুলবে না ।’ স্ত্রী কথাটা মনে রেখেছিল, তবুও ভুলবশত একবার খোঁপায় একটি ফুল গুঁজে স্বামীর মুখোমুখি হয়ে পড়ায় যে অশান্তি হয়েছিল তা তিনি কখনও ভুলতে পারেননি ।
ছেলে শখ করে একবার গাঁদা আর গোলাপের খানকতক চারা কিনে এনে বাড়ির সামনের উঠোনটায় পুঁতেছিল । সান্যালবাবু চক্ষু দুটি রক্তবর্ণ করে ছেলেকে বলেছিলেন ‘ওসব বাঁদরামো যেন আর কখনও করতে না দেখি।’
সান্যালবাবুর ফুলের মূল্য কখনও বুঝতে চাননি । তিনি বলেন ‘ফুল কেনা মানে বাজে পয়সা খরচ করা । ফুলের মতো ফালতু জিনিশে ব্যয় করা বোকামির পরিচয়’।
বাস্তবিকই প্রাত্যহিক জীবনে তিনি ফুলের কোনরকম উপযোগিতা কখনই উপলব্ধি করতে পারেননি । এর ফলে কত টাকা এক্সট্রা তিনি বাঁচিয়েছেন তা গবেষণা সাপেক্ষ, তবে সময় বিশেষে অনেকেরই অভিমানের কারণ হয়েছেন ।
একাত্তরটি বসন্ত অতিক্রম করে অবশেষে সান্যালবাবু পৃথিবীর মায়া ত্যাগ করলেন । কোন এক শোকগ্রস্থ আত্মীয় বেশ বড় বড় তিনটি রজনীগন্ধার গোরে মালা তার মৃতদেহের ওপর সাজিয়ে দিলেন । শবের উপর মালা তিনটি বেশ মানালো । কিন্তু সান্যালবাবু পড়লেন বিপাকে । সারাজীবন ফুল সহ্য করতে না পারা মানুষটাকে এখন বাড়ি থেকে শ্মশান অব্দি পুরো রাস্তাটা বুকের ওপর তিনটে ভারী রজনীগন্ধার মালার ভার বয়ে নিয়ে যেতে হচ্ছে । নাকে মুখে ফুলের পাপড়িগুলো ঝাপটা মারছে ।
অন্তিমযাত্রায় কি বিড়ম্বনা !