লক্ষ্মী-লাভ ।। অপূর্ব পাঁজা

"কনগ্রাচুলেশনস অর্ণব বাবু, মেয়ে হয়েছে আপনার"

নার্সের কথাতে চমকে ওঠে অর্ণব। রাত দশটায় পৃথিবীর সব থেকে খুশির মালিক সে। এটাই তো চেয়েছিল অর্ণব আর তার স্ত্রী সুমি। একটা মেয়ে। এইবার সব ঠিক হয়ে যাবে। বিয়ের পর থেকে স্বপ্ন রাখার বাক্সে তিলে তিলে বড়ো করে তুলেছে একটা ফুটফুটে তুলোর মতো নরম হৃদয়কে, আজ সেই স্বপ্নের মধ্যে বিধাতা প্রাণ এনেছেন। গত ছয় মাসে অর্ণব আর সুমির জীবনের মাঝে একটা দেওয়াল বাধা হয়ে উঠেছিল। ছয় মাস ধরে কেউ কারো মুখ পর্যন্ত দেখেনি। শুধুমাত্র মোবাইলে কিছু স্মৃতিই বাঁচিয়ে রেখেছে দুজনকে। আজ অর্ণবের আরো একবার সেই দিনটার কথা খুব মনে পড়ছে। কী অমানুষিকতাই না সে করেছিল সেদিন!

ছয় মাস আগে পৌষ মাসের এক কনকনে ঠাণ্ডার রাত। পা টলমলে অর্ণব ফ্ল্যাটের কলিং বেলটা জোরে জোরে বাজাতে লাগলো। প্রায় দেড় মিনিট দেরী হয়েছিল সুমির দরজা খুলতে। মাথাটা আরো গরম হয়ে উঠেছিলো অর্ণবের। "এতো দেরী করলি কেন দরজা খুলতে, পেট ঠুসে ঘুমোচ্ছিলি নাকি?"
এইরকম কথা শুনতে একেবারেই অভ্যস্ত ছিল না সুমি। তবু নিজেকে সামলে নিয়ে একটু আদুরে হয়েই বলেছিল, "ইস্ জানো না তোমার মেয়েকে ঘুম পাড়াচ্ছিলাম" । আরো ক্ষেপে ওঠে অর্ণব।
"ন্যাকামো বন্ধ কর। শালা আমার চাকরি গেছে আর তুই শালি ওই পুতুলটাকে নিয়ে দিনরাত মেয়ে মেয়ে কর। দাঁড়া তোর মা হওয়া ঘুচোচ্ছি" বলেই সোফা থেকে পুতুলটা নিয়ে সজোরে মেঝেতে ছুঁড়ে দেয়। তারপর টলতে টলতে সোজা বেডরুমের দিকে বিড়বিড় করতে করতে চলে যায়।

সুমি একেবারে চুপ। শান্ত। ঝড় বয়ে যাবার পর গাছেরা মাথা নত করে যেমন থাকে। ধীরে ধীরে স্বপ্ন গুলো জানালা দিয়ে বের হয়ে রাতের অন্ধকারে মিলিয়ে যাচ্ছে। শহরে রাত বাড়ছে, অশরীরী কান্না বাড়ছে। আর বাড়ছে মদ সেবনকারী অমানুষিক চামড়ার গন্ধ।

পাখির কিচিরমিচির আর সূর্যের আলোর গন্ধে ঘুম ভাঙলো অর্ণবের। দেওয়াল ঘড়িতে সকাল পৌনে নটা। পাশে সুমি নেই। ঘুম ভাঙার সাথে সাথে মদের নেশা আর কিছু সাজানো স্বপ্নেরাও ভাঙলো। কাল রাতের কথাগুলো ধীরে ধীরে মাথা থেকে চোখ দিয়ে বের হয়ে আসছে। বিছানা ছেড়ে আয়নার সামনে এসে দাঁড়ায় অর্ণব। ড্রেসিং টেবিলে রাখা একটা ভাঁজ করা কাগজ। খুলে দেখলো সুমির চিঠি.........

"আমি তোমার উপর রাগ করিনি। তবুও তোমায় ছেড়ে চলে যাচ্ছি। আমি তোমারই থাকবো সারাজীবন কথা দিলাম। আমরা আর এক হতে পারবো না। তবে, আমার যে স্বপ্নকে তুমি লাথি মেরেছো সেই স্বপ্ন যদি সত্যি হয় অর্থাৎ যদি আমার মেয়ে হয় তবেই আমি তোমার মুখ দেখবো, নাহলে এ জন্মে আর নয়। ভালো থেকো"

"অর্ণব বাবু মেয়েকে দেখবেন না?" আবার নার্সের আওয়াজে সম্বিত ফিরলো। হ্যাঁ। এইবারতো যেতেই হবে। কাকে আগে দেখতে চায় চোখ! সুমি নাকি..?
না। দুজনকেই দেখবে। চোখ আর মন অস্থির হয়ে উঠছে। কাঁদতে কাঁদতে চেয়ার ছেড়ে উঠে পা বাড়ায় কেবিনের দিকে। ধীরে ধীরে দূরত্বের পর্দাটা সরতে লাগে। সুমি মুখ ঘুরিয়ে শুয়ে আর পাশে ফুটফুটে তুলোর মতো সেই স্বপ্নটা যেটাকে ছোঁয়া যায়। সুমির পায়ের সামনে এসে বসে অর্ণব।
মুখ শুকিয়ে আসছে। যেন প্রপোজ করতে এসেছে!
হাল্কা স্বরে বলল "থাকবো না চলে যাবো?"
সুমি প্রথমেই বুঝতে পেরেছিল যে অর্ণব এসে পাশে বসেছে। চোখে জল নিয়ে পাশ ফিরে বললো, "তোমার মেয়েকে ফেলে যেতে চাইলে যেতে পারো"
-"না আর কোথাও যাবো না, আমাকে ক্ষমা করে দাও প্লিজ।
-"তোমার মেয়ে। ঘুমোচ্ছে এখন"
-"শুধু মেয়ে নয়। লক্ষ্মী আমার" অর্ণব বলল।
কচি কপালে হাত রেখে অর্ণব খুশিতে দিশেহারা।
"আমাকে একটু জড়িয়ে ধরবে?" বলে কাঁদতে লাগলো সুমি। ছয় মাসের সমস্ত দূরত্বের কষ্ট আজ চোখ দিয়ে বেরিয়ে আসছে"

অর্ণব সুমিকে জড়িয়ে ধরে আর এক হাতে তার মেয়ের ছোট্টো হাতটাকে ধরে রাখে। রাত কখনো কখনো অনেক কিছু ফিরিয়ে দেয়। বাইরে জোনাকির আলোর মেলা। ঠাণ্ডা হাওয়া জানালার পর্দা সরিয়ে চাঁদের আলোকে বাড়ীতে ঢুকিয়ে দেয়। রাত বাড়ে ঘরের কোনায়। বিছানার চাদর থাকে সাক্ষী, "লক্ষ্মী-লাভ" এর॥

 

 

একক কবিতা সন্ধ্যা



মহুল ওয়েব প্রকাশিত বিভিন্ন সংখ্যা



করোনা Diary



আমাদের কথা

আমাদের শরীরে লেপটে আছে আদিগন্ত কবিতা কলঙ্ক । অনেকটা প্রেমের মতো । কাঁপতে কাঁপতে একদিন সে প্রেরণা হয়ে যায়। রহস্যময় আমাদের অক্ষর ঐতিহ্য। নির্মাণেই তার মুক্তি। আত্মার স্বাদ...

কিছুই তো নয় ওহে, মাঝে মাঝে লালমাটি...মাঝে মাঝে নিয়নের আলো স্তম্ভিত করে রাখে আখরের আয়োজনগুলি । এদের যেকোনও নামে ডাকা যেতে পারে । আজ না হয় ডাকলে মহুল...মহুল...

ছাপা আর ওয়েবের মাঝে ক্লিক বসে আছে। আঙুলে ছোঁয়াও তুমি কবিতার ঘ্রাণ...