একক কবিতা সন্ধ্যা ।। শিবলী শাহেদ

shibli

শিবলী শাহেদ এর এক গুচ্ছ কবিতা

 

দ্রোহের বোতাম

বৃষ্টি নামে যদি অনভ্যস্ত গায়ে
জাগে প্রাণ, মূর্তিমান
বলি ছদ্মবেশী, কেন পলায়নপর রাতেই
শিস দিয়ে যায় মাতাল?
শূন্য কথার পিঠে
কান পেতে রাখা তো যায় না।
তবুও এতো ফিসফাস
নাকি সে সেবন করেছে
এঁটো মাটির ঘ্রাণ!
বৃষ্টি থামলে আমি পরজীবী
বাবা'র হাওয়াই শার্ট থেকে খসে পড়া
দ্রোহের বোতাম।

 

 

খুন


এইমাত্র কফিনের ডালা বন্ধ করলাম।
তোমার আত্মার শান্তি হোক।
ঘর উষ্ণতা হারিয়েছে কফিনে তাই
অন্ধকারে টেনে নিয়ে যাই
কালো পর্দায় দু' একটা বেড়ালের চোখ...

কাঁপা-কাঁপা হাতে তবু চিন্তা নেই
বান্ডিলটা ঠিকঠাক গুঁজে দিয়েছি
হ্যাটের ভেতর।
দূরে কোথাও সাইরেন বাজছে
রক্তকণিকায় ঘোর
সন্ত্রস্ত শীতের শিশির
পুলিশ আসছে বোধহয়.....



বৃষ্টি-প্রকল্প

সাময়িক বৃষ্টি-প্রকল্পের আওতায়
তুমি চলে এসো
হে নিবেশিত নিশাচর।
মুখ্যত, ভিজে যাওয়ার চেয়েও
কোনো প্রাসঙ্গিকতা নেই আমাদের ভিতর।
ধেয়ে আসে চতুর্মুখী মেঘাগম
গেঁথে যায় চামড়ায়— সেও উত্তম।
ফলে, তোমাকে ঘিরেই
সমুদয় উত্থান আমার
যেমন জেগেছে অস্থি-মাংস-মন।
বাক্যশুদ্ধির প্রাক্কালে
দ্যাখো—
তোমার জলাভিমুখেই আমার নিশ্চিত পতন।

 

গল্পঘোর 

প্রেমের হাওয়ায় কোনও ব্যাকরণ থাকে না বলে—একটা গল্প একা একাই বিভ্রমের দিকে হেঁটে চলে। সেই গল্পেরও একটা শরীর আছে। শরীরে জলজ ঘোর। এই ঘোর ঢাকতে গিয়েই ভোর হয়ে যায় আলিফ লায়লার।


 

স্মৃতিযাত্রা

ঝড়ো হাওয়ার ইঙ্গিতে ছদ্মবেশী ধুলোরাও
প্রকাশিত খুব। সুতরাং ধুলো হয়েই
বেঁচে থাকুক স্মৃতি—যে স্মৃতির ভেতর
নতজানু তৃষ্ণার জল—তারও পরে অন্ধকারে—গভীর অতল

আগামী শীতে হাজারও বারণ থাকবে
তবুও কিছুটা স্মৃতিচারণ
পাতায় সাজিয়ে না হয় পাঠিয়ে দেব
শুদ্ধতার কেন্দ্র বরাবর

 


পরাজয়

আরো তিনটি দিন, তিনটি বিবর্ণ রাত পেরিয়ে
সকাল-শাস্ত্রে গোড়াপত্তন হোক
আদি-পোকা-বংশের।
ধানের শরীরে কান্নামুখী বিজের ক্রোধ লেগে আছে
এই কুণ্ডলীময় ধোঁয়ায়, অর্বুদ-বৃক্ষে
কেমন ঝাপটানো প্রতিবেশ অহরহ গলে যায়!
প্রতিটি পাহারায় দ্যাখো
বাতাসেরও এক উড়ালমুখী ভাবনা আছে।
তবুও প্রচ্ছন্নতার ব্যথায় কেঁপে উঠেছে যে নগরী
তার আঁচলে মুখ লুকিয়ে বলেছি
উড্ডয়নে পরাজিত হও ভ্রমর।


 

ক্রোড়পত্র

আমরা অত্যন্ত ধূর্ত এবং শক্তিশালী ।
পায়ের দৈর্ঘ্য বাড়ার সাথে সাথে
আমরা সমুদ্রে নামি ।
আমাদের সাথে মাত্র দুটো যতিচিহ্ন ,
একটি ক্রোড়পত্র ।
শরীরে বাড়ন্ত হাড়ের গন্ধ মেখে
এক অক্টোপাস চলে এসেছে ডাঙায় ।
মানুষগুলোকে বেঁধে নিয়েছে পায়ের সাথে ...

এইমাত্র অক্টোপাসটি বার্ধক্যের
মেলায় গিয়ে বসেছে
নির্দ্বিধায় ছুরি চালিয়ে দিয়েছে শরীরে ।
প্রতারিত বাণিজ্যের বিবরণ ঝরে পড়ছে রক্ত থেকে ।
অক্টোপাসটি এখন নিজেই বিক্রেতা
নিজেই পণ্য ...
শুধু পায়ে পায়ে লেগে থাকা মানুষগুলো
খুব সামুদ্রিক হয়ে যায় ।
ক্রোড়পত্রে ইতোমধ্যেই কিছু লবণের
দানা জমা পড়েছে ....


 

ইশরাত


ইশ, রাত এসে যাচ্ছে। ইশরাত, আমি ঘুমাতে চাই। অথচ বুকে উজানের দিকে বয়ে যাওয়া ঋতু, নারীর মতো প্রবহমান। সে আমার ঘুম নিয়ে পালায়


 

মানুষ

মানুষের মুখোমুখি বসি। মানুষের চোখে রাখি চোখ। চারপাশে ধাবমান ট্রেন আর উড়ে যাওয়া বালিহাঁস। মানুষকে বলি, যাবে চলো, তুমিও দৃশ্য হবে। অনাগত ট্রেনের অপেক্ষায় স্টেশন পেরিয়ে রাত.. মানুষকে ভীষণ ভালো লাগে.. মানুষের হাতে রাখি হাত...


সে


কোন্‌ সকালে আসবে ডাক
এই ভেবে তীর্থের কাক
হয়ে বসে থাকে আর ভাবে
মানুষ পেরিয়ে কতদূর গেলে পর
মানুষের দেখা পাবে।

একক কবিতা সন্ধ্যা



মহুল ওয়েব প্রকাশিত বিভিন্ন সংখ্যা



করোনা Diary



আমাদের কথা

আমাদের শরীরে লেপটে আছে আদিগন্ত কবিতা কলঙ্ক । অনেকটা প্রেমের মতো । কাঁপতে কাঁপতে একদিন সে প্রেরণা হয়ে যায়। রহস্যময় আমাদের অক্ষর ঐতিহ্য। নির্মাণেই তার মুক্তি। আত্মার স্বাদ...

কিছুই তো নয় ওহে, মাঝে মাঝে লালমাটি...মাঝে মাঝে নিয়নের আলো স্তম্ভিত করে রাখে আখরের আয়োজনগুলি । এদের যেকোনও নামে ডাকা যেতে পারে । আজ না হয় ডাকলে মহুল...মহুল...

ছাপা আর ওয়েবের মাঝে ক্লিক বসে আছে। আঙুলে ছোঁয়াও তুমি কবিতার ঘ্রাণ...