একুশে ফেব্রুয়ারি মানে, এখন নাকে কান্নার দিন। বাংলা ও বাঙালির গুষ্টি শ্রাদ্ধ করার দিন।
ঐদিন দরদ উথলে ওঠা যাকে বলে, তাই আর কি!
নিজেদের বাচ্চা-কাচ্চাদের কাছে, ঘরে ইংরেজি ফুটিয়ে, মঞ্চে বাংলাভাষার সুগন্ধ, সৌরভ ছড়ানোর দিন। গেল,গেল রব তোলার দিন।
এ তো আর আজকের কথা নয়, শুনছি সেই কবে থেকেই, বাংলা ভাষা, বাংলা সংস্কৃতি উচ্ছেন্নে চলে গেল! তাকে বাঁচাবার জন্য বগলে পাউডার, পঞ্জাবিতে সেন্ট মেরে বক্তৃতাও চলছে কবে থেকে। অথচ কী আশ্চর্য রোদ্দুরের রায় হয়ে বেঁচে উঠছে বাংলা। এই হ্যাংলামিতেই দিনদিন বাংলা মিডিয়াম ফুটে যাচ্ছে আর গাঁয়েগঞ্জে গতরে ফতরে বাড়ছে ইংরেজি স্কুল। ফুটবে নাই বা কেন, বলতে পারেন?
শুনুন বাবু, পয়সার জোর যদি ট্যাঁকে থাকে তবে কোন মা-বাপ চাইবেন যে তার ছেলেটা ভিখিরিশ্রী হয়ে উঠুক? সরকারি স্কুল মানে তো হোটেল ও বিতরণের কেন্দ্র। দুপুরে পাত, থুড়ি থালা পেতে ডাল ভাত তরকারি বা কোনো একদিন ডিম্ভাত। ফিরি বই, খাতা, জুতা, সাইকেল, তপশিলি জাতি, উপজাতি বা ওবিসি চিনতে শেখা। ওরা জেনারেল, ওরা এস সি,এস টি,ওবিসি জানতে শেখা। স্কুলের নোটিশ খাতায় ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্ট খোলার ও নং সংযুক্তির সময় থেকেই ওরা জেনে যায় ওরা টাকা পাবে, আমরা পাবো না। ছেলেমেয়ে পড়ুক বা না পড়ুক বছর বছর পাশ করে টাকা পায়। পড়া পারুক না পারুক পাশের গ্যারান্টি। টেস্টে ফেল করালে স্কুল ভাঙচুরের গ্যারান্টি, সঙ্গে শিক্ষক শিক্ষকদের জন্য আড়ং ধোলাই।
মাতৃভাষায় পড়াশোনা করে জগদীশ চন্দ্র বসু, সত্যেন্দ্রনাথ বসু, প্রফুল্ল চন্দ্র রায়, রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর, অমর্ত্য সেন বাঙালির গর্ব। আর এখন তো ইং শয়ন ও স্বপ্ন। নাহলে যে টাই টাও বাঁধতে 'শিখবে নি গ'।
এসব কথা লেখার ও বলার একটা সুযোগ করে দ্যায় ২১ ফেব্রুয়ারি। মায়াকান্না নয়, দিলসে, হ্যাঁ দিলসে ভালোবাসুন আপনি আপনার মাকে, মায়ের ভাষাকে। মনে রাখতে হবে, আমাদের যেমন মা আছে তেমনি অন্যদেরও মা আছে। নিজের মাকে ভালোবাসা মানে অন্যের মাকে গালাগালি করা তা কিন্তু নয়।
দুঃখ একটাই মাতৃভাষা আন্দোলনে মানভূমের মানুষের ভূমিকা আজও অনালোকিত।
সকল ভাষা শহিদদের, ভাষা প্রেমিকদের সশ্রদ্ধ প্রণাম।