ছোটবেলা থেকে কথা বলে আসছি যে ভাষায়, বড় হয়ে পড়াশুনা করতে গিয়ে সেই ভাষাটাকে আর খুঁজে পেলাম না কোথাও। জানতে পারলাম, শিক্ষিত হতে হলে পড়তে হবে বাংলা, হিন্দি অথবা ইংরেজি। এই সমস্যা শুধু তো আমার নয়। এই যে আমার সাঁওতাল ভাই, সে-ও তো একই সমস্যায় পড়েছে। উত্তরবঙ্গের রাজবংশী থেকে শুরু দক্ষিণ-পশ্চিমের কুড়মি সম্প্রদায়, সমস্ত প্রাচীন জনগোষ্ঠীকেই এই সমস্যায় পড়তে হচ্ছে। আমি ছোট থেকে যেটাকে 'খাইট' বলে জেনে এসেছি বড় হয়ে বিদ্যালয়ে পড়তে গিয়ে জানলাম তাকে 'খাটিয়া' বলে। আমাকে শেখানো 'খাইট' নয় ভদ্রলোকেরা একে 'খাটিয়া' বলে। আমাকে শেখানো হলো আমার মায়ের ভাষা অভদ্রদের ভাষা। তাই 'হামকে ভখাছে' বলার বদলে বলতে শিখলাম 'আমার খিদে পেয়েছে'।
মাতৃভাষা দিবসে শুধুমাত্র বাংলাভাষার উপর হিন্দির আক্রমণ, ইংরেজির আধিপত্য বিস্তারের বিরুদ্ধে সচেতন করার প্রয়াস দেখি। কিন্তু আঞ্চলিক ভাষাগুলোর উপর বাংলার প্রভুত্ব ফলানোর বিষয়ে সাবধান করে দিতে দেখি না কাউকে। আজ আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবসে আমার খুব জানতে ইচ্ছা করে, ঠিক কী কারণে আমার মায়ের ভাষাকে বাংলা বা হিন্দির উপভাষার দাগ বয়ে বেড়াতে হবে? ভারতের অন্যতম প্রাচীন এই কুড়মালি ভাষাতে বিশেষ্য থেকে ক্রিয়াপদে পরিবর্তন করা যায়, যা বাংলা বা হিন্দিতে সম্ভব নয়। তা সত্ত্বেও কুড়মালি ভাষাকে একটি স্বতন্ত্র ভাষা হিসেবে মেনে নিতে এত আপত্তি কিসের?
আজ আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবসে আমার অনুরোধ, আমার মায়ের ভাষা কোন অচ্ছুতদের ভাষা নয়। স্বীকৃতি দেওয়া হোক কুড়মালি ভাষাকে। এই ভাষাতেই পড়াশোনা করার সুযোগ দেওয়া হোক আমাদের।