মার্চ ২০২০                                                  প্রচ্ছদ–ঋত্বিক ত্রিপাঠী    

ভাষা সংস্কার ।। ঋত্বিক ত্রিপাঠী

 

আদিকাল থেকেই, বিজ্ঞান ও কুসংস্কার পাশাপাশি। একইভাবে ভাষাবিজ্ঞান ও ভাষা প্রসঙ্গে ছুৎমার্গ সমান্তরাল। আজও। সুইডিশ ভাষা ঈশ্বরের আর ফরাসী ভাষা শয়তানের, এমন যুক্তিহীন ধারণা আজও আমরা বহন করি অন্য অন্য ভাবে।
তাই, বিজ্ঞানের শিক্ষক অধ্যাপক হওয়া এক,বিজ্ঞানমনস্ক হওয়া আর এক। সংস্কার ও না-সংস্কারের অনুপাত যখন ভেঙে যায় তখনই সমস্যা হয়। অনুপাতের অঙ্কে আজকের বাংলা ভাষা সংকটময়। আজও, বিজ্ঞানের অন্তর্গত করে বাংলা ভাষাকে মর্যাদা দিইনি। তাই, সঠিক সংস্কারের অভাবে সে অন্ধকার ঘরে একা। বিতত বীতংসে পড়ে জটিল। কোনও এক ভাষায় জন্ম নিয়ে সেই ভাষাকে লালন পালন করা যথার্থ সম্ভব হয় তখনই, যখন সেই ভাষাকে সেই সমাজসংস্কৃতির অভিন্ন করে দেখতে পারি। প্রাদেশিক ভাষা ওড়িয়া কিংবা হিন্দির থেকে আজও ইংরেজি শব্দ প্রয়োগে আমাদের আত্মমর্যাদা প্রতিষ্ঠা পায়। আত্মা শান্তি পায় কি না জানা নেই। মন্ত্রতন্ত্রে সংস্কৃত, খিস্তিতে হিন্দী, প্রথম নরম প্রেমে বাংলা সিরিয়ালের বাংলা, বাংলাভাষিদের সেমিনারে ভুল ব্যাকরণে ইংরেজি, পার্টিতে ইয়া-উয়া মিশ্র ভাষা, অলৌকিকত্বে সাধু বঙ্কিমী, ব্যর্থ প্রেমে রবীন্দ্র ভাববাচ্য ইত্যাদিতে আমরা আজ অভ্যস্ত।
তবে কি আমাদের সংস্কৃতি আমাদের ভাষাকে নিয়ন্ত্রণ করছে না! আমাদের সংস্কৃতি কি আমরা হারিয়েছি! না কি আমরা মিশ্র সংস্কৃতির পায়ে মাথা রাখছি! আর, আশাবাদ তৈরি করছি এই বলে যে, মিশ্র সংস্কৃতিও তো এক সংস্কৃতি! সময়ের সঙ্গে সঙ্গে বিজ্ঞান বদলে যায়। যুক্তিনির্ভর সে বদল! ভাষারও বদল আসে। সেই বদলের সঠিক দিকনির্ণয়ের জন্য চাই নিরপেক্ষ সংস্থা। দুর্ভাগ্যের এই স্বাধীন দেশে আজও তেমন কোনও উদ্যোগ গড়ে উঠল না।
বিজ্ঞানে লগ্নি হয়েছে যা, বিজ্ঞান মনস্কতায় সে তুলনায় কিছুই না। ভাষা ব্যবহার আজ একমাত্র। ভাষা সংস্কার মর্যাদা পায়নি। ফলস্বরূপ ভাষাকে শ্লীল -অশ্লীল, রাজধানী - মফস্সল ভাষা- উপভাষা,মানুষ-দেবতা ইত্যাদি ইত্যাদির বিভাজন ও নাক উঁচু-নিচু করতে সময় দিচ্ছি বেশি। অথচ, ইতিহাস পড়তে গিয়ে প্রাচীন যুগের রোমাঞ্চ পাচ্ছি না। বিজ্ঞানের ভাষাতে বিস্ময় নেই। ভূগোলের ভাষায় নেই চিত্রকল্প। সবই যেন রসহীন তত্ত্ব ও তথ্য। বিজ্ঞানের অধ্যাপকের ধারণা তাঁর ভাষাজ্ঞান জরুরী নয়। অথচ, তিনিও তো ভাবই প্রকাশ করেন। বিষয়কে এক থেকে বহু করতে চান। কীভাবে করবেন! নির্দিষ্ট দিশা নেই। ব্যক্তি উদ্যোগ কিছু আছে,কিন্তু তা যথেষ্ট নয়। অথচ,ব্যক্তিত্ব প্রকাশে প্রয়োজন ভাষাজ্ঞান ও প্রকাশ। তাহলে কি আমরা ব্যক্তির জীবনদর্শন, সৃজনশীলতাকে মানতে চাইছি না! গুরুত্ব দিতে চাইছি না আকর্ষণীয় ব্যক্তিত্বকে! এই কারণেই কি তরুণ পাঠক পাঠিকা বেশি করে এস এম এস- র ভাষাকে আঁকড়ে ধরছে! মিশ্র ভাষাতে অভ্যস্ত হচ্ছে! কিংবা নীরবতাকে প্রশ্রয় দিয়ে চিহ্ন সংকেতে আসক্ত হচ্ছে! দীর্ঘ চিঠি লেখা উঠে যাচ্ছে-- তাও কি এই কারণে!
স্কুল কলেজ বিশ্ববিদ্যালয় ও সিলেবাস নির্ভর আমাদের জীবন। সামাজিক মর্যাদা অর্থনৈতিক অবস্থানের ওপর একমাত্র নির্ভরশীল। সেই কারণেই ভাষা সংস্কার ও চর্চার উদ্যোগ সরকারকেই নিতে হবে। কার্যকরী করবে নিরপেক্ষ স্বাধীন কোনও সংস্থা। রাষ্ট্রকে বুঝতেই হবে নিয়মিত সংস্কার না করলে প্রাচীন রসহীন ব্যাকরণ সর্বস্ব ভাষা দুর্বল হবেই। দুর্বলতার সুযোগ নিয়েই 'কিন্তু' শব্দকে হারিয়ে 'বাট' শব্দ মর্যাদা পাবে। বিদেশী শব্দ স্বাগত চিরকাল। কিন্তু বলপূর্বক আনয়ন স্বাস্থ্যকর নয়। 'মোবাইল' শব্দটির বাংলা না করলেও চলে। চলভাষ কিংবা দূরভাষ কিংবা মুঠোফোন শব্দগুলির থেকেও মোবাইল শব্দটি বেশি প্রায়োজনিক ও প্রাসঙ্গিক। এক্ষেত্রে 'মোবাইল' বিদেশী শব্দ হয়েও বাংলা অভিধানে স্বাগত। ভাষা একান্তভাবেই বিজ্ঞান ও ঐতিহ্যনির্ভর। তাই, ভাষাসংস্কারে রাষ্ট্রের একটু বেশিই মনোযোগ প্রয়োজন। আমরা পুষ্পাঞ্জলি দেবার সময় সংস্কৃত ভাষা ব্যবহার করি। সেই দেবীকেই বিপদে পড়ে ডাকি বাংলায়। সংস্কৃত ভাষায় কাউকে খিস্তি মারি না। ইংরেজিতে কোনওদিন স্বপ্ন দেখি না কিন্তু ইংরেজি ভাষার স্কুলে সন্তানকে ভর্তি করিয়ে আত্মতুষ্টি পাই। যে ভাষায় একজন উকিল ওকালতি চালান, দিনশেষে সেই ভাষায় তিনি তাঁর স্ত্রীর সঙ্গে কথা বলেন না,যেহেতু সমাজ বদলে ভাষা বদল হয়। সময় বদলেও ঘটে ভাষা বদল। আত্মমগ্ন যুবকটি ভাষার অভাবে আত্মঘাতী হতে পারে। তৈরী হতে পারে বিষয়ের প্রতি ঘৃণা। ভাষার অভাবে কিভাবে ঘটবে ভাবমোক্ষণ (ক্যাথারসিস)! যে রাগ অভিমান দুঃখ অনুরাগ প্রশংসা রসিকতা ভাষা মাধ্যমে প্রকাশিত হয়ে মন শান্ত ও উদার হতে পারতো - তার(ভাষার) অভাবে সে আত্ম-আবিষ্কারের বদলে আত্মঘাতীও হতে পারে। এ কথা গণতন্ত্রে বিশ্বাসী রাষ্ট্রকে বুঝতেই হবে। তবেই রাষ্ট্র হয়ে উঠবে অভিভাবক।
ভাষাও আসলে বিজ্ঞান। তার প্রয়োগ ও পরিবর্তনকে যুক্তি নির্ভরতায় বিশ্লেষণ করা যায়। তাই ভাষাচর্চাতে সরকারী বাজেট বরাদ্দ হওয়া চাই। চাই নানাবিধ পরিকল্পনা।
শুধু বাংলা আকাদেমি ও সাহিত্য অকাদেমি যথেষ্ট নয়।

 

 

একক কবিতা সন্ধ্যা



সহজ কবিতা সহজ নয় কঠিনও নয়



মহুল ওয়েব প্রকাশিত বিভিন্ন সংখ্যা



করোনা Diary



আমাদের কথা

আমাদের শরীরে লেপটে আছে আদিগন্ত কবিতা কলঙ্ক । অনেকটা প্রেমের মতো । কাঁপতে কাঁপতে একদিন সে প্রেরণা হয়ে যায়। রহস্যময় আমাদের অক্ষর ঐতিহ্য। নির্মাণেই তার মুক্তি। আত্মার স্বাদ...

কিছুই তো নয় ওহে, মাঝে মাঝে লালমাটি...মাঝে মাঝে নিয়নের আলো স্তম্ভিত করে রাখে আখরের আয়োজনগুলি । এদের যেকোনও নামে ডাকা যেতে পারে । আজ না হয় ডাকলে মহুল...মহুল...

ছাপা আর ওয়েবের মাঝে ক্লিক বসে আছে। আঙুলে ছোঁয়াও তুমি কবিতার ঘ্রাণ...