একক কবিতা সন্ধ্যা ।। তাপস বৈদ্য

tapas

তাপস বৈদ্য-র এক গুচ্ছ কবিতা 

 

 

 

শো কজ

কারণ দর্শাতে গেলে কার্য-কারণ সম্পর্কের
চুলচেরা বিশ্লেযণের প্রয়োজন আছে নাকি
তা খতিয়ে দেখতে ও দেখাতে গেলে আরও
একটা শো কজ নোটিশ ধরিয়ে দিতেই পারে।

ক্ষমতার সদ্ব্যবহার মোটেও সহজ নয় বলে
অযোগ্যতা আর বালখিল্য রমরমিয়ে শাসায়।
আমরা কারণ দেখাই, কারণ প্রমাণ করি,
তবু অকারণেই প্রহসনের কাঠগড়ায় দাঁড়াই‌।
তবে ভয় পাই না, কারণ আমরা মানুষ হয়ে
মানুষের কথাই জানতে ও জানাতে চাইছি।

 

লজ্জায় লাল

এ-বঙ্গ অঙ্গ থেকে লজ্জা যে নির্বাসিত হয়েছে,
তা জোর দিয়ে বলতে গেলে গলার জোর লাগে না।
বরং দম লাগে নিজস্ব কলজের ও মেরুদণ্ডের।
মেরুদণ্ডের কবিতা শুনিয়ে ব‍্যাঙ্কে অংক বাড়িয়ে
নেওয়ার অনন‍্য উদাহরণও চোখ এড়িয়ে যায় না।
লজ্জা নিষিদ্ধ বলেই মিথ্যার বাড়বাড়ন্ত সাম্রাজ্যে
ছেঁড়া জালে যা আসে ভেবে কাদা ছোঁড়াছুঁড়ি করি।
দাগীদের কাদার দাগের ভয় নেই বলে অন্যদের তারা
সাদা কাপড়ে ঢেকে দিতে চায় বুড়ো আঙুল দেখিয়ে।

রক্ত-মিল জীবনে চরম সত্য বলে জীবনের নিত্যতা সূত্র
গুরুত্বপূর্ণ হয়ে প্রাণকে গরম রাখে, লজ্জারাঙাও করে।

 

রক্তঋণ

ব‍্যারিকেড ভাঙার গান এখনও একটাও
লিখতে পারিনি, অথচ তার কথা ও সুর
বুকের হারমোনিয়ামে জন্মের অনেক আগে
থেকেই গচ্ছিত রাখা আছে। এই জন্যেই
বোধ হয় পুব ও পশ্চিমের আকাশ লাল হলে
চেতনার ভূমিতে লাল পতাকা উত্তোলিত হয়।
রক্তের রং লাল বলে কিনা জানি না, রক্তাভা
দেখলেই চিরবান্ধব ভাব ও বোধে সমগ্র
পৃথিবী আমার সুহৃদ হয়ে ওঠে, আমি সুস্থ
হয়ে উঠি। প্রাত‍্যহিক সুপ্রভাতিক শুভেচ্ছার
সঙ্গে রণ-রক্ত-সফলতার একটি দিনের জন্য
রক্তিম অভিনন্দন পাঠিয়ে বলি-- রক্ত দিয়ে
প্রাণ বাঁচিয়েছ আমার, সে কি বন্ধু তোমার?

 

আমি লজ্জায় মরি

জীবন সংগ্রামে সময় এক আশ্চর্য জাদুকর।
তার অবিরাম স্রোতে রাগ-তাপ-শোক বিসর্জন দিয়ে
'কিংকর্তব্যবিমূঢ়' শব্দের কাছে মূক ও বধির হয়ে
বসে থাকাকে সময়ের দাবি বলে চালিয়ে দিই।
অথচ এই আমিই 'রাজা তোর কাপড় কোথায়' বলে
মঞ্চে মঞ্চে কত হাততালি ও পুরস্কার পেয়েছি।

এখন বুঝতে পারি রাজা বা রানীর আসলে কোনো
পোশাকই লাগে না, কারণ তাদের অভিধানে 'নির্লজ্জ'
শব্দটাই কে কবে কখন যেন ডিলিট করে দিয়েছি।

 

ভাগাভাগির নাটুকে নিয়তি

মানুষের পাশে উষ্ণতার মতো থাকতে গেলে
জোরের প্রশ্ন একেবারে সামনে এসে পড়ে।
তবে এ-জোর মাস‍লের না, মনের-- এই সহজ
সত‍্য বুঝতে ও বোঝাতে দশক অতিক্রান্ত।
বুড়ো হচ্ছি বটে তবে কতটুকু বড়ো হচ্ছি--এই
সংশয় নিয়ে অন‍্যায়ের পাল্লায় ঝাঁকের কৈ
হয়ে বেমালুম জল ও ডাঙায় ভাগ বসাচ্ছি।
মানুষে মানুষে ভাগের ভাগফল খুবই ছোটো
বলে আনন্দ ও ভাগের সমানুপাতিক সম্পর্কে
আস্থা হারিয়ে সস্তা নাটকে তালি বাজাচ্ছি।

 

সময়সূত্র

পোশাক বললে 'আশাক' শব্দটি যেমন আসে
তেমনি 'পরিচ্ছদ' শব্দটিও আশেপাশে ঘুরঘুর করে।
লজ্জা না থাকলে যেমন পোশাকের দরকার হয় না,
তেমনি পোশাক না থাকলে সাফিক্স শব্দ দুটির
আগমন ঘটবে না এমনটাও যুক্তির খাতিরে ঠিক
আগমনের সঙ্গে প্রস্থান বা বিসর্জনের একটা অঙ্গাঙ্গিক
যোগসূত্র আছে। সময় শ্রেষ্ঠ বিচারক বলে এই সূত্র
প্রমাণ করার দায় তারই হাতে তুলে দেওয়া ভালো।

 

পথের দাবি

জীবন মানে কারও কাছে অংকমিলান্তির খেলা,
আবার কারও কাছে যাপনের বেগ ও আবেগ।
এদের মাঝামাঝিও থাকে কেউ কেউ-- মধ‍্যপন্থী।
অংকবাদীরা যেমন দুয়ে দুয়ে চার মেলাতে পারে না, তেমনি অন‍্যপক্ষের গরমিলকে সঙ্গে নিয়ে যুদ্ধের
সব কিছু মারপ‍্যাঁচ সবসময় মেলানোও সম্ভব হয় না।
জীবনে সবকিছুকে সঠিক সিদ্ধান্তে নিয়ে যাওয়া
যায় না বলেই পথ ও বিপথের এত ভয় ও ভরসা।

আমি পথের বামদিক দিয়ে হেঁটে যাওয়া লোক,
তাই পথের দাবি মেটানোর জন্য আমার অভিধানে
'লজ্জা' শব্দটিকে সযত্নে আগলে রাখতে হয়।

একক কবিতা সন্ধ্যা



মহুল ওয়েব প্রকাশিত বিভিন্ন সংখ্যা



করোনা Diary



আমাদের কথা

আমাদের শরীরে লেপটে আছে আদিগন্ত কবিতা কলঙ্ক । অনেকটা প্রেমের মতো । কাঁপতে কাঁপতে একদিন সে প্রেরণা হয়ে যায়। রহস্যময় আমাদের অক্ষর ঐতিহ্য। নির্মাণেই তার মুক্তি। আত্মার স্বাদ...

কিছুই তো নয় ওহে, মাঝে মাঝে লালমাটি...মাঝে মাঝে নিয়নের আলো স্তম্ভিত করে রাখে আখরের আয়োজনগুলি । এদের যেকোনও নামে ডাকা যেতে পারে । আজ না হয় ডাকলে মহুল...মহুল...

ছাপা আর ওয়েবের মাঝে ক্লিক বসে আছে। আঙুলে ছোঁয়াও তুমি কবিতার ঘ্রাণ...