একক কবিতা সন্ধ্যা ।। মারুফ আহমেদ নয়ন

maruf

মারুফ আহমেদ নয়ন-এর এক গুচ্ছ কবিতা  

 

 

 

সামুদ্রিক প্রবালের জীবনচক্র

সমস্ত প্রতিশ্রুতির অর্থ তোমার দর্শন প্রাপ্তির বাসনা। শরীরের রন্ধ্রে রন্ধ্রে চলে শীতল যুদ্ধ। হিমবাহ ক্যাভলিন থেকে সাহারা মরুভূমি পর্যন্ত দাপিয়ে বেড়াই। মরা জ্যোৎস্নায় সাজাই নিজের কফিন। চাঁদের আলো ভেদ করে না মাটির কঠিন ত্বক। হৃদয়ের গভীরতম খাদ নিয়ে একটা আবিসিনিয়ান বিড়াল হা-হুতাশ করে। অথচ তোমার পাথর মন গলে না।

আমি লুট করা সমস্ত শব্দের ঝংকার নিয়ে, তোমার জন্যে গান বাঁধবো স্ত্রী লিরিবার্ড। মনে প্রাণে কামনা করবো তোমাকে। অথচ তোমাকে চাইতে গিয়ে পেয়েছি অন্ধকার। পেয়েছি বালিন তিমির জীবন, সমুদ্র জলে ঘুরি ফিরি৷  কৃষ্ণগহ্বরের দিকে তলিয়ে যেতে যেতে লিপিবদ্ধ করি, প্রবালের জীবন চক্র। যদি এইসব প্রবালের মতো পেতাম আয়ু, তোমাকে বাসা যেতো সম্পূর্ণ ভালো! 

চির অন্ধকার যুগে, দেহবল্লরী হারিয়ে ফেলেছি। শিকারীর ধনুর্বাণ থেকে বেঁচে ফেরা হরিণ শাবক পিপাসায় জলের নিকটে এলে তাকে মুগ্ধ করে কুমির। নিরুপায় আমি, আমাজনের গভীর জলাধারে পাইথনের পেটের মধ্যে ঢুকে পড়েছি। দেবী আমার, আমি চিরকাল নোয়াবো না মস্তক। তোমার অহমের পাশে হবো তীব্র পতনফুল।

 

হাওয়ায় সারগম

জলের অতলে তোমার পবিত্র মুখশ্রী। আমাকে প্রলয় ঘূর্ণিতে ফেলে বরবাদ করেছে। তলিয়ে গেছে জাহাজ, সামুদ্রিক আগ্নেয়গিরির স্রোতে। তবুও পড়ে আছে মন, তোমার অন্ধ গলিতে। যেন শরাবখানার মাটির পেয়ালা। স্মৃতিতে ধূসর সমুদ্রবনের স্মৃতি, জেগে উঠে কুমিরের হিংস্রতা। দৃষ্টি সবুজ তৃণভূমি ছুঁয়ে, পায়ে পায়ে ছুটছে চিত্রল হরিণীর পিছু পিছু। 

আমার দৃষ্টি জুড়ে কেবল তুমি। যেন গোলপাতার আড়ালে নীলগ্রীবা মাছরাঙ্গা। যে মৎস্য আহরণ ভুলে গিয়ে পাতায় লুকিয়ে পড়েছে। আমিও তোমাকে ভুলে গিয়ে ইউক্যালিপটাস ডিগ্লুপ্টার মতো শরীর থেকে খসে ফেলছি বৃক্ষ ত্বক।। মুগ্ধ হও। আমার নাবিক জীবন কেটে যাক, নোনা জলের ঘ্রাণে। যদিও খরার দেশে কাটাচ্ছি বিরহকাল।

আমার শরীরেও আমিষের আস্তরণ। যদি প্রার্থনা করো, দীর্ঘ জীবন। অভিবাদন জানাবো হাওয়ায় সারগম। দুলে উঠে ক্রিপ্টোমেরিয়ার বন। যেন তোমার খোঁপায় লাজুক গাজরা। নিকটে এসে ধ্বংস হও। যেভাবে একদা তোমার জাহাজ তলিয়ে গিয়েছে সমুদ্র গিরিখাতে। দুঃস্বপ্নে দেখেছিলে, এক মায়াবিনী জলরথে দিয়েছিলো পাড়ি, অথৈ জল সীমানা। 

 

আমার ভ্রমণ পিপাসু মন

তোমার সন্ধানে নেমে পড়েছি পথে। জলের তলদেশে মুক্তা ও প্রবালের প্রাচীর৷ আমার ভ্রমণ পিপাসু মন যাত্রা করেছে অনির্দিষ্ট গন্তব্যে। যতদূর ছুঁয়ে যায় দৃষ্টির আগুন, ততদূর ভাঙ্গে বরফের ঘুম। ঝড়ে বিপর্যস্ত জাহাজ থেমে থাকে তটরেখার বালিতে। ভেবেছি, ডলফিনের সাঁতার দৃশ্যে আমিও তার সহোদর। ঘুমিয়ে ছিলাম পাথর খন্ডের উপর।

আমার ঘুম কেনো ভাঙ্গালে তুমি! স্বপ্নের ভেতর অনন্ত ঘুমে ডুবে ছিলাম। স্বর্ণ ও রৌপ্যের কাঠিতে। গুপ্তধনে বুঝি পাহারাদার থাকে শঙ্খিনী। দেখেছি, তৃণভূমির সন্ধানে নূ হরিণগুলো পাড়ি দেয় সেরেঙ্গেটি থেকে মাসাইমারার সুদীর্ঘ পথ পরিক্রমা। পথিমধ্যে নদী গ্রুমিতির জলে, নিজেকে হিংস্র কুমিরের ছায়ায় দেখে ভীতসন্ত্রস্ত হয়ে উঠি। কেঁপে উঠে লতা-গুল্মের উপবন। 

নিরালা হাওয়ায় বেজে উঠে অন্ত্যমিল। যেন পাথর যুগের সংগীত। পারিনি এড়াতে অনিবার্য পরিণতি। ঢুকে পড়েছি মৃত্যুর মঞ্জিলে। নেনেটদের মতো বরফ খন্ডে হবে না আমাদের সংসার জীবন। করবো না পালন বল্গা হরিণ। ঘুরবো না অব ও ইনসের শাখা-প্রশাখায়। কেবল তোমাকে ভালবেসে আমি মিলিয়ে যাবো, অসীম বিন্দুতে। 

 

পাহাড়ি নদীর গুহা

তোমার কথা ভুলে অরণ্য পথে দৌড়াচ্ছি। ঝড়-বৃষ্টির দুপুর, বজ্রপাতের ঝলকানি। নিভে গেছে সূর্য কিরণ। ভূগর্ভস্থ মেঘদল উড়ছে আকাশে। এমন নিকষ কালো অন্ধকারে ভীতসন্তস্ত্র হয়ে পড়েছি। ঢুকে পড়েছিলাম, পাহাড়ি নদীর গুহায়। সেখান থেকে পালিয়ে এসেছি ঘরে। থরথর কাঁপছি। যেন দেখে ফেলেছি হিংস্র প্রাণীর চোয়াল।

মুছে ফেলেছি স্মৃতির আদ্যক্ষর। মঙ্গোলিয়ার যাযাবর বন্ধুদের সাথে পোষ মানানো শিখেছিলাম, সোনালী ডানার ঈগল। এরা আমাকে ধরে এনে দেবে শিকার। পাথরের উনুনে চাপাবো খরগোশের মাংস। আহার শেষে ঘুমিয়ে পড়বো আলতাই পর্বতের পাদদেশে। এক ঘুমে কাটিয়ে দেবো, পঁচিশ কোটি বছর। তুমি এসে ঘুম থেকে জাগাবে! কপালে রাখবে গাঢ় চুম্বন।

আমাকে হাত ধরে টেনে নিয়ে যাবে হাং সাং ডুতে। পরিচয় করিয়ে দেবে সেই সব অন্ধ সরীসৃপ, মাছ ও চিংড়ির সঙ্গে। বলবে, চিরকাল অন্ধকারে মেখে নিভে গেছে দৃষ্টি প্রদীপ। ক্ষয়ে গেছে ত্বকের লাবণ্য। চিরঅন্ধ বালক আমি, না বুঝি তোমার কূটচাল। নির্বোধের মতো বলি, যদি হই পাথুরে ভূমির চক্ষু, তুমি হয়ো তৈদুছড়া ঝর্ণাধারা। আমাকে করো মৃত্যুর চেয়েও শীতলতম।

 

নীল অগ্নিশিখার দ্যুতি

আমার হৃদয়ে জাগ্রত হয়েছে সুপ্ত আগ্নেয়গিরি। তোমার স্মরণে। ছড়িয়ে পড়েছে তান্ডবলীলা, কেলিয়ূন পর্বতমালায়। জ্বালামুখ থেকে বেরিয়ে পড়া সালফার, প্রস্তুত করে নীল অগ্নিশিখার দ্যুতি। যেন তোমার দর্শনের তিয়াসায় লোভাতুর হয়ে পড়লাম। ভারসাম্য রাখতে পারিনি বজায়। আগুনের কাছে নিরুপায় পতঙ্গ প্রাণ। 

ভেবেছি, অম্লীয় হ্রদ, আমার বিদগ্ধ হৃদয় দ্রবীভূত করবে। আমাকে শূন্য করে দেবে। যাবো মিশে তোমার ফিরোজা রঙের জলাধারে। জানো তো, তৈগা বনভূমিতে এতোকাল বরফে আচ্ছাদিত বৃক্ষের ন্যায় ছিলাম। উঠে দাঁড়াতে মনে পড়লো, তিন মিলিয়ন বছর পূর্বের বরফ যুগে ফেলে এসেছি হাড়ের তোরঙ্গ। তারপর, তোমার প্রসঙ্গে, তোমার দীঘল চুলের অরণ্যে হারিয়ে গিয়েছি।

শাড়িতে জড়িতে জড়ানো সুগন্ধি রেণু, আমাকে করে উন্মাদ। বলি, তোমার দেহে ছড়িয়ে পড়েছে বিষাক্ত ফুলের তরল। অবশ হয়ে আসে অঙ্গ--প্রত্যঙ্গ। যেন তুমি সেই পর্বত, আমার মৃত্যু উপত্যাকায় ফোটাচ্ছো আগুনের ফুলকি। জেনেও করবো আরোহন, চিরকাল রয়ে যাবো সালফার খনির শ্রমিক। 

 

প্যারাবনে তোমার কুহক

আমার রুহে ঢুকে পড়েছো তুমি। যেভাবে গোরের ভেতর নিঃশব্দে ঢুকে পড়ে মানুষ। কোনো শব্দ করে না। এমন জড় ভাষা নিয়ে যখন তোমার নিকটে দাঁড়ায়, আমার সমস্ত অক্ষর চিনে ফেলে আমার সদৃশ। যেমন জলে আর্চার ফিশ চিনে ফেলে শিকারীর মুখমণ্ডল। থুথু ছিটিয়ে জিহ্বার জালে জড়িয়ে নেয় পোকামাকড়। 

তেমন আশ্চর্য নিয়মে তোমার ভেতরে ডুবে গেছি আমি। হারিয়েছি সামঞ্জস্য। যেমন স্রোত ভাসিয়ে নেয় উপকূল। বুঝিনি, দ্বিধার করাতে কেটেছো সম্পূর্ণ অবয়ব। ডুবে যেতে প্রস্তুত ছিলাম। তেমন গভীরতা নিয়ে যদি বাসতে ভালো! যেন মারিয়ানা টেঞ্চে হারানো জাহাজ, কখনো পায় না খুঁজে বাতিঘরের নিশানা। কেবল জলের অতল গহ্বরে ডুবে যেতে থাকে। 

যখন হাত রাখি শিয়রে। গভীর বালুতটে, তোমার শরীরের উষ্ণতা টের পাই। পেরেগ্রিন শাহিনের মতো ক্ষিপ্র হয়ে উঠি। তোমার সাথে জড়িয়ে পড়ি মেকি লড়াইয়ে। প্যারাবনে তোমার কুহক। যেন তা আমার বুকের মানচিত্র। চিরকাল আমাকে করে রাখলে ভালবাসায় ভিখারী। তুমি রইলে হৃদয়ে সম্রাজ্ঞী আমার। 

 

অপরুপ সূর্য কিরণের বনে

অপরুপ সূর্য কিরণের বনে, তোমার সঙ্গে হলো দেখা। বিকিরিত তাপ হারিয়ে ফেলেছে দহনের প্রাচুর্য। আমি দিন-রাত বিভোর হয়ে আছি তোমার স্বপ্নে। যেন ব্ল্যাকবেরির পাতায় লুকিয়ে পড়েছে পাতাপতঙ্গ। শিকারী কি জানে সবুজের তারতম্য! তেমনি আমিও না জানি তোমার মন। মোমের পুতুল এগিয়ে আসছে গণগণে আগুনের চুল্লিতে। জানি, দাহযুগের পরে পৃথিবী ঢেকে যাবে উষ্ণ বরফে।

ধ্বংস অনিবার্য জেনেও তোমার প্রেমের দ্যুতির নিকটে নোয়াবো না মাথা। যদি ভেঙে পড়ে আকাশ৷ চির অবাধ্য এ ভূমিপুত্র। ক্ষয়ে গেছে হাড়ের শৃঙ্খল। মাশাদের মাটি খুড়ে এনেছি তুলে জাফরান ফুল। ভেবেছি তুমিও এক রঙিন জাফরান। আমাকে মুগ্ধ করবে স্ব- ভঙ্গিমায়। এ মাটির কাঠামো নিয়ে যতদূরে যাই, ততদূর ভস্মীভূত হয় সবুজের স্বর্গ। নারকীয় সাপের জিহ্বার লালা থেকে নিস্তার নেই কারো। 

অভিবাসী কাঁকড়ার মতো বর্ষায় উঠে আসি সড়কে। জলের নিকটে যাই। একবার মন দেশান্তরী হতে চায়। দেখি, চোরাবালিতে আটকে পড়েছে এক হরিণ শাবক, তাকে ঘিরে আছে সিংহীর ক্ষুধা। ভাবি, আমাকে খাদ্য হিসেবে গ্রহণ করতে, মাটির অন্তরতম প্রদেশে প্রস্তুত হচ্ছে একদল পোকামাকড়।

 

প্লিটভাইস হ্রদের জলে

তোমার ভেতরে অনন্ত বাসনা নিয়ে ডুব দিয়েছি। তুমি প্লিটভাইস হ্রদের জল। আমি সুরেলা পাখির স্বর। হৃদয়ের ক্ষত দগদগে হয়ে উঠলে ডুমুরের বনে পাতাদের কোলাহলে লুকিয়ে পড়ি। যেভাবে স্ত্রী লোকেরা মুখ লুকায় শাড়ির আঁচলে। বুঝি, তোমার কাছে হেরে যাবার অর্থ, যুদ্ধবন্দীর শিরচ্ছেদ। শিরস্ত্রাণ ও তরবারীর জীবন লুটিয়ে পড়ে। যেমন লুটিয়ে পড়ে যুদ্ধের ময়দানে পা কাটা তেজি ঘোড়া।

তেমনি বিপর্যস্ত তোমার প্রেমে। আমার বুকে উঠে আসে লাউডগা সাপ। ছোবল হানে না। তখন দৌড়াতে থাকি বাঘের ডেরা থেকে কুমিরের চোয়াল অবধি। বলি, ফিরে যাও মৃত্যুর পরী। প্রস্তুত হতে এখনো বাকী!  যদিও পড়েছে মন ইয়েমেনের জন্মান্ধ কূপে। লোকশ্রুতি এমন, এখানে পাথুরে ভূমি। জ্বীন শিশুরা খেলতো আপন খেয়ালে। তারা মেঘের সঙ্গে দিতো পাল্লা। ঘুমিয়ে যেতো চাঁদের পিঠে। শিকার করতো মহিষের হাড় ও বাকল।

চিরকাল বিভ্রম আমার। পূর্ণজন্ম প্রাপ্তির বাসনায় পান করি সঞ্জীবনী। করি ডাস্কি লরির পালকের প্রশংসা। মৃত্যুর পরে তো মাটির কফিনে পড়ে ছিলাম। এরপর রুপান্তর হলাম পাললিক শিলায়। তারপর জীবাশ্ম জন্ম। তুমি কি পেতে পারো এভাবেই আমার সন্ধান। চিরকাল তো গভীর পর্বতে লুকায়িত থাকে হীরক খন্ড।

 

স্বতন্ত্র চারার উচ্ছ্বাস

এমন বসন্ত দিনে, তোমার কথা স্মরণ এলো। দেবকাঞ্চনের বনে ফুলেরা হলো উন্মুখ। প্রিয় পাখিরা যাচ্ছে ভুলে ঋতুর মাখরাজ। অপরুপ জোস্ন্যায় উড়ছে নীল পিগমি প্রজাপতি। অন্ধকার প্রান্তরে সমস্ত আলোর বিন্দু যায় মূর্ছা। বিবিধ পতন দৃশ্যে আমাদের বিরহ যাপন। যেন ইয়েহোদি মেনুইনের বেহালা বেজে উঠছে করুণ সুরে। ভূমিকম্পের মতো উঠছে কেঁপে এ নহবতখানা। 

পূর্বজন্মে ঘুমিয়ে ছিলাম বীজের তনু মনে। মাটির সংস্পর্শে প্রাণ পেলাম। কোষ বিভাজনের কালে আমিও ছিলাম স্বতন্ত্র চারার উচ্ছ্বাস। এভাবে কেটে গেলো উদ্ভিদজন্ম। তারপর মানুষজন্ম পেলাম। প্রেমে পড়লাম তোমার। নিবিড় অন্ধকার মেখে দুজন শুয়ে ছিলাম সবুজ ঘাসে। যদিও নিকটবর্তী হয়েছি। যেমন জ্বালানী নিকটবর্তী হয় আগুনের। দাউ দাউ করে পোড়ায় দেহের সতেজ বনভূমি। জানি না, সংবরণ।

আমার ঈশ্বর প্রজ্ঞাময়। তুমি ছিলে আতাকামা মরুর চাঁদ। আমি সুপার ব্লুম। আমাদের দু-চোখে খেলা করছে মরুজ্যোতি। ছুটে বেড়াচ্ছি পৃথিবীর উওর থেকে দক্ষিণ গোলার্ধে। অস্থিরতা যেন গলাকাটা মোরগের সবক। জানি, এ জন্ম কেটে যাবে সৌর হাওয়ায়। পরমাণু আধান বিশিষ্ট কণা হিসেবে লিপিবদ্ধ হবে, হাড়ের পুরাণে।

 

বালকের অন্ধ নিরঙ্গম

অন্ধকারে চেপেছি, এক জাদু ঘোড়ার পিঠে। হাওয়ার বেগে উড়ছি। অথচ হাওয়া যেখানে পৌঁছাতে অপরাগ, সেখানে পৌঁছেছে সূর্যের রোশনাই। দ্রুতবেগের কালে অন্ধ নিরঙ্গম বালকের। দ্বিধার চক্র রামধনু অজগরের মতো হাজির হলো স্বপ্নে। তারপর চক্ষুহীন সারসের মতো ঘুমিয়ে পড়লো। তখন জলমহলে মৎস্যকন্যাদের কনর্সাটে হাততালি দিচ্ছি। আমার মুগ্ধতার শত রঙ ছড়ালো আসমানে।

তখন আমার পড়লো মনে, কাঠের গুড়িতে ভেসে ছিলাম। খুন হয়েছিলাম জলদস্যুর ছোঁড়ার আঘাতে। আমাকে খেলাচ্ছলে ভুলে গিয়েছিলো হাঙ্গর পুত্রেরা। যখন শূন্যতা নিয়ে উঠে দাঁড়িয়েছি। শুনেছি, জলামধ্যে তোমার কন্ঠে গানের দীপক রাগ। ভাবি, নিকটে যাই, দূরত্বে কেবল বাড়ে আর্তনাদ। অপরুপ সৌন্দর্যের দেবী তুমি। রোধ করো দেহের পচন। সমস্ত ভ্রম গিয়েছে কেটে। যখন রাখোনি আস্থা নির্বোধের প্রেমে।

ভেবেছ এক নীলগলা নীলচটক। এতোদিন অন্যের স্বরে তোমাকে শোনালো গান। উড়ন্ত পোকাদের নিলো ঠোঁটে পুরে। আর প্রজনন ঋতুতে জুটিয়ে নিলো সঙ্গিনী। তারপর বাঁশের কোটরে শৈবাল ও মৃত পাতায় সরু মূলে পেতেছে সংসার। এমন দোত্যানায় আমাকে লুট করেছো। যেমন কোনো ব্যবসায়ী কাফেলার দৌলত লুটে নেয় দস্যুরা।

মহুল ওয়েব প্রকাশিত বিভিন্ন সংখ্যা



করোনা Diary



আমাদের কথা

আমাদের শরীরে লেপটে আছে আদিগন্ত কবিতা কলঙ্ক । অনেকটা প্রেমের মতো । কাঁপতে কাঁপতে একদিন সে প্রেরণা হয়ে যায়। রহস্যময় আমাদের অক্ষর ঐতিহ্য। নির্মাণেই তার মুক্তি। আত্মার স্বাদ...

কিছুই তো নয় ওহে, মাঝে মাঝে লালমাটি...মাঝে মাঝে নিয়নের আলো স্তম্ভিত করে রাখে আখরের আয়োজনগুলি । এদের যেকোনও নামে ডাকা যেতে পারে । আজ না হয় ডাকলে মহুল...মহুল...

ছাপা আর ওয়েবের মাঝে ক্লিক বসে আছে। আঙুলে ছোঁয়াও তুমি কবিতার ঘ্রাণ...