মাহেশের রথে ঘাটাল যোগ ।। সন্দীপ দে

rath7p

মাহেশের রথে ঘাটাল যোগ ।। সন্দীপ দে

 

বোন সুভদ্রা বেড়াতে যাবার বায়না ধরলে তাকে ভোলাতে মাসির বাড়ির উদ্দেশ্যে গমন করেছিলেন দুই দাদা - জগন্নাথ ও বলরাম। সেই যাত্রাই রথযাত্রা। বাংলার বুকে দাঁড়িয়ে রথযাত্রা নিয়ে বলতে প্রথমেই যেটা মাথায় আসে-

“রাধারাণী নামে একটি বালিকা মাহেশে রথ দেখিতে গিয়াছিল। বালিকার বয়স একাদশ। পরিপূর্ণ হয় নাই। তাহাদিগের অবস্থা পূর্ব্বে ভাল ছিল— বড় মানুষের মেয়ে।”....

rath74

বাংলা সাহিত্যের এক মাস্টারপিস উপন্যাসের নাম ‘রাধারানী'। লিখেছিলেন বঙ্কিমচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়। বাংলা আর বাঙালির কাছে মাহেশ একান্ত আপন হয়েছে দুঃখিনী রাধারানী আর তার গাঁথা বনফুলের মালায়।
পুরুষোত্তম ক্ষেত্রের পরেই মহাপ্রভু শ্রীচৈতন্য ও ঠাকুর শ্রীরামকৃষ্ণের পদধূলিতে দ্বিতীয় বৃহত্তম রথোৎসব হয় শ্রীরামপুরের এই মাহেশেই। পশ্চিমবঙ্গের হুগলি জেলার অন্যতম প্রাচীন ও ব্যস্ততম শহর শ্রীরামপুর। আধুনিকতার সবটুকু পরশ মেখে প্রতিনিয়ত পাল্লা দিচ্ছে কল্লোলিনী কলকাতার সঙ্গে। শপিং মল, নামী-দামী দোকান, আলোর রোশনাই, ভিড়ভাট্টা,দিনেমারদের ফেলে যাওয়া স্মৃতি সবকিছু নিয়ে রীতিমতো জমজমাট আজকের শ্রীরামপুর। এখানে পা দিলেই হয়তো চলে যাবেন টাইম ট্রাভেলের শেষ ল্যাপে। কয়েকশো বছর পেরিয়ে এসে আজও সজাগ শহরের প্রতিটা ইঁট-কাঠ-পাথর। ঐতিহ্যের কোনও এক পিছুটান গ্রাস করে বসে আমাদের, তার রেশ ধরে আমাদের নিয়ে যায় দিনেমারদের আস্তানায় – মাহেশে। এ শহরের পাশ দিয়ে গঙ্গার পাড় ঘেঁষে বয়ে চলে ইতিহাস। এক আধটা বছরের নয়, ৬২৭ বছরের ইতিহাস। জি. টি রোডের ধারে সারাবছর ধরে অপেক্ষা করা ওই লাল রঙা রথটা সারাবছর যেন অপেক্ষায় থাকে - লক্ষ লক্ষ মানুষের সমবেত টানের জন্য। ৫০ ফুট উচ্চতার চারতলা এই রথটি। জগন্নাথ দেব পৌঁছাবেন তাঁর মাসির বাড়ি। প্রাচীনত্ব এবং জনসমাগম উভয়দিক থেকেই পুরীর পরেই বিশ্বের দ্বিতীয় বৃহত্তম রথযাত্রা হয় মাহেশে।

rath72

 

‘নীলাচলে পুরুষোত্তম জগন্নাথ নাম।
সেই নাম প্রকট হয় মাহেশের ধাম।।
নিত্য পূজা, নিত্য ভোগ, নিত্য শাস্ত্র পাঠ।
ভক্তজনে জানে তাই মাহেশ শ্ৰীপাট।।’

একটি বহুল প্রচলিত কিংবদন্তি, পুরী থেকে জগন্নাথদেব গঙ্গাস্নান করতে এসে মাহেশে গঙ্গার ঘাটে বিশ্রাম নিয়েছিলেন। সেই ঘাটটি 'জগন্নাথঘাট' নামে পরিচিত। আর মাহেশ বিখ্যাত হয়েছে জগন্নাথের স্নানের জন্য। মাহেশের জগন্নাথমন্দির নিয়ে আরও কিংবদন্তি আছে।১৫১০ সালে এক সাধক ধ্রুবানন্দ ব্রহ্মচারী জগন্নাথ দর্শনে আসেন পুরীধামে। নিজের হাতে ভোগ নিবেদন করার বাসনা ছিল তাঁর। কিন্তু পুরীর পাণ্ডারা তাঁকে ভোগ দিতে দিলেন না। অপমানিত, ব্যথিত সাধু ধ্রুবানন্দ পুরী ছেড়ে চলে আসেন নির্জন এক স্থানে। সেখানে মুক্ত প্রকৃতিতে শুয়ে তিনি স্বপ্ন দেখেন। জগন্নাথদেব তাঁকে মাহেশে যাবার স্বপ্নাদেশ দেন। ধ্রুবানন্দ মাহেশে আসেন। গঙ্গাস্নানে যান। স্নানকালে তিনি জগন্নাথমূর্তি পান ও সেটি প্রতিষ্ঠা করেন। অনেকে মনে করেন, পুরীর জগন্নাথদেবেরই আর এক রূপ হুগলির মাহেশে জগন্নাথমন্দিরে দেখা যায়। একথাও প্রচলিত, ভাগীরথী নদীতে ভেসে আসা নিম কাঠ থেকে নির্মিত হয়েছিল মাহেশের জগন্নাথ- বলরাম- সুভদ্রা মূর্তি। ধ্রুবানন্দ জগন্নাথমূর্তি পেয়েছিলেন নাকি নিমকাঠ পেয়েছিলেন যার মাধ্যমে তিনি স্বপ্নাদিষ্ট মূর্তি তৈরি করেছিলেন তা তর্কের বিষয়। তবে ধ্রুবানন্দই যে মাহেশের জগন্নাথ, বলরাম, সুভদ্রা মূর্তির প্রতিষ্ঠাতা এ বিষয়ে সন্দেহ নেই। ইতিহাস বলে, সন্ন্যাস গ্রহণের পর একবার নবদ্বীপ থেকে পুরী যাওয়ার পথে মহাপ্রভু চৈতন্যদেব এই মাহেশের মন্দিরে আসেন। পুরীর মন্দির প্রসঙ্গে কথিত ছিল ‘নীলাচল’ নামটি। মাহেশের মন্দির দেখে মুগ্ধ মহাপ্রভু এই মন্দিরের নাম দেন ‘নব নীলাচল’। কালের গতিতে ভাগীরথীর পশ্চিম পাড় ভাঙ্গতে থাকায় মন্দিরের গর্ভগৃহটি নদীতে তলিয়ে যাওয়ার আশঙ্কা দেখা যায়। শেওড়াফুলি রাজবংশের রাজা মনোহরচন্দ্র রায় মাহেশে শ্রীজগন্নাথদেবের মন্দির প্রথম নির্মাণ করেন। তিনি জগন্নাথের সেবাকার্যের জন্য জগন্নাথপুর নামক পল্লি দান করেছিলেন। রাজা মনোহরচন্দ্র রায় প্রতিষ্ঠিত মাহেশের জগন্নাথমন্দির কালের নিয়মে ভেঙে পড়লে সপ্তগ্রামের এক বিত্তবান ব্যবসায়ী নয়নচাঁদ মল্লিক ৭০ ফুট উঁচু মন্দির নির্মাণ করে দেন। মন্দির সরিয়ে নিয়ে আসেন মাহেশের রাজপথ অর্থাত্‍ জিটি রোডের ওপরে। আজও সেখানেই স্বমহিমায় রয়েছেন জগন্নাথ। সপ্তগ্রাম মল্লিক বংশের আদিনিবাস হলেও তখন নয়নচাঁদ মল্লিক কলকাতার পাথুরিয়াঘাটায় থাকতেন। ‘সংসদ বাঙালি চরিতাভিধান মাহেশ জগন্নাথ মন্দির নির্মাণের কৃতিত্ব দিয়েছেন নিমাইচাঁদ শীলকে।
মন্দিরের অদূরেই রয়েছে জগন্নাথ দেবের রথটিও। তবে যেই রথ ও মেলা দেখার দুর্নিবার আকর্ষণে লক্ষ লক্ষ মানুষ শত শত বছর ধরে প্রতিবছর মাহেশে ছুটে যান দূর-দূরান্তর থেকে, সেই মেলায় প্রথম রথটি কার অবদানে নির্মিত তা আজও অজানা । রথের পরিবর্তনও হয়েছে বেশ কয়েকবার। কোনও এক সময় কোনও এক ভক্তপ্রাণ মোদক থাকতেন বৈদ্যবাটিতে। মাহেশের প্রথম রথটি নির্মাণ করেন তিনিই , ১৭৫৪ সালে। তাঁর অবদানে নির্মিত প্রথম রথটি অচল হল এক সময়। শ্রীরামকৃষ্ণের অন্যতম অন্তরঙ্গ পার্ষদ কলকাতার শ্যামবাজার নিবাসী বলরাম বসু। তাঁর পিতামহ ছিলেন কৃষ্ণরাম তথা কৃষ্টরাম বসু। দয়ারামের পুত্র কৃষ্ণরামের ১৭৩৩ খ্রিস্টাব্দের ১১ পৌষ জন্ম হুগলি জেলার তারা গ্রামে। বয়েস কুড়িতেই আসেন কলকাতায়। সামান্য মূলধনে লবণের ব্যবসা শুরু করে এক সময় লাভ করেন ৪০ হাজার টাকা, যখন কমবেশি ৬ টাকায় ১৭ মণ চাল পাওয়া যেত বাংলায়। এই কৃষ্ণরামই তাঁর লভ্যাংশ দিয়ে একটি সুদৃশ্য উঁচু কাঠের রথ করিয়ে দেন ১৭৯০ খ্রিস্টাব্দে, যিনি পরবর্তী সময়ে হুগলির কলেক্টরের দেওয়ান হয়েছিলেন। কালের নিয়মেই একদিন নষ্ট হয়ে গেল রথটি। কৃষ্ণরাম বসুর পুত্র গুরুপ্রসাদ। তিনি আবার রথটি নির্মাণ করে দিলেন ১৮৩৫ খ্রিস্টাব্দে। এবার রথটি অগ্নিদগ্ধ হল। ১৮৫২ খ্রিস্টাব্দে পুনরায় একটি নতুন রথ নির্মাণ করিয়ে দিলেন কালাচাঁদ বসু। এক সময় ওই রথটিতে জনৈক ব্যক্তি মারা যান গলায় দড়ি দিয়ে। ফলে অপবিত্র জ্ঞানে পরিত্যক্ত হল সেটি। ১৮৫৬ খ্রিস্টাব্দে আবার একটি রথ তৈরি করিয়ে দিলেন বিশ্বম্ভর বসু। এমনই কপাল জগন্নাথের, সেটিও একদিন অগ্নিদাহে ভষ্মীভূত হল। এরপর আর কাঠের নয়, তৈরি হল লোহার রথ। যেটি আজও টানা হয়। এটি নির্মিত হয় ১৮৮৫ খ্রিস্টাব্দে। ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানির হুগলি জেলার তৎকালীন দেওয়ান ছিলেন শ্যামবাজারের এই ব্যক্তি। তাঁর উদ্যোগেই লোহার ওপর কাঠের প্রলেপ দেওয়া পাঁচটি চূড়া বিশিষ্ট এই রথ তৈরি করে বিখ্যাত মার্টিন বার্ন কোম্পানি। এই লোহার রথটির ওজন ১২৫ টন। পুরীর থেকে বেশি উচ্চতার ৫০ ফুট চারতলা এই রথটির নির্মাণে খরচ পড়েছিল তৎকালীন সময়ে প্রায় ২০ লক্ষ টাকা। রথের এক-একটি তলা আলাদা আলাদা পুরাণকথা বলে। কৃষ্ণলীলা, চৈতন্যলীলা, রাসলীলার ছবি আঁকা আছে রথের দেওয়ালে। রথের সামনে রয়েছে তামার ঘোড়া এবং কাঠের সারথি। বিশাল তামার ঘোড়া দু’টি বানিয়ে দেয় জয় ইঞ্জিনিয়ারিং কোম্পানি। বিশাল ম্যানিলা দড়ি দিয়ে টানা হয়। চারতলা রথের ১২টি চাকা ১২ মাসের প্রতীক। জগন্নাথের চোখের প্রতিনিধি স্বরূপ রথের গায়ে ৯৬ জোড়া চোখ আঁকা। রথ চলাচলের জন্য তৈরি হয় চওড়া রাস্তা। বর্তমানে এই রথটির আর্থিক মূল্য প্রায় কয়েক কোটি টাকা। এখনও নিয়ম করে রঙ করে জৌলুস ধরে রাখা হয়েছে প্রাচীন রথটির। শুধু রথ উৎসব নয়, বছরের অন্যান্য উৎসবেও আলোয় মুড়ে ফেলা হয় রথটিকে। লোহার রথ, অশুচি হলেও শুদ্ধ করে নেওয়ার বিধান রয়েছে।
এখানের উল্লেখযোগ্য স্নানযাত্রাটিও বেশজাঁকজমকপূর্ণ। ৫ জুন ১৮১৯ খ্রিস্টাব্দ, ২৪ জৈষ্ঠ্য ১২২৬ বঙ্গাব্দ। 'সমাচার দর্শন' পত্রিকা লিখল- “আগামী মঙ্গলবার ৮ জুন ২৭ জ্যৈষ্ঠ্য মোং মাহেশে জগন্নাথদেবের স্নানযাত্রা হইবেক। .... ইহাতে শ্রীরামপুর ও চাতরা ও বল্লভপুর ও আকনা ও মাহেশ ও রিসিড়া এই কএক গ্রাম লোকেতে পরিপূর্ণ হয় এবং পূর্বদিন রাত্রিতে কলিকাতা ও চুঁচুড়া ও ফরাসডাঙা প্রভৃতি শহর ও তন্নিকটবর্তী গ্রাম হইতে বজরা ও পিনিস ও ভাউলে এবং আর আর নৌকাতে অনেক ধনবান লোকেরা নানাপ্রকার গান ও বাদ্য ও নাচ ও অন্য অন্য প্রকার ঐহিক সুখসাধন সামগ্রীতে বেষ্টিত হইয়া আইসেন পরদিন দুই প্রহরের মধ্যে জগন্নাথদেবের স্নান হয়। যে স্থানে জগন্নাথদেবের স্নান হয় সেখানে প্রায় তিন চার লক্ষ লোক একত্র দাঁড়াইয়া স্নান দর্শন করে। পুরুষোত্তমক্ষেত্র ব্যতিরেকে এই যাত্রা এমন সমারোহ অন্যত্র কোথাও হয় না।”
আর একবার ১৬ জুন ১৮২৯ খ্রিস্টাব্দ, ৪ আষাঢ় ১২৩৮ বঙ্গাব্দ। সমাচার দর্পণ-এ প্রকাশিত -
“১৫ জুন, ৩ আষাঢ় শুক্রবার মোং মাহেশের স্নান যাত্রাতে লোক অধিক হইয়াছিল অনুমান হয় তিন লক্ষ লোকের কম নহে। এই বৎসর বৃষ্টিপ্রযুক্ত লোকেদের কোন কষ্ট হয় নাই কিন্তু স্থানে স্থানে অনাবৃষ্টিপ্রযুক্ত জল কষ্ট হইয়াছে।”

 

স্নানযাত্রার দিন দু'মণ দুধ আর ২৮ ঘড়া জলে স্নান করার পর ধুম জ্বর আসে জগন্নাথ-বলরাম-সুভদ্রার। জ্বর সারাতে ডাক পড়ে

rath75

গোঘাট, আরামবাগ আর ঘাটালের তিন করিরাজের। বংশ পরম্পরায় তাঁদের ডাক পড়ে মাহেশে। জ্বর সারতে লেগে যায় প্রায় পনেরোটা দিন। এ কদিন রীতিমত কোয়ারেন্টাইন চলে তিনজনের। রোজদিন দুধ-সাবু খেয়ে থাকেন ভগবান। এরপর রথযাত্রার আগের দিন জ্বর সেরে চাঙ্গা হন, এইদিনই হয় ‘নবকলেবর’ উৎসব। যদিও পুরীর মন্দিরের মতো এখানে প্রতিবছর নতুন কাঠ দিয়ে বিগ্রহ নির্মাণ করা হয় না, প্রাচীন বিগ্রহে নতুন করে প্রাণ প্রতিষ্ঠা হয়।

 

rath73

মহাধুমধামের সহিত রথের দিন সুসজ্জিত রথে চেপে জগন্নাথ দেব মাসির বাড়ির দিকে রওনা দেন। মাসি মানে জগন্নাথ দেবের পৌর্ণমাসি গুণ্ডিচা দেবী। প্রথমে চাতরায় মাসির বাড়ি ছিল বলে জানা যায়। পরবর্তীকালে পাথুরিয়াঘাটার মতিলাল মল্লিকের স্ত্রী রঙ্গমণি দেবী বর্তমান জি.টি. রোডের ধারের ‘মাসির বাড়ি’টি নির্মাণ করেন। কাঁসর, ঘণ্টা, বিউগল সহযোগে অগণিত ভক্ত টান দেন রথের রশিতে। এইদিন পুণ্যলাভের আশায় দূরদূরান্ত থেকে লক্ষ লক্ষ ভক্তের ঢল নামে। জগন্নাথ-বলরাম-সুভদ্রা পৌঁছে যান তাঁদের মাসির বাড়ি। টান শেষ হয় বন্দুকের গুলির শব্দে। এখানেই থাকেন সপ্তাহ খানেক। তারপর আবার উল্টোরথের দিন একইভাবে ফিরে আসেন নিজগৃহে।

rath76

দেড়শ বছর আগে,তৎকালীন ডেপুটি মেজিস্ট্রেট বঙ্কিমচন্দ্র চট্টোপাধ্যায় ১৮৭২ সালে ‘রাধারাণী’ উপন্যাসে এই রথের মেলার বিবরণ দিয়েছেন। এই রথকে কেন্দ্র করে প্রতিবছরই বসে বিশাল মেলা। মনোহারী থেকে খাবারের দোকান কিংবা ফুলের গাছ হরেকমালের মেলা। এছাড়াও থাকে নানারকমের রাইড, রাস্তার ধারে থাকে বিশাল নাগরদোলা। মাহেশের রথের মেলায় এসে জিলিপি আর পাঁপড় ভাজা না খেলে নাকি আগমন পূর্ণই হয় না। জি.টি রোডের ধারে বসে জিলিপি পাঁপড়ের দোকান। একমাস ধরে চলে মেলা। কথিত আছে, শ্রীরামকৃষ্ণ নাকি এসেছিলেন এই মেলায়। যদিও শ্রীরামপুরের পু্রোনো বাসিন্দারা সকলেই বলেন, এই মেলার আড়ম্বর এখন আগের থেকে অনেক কমে গেছে। পুরানো লেখা :১৯ জুন ১৮১৯ খ্রিস্টাব্দ। ৬ আষাঢ় ১২২৬ বঙ্গাব্দ। কিছু বিস্ময়কর সংবাদ পরিবেশন করেছিল ' সমাচার দর্পণ'। জুয়া খেলা এবং খেলায় হেরে গিয়ে বউ বিক্রি হয়েছিল এই মাহেশের মেলায় -
“১১ আষাঢ় ২৪ জুন বৃহস্পতিবার রথযাত্রা। ... দুই জন জুয়া খেলাতে আপন যথাসর্বস্ব হারিয়া পরে অন্য উপায় না দেখিয়া আপন যুবতি স্ত্রী বিক্রয় করিতে উদ্যত হইল এবং তাহার মধ্যে একজন....দশ টাকাতে আপন স্ত্রী বিক্রয় করিল। অন্য ব্যক্তির স্ত্রী বিক্রীতা হইতে সম্মতা হইল না তৎপ্রযুক্ত ঐ ব্যক্তি খেলার দেনার কারণ কএদ হইল।” সেসব ইতিহাস, পুলিশকর্তারা বলেন অন্য কথা। ভগবানের টান আর পুণ্যলাভ এই দুইয়ের চাপে ভিড় সামলাতে এখনো প্রতিবছর জেরবার হন তাঁরা।
রথের দিন বাদেও নিজের চোখে ঘুরে দেখা যায় রথের অসাধারণ নান্দনিক গড়ন, মন্দিরের গর্ভগৃহ, মাসির বাড়ি এবং বিখ্যাত রথের মেলা। ৬২৭ বছরের পুরোনো কাঠের মূর্তিতে জীর্ণতার কোনো চিহ্ন নেই। কোন এক অলৌকিক জাদুবলে বয়সের সঙ্গে সঙ্গে আরও ভারী হচ্ছে মূর্তিটি।
করোনার জেরে মাঝে দুবছর ধুমধাম হয়নি এ যাত্রায়, তবে গত বছর থেকেই আবার পুরোনো ছন্দে ফিরে পেয়েছে মাহেশের বিখ্যাত দারুব্রহ্মের মহাযাত্রা।

তথ্যঋণ-
সেকালের মেলার কথা, সমাচার দর্পণ, প্রহর,সাপ্তাহিক বর্তমান, মাহেশ সমাচার,অমরেন্দ্র হালদার।

মহুল ওয়েব প্রকাশিত বিভিন্ন সংখ্যা



করোনা Diary



আমাদের কথা

আমাদের শরীরে লেপটে আছে আদিগন্ত কবিতা কলঙ্ক । অনেকটা প্রেমের মতো । কাঁপতে কাঁপতে একদিন সে প্রেরণা হয়ে যায়। রহস্যময় আমাদের অক্ষর ঐতিহ্য। নির্মাণেই তার মুক্তি। আত্মার স্বাদ...

কিছুই তো নয় ওহে, মাঝে মাঝে লালমাটি...মাঝে মাঝে নিয়নের আলো স্তম্ভিত করে রাখে আখরের আয়োজনগুলি । এদের যেকোনও নামে ডাকা যেতে পারে । আজ না হয় ডাকলে মহুল...মহুল...

ছাপা আর ওয়েবের মাঝে ক্লিক বসে আছে। আঙুলে ছোঁয়াও তুমি কবিতার ঘ্রাণ...