–আজ কী দিয়ে খেলে?
–আমি কি তোর মতো চাকুরে ব্যাটার ভাত খাই? আমার ওই ডাল আলুভাতে ভাত।
– আহা, বলতেই পারতে তুমি বড় ছেলের ভাগে থাকতে চাও।
– হে হে.. শিক্ষিত ব্যাটা আমার ঠিক জানে, মায়ের খাইখরচ বাপের থেকে অনেক কম। আর রান্নাটাও তোকে দিয়ে হয়ে যাবে। চাষা-ব্যাটা বুদ্ধি করে ভাগ নিল আমায়। মাঠে কাজকর্ম তো আর তোকে দিয়ে ভালো হবে নি।
বছরকয়েক হল পার্বতী ও সুখেন এর একসাথে খাওয়া হয় না আর। বাড়িটা একই আছে। ভাগ হয়েছে বাড়ীর ঘর উঠোন দালান আর তিলতিল করে গড়ে তোলা সংসারটা। একইসাথে মা বাপেরও ভাগ হয়েছে ছেলেদের মর্জি অনুযায়ী। তবে পার্বতী সুখেনের পশ্চিমের সেই ছোট্ট কুঠুরিটা ভাগ হয়নি।
–তোর মনে আছে পার্বতী, যেদিন তুই মাংস রাঁধতিস, দুই ভাই সারা সন্ধ্যা উনানের পাশ থিকে উঠতোই নি। বড়ো খোকা খাবে কষা মাংস আর ছোটো খোকার চাই ঝোল, কী দুষ্টামীটাই না করতো দুটিতে...
–হ্যাঁ, আর তুমি? নিজের বাটির সব মাংস তুলে তুলে দিতে ছেলেদের পাতে। আর বলতে মাংসের থিকে মাংসের ঝোলই নাকি তোমার বেশি ভালো লাগে।
আঁচলে চোখ মোছে পার্বতী। –তোমাকে আর রেঁধে খাওয়াতে পারলুম কই!
– তবে যাই বল, মাংস রান্নার হাতটা তোর বরাবরই একই। পেটে না খেলেও সেই গন্ধটা আমার চেনা।
মিটিমিটি হাসে সুখেন।
– ও, গন্ধ পেয়েছো তাহলে!
যাও বাটিতে দুটুকরো ঢাকা আছে। ব্যাটার সংসারে চুরি করে রাখিনি মশাই, ওটা আমার ভাগের!