mrinal kanti das ekguccho kobita mohool in

একক কবিতা সন্ধ্যা ।। মৃণালকান্তি দাশ
ritwik tripathi mohool in 
কতদিন এই দৃশ্য দেখাবে দেশ  
 
তুমি চেয়েছিলে ঘরের শান্ত কোণ,
তুমি চেয়েছিলে ফ্যানভাত আর রুটি–
তুমি তো জানো না গ্রিন নাকি রেড জোন,
ইস্পাত-পথে লেখা ছিল শেষ ছুটি !
 
তুমি জানতে কি খিদে এক অপরাধ,
সবাই চাইতে পারে না ভাত ও নুন ?
কাচের মিনারে যারা দেখে নীল চাঁদ,
তারাই গাইবে টপ্পা রাগিণী ধুন ?
 
আমরা এসব দেখে যাব চিরদিন,
আমরা গল্প, কবিতা লিখব বেশ।
আমরাও জানি, অপরিশোধ্য ঋণ
এ পোড়া মাটিতে রেখে যাবে তার রেশ।
 
শুধু মহাকাল প্রশ্ন তুলবে ক্ষীণ :
কতদিন এই দৃশ্য দেখাবে দেশ?
 
 
গল্প
 
ছেলেকে বাঘের গল্প, মেয়েকে ভূতের 
স্মৃতিহাতড়ানো সবই, অপ্রস্তুতের
 
গল্প জমে জমে ক্ষীর চায়ের দোকানে 
কাহিনি ডালপালা মেলে, খুঁজে নেয় মানে
 
দু'পায়ে ভয়ের গল্প নদী পেরোবার 
বাঁজা গাছ, অপুষ্পক, হাট ও বাজার 
 
আকাশ আদিম গল্প, হায়রোগ্লিফিক
অক্ষর রেখেছে জ্বেলে তবু দশদিক 
 
পৃথিবী রোগের গল্প, গুহার ভিতরে
পাদটীকা মৃত্যু লেখে প্রহরে প্রহরে
 
 
ব্রুটাসের জন্য 
 
সব রাস্তা রোমের দিকে–
 
অভিধানে লেখা মহাবিশ্ব,
তাকেই বা অস্বীকার করি কী করে ! 
 
ব্রুটাস এক থেকে বহু।
 
দু' পা হাঁটলেই, তার সঙ্গে দেখা।
 
 
ভাষা
 
চোখের সামনে ছোট হয়ে আসছে 
বাংলাভাষার প্রান্তর–
 
সীমান্ত খোলা, হু হু করে ঢুকছে 
তাসের দেশের ছেলেমেয়েরা।
 
অভিধান, তোমার ছুটি।
কলম, তোমার ছুটি।
 
ভাঙা সাঁকোর উপর দাঁড়িয়ে 
এখন আমাদের 
নতুন ভাষা শেখার সময়।
 
 
হে মানচিত্র
 
এক ভয়ঙ্কর ঝড়বৃষ্টির রাতে ঝাড়খণ্ডের গ্রাম থেকে
যে–আদিবাসী গান হারিয়ে গিয়েছিল,
তাকে আজ খুঁজে পাওয়া গেছে 
রাজস্থানের এক মরুবালিকার কাছে। 
 
কাশ্মীরের বরফঢাকা জানালার ভিতর থেকে 
কে যেন সেদিন বলে উঠল, এত রক্ত কেন?
 
 বাংলা থেকে আমাদের এক প্র-পিতামহ 
হাতে রাখি বাঁধতে বাঁধতে চলেছেন 
গুজরাতে। তেলেঙ্গানায়। 
 
বিহারের কুসুমরঙা গমখেতের আড়ালে লুকোচুরি খেলছে 
অরুণাচল-অসমের ছেলেমেয়েরা।
 
কল্পনাবিলাসী এক কবি, যিনি ভিন্ন ভূখণ্ডের জন্য 
আবেদন জানিয়েছেন রাষ্ট্রসঙ্ঘে–
তাঁর চোখ চিকচিক করে উঠছে জলে, 
কবিতার খাতায় লেখা নদী 
বয়ে চলেছে বারণাবতের দিকে। 
 
সর্বংসহা মানচিত্রের উপর দিয়ে যে-পাখি 
উড়ে যাচ্ছিল উদ্দেশ্যহীন, 
অনাদরের আলো লেগে খসে পড়েছিল
 যার একটি-দুটি রঙিন পালক–
রাষ্ট্র নেই বলে সে আর কোনদিন 
গান শোনাতে পারবে না!
 
 
মিথ্যে 
 
এমন কোনো মৃত্যু নেই,
এমন কোনো আলো।
এমন কোনো বন্ধু নেই,
মেধাবী, জমকালো।
 
এমন কোনো শত্রু নেই,
এমন কোনো দায়।
এমন কোনো সত্য নেই 
বাংলা কবিতায়!
 
 
কবি কোনো দেবতা নয় 
 
কবি কোনো দেবতা নয় যে,
তাকে পুজো করতে হবে–
 
কবি কোনো রাক্ষস নয় যে,
তাকে নিয়ে লিখে ফেলতে হবে 
সাতচল্লিশ পাতার রূপকথা !
 
কবি কোনো স্বপ্নময় রাত্রি নয় যে,
তার জঠর থেকে বেরিয়ে আসবে
শস্যশ্যামলাং ভারতবর্ষ।
 
কবি আসলে এক দূরতম গ্রহ–
মুহুর্মুহু সেখানে উপগ্রহ পাঠিয়ে
আমরা তুলে নিয়ে আসি
ছাই ও পাথর।
 
 
 
সাপ
 
রাত্রি বলতে তুমি জানতে
যামিনী, বিভাবরী,
আমি জানতাম রাক্ষস।
 
নদী বলতে তুমি জানতে তটিনী,
আমি জানতাম মনখারাপের দিন।
 
পথ ছিল তোমার কাছে গন্তব্য,
আমি পথের মধ্যে 
খুঁজে বেড়াতাম পথিকের রহস্য।
 
ভালবাসা বলতে আমরা জানতাম 
একটা ফুটফুটে সংসার।
 
অথচ সন্দেহ কখন যেন
বিষধর হয়ে ঢুকে পড়ল
আমাদের সম্পর্কের মধ্যে !
 
 
 
আবার দেখা হবে 
 
শহর শ্বাপদের,
রাস্তা রাক্ষসী,
আভোগ সঞ্চারী বন্ধুহীন।
 
স্বপ্ন নিরামিষ,
নুন ও আতপের,
মাটিতে বৃষ্টির গন্ধ নেই।
 
তুমিও লুব্ধক,
আকাশে মাথা খোঁড়ো,
রুগ্ন নদীতীরে চৈত্রমাস।
 
অন্ধ সভাঘরে
হাত-পা নাড়ে কারা,
তারা কি পিপীলিকা, নপুংসক ! 
 
অগ্নি জ্বলে ওঠে,
অগ্নি নিভে যায়,
নগরে চিত্রিত মহোৎসব। 
 
আবার দেখা হবে 
মানুষ-মানুষীর।
রাত্রি তুমি কার রক্ত খাও ?
 
 
লেখকের অন্যান্য লেখা

একক কবিতা সন্ধ্যা



মহুল ওয়েব প্রকাশিত বিভিন্ন সংখ্যা



করোনা Diary



আমাদের কথা

আমাদের শরীরে লেপটে আছে আদিগন্ত কবিতা কলঙ্ক । অনেকটা প্রেমের মতো । কাঁপতে কাঁপতে একদিন সে প্রেরণা হয়ে যায়। রহস্যময় আমাদের অক্ষর ঐতিহ্য। নির্মাণেই তার মুক্তি। আত্মার স্বাদ...

কিছুই তো নয় ওহে, মাঝে মাঝে লালমাটি...মাঝে মাঝে নিয়নের আলো স্তম্ভিত করে রাখে আখরের আয়োজনগুলি । এদের যেকোনও নামে ডাকা যেতে পারে । আজ না হয় ডাকলে মহুল...মহুল...

ছাপা আর ওয়েবের মাঝে ক্লিক বসে আছে। আঙুলে ছোঁয়াও তুমি কবিতার ঘ্রাণ...