"ধর্ম "
তপন জানা
গ্রামের একই স্কুলে , একই ক্লাসে পড়ে এ পাড়ার দুলাল আর ও পাড়ার ইসরায়েল। দুজনের খুব ভাব।দুই ভাইএর মত।সহোদর ও সমধর্মী না হয়ে ও তাদের মধ্যে এত বন্ধুত্ব, এত ভাব যে গ্রামের মানুষ দের ইর্ষার কারন হয়। একজন আর এক জনের কষ্টে দুঃখ পায় আবার সুখে আনন্দ।দুলালের বাড়ির সরস্বতী পুজায় ইসরায়েল আসে, শুধু আসে নয় পুষ্পাঞ্জলি ও দেয়।আবার ইসরায়েল দের ইদে দুলাল খুব আনন্দ করে। ওদের নিষ্পাপ মন ভগবান আর আল্লায় তফাৎ জানে না, খুঁজতে যায় না নামাজ পড়া আর মন্ত্র পড়ার মানে। কিন্তু ওদের নিষ্পাপ দুই ফুলের খুশিতে বাধ সাধে টিকিধারী আর দাড়িধারী ধর্মভীরু ভন্ড বুড়ো ভামেদের দল।দুজনের মেলা মেশায় বাধা পড়ে।ভেঙ্গে খান খান হয় দুই কোমল শিশু মন তথা কথিত সমাজের ধারক বাহকদের সাম্প্রদায়িক ছুরিকাঘাতে। এভাবে কেটে যায় অনেকদিন।মেলামেশা না করে থাকতে খুব কষ্ট হয় ওদের।ধইর্য্যের বাধ ভাঙলে দুজনে লুকিয়ে সবার নজর এড়িয়ে চলে যায় একজন আর একজনের বাড়ি।দেখা না পেয়ে দুজনেই ছুটটে থাকে বাড়ির দিকে।পুর্নিমার চাঁদের আবছা আলোয় ফাঁকা মাঠে মুসলমান দের কবর্স্থান আর হিন্দুদের শ্মশান এর মাঝখানে দেখা হয় দুজনের।অনেক দিনের জমে থাকা দুঃখ ব্যাথা কান্না হয়ে ঝড়ে পড়ে।দুজন দুজনের গলা জড়িয়ে শুধুই কেদেই চলে।সাক্ষী থাকে দুপাশের দুই ধর্মের আত্মা।ওরা হয়তো উপলব্ধি করে ধর্মের সারহীনতা।ওরা হয়তো লজ্জায় মাথানত করে এই দুই দেবশিশুর কাছে। কিন্তু ওদের এই গোপন মিলন ওদের কাল হয়।চাঁদের আবছা আলোয় ফাঁকা মাঠ ভরে যায় দুই সম্প্রদায়ের মানুষে।দুই ভিন্ন ধর্মের দানবীয় বর্বরতার বলি হয় দুই রাম রহিম।আজ আর দেখা যায় না রাম রহিমের বন্ধুত্ব।মানুষ আজ ধর্মের নামে দাঙ্গা, কাটাকাটি, রক্তপাতের নেশায় মত্ত।মানুষ ভুলেছে মানবধর্মই শ্রেষ্ঠ ধর্ম। তবে দুলাল ও ইসরায়েল কে আজো দেখা যায় ওই ফাঁকা মাঠে চাঁদের আলোয় ওরা হেটে বেড়ায় দুই মহল্লার মাঝে। শোনা যায় দুজনের কন্ঠে গায়ত্রীমন্ত্র, আজান।পৃথিবীর পথে পথে যেখানে দাঙ্গার রক্তে পথ পিচ্ছল, ওরা হেটে যায় হাত ধরাধরি আর গেয়ে যায় মানবতার গান, মানুষের মুক্তির গান।