কন্ডাক্‌টার ।। সোনালী দে

WhatsApp Image 2018 10 04 at 23.19.09

কন্ডাকটার
সোনালী দে
 
 
গলাটা নামিয়ে বলি, পথটা বড় বেরসিক,     গর্তগার্তা, উঁচু নীচু উফ্,
ওরে রাস্তাটা মসৃণ হলেও তো
পিছলে যেতে পারে পা টা, না কি ?
তাই লাফিয়ে চল, হেঁটে চল, দৌড়ে চল, এমন কি রাস্তা
নদী হলে সাঁতরাতেও হতে পারে।
ভাবনা জট পাকায়, সময় জোর ধাক্কা দেয়।
     জীবন এক মারাত্মক দর্শন।
দর্শনে লাগিয়ে চোখ, মুখ, মন, কেমন অসহ্য,
সহ্যের সীমাটা টেনে হাঁটি-হাঁটি।
‘৩৪বি’ ছুটছে, পড়িমরি করে ছুটছে,
     সকাল ৬টা থেকে রাত ১০টা, ডানলপ টু এসপ্লানেড।
লোকজন, হৈচৈ, ঘাম বৃষ্টির ছিটে
     এলোমেলো টুকরো টাকরা কথার ঝাঁক।
পিছনের গেটে দাঁড়িয়ে ভাস্কর, শ্যামলা রঙে গাল ভর্ত্তি দাঁড়ি গোঁফ,
মাথায় রামকৃষ্ণ প্যাটার্নের চুল, বুক
     খোলা হাফ শার্ট, পরণে কোঁচকানো
প্যান্ট পায়ে নীল হাওয়াই।
চোখ দুটি উদাসী শান্ত, কাজে তবু গভীর নৈপুণ্য।
এই কন্ডাক্‌টার ভাড়াটা নিয়ে যা,
কিরে কানে শুনতে পাচ্ছিস না।
মুখে স্মিত হাসি, হাসিটা বিদ্রূপের নয়, ভাললাগারও নয়, কেমন অন্য ধরনের।
স্যার আপনি রোজ এই ভাবেই ডেকে ভাড়াটা দেবেন, মনে হচ্ছে আপনি যেন আমার বাড়ীর লোক, এই ভাবেই ডাকবেন।
নিত্য যাত্রী লজ্জা পেয়ে গন্তব্যের আগেই ...
 
ভদ্রলোকের গায়ে লেবেল সাঁটা ভদ্র বই তো নয়,
আর কন্ডাক্‌টার....... দর্শন, গভীর দর্শন।
গাড়ীতে গেটের উপরে দুলছে পাঁচ বছরের ছেলেটার মুখ, কি মিষ্টি, কি সরলতা ভরা চোখদুটো।
আজ নবমী বাড়ীর টানে মন চঞ্চল, কাল সকালে ট্রেন ধরবে ভাস্কর......
সবুজ পাতায় মোড়া পাট কাঠির ছোট্ট ঘর, টিনের ফুঁটো চালে নূতন পিচ্‌চট, সমস্ত বিপর্যেয় রুখতে..........
ব্যাগটা গুছোয়, ছেলের নূতন গেঞ্জি প্যান্ট, স্বপ্নার লাল জড়িপার তাঁতের শাড়ী,
মায়ের দধিকর্মা হচ্ছে প্যান্ডেলে প্যান্ডেলে।
ট্রেন ছুটছে, হু-হু করে ছুটছে.........
ভুলে যায় অর্জুনের গুমটির পাশে নোংরা কলটায় লাইন দিয়ে চান। ভুলে যায় গরম থালা হাতে ধরে বাস ছাড়ার বাঁশি, খাওয়া জুটলেও মুখ থেকে পেটে পৌঁছনোর সময় পায় কৈ !
ভুলে যায় কাজের শেষে গুটলি পাকিয়ে ছেঁড়া বাসের সীটে রাতঘুম। সব ভুলে যায়, ভুলে যেতে চায়, শুধু চোখে ভাসতে থাকে আমার ঘর, হাসি ভরা দুটী মুখ, দুচোখে রামধনু রং-এ মাখা স্বপ্ন নিয়ে ওর আদরের স্বপ্নার হেলান দিয়ে দোরে অপেক্ষা।
ঢাকে কাঠি পড়ছে, ঠাকুর থাকবে কতক্ষন, ঠাকুর যাবে বিসর্জন,
না, বিসর্জনের বাজনা নয়, এতো আবাহনের শব্দ
     পূজো এই তো শুরু,
করুণ দুটি চোখে চেয়ে দুর্গা মাকে বলে,
     আর কিছুক্ষণ থাকো না মা,
আমার মতো কয়েকজন অভাগাদের জন্য !
 
 
 
লেখকের অন্যান্য লেখা

একক কবিতা সন্ধ্যা



মহুল ওয়েব প্রকাশিত বিভিন্ন সংখ্যা



করোনা Diary



আমাদের কথা

আমাদের শরীরে লেপটে আছে আদিগন্ত কবিতা কলঙ্ক । অনেকটা প্রেমের মতো । কাঁপতে কাঁপতে একদিন সে প্রেরণা হয়ে যায়। রহস্যময় আমাদের অক্ষর ঐতিহ্য। নির্মাণেই তার মুক্তি। আত্মার স্বাদ...

কিছুই তো নয় ওহে, মাঝে মাঝে লালমাটি...মাঝে মাঝে নিয়নের আলো স্তম্ভিত করে রাখে আখরের আয়োজনগুলি । এদের যেকোনও নামে ডাকা যেতে পারে । আজ না হয় ডাকলে মহুল...মহুল...

ছাপা আর ওয়েবের মাঝে ক্লিক বসে আছে। আঙুলে ছোঁয়াও তুমি কবিতার ঘ্রাণ...