অভি সমাদ্দার-এর এক গুচ্ছ কবিতা
রৌদ্র ছায়ার সীবন
১.
মধ্যদিনের মানুষ, বাস থেকে নেমে
হেঁটে যাচ্ছে
আলপথ ধরে
দূরে আলোছায়াগ্রাম,দূরে সন্ততি মুখ !
২.
জলের সীমা ঘিরে আছে
পাড়ের গাছগুলি
এই সীমায়ন ! এই ছায়ার শান্ত !
দুপুর রোদে ট্রিই-ট্—ট্রিই-ট্ ধ্বনিতে
ছড়িয়ে রয়েছে
৩.
তোমার কোথাও যাওয়া নেই—
শারদ আকাশ আজো
ঝুঁকে আছে দূরে
শিষের আনন্দ ছুঁয়ে
পক্কতার দিনকাল দ্রুত এগিয়ে এলো !
৪.
নদীগন্ধ, বড়ো শারীরিক
জলের গভীরে, আঁশে
রয়ে গেছে, কারো কারো অশ্রুগুলি
মাঝি তার খবরই রাখে না
দুলে ওঠা কেন আজো নৌকো-চরিত্র !
৫.
টল নিটোলের মৌজায় এই বসবাস !
উথলে ওঠার এই সাকিন !
৬.
দুঃখবোধের দিকে নিয়ে যায় দুপুর
ধূলো উড়িয়ে ছুটে যায় এক রাহী
পেছন পেছন শুকনো পাতার কুণ্ডলী
একে বলে নৃত্যপর হাওয়া !
এই, এই যাত্রা— যাওয়া, যেন চিহ্নহীন !
৭.
চিঠি লেখার চল নেই
নাহলে লিখতুম— এসো
আজও লিখিত কথাগুলির সামনে
বসে থাকতে ভালো লাগে
মনে হয়, ছুঁয়ে আছি তোমার, প্রশ্বাস
৮.
মন, শুধুমাত্র নির্জন কুঁড়ি
লেখা, শুধুমাত্র বিজন অংশ
৯.
তুমিই তোমার অংশভাক
কিছুটা ছড়িয়ে রয়েছ
বিষাদে, বিভাবে—
বাকি কিছু নুড়িময়, কুড়িয়ে নেয়
ওই পথের বালক
১০.
কোথাও যেন এক শান্ততা
কোথাও যেন এক মৃদু মন্থর
কোথাও যেন এক সখ্য সীবন
কোথাও যেন শূন্য সুরা, চিয়ার্স !
সাঁঝিমের ডালপালা
( উৎসর্গ- Dersu Uzala)
১.
কি থেকে কি চুঁয়ে পড়ে আর সাঁঝিম শুরু হয়
বুকের কুসুম। ঘাই তোলে অচিন পথটিও
তুমি কাপ্তান, সতর্ক বুঝে নিতে চাও, নুড়ির পন্থা ।
আর স্বপ্নেরা বারবার ঢুকে পড়ে,
দর্দ ও দণ্ডিতের আঘাত চিহ্নে। বাদামের ভগ্নতায়।
২.
ছায়াপথের এক সহজ সাঁঝিম।
আকাঙ্খার এক মেহেজ কাপ্তান।
তারা জানে দু'দিকের স্পেস কিছুতেই
আত্মসাৎ করা যায় না।
শুধু রীতগুলি অনুদিত হয়। প্রশ্নগুলিও।
ঋতু-টি সহজ শিকারে ডানা খুলে দ্যায়।
আকাঙ্খার সুযোগ খুলে দ্যায়।
কাপ্তান নির্বিকার চুরুট ধরায়।
সাঁঝিম প্রতিদিনের অস্ত তুলে রাখে।
৩.
বেঁচে থাকা ও বরফঝড়
বেঁচে থাকা ও আগুন উপায়
বেঁচে থাকা ও শূন্য শূন্য ধাঁধা
বেঁচে থাকা ও চিকচিকে আঠার অশ্রু
চেটে নেওয়া শেষ দৃশ্যদরিয়া
বলে যায়- নিস্তার নেই
না কাপ্তানে পাল্লাভারী
না সাঁঝিমের জানুভাঙা যন্ত্রণা !
দস্তুর, এই।
৪.
কোন টুসকিতেই যে মচকে পড়ে না। সেই তো সাঁঝিম।
তার গাথা বুনতে বুনতে, আমাদের মাচান থেকে ভার নেমে যায়
বাক্য থেকে দূরে আমি আতার নিসর্গে আটকে থাকি।
বাঁচার তুমুলে তুমি ফিনকির পলাশ কুড়িয়ে
গুটি গুটি পা'য়ে হাঁটো।
হাঁটার গল্পে ঝমঝম করে বৃষ্টি নামে।
বৃষ্টির গল্পে কেউ কেউ সাঁঝিমে ফুরায়।
৫.
ডোরা ও তুন্দ্রার ভাষা সাঁঝিম জানে।
জানে একটি পদছাপ কতোটা চাপ রাখে মাটিতে।
বাঁচার স্ফুটন কতোটা বেদন-ইতিহাস।
এ সবই নিহিত বিম্ব ও বীজে আমারদের সাকার মশগুল।
আর লিপি থেকে দূরে সাঁঝিম। একা শিকারীর জঙ্গল অনুবাদ করে।
হাড়ের কঠিনে সহজ বুনে দেয়। হৃদি রং দেদার বুনে দেয়।দূরের ক্যানভাসে
যায় পথিকের নীরবপ্রস্তুত। শব্দ ঘটে।
গহনাগহন ঘটে
সঘনের আতাঁতে । তাঁতে ।
বিবিধ মেথি
এই শরীরে সারাদিন মরু ডাকছে
ধরে নাও
তনহা- তরী থেকে
সেই তো বৃত্তময় ভ্রাম্যমান
গুমশুম পর্ণমোচীর
বেদন গাইছে
ভাঙা হাটে
কি থেকে কিসের
রেণু লাগে ভাবি
কতোটা চিত্রল, ভাবি
রোজদিনে মাত্রার মেরু থাকে না
সরলরেখা -বিশ্বাস থাকে না
ওহো অথই সাঁঝের বিথোভেন
আপনি কি পিয়ানোর ঐক্য শরীর !
না কি ক্রিয়া ক্রিয়া কুসুমে
তবু কে অ্যাতো কব্জিটান
কে অ্যাতো মুদ্রিত
তরলে, তন্তুতে
যখন ক্লু দিচ্ছে
পেয়ালা-পিছল
ছলবাগান
তখন এই আতর
খুলে বসা
জীবনের এক পাঁইট !
২.
আমরা তেমন কেউ কী
আমরা তো তেমন কেউ নই
আকাশের গলায় আটকে যাওয়া আকণ্ঠ চাঁদ ছাড়া
আমাদেরও তেমন কোনো নিসর্গ নেই
ঝিঁঝিঁর সি-সার্পে বেজে ওঠা ঝিঁঞ্জন ছাড়া
তেমন কোনো বিষাদসন্দর্ভ !
বরং ফাল্গুন হাওয়া হঠাৎ করে বেড়াতে এলে
জিজ্ঞেস করিঃ কেমন আছেন রূপসায়রের ঈশ্বরবাবু ?
তাকে বলো, একবার যেন ঘুরে যায়
রাত্রি নক্ষত্রের নীচে
এই ফিনকি ঠেক আমাদের
শাঁসের গিঁট কিম্বা নৈঃশব্দের প্যাঁচ খুলে
এই যে অনু জীবনের বহতা ছলাৎ
আসুন, এ-কে চুমুকে পান করি