Mohool Potrika
Login Here  Login::Register
দাসপুরের খাঞ্জাপুরের প্রাচীন রথ ।। দেবাশিস কুইল্যা

rath31

দাসপুরের খাঞ্জাপুরের প্রাচীন রথ ।। দেবাশিস কুইল্যা

 

সে কবেকার কথা। সংস্কৃত পণ্ডিত চতুষ্পাঠীতে ন্যায়শাস্ত্র শিখিয়ে চলছেন ছাত্রদের। আর পণ্ডিতের পরিচয় ছড়িয়ে পড়েছে দূর বহুদূরে। তখন সময়টা দ্বাদশ শতকের শেষ দিকে। বর্ধমান মহারাজ কীর্তিচন্দ্র মহাতাব। সংস্কৃত মনস্ক মহারাজের একান্ত ইচ্ছায় চেতুয়া পরগনার খাঞ্জাপুরে চতুষ্পাঠীর পণ্ডিতের ডাক এল বর্ধমান রাজসভায় সভাপণ্ডিতের আসন গ্রহনের। রাজইচ্ছার অর্থ রাজ আদেশ। উপেক্ষা করতে পারলেননা। সে পদ অলংকৃত করার সাথে সাথে ন্যায়শাস্ত্র ও বেদান্ত শিক্ষার জন্য এখানের ( বর্ধমান) অধ্যাপনা দায়িত্ব পড়ল প্যালারাম ন্যায়ভূষণ উপর। তাঁর পাণ্ডিত্য ও অধ্যাপনার জন্য বর্ধমানরাজ জমি প্রদান করলেন চেতুয়া পরগনার খাঞ্জাপুরে। পরিমাণ পঁচাত্তর একর। এবং একে একে গড়ে তুললেন রাধাবল্লভ জীউ মন্দির। কিন্ত মন্দিরের দেবতা এলেন তৎকালীন কুতুবপুর পরগনার (বর্তমান ডেবরা থানা) তালবান্দী থেকে। মন্দির প্রতিষ্ঠা ও দেবতার আগমনের সময়টা বাংলার ১১৪৮ সাল। আর রাধাবল্লভের জন্য রথ তৈরীর আয়োজন করলেন পেলারাম ন্যায়ভূষণ। সেই থেকে খাঞ্জাপুরের রথের সূচনা। যা এখনও উৎসাহ ও উদ্দীপনা সাথে মহাসমারোহে আষাঢ়ের রথ যাত্রার দিন রথের রশিতে টান পড়ে। অর্থাৎ জগন্নাথ দেবের রথের দিন। এখানে রথের আগের দিন শালগ্রাম শিলা খোলকীর্তন সহযোগে রাধাবল্লভজীউ মন্দির থেকে রথের উপর পূজিত হয়। উৎসবের এই আয়োজন নেত্রোৎসব নামে পরিচিত। নেত্রোৎসব এখানকার রথের প্রধান আকর্ষণ। এইদিন রাত গভীর হলে শালগ্রাম শিলা পুনরায় ফিরে আসে রাধাবল্লভজীউ মন্দিরে। এবং পরেরদিন অর্থাৎ রথযাত্রার দিন রাধাবল্লভ রথে চড়ে বসেন আর রথের রশিতে টান পড়ে অজস্র মানুষের হাতের ছোঁয়ায়। রথ চলে পাল বাড়ির কাছাকাছি। উল্টোরথের দিন পর্যন্ত গ্রামের ন'টি পরিবারে চলে রাধাবল্লভ জীউর ভোগের আয়োজন।

 

rath32

জগন্নাথ দেবের রথের আদলে তৈরী আদি রথ ছ'টি কাঠের তৈরী চাকার উপর রথের মূল কাঠামো এবং অসম্ভব সুন্দর কারুকাজ সমৃদ্ধ। খাঞ্জাপুর ও তৎসংলগ্ন এলাকা বন্যাপ্রবন হওয়ার হওয়ার কারণে বারবার জলসিক্ত হয়ে কাঠের কাঠামো ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। নির্মাণ ও পূণঃনির্মাণের ফলে আদি রথ তার অস্তিত্ব হারিয়ে ফেলেছে । বর্তমানে প্রায় বিশফুট উচ্চতার কাঠের কাঠামোবদ্ধ রথে সামান্য সাধারণ নক্সা থাকলেও আহামরি নয়। দেবোত্তর সম্পদের উপর নির্ভর করেই রথ রক্ষণাবেক্ষণ ও রথযাত্রার আয়োজন করতেন পেলারাম ন্যায়ভূষনের উত্তরসূরীগন । আনুমানিক একশত বছর আগে এমনি এক রথেরদিন এক দর্শনার্থী রথের চাকায় পৃষ্ট হয় দেবলোকে আরোহণ করলে তৎকালীন গ্রাম মোড়লগন রথযাত্রার আয়োজন ও পরিচালনার ভার নিয়ে নেন । এভাবেই খাঞ্জাপুরের রথ যাত্রার আয়োজন হয়ে আসছে । এই রথেরদিন থেকেই নানান পসরায় সাজানো মেলা চলে ন'দিন ধরে ।
রথের সামনে কাঠের তৈরী বামন কাঠের অশ্বের রশি এখনও ধরেন রথ চালকের ভূমিকা নিয়ে। প্যালারাম ন্যায়ভূষনের উত্তরসূরী সীতাংশুশেখর চক্রবর্তী তথ্য দিলেন রথের বর্তমান বামনটি আর মৃত্যুলতা শুধু আদি ( প্রথম) রথের সাক্ষী, যা রথের মূল আকর্ষণ এবং ঘাটাল মহকুমা জুড়ে ছড়িয়ে থাকা বিভিন্ন রথ থেকে এই মৃত্যুলতা এই রথকে স্বতন্ত্র করেছে। এখানের রথ তৈরী ও রথযাত্রার ইতিহাস যাই থাকুক, এখানের মানুষের লোকায়ত বিশ্বাস থেকেই রথের আয়োজন
"রথে চ বামনং দৃষ্ট্বা
পুনর্জন্মং ন বিদ্যতে "
এই বিশ্বাস থেকেই বছরের পর বছর আর যুগের পর যুগ রাধাবল্লভ জীউর রথযাত্রার আয়োজন ।

তথ্যসূত্র:-
১) সীতাংশুশেখর চক্রবর্তী , খাঞ্জাপুর/ দাসপুর/ পশ্চিম মেদিনীপুর ।
২) দেবাশিস ভট্টাচার্যে , নাড়াজোল/ দাসপুর/ পশ্চিম মেদিনীপুর।

 

 

মহুল ওয়েব প্রকাশিত বিভিন্ন সংখ্যা



করোনা Diary



আমাদের কথা

আমাদের শরীরে লেপটে আছে আদিগন্ত কবিতা কলঙ্ক । অনেকটা প্রেমের মতো । কাঁপতে কাঁপতে একদিন সে প্রেরণা হয়ে যায়। রহস্যময় আমাদের অক্ষর ঐতিহ্য। নির্মাণেই তার মুক্তি। আত্মার স্বাদ...

কিছুই তো নয় ওহে, মাঝে মাঝে লালমাটি...মাঝে মাঝে নিয়নের আলো স্তম্ভিত করে রাখে আখরের আয়োজনগুলি । এদের যেকোনও নামে ডাকা যেতে পারে । আজ না হয় ডাকলে মহুল...মহুল...

ছাপা আর ওয়েবের মাঝে ক্লিক বসে আছে। আঙুলে ছোঁয়াও তুমি কবিতার ঘ্রাণ...