প্রাগৈতিহাসিক কৃষি সভ্যতার ঐতিহ্যবাহী উৎসব 'করম পরব' ।। অরূপ মাহাত
 rakam parab mohool in pracchad
 
প্রাগৈতিহাসিক যুগে কৃষি সভ্যতার সূচনার সঙ্গে সঙ্গে পত্তন হয় এই উৎসবের। প্রতি বছর ভাদ্র মাসের পার্শ্ব একাদশী তিথিতে বাংলা, বিহার, ওড়িশা, ঝাড়খন্ড, ছত্তিশগড় সহ বাংলাদেশের বিভিন্ন অংশে বসবাসকারী কুড়মি ও হিতমিতান গোষ্ঠীর মানুষজন এই উৎসবে মেতে ওঠেন। কৃষি প্রধান এই জনগোষ্ঠীগুলো বিশেষ আচার অনুষ্ঠানের মাধ্যমে পালন করে তাদের অন্যতম উৎসব "করম পরব"।
rakam parab mohool in 1
অনুষ্ঠানের প্রস্তুতি শুরু হয় বেশ কয়েক দিন আগে থেকেই। পার্শ্ব একাদশীর আগে, অবশ্যই বিজোড় দিন হিসাবে (সেটা নয়, সাত বা পাঁচ দিনও হতে পারে), অবিবাহিত মেয়েরা 'জাওয়া'' দেয়। বিজোড় হিসেবের যে কোন একদিন সকালে স্নান করে, একটা ছোট ঝুড়িতে বালি ভরে হলুদ ও মেথি জল দিয়ে  বিভিন্ন বীজ (যেমন- ধান, সরিষা, জোনার, ডাল ইত্যাদি) বপন করে। এই সময় অবিবাহিত মেয়েরা জাওয়া নাচ করে। সমবেত ভাবে গান গায়- 
"তোরা যে লো জাওয়া দিলি, হলইদ কুথা পালি লো,/ দোকানিকে নাম দিলি হলুদ ব্যাপারি লো…'।
rakam parab mohool in 9
জাওয়া দেওয়ার পর থেকে পরবের দিন তারা বিভিন্ন নিয়ম কানুন পালন করে থাকে। বিভিন্ন কিছু খাওয়াতেও বিধিনিষেধ মেনে চলতে হয় এই সময়। প্রতিদিন সকালে ও বিকালে জাওয়াতে হলুদ জল দেয়। বিকালবেলা জাওয়া নিয়ে 'লায়া'র ঘরের উঠানে জাওয়া গানের মাধ্যমে জাওয়া বন্দনা করে।
rakam parab mohool in 2 
করম পরবের আগের দিন অর্থাৎ পার্শ্ব একাদশীর আগের দিন সন্দেশ। এই দিন সবার বাড়িতে 'পিঠা' বানানো হয়। পরবের দিন ছেলে মেয়েরা সারাদিন 'বার' (উপোস) করে। সারাদিন ধরে জঙ্গল থেকে বিভিন্ন গাছের ডাল, লতা-পাতা, ফল (যেমন- বেল, হরিতকি) ইত্যাদি সংগ্রহ করে। এরপর সন্ধ্যার সময় স্নান করে নদী/পুকুর ঘাটে নতুন পোশাক পরে শাল পাতায় দীপ জ্বালে। এই সময় 'কাঁকোইড়' (শশা) ফলকে এরা পুত্র হিসাবে গ্রহণ করে।
rakam parab mohool in 3 
 
এদিকে, ওই সময়ই লায়া স্নান সেরে করম গাছের ডাল এনে উঠানে স্থাপন করে। আর মেয়েদের আহ্বান জানায়- 'আসো রে বারোতিরা' বলে।
সবাই এসে পৌঁছালে লায়া পুজো শুরু করেন। সবাই তাদের জাবার সামান্য কিছু অংশ তুলে করম ঠাকুরকে নিবেদন করে। এরপর লায়া বারতিদের ধরমু ও করমু ঠাকুরের গল্প শোনায়। এরই ফাঁকে ফাঁকে বারতিরা তাদের নিয়ে আসা বিভিন্ন গাছের ডাল, পাতা, ফল ঠাকুরকে নিবেদন করে। এরপর পুজো শেষে বারতিরা বাড়ি যায় আর করম তলে পুরুষ ও মহিলারা সারারাত ধরে 'পাঁতানাচ' করে। সকালে সব বারতিরা এসে করম ডাল ও জাবা নিয়ে নদী/পুকুরে বিসর্জন দিয়ে স্নান করে। এই সময় তারা গান করতে করতে যায়–
'আইজ রে করম ঠাকুর ঘরে দুয়ারে রে,
কাইল রে করম ঠাকুর শাঁক নদীর পারে রে...'
rakam parab mohool in 4 
এরপর বাড়িতে এসে 'পারনা'/'পান্না' খাওয়ার মাধ্যমে বারতিরা উপবাস ভঙ্গ করে। আর পুরুষেরা জঙ্গল থেকে 'ডালি' (শাল গাছের ডাল) এনে বাড়ি ও জমির বিভিন্ন জায়গায় পুঁতে দেয়।

rakam parab mohool in 5

 
করম মানে কর্ম। কর্মযোগ। এই কর্ম তো আমাদের আসল ধর্ম। জীবনচক্রে প্রত্যেক জীবকেই এই কর্ম করেই বেঁচে থাকতে হয়। করম পরব হল প্রকৃতির কাছে আত্মসমর্পণ আত্মনিবেদন। এই পরবে কোনো মূর্তি পূজা নেই। করম গাছের ডাল  আর ঝুড়ির জাওয়া। প্রকৃতির কাছে নিজেকে মিলিয়ে দেওয়ার এই রীতি ছোটো ছোটো ছেলেমেয়েদের শেখানো হয় এই পরবের মধ্য দিয়ে। পূজা শেষ হলে ভাইয়ের কলাই  এ সুঁতো বেঁধে বলবে 'হামার করম ভাইয়ের ধরম' । করম আসলে বৃক্ষরোপণ উৎসবের প্রাচীন সংস্করণ।
 
rakam parab mohool in 8
 
 

একক কবিতা সন্ধ্যা



মহুল ওয়েব প্রকাশিত বিভিন্ন সংখ্যা



করোনা Diary



আমাদের কথা

আমাদের শরীরে লেপটে আছে আদিগন্ত কবিতা কলঙ্ক । অনেকটা প্রেমের মতো । কাঁপতে কাঁপতে একদিন সে প্রেরণা হয়ে যায়। রহস্যময় আমাদের অক্ষর ঐতিহ্য। নির্মাণেই তার মুক্তি। আত্মার স্বাদ...

কিছুই তো নয় ওহে, মাঝে মাঝে লালমাটি...মাঝে মাঝে নিয়নের আলো স্তম্ভিত করে রাখে আখরের আয়োজনগুলি । এদের যেকোনও নামে ডাকা যেতে পারে । আজ না হয় ডাকলে মহুল...মহুল...

ছাপা আর ওয়েবের মাঝে ক্লিক বসে আছে। আঙুলে ছোঁয়াও তুমি কবিতার ঘ্রাণ...