সন্দীপ ধাড়া-র এক গুচ্ছ কবিতা
না দেখা বসন্তদিন
১
শিকারের আয়োজনে বৃথা বসে আছো
একা একা দিন কেটে যায়
মাথায় চড়ে বসে বিগত রাতের হিসেবনিকেশ
পৃথিবীতে দুটি ঋতু
গ্রীষ্ম ও শীত
মধ্যে মধ্যে আকাশ জল ঢেলে দেয়
যেমন তরল তুমি ঢালো
তার বুকে
ফুলের হুল্লোড় এলে বলো
বসন্ত এসেছে
রোগ ও ঋতু
এ বড় আশ্চর্য সমাপতন (নয়)
তবু তোমাকে ভালবাসা যায়
রিক্ত নদীর কাছে উন্মুক্ত করে দেওয়া যায় শরীর
অজান্তে চালানো ছুরি
গলায় গিয়ে বেঁধে
শীত আসে পৃথিবীতে
২
অসময়ে বৃষ্টি
সারাটা দিন ধূ ধূ…
সরে গেল দূরে
গত বছর আজকের দিনে
চলমান ট্রেন থেকে ময়ূর দেখেছিলে
পেখমের বাহার
কিন্তু কী কর্কশ স্বর তার
আবার লাফিয়ে গাছে উঠে গেল
সুঠাম একটি ময়ূর তার সমস্ত সৌন্দর্যবোধ হারিয়ে
মামুলি পাখি বনে গেল
তুমি বললে– মুরগি
ভেজে খেলে হয়
এভাবেই মানুষের সৌন্দর্যবোধ
প্রয়োজন ও লালসার কাছে হেরে গেছে বারবার
প্রয়োজন ও লালসা!
শীত ও গ্রীষ্মের কথা ভেবে
তুমি গেলাস ভিজিয়ে নিলে আবার
মাংসে তরলে…
৩
সকালে জ্বর এল
মাথা ভার
অবিন্যস্ত বিছানার দুই পাড়ে দুই মৃতদেহ
এপাশ দিয়ে নামবে নাকি ওপাশ দিয়ে…
ভাবতে ভাবতে সুড়ুৎ করে নীচে গলে গেলে
নীচে ভরা বাজার
টেলিফোন বুথ মেছুড়েদের গমগম আওয়াজ
হরেককিসিমের মাছ ও মানুষ
থরেথরে সাজানো রয়েছে
বঁটি হাতে বসে আছে বেঞ্জামিন দুলে
তুমি তাকে ঋতু দাও
কেটে ফালাফালা করে দেবে
৪
আলুচাষিদের কথা যত কম বলা যায়
ততই ভাল
প্রতি বসন্তে
খানকতক করে টসকে যায়
গলায় দড়ি পেস্টিসাইড
বসন্তের রঙিন পেলবতায়
বড় অস্বস্তিকর এই মরে যাওয়া
যদিও
উৎসবমুখর সরকার বিব্রতও হয় না আর
রঙের আহ্লাদ ফিকে হয়ে আসে না
পরের বছর আবার আলুচাষ হয়
আবার…
৫
ধূমপান স্বাস্থ্যের জন্য ক্ষতিকর
ক্ষতিকর এই এলোপাথাড়ি হাওয়া
পাখি বলে ডাক দিই
গাছ আসে
গাছ বলে ডাক দিই
নদী এসে খুকখুক করে
তন্দ্রাচ্ছন্ন দিন হাউহাউ কেঁদে ওঠে
কেন তুমি বুঝলে না!
কেন বললে না
হাওয়াবাতাসের গান হৃদয় ছুঁতে পারেনি
মাংস আর না-পেরোনো ব্রিজেই ছিল ভাল থাকার চাবিকাঠি
যেসব দৃশ্য মিলিয়ে যাচ্ছে তুমি তার ক্যামেরা পার্সন
যেসব মানুষ হারিয়ে গেছে তুমি তার…
৬
এঁটোকাটা খেয়ে বেঁচে গেলে পঁয়ত্রিশ বছর
তবুও শীতের দিন তোমার গা শিরশির করে
হাত কেঁপে যায়
বন্ধুর ফোন কেটে দিতে
তরঙ্গ থেকে তরঙ্গে ছড়িয়ে পড়ে
ক্ষতের আলো
আজ বিকেলে কী খাবে
সন্ধেয় আটচালায় এসো
জড়িবুটি বেচে বেড়াত যে বুড়ি
তার আজ শোকসভা
তোমার বলার আছে
শেষে…
৭
সুকান্তদার সঙ্গে দেখা হয়নি
(অন্তত) সাতশত দিন
অথচ এই সেদিনও তার ছায়া পড়ল উঠোনে
সবাই জড়ো হলাম
ছায়ার চারপাশে বসে পড়লাম উবু হয়ে
দাদা একটা গল্প শোনাও
ছায়া দুলে উঠল
সর্পিল রেখায় ছুঁয়ে গেল একে একে সবাইকে
যুদ্ধের আবহসঙ্গীত বেজে উঠল গমগম করে
বিউগল কাঁধে ছুটে এলেন প্রাজ্ঞ সেনাকর্তারা
অথচ কথা হচ্ছিল ফুলের
একটা বাতিল ঋতু
কীভাবে দাঁড়িয়ে আছে স্ট্রীটলাইটের ছায়ায়
ওদিকে গল্পের কথায় তেলেবেগুনে জ্বলে উঠলেন
মুখ্য আর্থিক উপদেষ্টা
ব্যাঙ্ক, বিমা, শেয়ার বিশেষজ্ঞরা
খোঁজ খোঁজ রবে ত্রস্ত হয়ে উঠল আকাশ
জরুরি অবস্থার মতো তুমি আমাকে ভালবাসো
আদর করো
বলতে বলতে হারিয়ে গেল ছায়া
৮
তোমাকে বলিনি
প্রায়দিন সে আসে
বিছানা ঝেড়ে ঘরদোর নিকিয়ে দিয়ে যায়
যাবার পথের দিকে তাকিয়ে থাকি
বকফুল ঝরে পড়ে
ভিনরাজ্যে কাজে গিয়ে খুন হয়ে যায় মইদুল
সমাজ শাসন চলে
নেতা মিডিয়া সচকিত হয়
রাতে মইদুল আসে
বলে তাস বেটে দে
খৈনিতে চুন ডলে ছোটকা
হ্যালোজেন আলো এসে পড়ে
সব তাস উড়ে যায়
বিপদগ্রস্ত দুই জোকার
পড়ে থাকে
বসন্তরাতে
৯
আল ধরে হেঁটে গেলে ইস্কুল
শামুকপাড় প্রাথমিক বিদ্যালয়
সহসা তোমার কথা মনে হয়
লতায় জড়িয়ে ধরে পা
রাস্তায় পড়ে গিয়ে
হাঁটু থেঁতো
রক্তে ঘাসে মাখামাখি
বনতুলসীর পাতা বেটে দাও
দাও আলো
উৎপল ফতিমার বিয়ে হয়ে গেল
গ্রাম জুড়ে ছি ছি রব
সামনে ভোট
ইস্কুল ঘর জুড়ে জংলা পোশাক
১০
মেঘ করে এল
এ বছর চৈত্রে বৃষ্টি কিছু বেশি
ঝড়ও
অথচ কথা ছিল হাওয়া এনে দেবে
শান্ত নিটোল
বুনে দেবে ঘাসের নুপূর
হাটবারে তরমুজওয়ালার মুখে বিষণ্ণ হাসি
আকাশে মেঘলা
ও রাঙামাসি একটু বিটনুন এনে দেবে গো
দেয়াল দখল নিয়ে কাল রাতে মারপিট
সুবল ধাড়ার বড় ছেলেটা মরে গেল
কে যেন ভোজালি ঢুকিয়েছে পেট চিরে
ঝড় শেষ
পড়ে আছে দুর্দান্ত ধ্বংসস্থল
তুলতুলে মাংস
বিপর্যয় মোকাবিলা বাহিনী ঢের দূরে
এসো হাত লাগাও
১১
সকাল পেরিয়ে ওই দুপুর চলে এল
সেলফোন স্ক্রিনে সংবাদপাঠিকা
যেন যুদ্ধে রত
যেন দেশ মুছে দিয়ে গেছে হাভাতে মানুষের খিদে
ধর্ম যুদ্ধ রব
রোয়াবে ঢেকেছে গাঁ– গঞ্জে খানিক মাতামাতি
পুলিশে আধাসেনায়
এদেশে আদালত প্রসন্ন হলে বর্ষা আসে
সমাজকর্মীর দিকে ধেয়ে আসে বিস্কুট
পত্রিকা সম্পাদক খানিক পুলকিত হয়
আকাশাবাণী থেকে ডাক এলে
মনোরমা কেবিনের সন্ধে
মরে পড়ে থাকে
হ্যারিকেনের বাতিল আলোয়