iswarchandra vidyasagar

Mohool Potrika
Login Here  Login::Register

logo corona

শুভখন হঠাৎ এলে ।। ঋতম্‌ মুখোপাধ্যায়

 

 
কিচ্ছু ভালো লাগছে না। এই ঘরে বসে থাকা যে খুব অসহ্য লাগছে , এমন নয়।  আমি চিরকালই কিঞ্চিৎ অসামাজিক আর ঘরকুনো। বন্ধু-বান্ধব বা আড্ডার নেশা কোনোকালেই নেই। আর কাজের মধ্যে লেখাপড়াটাই কিছুটা মন দিয়ে করতে পারি। করোনা-সংক্রমণ এড়াতে অযাচিত ভাবে এই যে প্রায় তিন মাসের ছুটি মিলে গেল, তা আমার কাছে কিছুটা স্টাডি লিভের মতোই যেন। খুব যে অপরাধবোধে ভুগছি মাসমাইনে পেয়েও বিশ্ববিদ্যালয়ে যেতে না পেরে কিংবা ক্লাস না নিয়ে প্রাণ হাঁসফাঁস করছে, তেমন মনের দশা আমার হয়নি এখনো। আমি কাজপাগল নই, ছুটি পেতে আমি চিরকাল ভালোবাসি, সেটা অবশ্য নিজের মতো পড়াশুনার জন্যই। অতএব এটাকে পড়ে পাওয়া ছুটি হিসেবে মেনে নিলেই ল্যাঠা চুকে যায়! কিন্তু তেমন সুযোগ এ যাত্রায় হলো না, এটাই সব থেকে যন্ত্রণার বিষয়।      
করোনা নামক অদৃশ্য রোগ সম্পর্কে বিস্তর তথ্য আমরা এতদিনে খবরের কাগজ-টিভি- ফেসবুক-মোবাইল সর্বত্র পেয়ে গেছি। ইন্টারনেটের কল্যাণে প্রয়োজনের অতিরিক্ত খবর, ভুয়ো খবর সবই আমাদের মনের আকাশে ঘনঘোর দুর্দিনের অ্যালার্ট জারি করছে প্রতিনিয়ত। রোগে ধরলো আর মরে গেলাম- এমন সরল ব্যাপার তো নয়। কোয়ারেন্টাইন, আইসোলেশন এবং সর্বোপরি প্রতি মুহূর্তে অজানা ভয় আর আতঙ্ক এই সময়ের নিত্যসঙ্গী। আর তারসঙ্গে পাল্লা দিয়ে বেড়ে যাচ্ছে লকডাউন – সোশ্যাল ডিস্ট্যান্সিং-এর সেটাই নাকি একমাত্র নিদান। তৃতীয় দফায় তা আবার রেড-অরেঞ্জ-গ্রিন নানা জোনে দেশকে ভাগ করে দিয়েছে। গণপরিবহন প্রায় বন্ধ। দোকান-বাজার নিয়ম মেনে খোলা। যদিও সবাই তা মানছে, তা জোর দিয়ে বলার উপায় নেই। রাজ্য-কেন্দ্রের নিত্য তরজা, মাইনে কেটে নেওয়ার ভয়, চাকরি ছাঁটাই, অর্থনৈতিক মন্দা, নিম্নবিত্ত ও শ্রমিকদের খাদ্যাভাব, বহু মানুষের বাড়ি ফিরতে না পারার সমস্যা – এইরকম বহুবিধ আর্থ-সামাজিক সমস্যায় আক্রান্ত গোটা বিশ্ব। ভারতও তার বাইরে নয়। কিন্তু সবার উপর করোনা সত্য, ওষূধ-প্রতিষেধক কিছুই এখনও মেলেনি। তাই এত কিছুর পরেও করোনা রোগীর সংখ্যা বেড়েই চলেছে!  
তাহলে এই অগ্নিবলয়ের মাঝখানে বসে আমার কিই বা করার আছে? মাঝে মাঝে মুখে মাস্ক এঁটে দোকান থেকে মায়ের ওষুধ কিনে আনা ছাড়া আমার বাড়িতে তেমন কোনো সাংসারিক দায়িত্ব নেই। গৃহ-পরিচারিকারাও তেমন লম্বা ছুটি নেয়নি, কেউ না কেউ আসছেই। মা-বাবা-ভাই সবাই আছে। মুখের সামনে খাবার চলে আসছে। আমার আর চিন্তা কি? মাঝে মাঝে অবশ্য স্ত্রী-পুত্রকে বাপের বাড়ি থেকে নিয়ে আসার প্ল্যান করছি, বারবারই পরিস্থিতির চাপে ভেস্তে যাচ্ছে (যদিও শিশুপুত্রটি কাছে এলে আর কোনো অবকাশ থাকবে না জানি, তার অনন্ত দুরন্তপনার হদিশ এই ছোট্ট ডায়েরিতে দেওয়া সম্ভব নয়!) সহকর্মীদের সঙ্গে মাঝে মাঝে ভিডিও বা ফোনে মিটিং হয়, বিশ্ববিদ্যালয়ের বিভিন্ন আগাম পরিকল্পনার খবর পাই। যদিও জানি না, এখন এসব ভেবে রেখে লাভ কি। আসলে কর্তৃপক্ষকেও তো কিছু একটা নিয়ে ব্যস্ত থাকতে হবে! অনলাইন ক্লাসের ঝক্কি তেমন নেই, নানা অসুবিধের কারণে ছেলে-মেয়েরা ভিডিও ক্লাসে তেমন উৎসাহী নয় - স্টাডি মেটিরিয়াল, অডিও ক্লিপ পেলেই তাদের বেশি উপকার হয়। অতএব বই পড়া, লেখালেখি, প্রমোশনের কাগজ গুছিয়ে রাখা ইত্যাদির জন্য লম্বা অবকাশ। তাহলে রুটিন করে কাজ গুছিয়ে রাখলেই তো বেশ হয়!     
কিন্তু না, কিচ্ছু ভালো লাগছে না। কেমন একটা বিষণ্ণতা, অবসাদ মনকে ঘিরে ধরে প্রায়শই। দুপুরে-রাতে ঘুম ভেঙে যায় মাঝেই মাঝেই। ফোনালাপ, টিভি সিরিয়াল, কার্টুন, গোয়েন্দা-সিরিজ বা মোবাইলে সোশ্যাল নেটওয়ার্কিং সবই কেমন ক্লান্তিকর লাগে একসময়। যেন খাওয়া-শোওয়া-জেগে থাকার ছক বাঁধা একই রুটিন, এক চাকাতেই বাঁধা। এই অবসরে বই পড়া কিংবা লেখালেখির কাজ যে কিছুই করিনি, এমন নয়। বেশ কিছু ভালো বই পড়েছি, লেখালেখির কাজও এগিয়েছে কিছু (তবে এই অবকাশে আমার বাবা কাব্য, উপন্যাস, প্রবন্ধ গুছিয়ে লিখে ফেলেছেন, ছ’টা বইয়ের পাণ্ডুলিপিও রেডি!) তবু আমি বেজায় বিশৃঙ্খল আর অলস, তাই যেভাবে অবকাশকে কাজে লাগাবো ভাবি, হয় না সেভাবে। ১০ই জুন পর্যন্ত ছুটি, ৩০ জুন অব্দি বাড়বে কিনা তাও জানি না। সে যাই হোক, অবকাশ যদিও এলো –  কিন্তু এ কোন সকাল, রাতের চেয়েও অন্ধকার?  তা বলে আমি ফেসবুকে অন্য অনেকের মতো সমাজ-স্বদেশ-রাজনীতি নিয়ে চিন্তাগর্ভ মন্তব্য পেশ করতে অপারগ।  ঐ যে বললাম, আমি অনেকটা অসামাজিক আর অন্তর্মুখী, নাকি আত্মকেন্দ্রিক? কে জানে...   
হোয়াটস্যাপ বা ফেসবুকে বিজ্ঞান ও ধর্ম নিয়ে নানারকম বার্তা, কার্টুন ঘুরে বেড়াচ্ছে – যেখানে বলা হচ্ছে ধর্ম অপেক্ষা করছে বিজ্ঞানের জন্য অর্থাৎ করোনার প্রতিষেধক আবিষ্কারের অপেক্ষা। বিজ্ঞান এবং ডাক্তারদের শ্রেষ্ঠত্ব মেনে নিতে দ্বিধা নেই। ধর্মব্যবসায়ীদের প্রতিও আমার কোনো সহানুভূতি নেই। কিন্তু ঈশ্বর বা সর্বশক্তিমান প্রকৃতি, তাঁকে যে নামেই ডাকি না কেন, তাঁর সর্বময় অস্তিত্বকে অস্বীকার করার হেতু আমি খুঁজে পাই না।  আমি বিশ্বাস করি, প্রতিটা জিনিশের জন্যই একটা সময় আছে। কবে আমরা এই অতিমারীর প্রকোপ থেকে মুক্ত হয়ে সুস্থভাবে বাঁচতে, হাসতে, খেলতে পারবো - তা সেই সুসময়ের অপেক্ষা। তার আগে কর্মপ্রচেষ্টা বন্ধ করলে চলবে না, কিন্তু যখন সময় হবে তখনই ফল মিলবে। তার আগেও নয়, পরেও নয় – ‘শুভখন হঠাৎ এলে তখনি পাব দেখা’। আমাকে এ-কারণে কেউ ঈশ্বরপ্রেমিক এবং অদৃষ্টবাদী বলে গালাগাল দিতে পারেন, কিন্তু এ আমার সাঁইত্রিশ বছরের জীবনের উপলব্ধি।।

একক কবিতা সন্ধ্যা



মহুল ওয়েব প্রকাশিত বিভিন্ন সংখ্যা



করোনা Diary



আমাদের কথা

আমাদের শরীরে লেপটে আছে আদিগন্ত কবিতা কলঙ্ক । অনেকটা প্রেমের মতো । কাঁপতে কাঁপতে একদিন সে প্রেরণা হয়ে যায়। রহস্যময় আমাদের অক্ষর ঐতিহ্য। নির্মাণেই তার মুক্তি। আত্মার স্বাদ...

কিছুই তো নয় ওহে, মাঝে মাঝে লালমাটি...মাঝে মাঝে নিয়নের আলো স্তম্ভিত করে রাখে আখরের আয়োজনগুলি । এদের যেকোনও নামে ডাকা যেতে পারে । আজ না হয় ডাকলে মহুল...মহুল...

ছাপা আর ওয়েবের মাঝে ক্লিক বসে আছে। আঙুলে ছোঁয়াও তুমি কবিতার ঘ্রাণ...