অঞ্জন দাস-এর এক গুচ্ছ কবিতা
ছিটমাথা
গুলতির টান ছুটছে মাথা
পাখা তোর বুক লুকিয়ে রাখ
একটি আঘাত বহু মৃত্যুর
হাঁটা পথ ঘড়ি মহুল থাক
আলো হারালে ব্ল্যাক হোস্টেল
তবুও শব্দ টিক্ তোকে খুঁজি
পাহাড়ী গানের নদী সুরকার
অতসী গিয়েছে ভেতরে বুঝি
ঘুড়ি কাটলেই সুতো ডুৃবোরু
সুতো কি গলির স্পর্শ মানেনা
ঘুরছে লাটাই ছুটছে মাথা
মাঝে স্পেস থাক ভুলেও ভাবিনা
শিক্ষিতা যুবতী
এক
ছক থেকে সংসার হারালে
যে সন্ন্যাস বৈরাগী বানায়
তুমি তার নিত্যদিন অমায়িক ক্ষমার বৃক্ষদেবী
ফল দাও, আগুন চুরি করে পাতায় লিখে রাখো
!!পরজন্ম
আলো ভর্তি দেহ থেকে কঙ্কাল তুলে
নীল শূন্যে আবার সাজাও উষ্ণ পৃথিবী
!!বিষয় ভাঙেনা নদী পুকুরের মতো
যতো বেমানান যতো কুচো অলঙ্কার
আমার থলি পূরাণের কাব্য
!!শিক্ষিতা যুবতী
হাইফেন কমা অথবা পূর্ণচ্ছেদ
ছক থেকে সংসার হারালে
চিরকাল আমার গদ্য মনে
!!কবিতার বাড়ি
পাড়ি অথবা পাড়িনা কোনো ফল
চঞ্চল সিরিজের গন্ধগানে মাতলা ভ্রমর
!!এসো পরজন্ম লিখি
দুই
দক্ষিণের তেজপাতা বনে ধুকপুকে পাখি
তোমাকে বলেনি তাই
!!বরফ পচে গেল আয়না শহরে
উল্টোডাঙার কালো বৃষ্টিরা সরাসরি পাতালেই পড়ে
ফলত মাটির শূন্য শেকড়েই ডানা খোলে অন্ধ জোনাকি
তুমিও সুচিত্রা চোখে টিউশনি করেছো অনেক কাল
!!কাঁথাস্টিজ বসিয়েছ বাম দরজায়
তোমাকে বলেনি তাই
চাল আর চালার তফাতে তেজপাতা বন
!!কখন অরন্ধন উৎসবে মদ্দপান করে
তাও জানো
পাঁজরে ঘুরছে দেখো চলমান সিঁড়ি
বেসিনের আর একটু আটকানো গলার উপরে
!!স্নান সারে শিক্ষিতা যুবতী
জলডুবি আমাদের পূর্বপুরুষ
তিন
হেমন্তঘামে মৃত্যু রেখে পেরোতে পারোনি সীমা
পদ্মশরীর তাঁর বিস্তৃত মাঠ
অসময় জলের গোপনে
নিরিবিলি ছায়ার প্রকাশে যে শিল্পী এঁকে দেয়
রোদ
প্রতি চন্দ্রক্ষয়
!! তাকেও মৃত্যু বলো
চলো গোলাপি বীজের মুখে মুখ রাখি
প্রচণ্ড রাতগাছ শিউরে উঠুক
!!খসে যাক তারাফুল
ভুলের ঐশ্বর্যে সম্বল হীনতা যত
অসম স্বীকার তাও করে নিও
খামের কর্পূরে নববর্ষ এসো
বসন্ত চাইনি বলে বৃষ্টি চাইনা আর
!!বলেনিতো শিক্ষিতা যুবতী
মৃত্যু রেখে পেরোতে পারোনি সীমা
চার
আশ্চর্য শ্যামল
সীমার সীমিত নীলে ধারালো জলের দাঁত
শৌখিন সমস্ত উপস্থিতি
চেঁছে নিচ্ছো পেয়ারা খোসার
কাঁচা মায়া
!!রায়া পাহাড়ের নিচে
ছায়া ফসলের চোখ খুলে দেয় পথ
বাম পকেটের বই উষ্ণমানভূম আর
!!রথের ঘোড়াগুলো সমস্ত বোতাম পেরিয়ে
কস্তুরি চারণ ক্ষেতে কৃষ্ণার সঙ্গ চেয়েছে
টুপটাপ ধারালো দাঁতের শিক্ষিতা যুবতী
!! চেঁছে নিচ্ছে পেয়ারা খোসার কাঁচা মায়া
রাধে তোর প্রেম লিখি সঙ্গ লিখিনে
ডাক
কোনো এক প্রলোভন ডেকেছিলে গাছের আড়ালে
দেহফেলে কতবার আড়াল হয়েছি ডাল
ডাক সেতো সমদূর
পাতা পাতা চিঠি অথবা পালক
ইহকাল পরকাল পড়ে ও দেখিনা হায়
উপায় বিহীন প্রলোভন ময়ূরে কখনো যেওনা
সমস্ত মদের নেশা মাতালের নষ্ট বেচে খায়
লাল নীল হলুদ কালোর চারটি ঘোড়া
প্রাক্তন সেতারের ধারালো তারের নিচে
শুয়ে আছে আমার সেতার
ঘুম ভাঙলেই গলাকাটা কলি
ফিরি ঘরে গণ্ডীর ভেতর
আর
ওপর তারেই গাঢ়
নীলাভ রক্ত ফোঁটা
আগুন গ্রহের ঘোরা গোলক ফোস্কা করে
৷। কালো দাগ
অনবদ্য গান্ধর্ব্ব সভার পঞ্চমী বউদের
প্রাক্তনি নক্ষত্র মণ্ডলী ঝলমলে বসন্ত তিলক
এঁকে বসে রয়
।। লালে লাল
ঘাম মোছে রুমালের বেঁচে থাকা ফুল
ঢেউ ছুঁচ অসীম যাত্রাপথ পাতারাও ভেসে ওঠে
সমস্ত গ্যালাক্সি তৈরি কথক আল্পনা
।। হলুদ হলুদ
লাল নীল হলুদ কালোর চারটি ঘোড়া
আমার সেতারের নিচে দাঁড়িয়ে আছে বহুক্ষণ
তুমি বাজলেই...
অসত্য সতর্কতা পুরোনো লেখার " মা "
ভেজা সন্ধ্যা শীত
গুঁড়ো ঝাল ঝিমোচ্ছে, হালকা বাতাস
হতাশ ফলিডল শিশিল্যাম্প পুড়ে নিচ্ছে বাতি
জাঁতি আর যাঁতার সংসারে মা কেরোসিন
বেসিন সভ্যতা ছিলনা
ছিলনা ফেলনায় আমি আর বোন ঝিনুক উদর
একক চাদর
বোঝাতে চেয়েছি আমার পড়ার ঘর খেলার দোর
খিদে আর ভোলানো আদর কিছু খালি নেই
তুমিও জানতে তোমার চোখে আমি চোখ রাখি কম
আমি তোমার বোদ্ধা ছেলে শুনেছি অনেক বার
হলুদ পাখি ও যেদিন জানালা থেকে চিরতরে চলেগেলো, অভাব শিখেছি
গৌতম ভুলেছি
ভুলতে ভুলতে মানুষ প্রকৃতি আর
ঘরছাড়া ঘরে সমস্ত পিছনের টান সামনে রেখেছি
দেখেছি আড়াল চোখ আড়াল রাখিনি
হাসি আমি, মুক্তি- মুক্তোর আনন্দে আহা
তোমার লন্ঠন আজ আমাকেই ঝাড়বাতি লাগে
আমাকে আলোর কাছে ছোট করি ভিখারি ও আসে
আমার সমস্ত দাঁড়ানো একসময় একফুট হয়
কখনো মাটিতে মিশে যাই
তবু আমি মায়ের সঙ্গে থাকি
বারোহাত ছায়া
ছায়ার ভেতর তীর, অস্হিরতা, না ফেরা হলুদ পাখি
অন্যরকম কিছু- তার পাশে তাঁর পাশে
যে আমাকে একফুট বরাবর বানাতে চেয়েছে বারোহাত
ভেজা সন্ধ্যা
শীতে ও তুষারে
মুখী সন্নাস
একমুখী দুই যুগ শতবর্ষ যেন
তোমার কোমর ভাঙে মাটির কলসি
ভেতরের যে শব্দ গলায় এঁটেছি
চলমান ভাঙা জল নূপুরে জেলাসি
ক্লাসিকাল ফাংশনে গাছে সংবহন
মুকল এনেছো রাধে গর্ভ যাতনা
ফলে রাখো পাতালেন জল উপন্যাস
পাখি চোখ খুলে এসো ঠোঁটের গহনা
আগল নামিয়ে নিও দড়িঝোলা ঝাপ
মাপের বাইরে মুখ কেটে দাও লাঠি
সহজে ঢুকতে পারও আশ্চর্য পুরে
মাঝের বন্ধনী সেতো লাথি ঘুষি চাঁটি
তাও আসে কিছুপথ ফিরতে ইচ্ছে হয়
কিছু গন্ধ কিছু গান লালন বলেনি
একমুখী দুইযুগ শতবর্ষ যেন
পেঁয়াজ খুলেছে খোসা চোখেও জ্বলেনি
জরুরি জানেনা নদী তবু গাছ ঝোঁকে
কিনারে শুকায় মুখ চোখ নুড়ি বালি
আয়না ম্যাজিক নদী রহস্য জানেনা
দূরের বিন্দু ঘুম দিও হাততালি
আগুনের ধাতুরূপ
এক
বুকখোলা শহরের আলো মুখে পুরি
চিকচিক হজমোলা ড্রাগনের বিষ
সুতোছাড়ে পৃথিবী নামি মহাপথ
শীল পঞ্জিকা চোখ তুমিও জ্যোতিষ
কতবার নিয়ে যাবে শ্যাম্পেন দ্বীপ
বদলানো আগুনের ধাতুরূপ আঁকা
জামাহীন সমুদ্দুর একুশ কিনারে
হারানো গানের দিন বাতাস পতাকা
ক্লোরোফিল বুড়ো হয় পাতার বয়সী
বোঁটা ছাড়ে মায়াকাল ফুল পাড়ে মাটি
সে তার ভেঙেছে দেখি তারের আওয়াজ
ফোটাও মুদ্রা ধ্যান লিরিকের ডাঁটি
দুই
জলপাই রং তুমি ব্রীজের বক্ষ তুলে নিলে
ক্রুশগতি কঙ্কাল আবহমানের যিশু নয়
নখের অন্তর পাঠে বনময় বাঘের দেবিকা
কদর্য জমলেই বাঁক নেবে পেরোনোর ভয়
ফুরনো কথায় আগে শিষ দেয় নারকেল বালা
পখার বিজোড় কথা রেকডিং হয় গাছে গাছে
নর্তকী সন্ধ্যা কতশব্দ আঁকলো তোমার মুখ
জলথেকে উঠে এল ফাঁকাবাড়ি বাড়িটির কাছে
গৃহস্থ জলায় গুম প্রতিদৃশ্য দরজাও খোলে
ছাদেওঠা অতসী বানানো ক্যানেলে মুখ দেখে
জলপাই রং তুমি ব্রীজের বক্ষ তুলে নিলে
একবুক জলপাই নেইলপালিশেই দেবো ঢেকে
তিন
ঝাউ বাগানের গায়ে গেঁথে যায় ভীষ্ম শলাকা
শাশ্বতিক শাসনে সমবেত হাওয়া ভাঙে মাথা
চিদাভাস নির্বাসন তোমার বেনির ফুলে গাঁথি
বজরা ফোকরে দেখি ঘেঁটেছ ফিরিস্তি কথা
নিপাতন নিদ্রায় নির্দেশিত নিধুবন ঘোরে
বটিকা বচসা ডোবে পলাশ নদীতে ছায়া রং
মনিপুরী মণ্ডনে মতিহারি রুদ্র বালিকা
ঝাউ বাগানের গায়ে রোদলেখে প্রিয়াছাড়া জং
মেঘ পুরুষের ধ্বনি ঝমাঝম কাঁপছে ধরণী
অরণিকাষ্ঠ ভাঙে মহুলের মুকুলিত পালা
তারায় মরে যায় চোখের বিপাশা চাঁদে রাহু
বাহুভেঙে পড়ে বাজ বিপন্ন শাঁখ মুখে তালা
চার
সাইকেল ঢুকে গেছে পাঁজর কলোনি চুপ
পাড়ার অবুঝ ছেলে ফুটো করে হর্টবিট দেখে
চৈত্র সেলের স্টাইল চোখ মুখ রেলা নেয়
তেলমাখা গতকাল টেরি কেটে পথে পথ রাখে
জলেপড়া সাবানের সীমায় আয়ত হাত
ঠেসে যায় অন্ধকার ক্রমশ ঠেলছে আরো কেউ
সংকেত পেয়েছে পাড়া ভক্তের প্রভুরা ডাকে
জালে প্রজাপতি ফুল পাপড়ি ভাঙেনি একা ফাউ
সেলাই মেশিনে আলো টুকিটাকি ছেঁড়া দিন
সিটভরতি কোমর অতসী তার উল্লসিত শাঁখে
মায়ের গোছানো গল্প জমাতো বাবুই জেনে
চেনে এক ঘেয়ে তার কখনো পড়েই যেতো বাঁকে