মাঝরাতে ঘুম ভাঙাটা এখন আর বিস্ময়ের নয়। চোখের তলায় কালি অথবা কপালের নীলশিরা দেখে প্রিয় চোখ কোনো প্রশ্ন করে না। একটা মৃত্যু হাজার পদ্ধতিতে মারতে মারতে জীবনের সব কবিতা গদ্য করে দিয়েছে।
বিগত কয়েক সপ্তাহ লেখার কথা ভাবিনি। ভাবনা আসে নি তাই ভাবিনি। একটা সময় না লেখার জন্য প্রাণ অস্হির হত। ভাত ফোটার দিকে তাকিয়ে কত যে লিখেছি---
গভীর রাতে ঘুম ভেঙে কবিতার চরণ স্পর্শ করেছি। ছুঁয়েছি তার চোখ কপাল, এমনকি হাতের তালুও।
সে এখন বন্ধ গুহায় বন্দী। কতদিন তার সূর্য দেখা হয়নি। কতদিন দেখেনি দীপের মুখ , জোনাক জোসনা। বুকের ভেতর মাঝে মাঝে তার গোঙানির আওয়াজ পাই। এখন আর ফাৎনা নড়ার মতো লেখার জন্য শিরায় ভেতর কম্পন হয় না । বেঁচে আছি অর্থহীনের মতো।
সকালগুলো কেমন যেন। সূর্যকে আর ভালোবাসছে না। বিছানা ছেড়েই কয়েক ঝলক বজ্র মেখে নিলাম। মেঘ সাগরে ডুবিয়ে নিলাম চোখ। কাকে বিশ্বাস করাই, রোদের উপবনে বসে আমি তো বাজাতে চেয়েছিলাম কলাপাতার বাঁশী। বাজাতে বাজাতে সঙ্গীত হয়ে উঠবে আমার সমস্ত ক্লান্তি বিষন্নতা । নামতে নামতে ভারী ছায়া হয়ে মেঘ নেমে আসছে ধানের শীষে। শিকের ভাতে। এমনকি চাল কলসির ভেতর।
মৃত্যু শঙ্কার ভীড়েও মানুষের বাঁচার শ্বাস কয়েকমুঠো ধানি জমি। ধান পাকলে কৃষকের মুখে নেমে আসে ভরা পৌষ। লক্ষ্মীমন্ত হয়ে যায় পায়ের ছাপ। জমাটি দুঃখ গেয়ে ওঠে ফসল কাটার গান।
বিধি মড়ক লাগিয়ে দিল মাটিতে , সোনার ফসলে। বৈশাখী মাঠে ডুবে যাচ্ছে আলতাপাটি। এ তো ধান নয় , ভাত নয়, ক্ষুধার্ত দুপুরের জন্য শূন্য থালার ওপর রুগ্ন সন্তানের মুখ? কী দিয়ে আড়াল করবে জন্মদাতা আগামীর এই দৃশ্য?
ঘাম নয়, আজ ব্রহ্মতালু থেকে যেন সমস্ত ঘিলু তরল হয়ে মাথা থেকে গড়িয়ে পড়ছে পায়ে। শ্বাস বাঁচানোর জন্য চিৎকার করা ভীষণ জরুরি ছিল । পাশের মানুষটি ধান ঝেড়েই চলেছে অভিযোগহীন।
দুপুরের রোদ। মাথার ওপর খোলা আকাশ থেকে আগুন ঝরছে অবিরাম। পুড়ে গেছে হাওয়ার ডানা। মাঠে মাঠে করুণ উৎসব । ধান গাছের মৃতদেহ আগলে আকুল মিনতি, ভরে দাও ক্ষুধাতুর শিশুর বাটি।
আসন্ন মৃত্যু তো কেবল ভয় দেখিয়ে মুখোশ পরিয়েছে। বেড়াবন্দী করেছে সম্পর্ক জীবন।যে মৃত্যু রক্তের ভেতর প্রবাহিত হচ্ছে রোজ, মুখোশ ছিঁড়ে বেড়া ভেঙেই চলেছে কয়েক মুঠো ধানের জন্ম দেবে বলে।