সচ্চিদানন্দ হালদার - এর
একগুচ্ছ কবিতা
বাঁকুড়ার একটি নদী
লোকসঙ্গীতের মত আজন্ম শুনেছি
ঐ শুশুনিয়া পাহাড় থেকে নূপুর বাজিয়ে নামে
পাশে তার সারি সারি এক্কা-দোক্কা গ্রাম
ওর বিছানাটা গ্রাম সোমসার অবধি পাতা
ওখানেই দামোদর অপেক্ষায় থাকে
ছোট্ট নদীটিকে
নিজের স্রোতের সঙ্গে মিলিয়ে মিশিয়ে নেয়
তুষু ভাসানের ফুল না পেলে এ নদী বইতে চায় না
তরঙ্গ সাজায় শুধু
সূর্য বন্দনার মন্ত্র শুনে শুনে।
সোনামুখী ঘাটে এসে এ নদীর প্রতিদিন ভোর হয়
প্রতিদিন ভোরের আলোয় ও আমাকে দ্যাখে
ওকে আমি দেখি,
যেন ত্রয়োদশী একটি বালিকা
বড় হতে হতে
নদী হয়ে গেছে
শিকে
মা, তোমার দড়ির শিকেটা দাও--চালাঘরে বাঁধি,
দেশ গ্রাম তুলে রাখি, যেমন তুমি তুলে রাখতে--
পিঁপড়ের মুখ থেকে--নির্জলা দুধের মাঠা।
তুলে রাখি, হৃদয়ের পঠন-পাঠন
পাহাড় সমুদ্র নদী
সাত সকালের শিশিরে ভেজান গাছগুলি
কাল সারারাত সোনামুখী বনে কান্না উঠেছিল
প্রহরী জানে না
দুর্জয় কুঠার--অনেক উঁচুতে তাই--
না হলে ঐ চাঁদখানা কেটেকুটে রেখে যেত।
এখনো যা আছে অবশিষ্ট জল
মানুষের বুকে মমতার ছায়া--
মা, তোমার দড়ির শিকেটা দাও--
তুলে রাখি।
পৃথিবী গরিব
পৃথিবী গরিব, খুবই গরিব
তার মাত্র সাতটি সমুদ্র
কয়েকটি পর্বতমালা, হাতে গোনা কয়েকটি নদী
সীমাবদ্ধ জল সীমাবদ্ধ মেঘ সীমাবদ্ধ মাটি
প্রতিদিন সকলেই ধনবান হতে চায়
পৃথিবীর ধারাবাহিক দুঃখ তাই কখনো ঘোচে না।
আমি পৃথিবীকে ভালবাসি
আমি কেন পৃথিবীকে ভেঙ্গেচুরে
রাশি রাশি ডলার কামাব!
পৃথিবী গরিব, খুবই গরিব
তার মাত্র সাতটি সমুদ্র...
দুঃখের লাবণ্য
মানুষের দুঃখ ভাল লাগে, তাই আমি মাটিতে জন্মেছি
তাই অমরাবতীতে কোন মানুষ থাকে না
আমি তো নদীর চরে অরণ্যে পাহাড়ে
দুঃখকে মন্থন করি কখনো অমৃত ওঠে
পান করি উৎসব সাজাই
কখনো বা বিষ ওঠে জ্বলে পুড়ে যাই
দুঃখকে সরাব বলে আমাদের সবুজ বিপ্লব
মানুষের জন্য আমাদের রক্তদান
বনে বনে আমাদের শিকার বর্জন
দুঃখকে সরাব বলে কত না প্রয়াস,
রাষ্ট্রে রাষ্ট্রে মুখোমুখি কথা,
তবু দুঃখ থেকে যায়, থাক--
আমরা দু্ঃখের লাবণ্য সাজাব।
স্বজনেষু
তুমি সুচন্দনা পাখি শমীবৃক্ষের চামচা নও
বৃক্ষ নয় ঐ বাতাস আটকানো পাকাবাড়ি
আজ আমাদের--কল্যাণীয় পাখি ও বৃক্ষের
বড় দরকার।
জলচক্ষু পাখি,
আর অসংখ্য পুত্রের অনিবার্য জনম দিও না,
এই নাও বীজ, নির্মল উঠোনে গাছ পুঁতে দাও
সন্তানের মত হলুদ বাতাবি শাখায় ফিরুক।
আজ আমাদের
শুচিবাই নদী সাবান মাখানো মেঘ প্রয়োজন,
পরিবেশ ভীষণ পীড়িত
ওকে তুমি আরোগ্য করবে--কথা দাও
তিন সত্যি কর।