মাসুদার রহমান এর এক গুচ্ছ কবিতা
শালবন
শালবনে ঢুকে কারা কথা বলছে
সারারাত
চাঁদ গলে ফোঁটাফোঁটা মোমের জোছনা
স্টুরিস্টলজের বারান্দায় এক নিঃসঙ্গ লোক
সাকালে দেখতে পেল-
পাতাকুড়োনি মেয়েটি সারারাত কথাবলাদের
বস্তায় ভরিয়ে বাড়ি ফিরছে
মাটির চুলোয় ভাত রেঁধে খাবে
প্রিয় নিমগাছ
নিমগাছটির ছায়া
বিকেলে বারান্দা পর্যন্ত চলে আসে
চা-মুড়ি খেতে খেতে দেখি
আদুরে বিড়াল ছানার মতো
নিমগাছটি
ছায়া হয়ে উঠে বসেছে
আমার কোলের উপর
যে মেয়েটি হাঁস খুঁজতে বেরিয়েছিল
হাঁস খুঁজতে বেরিয়েছিল মেয়েটি
আর জলাভূমির কাছে এক উটের দেখা পেল
কি কথা হয়েছে সেই উটের সঙ্গে
যা খুব গোপনীয়
মা বাবাকে বলাই যাবে না
আমরা আশঙ্কা করছি, এই শরতের পরে
আসন্ন শীতকাল
এক মরুভূমি ও বালিঝড় অতিক্রম করবে
সে
উটের সঙ্গে
চিতা
জঙ্গলে কাঠ আনতে গিয়ে বাঘের থাবায়
নরেশ কাকু মারা গিয়েছিলেন
জঙ্গলের পাশেই শ্মশান। চিতায় শুইয়ে রাখা নরেশ কাকুর লাশ
মুখাগ্নি করা হবে, এমন সময়
বাঘ!
নরেশ কাকু হামাগুড়ি দিয়ে চিতার উপরে উঠে বসেছেন
তারপর চিতা থেকে লাফ দিয়ে নেমে জঙ্গলে হারিয়ে গেলেন
না-লেখা কবিতা
দেবলীনা সরেনকে মনে আছে
ভরাট গড়ন। মুখ ভর্তি নিপুণ বিন্যাস্ত
সাদা দাঁত
হাসলেই কালো ত্বকের ভেতর থেকে বেরিয়ে আসত
দিস্তে দিস্তে সাদাকাগজ
তবু কেন কবিতা লিখিনি!
সকালের কবিতা
দিনের প্রথম দেখা শালিক পাখিটি
আমার রাষ্ট্রপতি !
ওঁর উড়তে পারার সীমানা থেকেই রাষ্ট্রের ধারণাটুকু পাই
নাস্তার টেবিলে এসে
জেনে যাই
প্রতিটি কমলালেবু স্বতন্ত্র পৃথিবী
ঘড়ি
মিস মাটিনোর হাতঘড়ি; ডিম ভুলে সেদ্ধ করতে দেওয়া হল
কবিদের ‘যা-ইচ্ছে-তাই’ ভুলো-মন!
চুলোয় রান্না চাপিয়ে ডুবে গেছে স্যার আর্থার কেনাল ডয়েলে
দুপুর। বিকেল। সন্ধ্যা।
আলো-নেভানো সোনাপাড়া
বাড়ির সামনে জোড়া ঘোড়াটানা টমটমে
অদ্ভূত আগুন্তক!
আগুন্তক! চুলোর উপরে বসানো টগবগে হাড়ি থেকে
সেদ্ধ হওয়া ঘড়িটির সমস্ত কলকব্জা
পিরিচে খুলে নিয়ে
টমেটো কেচ-আপ যোগে টপাটপ খেয়ে নিচ্ছে
তরমুজ
‘প্লেটভর্তি ফালি করে কাটা লাল তরমুজ’, সুন্দরীর রক্তাত মৃতদেহের কথা মনে পড়ে গেলো-
জমাট লালরক্ত খেতে এসেছে কালো পিঁপড়েরা
অরণ্যে বৃষ্টি
তারপর বৃষ্টি নেমেছিল। অরণ্যের ভেতরে মেয়েটি গাছের শরীর ঘেঁষে দাঁড়িয়েছে, সেও এক গাছ
ওদিকে ছেলেটি পাখি। প্রবল বৃষ্টিজলে ভিজে ভিজে উড়ে আসছে সমুদ্র পেরিয়ে। এবং সে গিয়ে বসলো গাছ হয়ে শাখামেলা মেয়েটির ডালে
তুমুল বৃষ্টি জলে ভিজে যাচ্ছে মেয়েটির জামা ও শেমিজ আর জেগে উঠছে চাঁদ। তুমুল বৃষ্টি ভেতর তীব্র পূর্ণিমার আলো, শিস দিচ্ছে পুরুষ পাখিটি
পাঞ্জাবি পরা পাখি
সাদা পায়জামা ও পাঞ্জাবি পরিহীত পাখি; ওর লম্বা গলা বাড়িয়ে দিলো। তখনও মাসিমা রাগি চুঁড়ার মাথায় ফিতে দুটি সেপটিপিনে গাঁথছেন। তখনও খোলা আছে মার্বেল গড়িয়ে যাওয়ার মতো নাভীর গর্ভ...
সেই অবলঙ বাড়িয়ে দেওয়া গলা; আর যায় কোথায়
ঈশাণে কালবোশেখি ঝড়ের পটভূমিকায় সাদা বক উড়ে যাচ্ছে বাঁশবাগানের দিকে
এক বাক্স বাল্যকাল
‘প্রজাপতি জন্মের পিছনে ব্রহ্মাণ্ডের ঘণ্টাধ্বনি’
ছেলেবেলায় দাদীমার কাছে এই গল্প শুনে মুগ্ধ ছিলাম। অনেক প্রশ্ন ছিল; প্রশ্নগুলো গিয়ে বসতো তেপান্তরের মাঠে বিশাল এক প্রশ্নবোধক স্তম্ভের মাথায়। স্কুলের সময় হলে ঘণ্টা বাজত আমাদের গ্রামের স্কুলে। দেখতাম, আবারও নতুন প্রশ্ন গিয়ে বসছে স্তম্ভের উপরে।
সেই অদ্ভূত লোকটি এলো; তখনও বালকবেলা । কাঁচের বাক্স; তার মধ্যে হাওয়াই মিঠাইগুলো।