একক কবিতা সন্ধ্যা ।। মলয় পাহাড়ী

malay

মলয় পাহাড়ী-র এক গুচ্ছ কবিতা 

 

 

সেতুর জন্য দাবিপত্র

১. 
শহর হয়ে উঠছে ভেতরের জমি, সন্ধের পর পথবাতি, মানুষের মুখ।
আলোর এমন লোভ, এক দশকের পুরাতন বুক থেকে মুছে যায় ছায়া, বৃষ্টিদিন
তারপরও দেখি পুয়াল ছাতু ফুটে আছে খড়ে, পানার উপর ফুডুৎ রংয়ের বিকেল

আমি একা নই এসব থেকে দূরে, শহরের গাছেরাও,  বৃদ্ধ শরীর থেকে পাতা খসে গেলে,
সবাই যে যার চলে যাবে, সেতুহীন জলরাশি, আকুল...

২.
সে সুতো ঝুলে আছে জল ভূমি ও আকাশে, এতটুকুই দেখা যায়

চোখের কোনে কাজল আঁকি, সুতোর আলো এসে পড়ে, পা বাড়াই কোনও অশ্রুত শব্দের ধ্বনি চিনে 

সুতোর বন্ধুতায় অভিজিৎ নক্ষত্র জ্বলে ওঠে, ঝিঁঙে, উচ্ছে আর পুঁই ক্ষেত পেরিয়ে রাজার সড়ক। ভোরের  টেম্পোর বিজোড় চাকাটি এসে দাঁড়ায় যেন, ডাক দেয়-- উঠে আয়, আয় ...

লাল কাপড়ের টুকরো ছায়ায় নিচে এক রমণী ব্যাটাকে নিয়ে একটু এলিয়ে পড়েছে পটল, কচু, মুলোশাকের উপর। ওর বরের পাশে বসে উঠে এসে বসেছি

মাঠ সব্জি ও সবুজ তাদের প্রভু। প্রতিটি পল তারা মুলো, কচু কিংবা ঝিঁঙের  আজ্ঞাধীন

দেওয়া-নেওয়া পর সুতোর পায়ে পায়ে তারা ফিরবে, ফেরার পথে হয়তো মনে পড়বে নগরের ভিড়ে একজনকে তারা ভুলে গেছে

৩.
মনোনীতা আজ স্বাধীনতা রঙ পরেছেন। পায়রা ডানায় শুভ্র উড্ডিন তাঁর সকালের চাঁদ, আমি স্বাধীনতার মুখ দেখেছি

শ্রাবণ সংক্রান্তির পর মুক্ত হল দোতারা। পথের ধুলার  গানে, হলদি সেতুর নীচে অশোক তলায় তার একান্ত আয়োজন
ওভার ব্রিজের ওপর থেকে রাষ্টীয় সংস্থার বাস বন্দর গামী, পতাকার তিন রঙ লেগে আছে চালকের চোখে

৪.
বেলে মাটির উপর জল বয়ে গেছে, এভাবেই দুটি অধ্যায় শেষে অবাক দূরত্বে সরে দাঁড়িয়েছে টক কুলের গাছ, একমাত্র মহুল বৃক্ষ। অদূরে ভিটের মন্দির ঘর ধসে , একে একে দূরে সরে গেছে পুরাতন বাস্তু সাপেরা...

এঘরের বড় বধুটি চতুর্দোলায় চেপে চলে গেছে, সাবড়া গাছের ছায়ায় তার বায়ু শরীর খুঁজে কাতর কোনো সন্তান ভুলে রেখে গেছে পায়ের সুতো

এই যে শীর্ণ তালগাছ, কুঁয়ো তলায় গরুর নাচের উৎসব, হ্যাজাকের আলো জ্বেলে ফরাসের উপর সাজঘরের জমিদার, এঁরা একটা তন্তু দিয়ে আমার শ্রাবণের দুপুর গড়েছে...
জীবন্মৃত পাথরের যেন মানুষ, ভেতরে বেড়েছে এক স্থবির যক্ষ জন্ম

৫.
আমার এখন কবিতা ভালো লাগেনা, অক্ষরের দিকে তাকিয়ে দিগন্ত বিধুর রক্ত বা আগুন রঙা সুতোর সম্পর্ক গুলোর দিকে তাকিয়ে মুগ্ধ হতে মন যায় না, মুগ্ধতার অলৌকিক শাসনে ভেতরের ক্ষেত হরিৎ হয়ে ওঠা-- যেন গত জন্মের জেগে থাকা দু-একটা অধ্যায়।

আমি পড়তে পারিনা, সংসদ অভিধানের লাল মলাট থেকে উঠে আসা শব্দেরা আমার গলার ভিতর, ঘিলুর ভিতর, কঙ্কালের বাজনা শুনিয়ে চলে, "কবির অভিপ্রায়" এর অন্তিম প্রশ্ন চিহ্ন চাপা পড়ে গেল !

'এমনিই' কলার গাছে পাতা কাঁপে, 'এমনিই' নারিকেল পাতায় স্নেহ, ঘাটের আত্মীয়তা বুঝে ভেসে ওঠে তেলাপিয়া দুপুর, এমনিই ...

তারপর 'এমনিই' একদিন ফেসবুক থেকে চলে যাওয়া, দশ- অংক  ফেলে চলে যাওয়া, অপরাজিতার ঝরে যাওয়া সাদা দল, এমনিই...

এসব শুধু শুধু কবিতা ভেবো, তোমাকে অপরাধী বানাবো, এতটুকু চাওয়া, এমনিই

 

বাতাসের ভিতর আমার ঘর।


আলোর খাদান থেকে ই-মেল এসেছে

আয়োজনের শব্দঝংকার, ঠাকুরবাড়ির মাটি- তন্ডুল, সিঁদুর লেপা সুপুরি, আর এতটুকু বাস্তুরেখা ঈশান কুলুঙ্গিতে রেখে বেরিয়েছি

জলস্থান, ভেজা গান বেঁধে গেছে কেউ। মরিচ কান্ডের নীচে ভাষালিপির হলুদ পাতার দাগে   লেগে আছে ছেলেখেলার শ্রম। 'তীর্থ' নাম তার কেউ দিয়েছিল, কখনও

পিঠুব্যাগে ভরেছি চাকুরির চিঠি, প্লাস্টিক বাঁধা  জল, আর টুকরো এ-সকালের মন

যারা দেখে যাওযার একটি নীল রেখার গণ্ডির ওপারে ক্রমশ ছোটো হয়ে থেকে গেল  

! খাদানের কপিকল খেয়ে নামাচ্ছে সমগ্র কপালের আলো  ঘুড়ি রং

বুড়ো আঙুল জমা করেছি এসে, কয়লার জন্মদ্বারে এলে তুমি আমি আর যে ক'জন মানুষেরা--- অন্ধের পেশায় অলৌকিক মানিয়ে নিয়েছি

২.
খিরিস তলের উজ্জ্বল রেনুর উপর দিয়ে শেষ বাদলের ভেজা বাতাস আসে। উঠতি বয়সের চার পাঁচটি মোরগের ছা ঘাসের বুদা থেকে খুঁটে নেয় দানা, কেঁচো বা ফড়িং এর লার্ভা 

খানার জমা জলে তাদের কোমল ছায়া পড়ে। গলায় সাদা রিবন আঁকা কালো কুকুরটি গোলপোষ্টের নীচে বসে থাকে। অ্যাজবেস্টরের  ব থেকে টালির চতুর্ভূজে গড়িয়ে নেমেছে জল,পুয়াল ছাতু ভিজে খড়ে লেপ্টে ঘাঁটা

এখানে মানুষ গৌন, 'হরেক মাল ত্রিশ টাকায়' নিয়ে আসে গঞ্জের অ্যাভন সাইকেল। 'সুসার সাঁওতা' সংঘের পেছনে সরকারি পাম্পে কলের জল ওঠে, ধাতব ট্যাপের থেকে ঝুলে থাকা স্বচ্ছ ফোঁটাটি শুষে নেয় মগ্ন পাতিকাক

 

ডিয়ার আই অলয়েজ রিমেম্বার ইউ


'জীবনের জন্য জীবনকে ছোটো করা যায়' ?
সোনামণি?

ডিয়ার, সেই সন্ধেটার কথা মনে পড়ে যাচ্ছে, কয়েকটি সতেজ সেগুনের চারা কয়েক হাজার টাকায় তোমাকে গছিয়ে দিয়ে বলেছিলাম, তোমার মেয়ের যখন বিয়ের বয়স হবে,এর গোটা চারেক বেচে দিও, ড্যাং ড্যাং করে খরচ উঠে যাবে। স্বামীর হৃদয় সারাতে আর গোটা তিনেক দিও...

বাকিগুলো তোমার সখ আহ্লাদ ভালোবাসার জন্য, তখন তোমায় ধরে কে ।

চা ফিরিয়ে আমি চুমু খেয়েছিলাম। 

ঘুঘুর নরম ভেজা ঈষদুষ্ণ বুকে আমার থেঁতলানো মুখটা ঘসতে গিয়ে স্পষ্ট দেখেছি, স্বচ্ছল আগামীর স্বপ্নে কেমনভাবে ভেসে ছিল তোমার দু'টি চোখ।

আমি জানতাম ক'মাস পরে গাছগুলো মরে যাবে।
"ততদিনে তো ট্রান্সফার হয়ে যাবে" রাত্রে খাওয়ার টেবিলে মজা নিচ্ছিল ওরা, কানে গেঁথে দিচ্ছিল "এভরিথিং ফেয়ার ইন লাভ এন্ড ওয়ার। "

যেন জীবনের জন্য জীবন থাকতে নেই। যেন পুকুরের স্বচ্ছ জলে স্বাভাবিক ছায়া থাকতে নেই।যেন যুদ্ধ ছাড়া অভিধানে দ্বিতীয় কোন শব্দ নেই।

এখন তো কেউ নিরন্ন থাকে না সোনামণি, রাত্রে পাখা ঘোরে, জল এখনও সুপেয়, মৌরলা চাক বেঁধে ঘোরে তোমাদের পুকুরে...

 তবু আঙুল ফুলে ওঠার স্বপ্নে, হালকা-পাতলা কম্প্রমাইজ করে নিলে ডিয়ার, একটা থাপ্পড় বসালে না !
ফুলে ওঠা কলাগাছকে গর্দানেই কেটে ফেলতে হয়।
আমি কিছু অন্যায় করেছি , বলো

 ২.
"... হলুদ খামে যত্নে লেখা আমার নাম।"
খুব কী বেশি কিছু চেয়ে ফেললাম, সোনামণি ? 

রাস্তায় বাস নেমে গেছে আজ থেকে। অদৃশ্য কোভিড ও অনাক্রমতা , কে কোনদিকে ? দু'পর্দা মুখোশের ভরসায় আমি কী কাউকে ডেকে নিতে পারছি ! আসুন, জায়গা আছে পাশে...

উপসাগরে নিম্নচাপ ঘণিভূত হচ্ছে,  আকাশের জন্মদ্বার চিরে কৌরব কুল বাইরে বেরিয়ে এলো। বারনাবতের পথে হাওড়া স্টেশন থেকে ছেড়ে যাচ্ছে কৌরবদের মিনিবাস। এত ভায়ের নাম মনে রাখা যায়, বলো ! তবু ডেটাবেস সংরক্ষণ করে অনর্গল পর্যালোচনা ... আইডিয়া, স্কিম, টার্গেট... এন্ড ফলোআপ... সবকুচ্ বিকতা হ্যা বস্,সব কুচ...আমি যে আর পারছিনা মামনি... স্ক্রিন জুড়ে অনন্ত অ্যালজেবরা... হৃদযন্ত্র একটা ছোট্ট ডেরিভেটিভ...টেনস্ টু...টেনস্ টু...

আমার স্টপেজ এসে গেছে ডিয়ার, ছাতিম বনে বিকেলের আলোটুকু পেতে বসেছি, হলুদ খামের উপর চেনা অক্ষরে লেখা আমার নাম...জীবন তো ডাক পিয়নের হাতে হাতে ফেরা , কারুর ঠিকানা আছে, কারুর নেই...

আমার ঠিকানা তোমার মনে আছে, সোনামণি ?

৩.
যা কিছু আমার নয় তাতেই  বিঁধেছি।

একটা তীব্র ব্যাথা পিঠ থেকে ঘাড়ে উঠে আসছে ক'দিন, মাথাটা ঘুরে পড়ে যাব কী ? 
এরপরেই তো একদিন 'দ্য এন্ড' লেখা হবে। তারপর সমগ্র পর্দা জুড়ে স্ক্রল করে উঠে যাবে ক্ষুদ্র অক্ষরে পরিযায়ী জনতার মতো চিরকালের ব্যাথা।শহর তাকে নেয়নি,পথ তাকে নেয়নি, নেয়নি তার আজন্ম বেড়ে ওঠা  তার গ্রাম। আস্তিন ছাড়া ভাসন্ত মশারী তে দীর্ঘ চোদ্দ বা একুশ দিনের নির্বাসন। 

তার ও ভিতর  মুক্ত হয়ে নিজের জীবনকে গল্প-কথা করে তোলার উপাদান ছিল, বুকের উপর সন্তানকে বসিয়ে অনাহার  ভুলে যাওয়ার অপেক্ষা ছিল। উপর্যুপরি একটা রাতের রমন ক্লেদ ভুলে তাকে  ফিরিয়ে দিত জল ভরা দেহ, ভেজা উত্তাপ আবারও। একটা নিরিহ কালাচের ছোবলে জ্যান্ত অভিশাপ হয়ে ঢলে পড়ে গেল... 

এরপর ও অপঘাত থামবে মনেহয়, সোনামণি ?
এরপর ও ব্যবসায়ীরা তৃনমূল নয় বিজেপি হয়ে যাচ্ছে,কেউ কেউ গা বাঁচিয়ে বামপন্থী। যে বাচ্চাটা কিছু বুঝে... না বুঝে কাঁদছে আর বেহুঁশ ঘুমিয়ে যাচ্ছে তাকে দয়া করো, বিক্রি করোনা...

আমি সানুর চোখের দিকে তাকাতে পারিনা।তার প্রতিটি 'বাবা' ডাকে অজান্তে আমি মরমে মরছি। আই স্যোয়ার,পিঠের ব্যাথা সেরে গেলে আমি  রাজনীতি তে আসব...

৪.
কথায় কথায় প্রবাদ আওড়াতেন যাঁরা তাঁরা কেউ নেই আমাদের চারিপাশে। আমাদের মুখেও বাপ ঠাকুরদার ভাষা নেই। তাঁরা ও সেসব গেঁয়েলি গল্পকথা বই এর পুরোনো পৃষ্ঠার মতো চুপচাপ পড়ে আছে, দূরে কোথাও । 

দিনান্তে কেতাবি-জীবনের একটা একটা পাতা বাড়িয়ে চলেছি।সব অক্ষর থোড়ি না সোনার জলে সেলাই করা,ছাই পাঁশ আছে কতো ! প্রথম প্রত্যাখ্যাত হওয়ার কাহিনী তো আমার সাত বছরের শিশু ও জানে,  আন্টিটাকে চারটা ঢুঁসোও সে লাগাতে চায়, অথচ সেদিন চোখের জল মোছানোর কেউ ছিল না ! ঘরের শুকনো দেওয়াল সেসব আজ মনে রাখেনি, কতোবার ভেবেছি মরে গেলেই ভাল হয়। গালে ব্রণর ক্ষত আর উদরের ক্ষুধা এসব নিয়েও আমি দু-ফর্মা প্রেমের সনেট লিখেছি সেদিন, কীভাবে ?

রাজনীতির প্যাঁচ পয়জার বুঝতে না পেরে আমার প্রেমিকা খুন হয়ে গেল একদিন।
একদম একা, জখম হরিণ, একা টিলার নীচে পড়ে থেকেছি , নরম লতা বা কচি ঘাস দাঁতে কাটতে গেলেই বুক উথলে বমি হয়ে যেত।আদর্শ সরকারের চরিত্রে তখনও অভিনয় করেছি মফস্বল শহরের থিয়েটার মঞ্চে, কীভাবে ?
আপনার চলে যাওয়া বিশ্বাস করতে পারছিনা সুশান্ত। আপনার কানে কেউ বলেনি কখনও,যখন একটা দরজা বন্ধ হয়ে যায়, দ্বিতীয়টি কোথাও খুলে যায় !

আপনি ক্যাপ্টেন কুলকে ফোন করেছিলেন, কিংবা সাহেনসা,কিংবা আমার মতো কাউকে ? কোনো মেসেজ ?

আমার দাদার সাউন্ড সিস্টেমের ব্যবসা তিন মাস বন্ধ, মাথায় লক্ষ টাকা ঋণ, আমাদের টালির চাল উড়ে গেছে আমফানে,বাবা বুক ভেঙে শয্যাযায়ী ,
বন্ধুদের বেতন বন্ধ, চাকরি আছে কি নেই জানেনা ওরা...
সেই আমি অন্তসত্বা মা হাতীর মৃত্যুতে গরম চায়ে চুমুক দিতে ভুলে যাই , কেরল থেকে আসা পাশের বাড়ির ভাইটিকে (দৈহিক দূরত্ব রেখেই) বলে আসি, সাহস রাখিস, অসুবিধা হলে ফোন করিস,মাটি চাটিয়ে দু'টো শাকের বীজ বুনে দিই , বুক ভরে শ্বাস নিই ...
ভাবি বুক ধরে রাখতে হবে এখন, ভাবি  নিশ্চয়ই যুদ্ধ এড়াবেন ওঁরা বা হিন্দু-মুসলমান জিগির বা আনারসের মধ্যে বোমা...
নিজের জন্য কিছুটা সময় রাখি, তাকিয়ে দেখি নিজের মুখ,যেটা বন্ধুবর স্মৃতিজিৎ জাকির হোসেন ভালোবেসে আমায় এঁকে দিয়েছিলেন

৫.
কুড়ি টাকায় সাতটা সবেদা।

এমন কণ্ঠ যে কানে আটকে যায় তা নয়,তবু বলার ভিতর কিছু একটা আছে ! আমি কংক্রিটের স্লোপ ধরে উঠছি। বরাহনগর মেট্রোর মুখটা সামনেই। বাঁদিকের ফুটপাতে গুটিকয় সবেদা, চিনিকলা প্রভৃতি সাজিয়ে বসেছেন এক ভদ্রমহিলা। গলাটা তাঁর নয়, পাশ থেকে দাঁড়িয়ে হাঁক দিচ্ছে দশ এগারো বছরের ছেলেটি। পাঁচ থেকে সাত সেকেন্ড হবে আমার লেগেছে ওদের অতিক্রম করতে,তার ভিতরেই তিন বার কানে এল ওই স্বর।

ও খুব সিরিয়াস ছিল এমন নয়।হাতে কিছু ছিল, ফোন কি? ও যেন খেলছিল, খেলতে খেলতে মা কে সাহায্য করা আর কি , বিকেল সরিয়ে সন্ধে ঢুকছে তখন। ব্যস্ত আলোর নিচে ছায়ার কাটাকুটি।

ও কোন স্কুলে যায় ? হোম টাস্ক যে করবে তেমন হোম ওর কই ? ভুল বললাম,এটাই তো ওর হোম টাস্ক। ও শিখছে... বসতে বসতে,খেলতে খেলতে, ও অনুশীলন করছে, বাড়িয়ে নিচ্ছে স্কিল। মায়ের ব্যবসা ধরে নেবে এক দু বছরেই।

ওর বয়সীদের ক্লাসে আমি ক্রিয়ার কাল শেখাই বা পার্ট অব স্পিচ। ডিম ভাতের লোভ দেখিয়ে দিস্তা দিস্তা পুঁথি গুঁজে দিতে চাই গলায়। তাতেই আমার সুখ। আমার সুখের দেওয়াল ঝন ঝন করে ভেঙে দিল ওই বালক, ওর সবেদা...

কুড়ি টাকার সবেদার উপর  নির্ভর করে ও কাটিয়ে দেবে সারা জীবন, আমি ওর হাত ধরে অদূরের অক্ষর নগরে ( কলেজ স্ট্রিট ) নিয়ে যাওয়ার সময় পেলাম না।

৬.
আমার তো তুমি আছ, তুমি আছো হে রসুলপুর।

নদী রসুলপুরের সঙ্গমস্থল এখানে। মহা বিপুলের ভিতর নিজেকে নিবেদনের ক্ষনে কখনো ক্লান্তি ও দীনতা এসে গ্রাস করে। ক্যাওড়ার ঝোপের শ্রান্ত বাতাসের স্বর খ্যাসখ্যাসে। দোয়েল দম্পতি মুখ ফিরিয়ে বসে আছে দুই ডালে । শ্বাস মূল গুলো অনাথ শিশুর মতো চেয়ে আছে । এই লবনাম্বুর গোড়ালির উপর যে টুকু জল, সেখানে পাঁচটি আঙ্গুল রেখে অন্তর খুলে বলি --- আমার তো তুমি আছ, তুমি আছো হে রসুলপুর।

অরকবাড়ি খুঁটি পুরো বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়েছে ইয়াসের জলোচ্ছাসে। এঁরা সবাই ধীবর, জল এঁদের বন্ধু। সে বন্ধুই ভাসিয়ে নিয়ে গেছে রান্নার হাঁড়ি কড়া, বাসন কোসন, বিছানার সামান্য টুকু কাঁথা বালিশ।
 রসদ যা কিছু, অন্নের জোগাড় সব জলের তলায়।

মা বন বাশুলি, আমার বন্ধুতা স্বীকার কর। কাঁকড়া,বানী গাছের ঝোপের ভিতর থেকে বরাভয় নিয়ে উঠে দাঁড়াও, ভরসার জোয়ারে ডিঙায় লগির তাড় এসে লাগুক। ভালোবাসা নাও হে রসুলপুর, বান্ধবী আমার। পরিযায়ী ডানার প্রেমে তুমি আছো নদী, এ কথা বিশ্বাস করো, দয়া করো...

ইউক্যালিপটাসের বল্লির উপর ভেলকি বাঁশের একটুকু সাঁকো, উপহার হিসেবে গ্রহন করো...

মহুল ওয়েব প্রকাশিত বিভিন্ন সংখ্যা



করোনা Diary



আমাদের কথা

আমাদের শরীরে লেপটে আছে আদিগন্ত কবিতা কলঙ্ক । অনেকটা প্রেমের মতো । কাঁপতে কাঁপতে একদিন সে প্রেরণা হয়ে যায়। রহস্যময় আমাদের অক্ষর ঐতিহ্য। নির্মাণেই তার মুক্তি। আত্মার স্বাদ...

কিছুই তো নয় ওহে, মাঝে মাঝে লালমাটি...মাঝে মাঝে নিয়নের আলো স্তম্ভিত করে রাখে আখরের আয়োজনগুলি । এদের যেকোনও নামে ডাকা যেতে পারে । আজ না হয় ডাকলে মহুল...মহুল...

ছাপা আর ওয়েবের মাঝে ক্লিক বসে আছে। আঙুলে ছোঁয়াও তুমি কবিতার ঘ্রাণ...