বিজ্ঞাপন



logo corona

আছে দুঃখ , আছে মৃত্যু , বিরহদহন লাগে ............।। অ্যাঞ্জেলিকা ভট্টাচার্য

 

বিপদ মানুষকে অনেককিছু শিখিয়ে দেয় । এখন সারা বিশ্বের বিপদ । বিপদের নাম – করোনা । এক বিপজ্জনক ভাইরাস , যার গ্রাসে লক্ষ লক্ষ মানুষ ।

আমাদের প্রজন্ম দেশভাগ , দুর্ভিক্ষ , মহামারী দেখেনি । আমরা শহুরে মানুষ - বন্যা , খরাও দেখিনি । করোনার ছোবলে আক্রান্ত বিশ্বকে দেখে আমারা থমকে গেছি । থমকে গেছে আমাদের দৈনন্দিন রুটিন জীবন । আমরা দেখেছি নোটবন্দি । এখন দেখছি গৃহবন্দী । আমরা যুদ্ধ দেখিনি । কিন্তু এও এক অদৃশ্য যুদ্ধ । ঘরের ভিতর থেকেই । এখানে আমরা সবাই সৈনিক ।

করোনা আমাদের স্বাবলম্বী করে তুলেছে । নিজের কাজ নিজে করতে শিখেছি । নারী পুরুষের কোন ভেদাভেদ নেই । ঘরের যে পুরুষটি আগে শুধু অর্ডার করতেন তিনিও এখন বাসন মাজেন , ঘর মুছতে শিখে ফেলেছেন । এই ডিপ্লোমা কোর্সের সার্টিফিকেট যুদ্ধ জয়ের পরেই যেন পাওয়া যায় । শুধু এই টুকুই তাদের দাবী ।

আমরা শুধু এখন নিজের কথাই ভাবছি না ।অন্যদের কথাও ভাবতে শিখেছি । রান্নার মাসি , কাজের মাসি তাদের কথাও ভাবছি । আগে একদিন কামাই করলে যারা মুখভার করতেন । এখন দিনের পর দিন কাজের মাসিদের ছুটি দিয়ে মাইনে পৌঁছে দেন বাড়িতে । এর ব্যতিক্রমও কি নেই ! তা নয় । মানুষ অমানুষ একসঙ্গেই বাস করে তো । অনেকে কাজ হারিয়েছেন ।

রকে বসে যে ছেলেটা আড্ডা মারত বলে গা জ্বলে যেত , আর নিজের ছেলের বিদেশ পাড়ি দেওয়ার কথা ঘটা করে পাড়াতে শোনাতেন । সেই রকবাজ ছেলেটি আপনার ইনসুলিন জোগাড় করার ভার নিয়েছে । আপনি আশীর্বাদ করে বলছেন “ বেঁচে থাকো বাবা” ।

পৃথিবী উল্টে যায়নি । আমরা কিছুটা উল্টে গেছি । ফ্যামিলি টাইম বুঝতে শিখেছি । পরিবারের সঙ্গে ভাগ করে নিচ্ছি ফেলে আসা শৈশব , কৈশোর । ধুলো মাখা অ্যালবাম ঝেড়ে বাবা বলছেন – এই খোকন তুই ছোটবেলায় কত রোগা ছিলিস । মা হেসে বলছেন – সারাদিন অফিসে বসে বসে ভুঁড়ি বেড়ে গেছে । তার মাঝেই টিভির খবর শুনছি , আর বুক কেঁপে উঠছে । পরিবারের সব থেকে ছোট সদস্য , তার স্কুল বন্ধ । সে প্রশ্ন করছে– আর কতো জন হল ? বাবা হাত চেপে বলে– সব ঠিক হয়ে যাবে ! “ লড়বো জিতবো বাঁচবো ”। তবুও প্রশ্নটা মনের মধ্যে ঘোরাফেরা করে “কবে সব ঠিক হবে ?”

চল্লিশের গৃহিণী ছেলে মেয়ে মানুষ করতে করতে আর সংসার সেবায় ভুলে গিয়েছিলেন , শেষবার কবে তুলি ধরেছেন নয়তো কবে হারমোনিয়ামের সঙ্গে গলা মিলিয়েছেন । গীতবিতানের পাতায় খুঁজতে থাকে বাঁচার গান । “আছে দুঃখ, আছে মৃত্যু , বিরহদহন লাগে/ তবুও শান্তি, তবু আনন্দ, তবু অনন্ত জাগে ।।”

ঘরে বসেই একটু কষ্ট করেই না হয় লকডাউন মানি সবাই । আমাদের হাতেই আমাদের জয় যেমন আমাদের হার। আমরা এবার ঠিক করবো আমরা জিতবো নাকি হারবো।

বিশ্বের অর্থনীতির মেরুদন্ড ভেঙে দিয়েছে করোনা। কিন্তু আমাদের মেরুদন্ড তো ভাঙতে পারবে না। আমাদের এক গরিব, অনাহার, অশিক্ষিতের দেশ কিন্তু শিখিয়েছে ভালোবাসা, দুঃসময়ে পাশে থাকা, পরকে আপন করা। করোনার চোখ রাঙানি উপেক্ষা করে , পরিবার ভুলে ডাক্তার , নার্স , স্বাস্থ্যকর্মী, পুলিশ দিনের পর দিন সেবায় নিজেকে উৎসর্গ করেছে।
এই যুদ্ধ জয়ের অনন্দটাও একদিন সবার সঙ্গে ভাগ করে নেবো।

একক কবিতা সন্ধ্যা



মহুল ওয়েব প্রকাশিত বিভিন্ন সংখ্যা



করোনা Diary



আমাদের কথা

আমাদের শরীরে লেপটে আছে আদিগন্ত কবিতা কলঙ্ক । অনেকটা প্রেমের মতো । কাঁপতে কাঁপতে একদিন সে প্রেরণা হয়ে যায়। রহস্যময় আমাদের অক্ষর ঐতিহ্য। নির্মাণেই তার মুক্তি। আত্মার স্বাদ...

কিছুই তো নয় ওহে, মাঝে মাঝে লালমাটি...মাঝে মাঝে নিয়নের আলো স্তম্ভিত করে রাখে আখরের আয়োজনগুলি । এদের যেকোনও নামে ডাকা যেতে পারে । আজ না হয় ডাকলে মহুল...মহুল...

ছাপা আর ওয়েবের মাঝে ক্লিক বসে আছে। আঙুলে ছোঁয়াও তুমি কবিতার ঘ্রাণ...