মাহমুদ নোমান-এর এক গুচ্ছ কবিতা
জিন্দে অলির কবিতা
টেলিভিশন
আমাদের ঘরে টেলিভিশন নেই
আম্মার মুখের দিকে তাকাই
ধানের জমি থেকে ফিরে,
আম্মাও আমার চোখে কী যেন দেখেন
বিস্ময়ে আবিষ্কারে...
নাম
তোমার সাথে আমার প্রেম হোক
নদী এসে পায়ে থাকুক
জলে গড়িয়ে যাচ্ছে
রোদের সোনালি পুচ্ছ,
বাইলে মাছ ধরে এনেছি
উজানি চিবুক -
তলে তলে হাতড়াতে থাকুক
অচিনগেরামের ডাহুক,
মেন্দিমাখা হাতে জড়ায়ে রাখুক
তোমার সাথে আমার প্রেম হোক
তোমার সাথে আমার প্রেম হোক
খোদার আরশে লিখে রাখুক
এই যদি জাহান্নাম -
তোমার নাম আমি রেখেছি জান্নাত
এই নামে তোমাকে জগতে ডাকুক...
শীতে যেমন অলি
প্রতিমার উঠান থেকে প্রজাপতি উড়ে আসছে
কলমি শাকের ফুলে ফুলে সাপের জঁন্নী,
নদীমুখি হাওয়ার খাঁচা -
বেগুনি শাপলার দৃশ্যে মাছরাঙা দুপুর
কলহের ঠোঁটে খুঁটে খাচ্ছে ধানের বুক
চড়ুইদের রতিলা কষ্টে ঘুম আসবে বলে
পাড়ায় ঘুমের বাহারি আদর,
দুধ পিয়ে খাওয়া বেড়াল বুকে প্রেমিকা ঘুমায়
চন্দ্রাহত
আমি যাবোনা তো
শক্ত পোক্ত মাটির আন্ধারে
তা কি হয়?
উচ্ছ্বাসের বেনোজল জলোচ্ছ্বাসে
চিবুক ধরে টানে!
হেঁচকিয়ে রক্তচোখে ভয় দেখায়
চরুটের ধোঁয়ার মাতাল ঘূর্ণি
ভেলকি মারে -
দূরপাল্লার জাহাজে,
ইছামতী পাড়ে
চৌকষী জমির আইলে
তবু চোখ যোজনে - যোজনে
রক্তজবার শাখে
বলে সর্পিণী- পরকীয়া মোহে
ভালোবাসে আজো সুযোগ পেলে!
ফুঁ
চোখে পোড়াবাড়ির পুকুরের নাভি
লিপস্টিকে ভ্রমে রক্তাক্ত 'হরি,
চুঁইয়ে চুঁইয়ে জলের অলংকারে
উঠানজুড়ে ছায়ের মেঘেদের ঘাম;
গন্ধ চোর বাতাসে নড়ছে দেউটি -
নাইটি, এভাবে খোলে না জানি
কীভাবে খোলে বলো রাম রাম!
চারদিকে শুধু একজনাই দেবী
গোলাপজলে দৌড়াচ্ছি অভিরাম;
নৌকা হারালেই
ক্রমেই সরে যাচ্ছি -
আঙ্গুলের ফাঁক গলে বৃক্ষরাজির ছায়া
তুমুল জোছনা ছড়ানো আঙিনায়
উবু হয়ে ডাকছে নিমচড়ুই,
হামাগুড়ি দিয়ে আসছে শিরশিরানি বাতাস
আগুনের অঁলার মতো সিনার কাছে
বৃষ্টিবিঘ্নিত তুমিময় স্পর্শ,
দোল খাচ্ছে পাতাবিহীন ডালে
জলের দানা টুপ করে ঝরলেই
নদী বড়ো একা,
নদীর এপারওপার জানে
খেয়াঘাটে কেউ দাঁড়ালে
হাসে ঢেউয়ের শরীর...
আচানক
মনটা আজ শুধু তোমার খোঁজ নিচ্ছে
অন্ধকারে ঠেঁস দিয়ে নদীটাও
ভাঙছে বিশ্বাসের পাড়,
কী নির্জনে টেনে টেনে নিচ্ছে
পিঁপড়ের মতোন
নাভিশ্বাসের প্রতিমা দেখাতে,
ফিসফিসিয়ে নিজেতে কথা বলা
আচানক থেমে গেলে
অন্ধকার চিরে সাদাটে জামা
বুকের জমিতে পরে
তোমাকে খুব খুঁজছে
মাছের কাঁটা খেতে খেতে
বুড়িয়ে যাওয়া বাড়ির বেড়াল
ঐখানটায় শুয়ে আছে
রোদে চিকমিকে,
টান মারে বাতাসের খেয়াল...
আপু, তোমার জন্যে
আপু,আমাতে উথালপাতাল
আমার বাগানে হেঁটে গেছো
আমার দিকে পাশ ফিরেছো
উঠতি কলিতে জল ভেঙেছে
একটু একটু জল গড়িয়ে -
বুকে তোমার শ্রীময়ী মাজার
আমায় নিয়ে ভ্রমণে গেছো
আড়াল হতে বেশ হেসেছো
আমায় নিয়ে কোথাও গেছো
ভাবতে ভাবতে ভুলেই গেছো
বলছো আপু,বাড়ি ফিরো
বলছো আপু- ভুল করেছো...
সতর্কতা জারি
যে শহরে প্রেমিকা নেই
বৃষ্টিতে ভিজো না
সেই শহরে
জ্বর এলে
কারে বকবে?
কার চোখে বৃষ্টি দেখবে
পাখির ডানা ঝাপটিয়ে
ছড়িয়ে দেবে বুকের তিতা জল
চৈতির বিছানাতে
বরই শুকাতে দেওয়া উঠোনজুড়ে লাল মরিচ রোদ
বুকের মাঝখানটায় নদী
খামখেয়ালি মেঘের শামিয়ানায় প্রেমে ডুব ;
খড়কুটো ঠোঁটে পাখির ডানায় গেরস্থি বউয়ের
পাঁচ আঙ্গুলের কারুকাজ ভিজে বৃষ্টিতে
ফেলে নিশ্বাস, এ বড় আনন্দময়...
নিয়ত
ধানের কলেমা শিখে গেছি
তোমার পিছু
রোজার দিনে,
সুতি শাড়ির শ্বাসরুদ্ধকর
বনজোছনা
জিয়ল মাছের ঘোল
নিকটে আসিলে,
শ্বাসে, শ্বাসে
নিয়ত করালে
কসম
শহর থেকে ফিরলে -
হলদে গেজাঁর ঝলমল দুপুর
হাতের মুঠোয় রেখো,
ঝলির ফুটোয় একচোখা
বাদুড়ের মতো- লটকাবো,
দুপুর গড়ালেই -
জিন্দে অলির মাজার হয়ে যাবো...