logo corona

পতাকা নেই, পা আছে ।। কেশব মেট্যা

 

কোভিড-১৯ বায়োলজিক্যাল যুদ্ধে চীনের একটি ট্রেলার মাত্র! মানতে পারলে আপনি ডান, না পারলে বাম। তার আগে, ফেবুপণ্ডিতরা, মানে এই আমি আপনি জানুয়ারি ফেব্রুয়ারি মাস জুড়ে এ হেন চায়না প্রোডাক্টের জনপ্রিয়তা নিয়ে ফেসবুকে, চা দোকানেগুলিতে- লেকচারে ভিড় জমিয়েছি। গুজবে গুবলেট হয়ে যাওয়া দেশের ভাতে, হা-ভাতে মানুষ আমরা। যতটা বিজ্ঞানকে ভরসা করি তার চেয়ে অনেক বেশি বিশ্বাস রাখি তুকতাক কবচ- কুণ্ডলে। বিপদের গন্ধ শুনে ভিড় জমাই ধর্মের গায়ে। করি মানত।


হাটে- বাজারে ছিঁচকে চোর ধরা পড়লে, পেঁদিয়ে চোখ দাঁত উপড়ে ফেলি। আর ইয়া বড় বড় সম্ভ্রান্ত ডাকাতের বেলায় আইনের দাঁড়িপাল্লায় তার বিচার চলে অনন্তপথ। আর সাধারণ পাবলিক ক্লান্ত হয়ে আঙুল চোষে বছরের পর বছর।
যদিও করোনার দৌলতে আঙুল চোষা তো দূরের কথা, ঘন্টায় ঘন্টায় আঙুল সাবানজলে কিংবা স্যানিটাইজারে ধোওয়ার কথা বলা হচ্ছে; আঙুলে আঙুল রাখা নিষিদ্ধ এখন। আমাদের প্রাথমিক স্কুলগুলোতে সাবান দিয়ে হাতধোওয়া
শিখিয়ে অভ্যাসে পরিণত করা হয়, কিন্তু সে অভ্যাস অধিকাংশ বাড়িতে বন্ধ হয়ে যায় বাড়ির বড়দের উদাসীনতায়!
 আমরা  গাছ লাগাই  জল সংরক্ষণ করি, পরিবেশ বাঁচাই সব ক্যামেরা অন রেখে। আমাদের ভিত্তি হুজুগ, উৎসব আমাদের ভবিষ্যৎ।


২৭ ফেব্রুয়ারি WHO যখন সারা বিশ্বকে সতর্ক করেছিল করোনা ভাইরাসের ভয়ানক সংক্রমণ নিয়ে, আমরা তখন কানে শুনেছি মাত্র। তারপর চীন ইতালির মর্মান্তিক ছবিগুলো সোশাল মিডিয়াতে দেখে যতটা নির্লিপ্ত থেকেছি, তার চেয়েও বেশি উপহাস করেছি চীনাদের খাদ্যরীতি নিয়ে! নিজেরাই ঠিক করে নিয়েছি আমাদের দেশের উচ্চ তাপমাত্রায় এই ভাইরাস তেমন খেলা দেখাতে পারবে না।


মুখে বলছি লকডাউন। অথচ লকডাউন সফল করতে লাঠিচার্জ করতে হচ্ছে পুলিশকে! আমরা সমস্ত কিছুকে এতটাই মুখরিত করতে চাই যে, অন্য উন্নত চিকিৎসা ব্যবস্থা যুক্ত দেশগুলোর ভয়াবহ পরিণতি দেখেও ভয় পাচ্ছি না। লকডাউন মানে যেন ছুটি ছুটি ব্যাপার। ঘন ঘন হাটে বাজারে যাচ্ছি। ভিড় জমাচ্ছি মাছ মাংসের দোকানে। সমস্ত ধরণের আড্ডাই চলছে সমান তালে। তাই মোড়ে মোড়ে যেটুকু নির্জনতা তা পুলিশের করুণায়, করোনা সতর্কতায় নয়।


ঔদ্ধত্যের ফল কী হতে পারে, তা হাড়ে হাড়ে টের পাচ্ছে আমেরিকা। ট্রাম্প প্রশাসন WHO এর পরামর্শ অগ্রাহ্য করে লকডাউন শুরু করেনি। ফলে লাফিয়ে লাফিয়ে বাড়ছে করোনা আক্রান্ত সংখ্যা। মৃত্যুমিছিল অব্যাহত। করোনা চিকিৎসার জন্য হাইড্রক্সিক্লোরোকুইন পাওয়ার জন্য ভারতকে হুমকি পর্যন্ত দিয়ে ফেলেছেন আমেরিকা রাষ্ট্রনায়ক! আর আমাদের দেশ আমেরিকার সাথে বন্ধুত্ব রক্ষার দায়ে সুড়সুড় করে রপ্তানি করল হাইড্রক্সিক্লোরোকুইন! বলছি নিজের দেশের নাগরিকদের জন্য এই ওষুধ যথেষ্ট পরিমাণে আছে তো?


নাগরিক! লকডাউনের সময় দেশের প্রধানমন্ত্রী তাঁর নাগরিকদের মধ্যে ঐক্যের সুর বাঁধতে ঘরের মধ্যে শুধুমাত্র প্রদীপ মোমবাতি জ্বালানোর বার্তা দিলেন। আর নাগরিকরা সন্তুষ্টি পেতে বোমা বাজি পোড়াল কোটি কোটি টাকার! ফলে তাদের কাছে লকডাউন, কোয়ারেন্টাইনে থাকার মানে এর বেশী আশা করা বৃথা।
আবার অন্যদিকে প্রশাসন এই লকডাউন, কোয়ারেন্টাইন, বিদেশী বাণিজ্য, রাজনীতি, রেশন, দান এই সমস্ত ব্যাপারে শুনিয়ে শুনিয়ে আসল দিক থেকে জনসাধারণের দৃষ্টি ঘুরিয়ে দিচ্ছে অন্যদিকে। কেননা করোনার আক্রমণ থেকে বাঁচতে যেমন লকডাউন, কোয়ারেন্টাইন এর প্রয়োজন, তেমনি করোনা আক্রান্ত কে দ্রুত চিহ্নিত করাটাও অধিক জরুরি; আর তার জন্য দরকার টেস্ট টেস্ট এবং টেস্ট। ঠিক এই জায়গাটিতে আমাদের দেশের গড়িমসির কারণ আমরা জানিনা! যেমন আমরা জানিনা বিদেশ ও ভিনরাজ্য ফেরত করোনা সন্দেহভাজনদের কেন হোম-কোয়ারেন্টাইনে থাকার কথা বলা হল? বলা হলেও তার নজরদারি কেন প্রশাসন কঠোরভাবে করল না? যদি প্রথমেই সন্দেহভাজনদের বাধ্যতামূলকভাবে সরকারি কোয়ারেন্টাইন সেন্টারে রাখা যেত, তাহলে হয়তো আজকের এই 'করোনা হট স্পট' এতটা চিহ্নিত হতো না। কেননা আমাদের দেশে শিক্ষিত আমলার ছেলে আর অশিক্ষিত হাবলার ব্যাটা দুই-ই সমান।


এ দেশ বড় বিচিত্র। লকডাউনের সময় যখন ডাক্তার নার্স স্বাস্থ্যকর্মীরা অনেকরকম ঝুঁকি নিয়ে লাগাতার কাজ করে যাচ্ছেন, তখন একশ্রেণীর মানুষ খাবার মজুত করে, একদল মানুষ ফেবুতে নিত্যনতুন খাবারের ছবি পোস্টায়, একদল রেশনের চাল চুরি করে, রাজনৈতিক নেতার কিছু অংশ নোংরা খেলা চালায়, আর একদল চুপ করে থাকে। হ্যাঁ, চুপ করে থাকে খিদের জ্বালায়। আর কিছু মানুষ এগিয়ে আসেন সান্তাক্লজ হয়ে।


কী অদ্ভুত এই সময়! পৃথিবীর শ্রেষ্ঠতম জীব মানুষ আজ গৃহবন্দী। আর নির্বিঘ্নে ডানা মেলে উড়ে বেড়াচ্ছে পক্ষীকূল। রাজপথে নির্বিকারভাবে ঘুরছে হরিণ, ময়ূর। মানুষের পাপ থিতিয়ে স্বচ্ছ হয়ে উঠছে গঙ্গা যমুনা ব্রহ্মপুত্রের জল। দূষণ মুছে প্রকৃতিও নিজেকে সাজিয়ে নিচ্ছে নতুনভাবে। তাহলে কি প্রকৃতিও বিরক্ত আমাদের প্রতি! আজ ভাববার এই তো সময় বন্ধু। কিন্তু ভাববো কেন? আমরা কি ‘ডাকঘর’ এর বাইরে বেরোতে না-পারা সেই অমল? যে কবিরাজের কথা অক্ষরে অক্ষরে মেনে চলবো! আমাদের তো অমলের মতো সে চোখও নেই, যে জানলা দিয়ে দেখতে পারি কাঠবেড়ালি কেমন করে খায় কিংবা সেই ঝর্ণা আর দূরের পাহাড়! আমাদের তো সেই মনটাও নেই, যে ভাবতে পারি–পৃথিবীটা কথা বলতে পারে না বলেই নীল আকাশ ওভাবে হাত তুলে ডাকে! করোনার কারণে কয়েকদিন সামাজিক দূরত্ব বজায় রাখতে কেমন যেন হাঁসফাঁস করছি আমরা! অথচ কতদিন বাবা মায়ের ঠিকানা হয়েছে বৃদ্ধাশ্রমে! কতদিন আর্থিক ভাবে দুর্বল আত্মীয় স্বজনদের চলেছি এড়িয়ে!

 

এই করোনা আতঙ্ক,  এই মৃত্যুর হুংকার,
এই অভাব অভিযোগ, এই সমস্ত কিছু ছাপিয়ে একটি দৃশ্যই আজ ভেসে উঠছে বারবার... সে একটা মিছিলের দৃশ্য, যার পতাকা নেই   শুধু পা আছে;  আর আছে দীর্ঘ পথ...।  আর পেয়েছে নতুন নাম ‘পরিযায়ী শ্রমিক’ !

IMG 20200414 WA0007

একক কবিতা সন্ধ্যা



মহুল ওয়েব প্রকাশিত বিভিন্ন সংখ্যা



করোনা Diary



আমাদের কথা

আমাদের শরীরে লেপটে আছে আদিগন্ত কবিতা কলঙ্ক । অনেকটা প্রেমের মতো । কাঁপতে কাঁপতে একদিন সে প্রেরণা হয়ে যায়। রহস্যময় আমাদের অক্ষর ঐতিহ্য। নির্মাণেই তার মুক্তি। আত্মার স্বাদ...

কিছুই তো নয় ওহে, মাঝে মাঝে লালমাটি...মাঝে মাঝে নিয়নের আলো স্তম্ভিত করে রাখে আখরের আয়োজনগুলি । এদের যেকোনও নামে ডাকা যেতে পারে । আজ না হয় ডাকলে মহুল...মহুল...

ছাপা আর ওয়েবের মাঝে ক্লিক বসে আছে। আঙুলে ছোঁয়াও তুমি কবিতার ঘ্রাণ...