একক কবিতা সন্ধ্যা ।। অঙ্কন

ankan

অঙ্কন-এর এক গুচ্ছ কবিতা  

 

 

স্থি র চি ত্র

অবসাদে মেঘের ঘরে যাই
লুকিয়ে গহন গভীর আলিঙ্গনে
দেহে সাজাই বিষণ্ণতা, ছাই
আঙুলছোঁয়া এলোরঙের ছবি, সঙ্গী মুঠোফোনে

দরজা জুড়ে আয়না অলৌকিক
কথা হারায় বিষাদের কালো ছাপে
দড়িটাও জানে সাহসের সীমা ঠিক
স্বপ্নপাখিটা ঘুমিয়ে পড়েছে স্তব্ধ হোয়াটসঅ্যাপে

বাঁচতে চেয়েই অশ্রু, অন্তরাল
চুপচাপ একা চিঠিতে চোখের জল
চিরঘুম মানে না ফেরার দেশকাল
প্রাণ জুড়ে আজো কথা বলে যায় অজস্র মিসকল

শেষটা শুধু লড়াই, একার একা
মনে নেই আজ কোন দিন বা বার
আয়নায় শুধু নিজেকে এঁকেই দেখা
শব্দ হারিয়ে অবসাদে রঙভরা, ভরছে ম্যাসেঞ্জার

 

আয়না

কথা শেষ হয়ে গেলে
আত্মঘাতী কবিতারা বিশ্বাসে স্থির
মানুষ একলা হলে
কাগজে ছড়িয়ে রাখে শব্দছাই, অক্ষর আবির

কান্না পাথর ভাঙে
খালি করে দীর্ঘশ্বাস, বুকের পাঁজর
সামান্য ভ্রমণ পথে
জীবনের যাত্রা থামে, সেখানেই শূন্যতার ঘর

গভীর শিকড় জানে
গোপন স্বাদ আর গন্ধফুলেদের কথা
কবিতা ছড়িয়ে পড়ে
আসলে তা ব্যর্থলিপি, বিফল মনের নীরবতা

 

দিনলিপি

অনভ্যাস অর্পণ হলে
খোলা দরজায় দেখি জীবনের যাবতীয় ভুল
অন্ধ যেভাবে বোঝে পৃথিবীর আলো
অন্ধকারে, লাঠি ছুঁয়ে শীর্ণ আঙুল

পথিক পথ ভুলে চুপ
হৃদয় গভীরে জমা জীবনের কতো দীর্ঘশ্বাস
তবুও মন ছুঁয়ে গন্তব্যের ঘরবাড়ি
চাঁদের গভীরে স্বপ্ন, মগ্ন বসবাস

শিল্পী কী আলো আঁকে
আঁধার কৌতূহলে রঙনকশা, জ্যামিতির ছক
আয়নায় আলেয়া সত্যি লিখে চলে
তবু ওড়ে পবিত্র রঙিন পালক

অনিশ্চিত ধ্বংসস্তূপে
শত শব্দে লিখে রাখে অনির্দিষ্ট মোহ, ঋণ
হাওয়া হয়ে দিনলিপি, কবিতার খাতা
মগ্ন আগুন ছন্দে মশাল, মলিন

 

প্রয়োজন

অস্তগামী সূর্য জানে চাঁদের বুকে তার ধার আলো
নীরব আছো বলেই অন্তরালে মৌন আনাগোনা 
কালি ফুরোলেও গভীরমন লেখে এক অনন্ত চিঠি
হাতের তালুর মতো চেনা তবু মুঠোতেই হারিয়েছে 

চেনা মানুষের মুখ অজানা স্বভাবে বিপ্রতীপে চলে 
চোখের কোনের জলে ঠোঁটে আলতো ফোটে হাসি
কালো ছড়িয়েছে দেখে চাঁদকে সামলে রাখে রাত
কতো ঘুম জমা আছে ঘরের অসহ্য ছায়ারা জানে 

না ছুঁয়েও বিভ্রম বক্ররেখার গভীরতা মাপে আলো
ঋতু পাল্টালে নিশ্চিত আঁকবে ছবি যাযাবর রঙে

 

বিপ্রতীপ

যেখানে আমার মর্জি হারিয়ে গেছে
মিথ্যে সেখানে
খোয়াব দেখায় রোজ

আগুন গুজবে হাওয়ার খবর পেয়ে
দাঙ্গা লাগায়
মেখে খায় ভুরিভোজ

মেয়ে হারিয়েছে যমুনায় জল নিয়ে
আঙটির দাগ
হারিয়েও থাকে হাতে

রক্তের স্রোত পাথরের বুকে ছড়িয়ে
জনগনমন
কারা বলে দিনেরাতে

হাহাকার মুখ ভিক্ষা চাইছে, রুটি
মিটিয়ে দিচ্ছে
রায়ট, রাতের খিদে

ধোঁয়ার গন্ধে গল্প লিখছে কারা
ক্ষমতার বলি
মন্দিরে মসজিদে

কখন কিভাবে হারিয়ে ফেলেছি হাত
তবুও ভাবনা
আকাশের বুকে দ্রোহ

মেঘেরা ক্রমশ আড়াল জড়িয়ে নিয়ে
শিকল ছেঁড়া
মুক্তধারার মোহ

 

অহনা

তোমাকে যখন দেখেছি

তার থেকে বেশী দেখি
যখন তোমার
দেখা নেই, মুখখানা কবে ভুলে গেছি

সময়ের সাথে একাএকা

পথসব পেছনে ফেলেছি
মনে হয়
শেষ নয়, চোখ মেলে অপেক্ষায় হবে দেখা

কাকে অবিশ্বাস করো মন ?

যে তোমার অচেনা, অজানা
এবং তাকে
যাকে তুমি সঠিক চিনেছো এখন

 

প্রত্নছায়া

প্রত্নলেখা পড়ে নেয়, স্থির পাথরের দুই চোখে
ছন্দের ভঙ্গিতে দেখা ভ্রমণের সুখ, প্রতিটি নিয়ত
চুয়াচন্দনের গন্ধ জেগে ওঠা ভ্রমজ আলোকে
যক্ষিণী আবহ জুড়ে দীর্ঘ প্রতীক্ষায় ক্ষতবিক্ষত

গভীরের নদীজল, সেও বলে কান পেতে শোনো
তরী হবে? বিশুদ্ধ পারাপার কবে লিখে রাখে মন
গন্তব্য অজানা হলে বুকে স্পর্শ রেখো না কখনো
প্রবেশমন্ত্র জুড়ে এলোচুল ছড়িয়েছে অজানা দহন

অনুভব করি বিষ, বাঁশিসুরে আকর্ষক তীব্র আহ্বান
ছায়া জানে, দূরে গেলে গল্পছোঁয়া ফুলে মনের উদ্যান

 

বিচিত্রা

কথা হলো, কথা রাখা কিছুই হলো না
পার হই, পরপারে যেতে ধ্যান লাগে
ভাসিয়েছি দেহমন, কোথাও হারাবো
স্রোত এসে নিয়ে যায়, নিতে চায় তীব্র সোহাগে

আবিল এ দেহে আবির হাওয়ার মতো
দুঃখ মোচনের রঙে ভেঙেছে দুয়ার
চোখের ছায়ায় দেখি জমে আছে সাড়া
কোথাও তো শুরু হয়, শেষ কবে হবে পারাপার

নিজেকে প্রস্তুত রাখি আড়াল সরিয়ে
আকার গড়েছি মনে ছবিটির মতো
আলো জানে ছায়াটিও পাখিদের ডাকে
স্পর্শ করেছে ত্যাগ, মোহ ত্যাগে হয়তো বিব্রত

আশ্চর্য এই জেগে থাকা অনন্ত সময়
অপেক্ষা মগ্ন করে অসামান্য বিরতি
এভাবে সিক্ত হলে নিরাকার দেহ ভাঙে
গড়িয়েছে রঙ, জলরঙে অপ্রস্তুত সাবলীল গতি

 

জনান্তিক

ভ্রম না ভ্রমর
উতলা হয় বুকের নিঝুম গভীরতায়
চিন্তার চিৎকার নেই, চিহ্ন পড়ে থাকে

নিবিষ্ট ভ্রমণে কে কবে ডেকেছে আমাকে

আলো ও আলোচনা
স্বচ্ছ বলে না মন, মনগড়া ছায়া হয়
অভিমান, আলোড়নে লিখে রাখে কথা

প্রত্যাশা নেই তবু ক্লান্তি, অপেক্ষা অযথা

প্রেম বা প্রেরণা
অন্ধ হলেই সব সমাধান, আগাগোড়া
বলা ও শোনার প্রদাহে, পতন অভ্যাসে

মুখর ও মূর্খতা, জলরঙে ছবি অনায়াসে

 

পরাগত

স্নিগ্ধ আলো হলে
ছুঁয়ে দেখবার ছলে, হারিয়ে খুঁজি বারবার

অন্ধকারে চিনে নিই চাঁদের আড়ালে
কোনো রঙ নেই, ছবি শুধু নিজেকেই জ্বালে

জীবন জন্মান্তর
প্রতীক্ষার ঘর, প্রত্যাশার প্রবেশমন্ত্রে পরপার

প্রদীপ মৃদু জ্বলে, সম্ভাবনা উদাসীন
ঠিকানার গভীরে, কেউ প্রাপক লিখেছে মসৃণ

তুমি বলো, তবে
নেই সেই বাস্তবে, উপেক্ষা করো আয়ু তার

উষ্ণতা বাড়ার মতো সঙ্গলাভ শ্রেয়
ডুবে গেলে ঠোঁটে, পথ হারানোর এটাই পাথেয়

মহুল ওয়েব প্রকাশিত বিভিন্ন সংখ্যা



করোনা Diary



আমাদের কথা

আমাদের শরীরে লেপটে আছে আদিগন্ত কবিতা কলঙ্ক । অনেকটা প্রেমের মতো । কাঁপতে কাঁপতে একদিন সে প্রেরণা হয়ে যায়। রহস্যময় আমাদের অক্ষর ঐতিহ্য। নির্মাণেই তার মুক্তি। আত্মার স্বাদ...

কিছুই তো নয় ওহে, মাঝে মাঝে লালমাটি...মাঝে মাঝে নিয়নের আলো স্তম্ভিত করে রাখে আখরের আয়োজনগুলি । এদের যেকোনও নামে ডাকা যেতে পারে । আজ না হয় ডাকলে মহুল...মহুল...

ছাপা আর ওয়েবের মাঝে ক্লিক বসে আছে। আঙুলে ছোঁয়াও তুমি কবিতার ঘ্রাণ...