চাকলতোড়ের ছাতা পরব ।। ড. সুভাষ রায়

 

পুরুলিয়ার অতি পরিচিত একটি টাঁইড় ঝুমুরে আজও শুনতে পাওয়া যায়–
‘বরাবাজারের ইদ্ আর  চাকলতোড়ের  ছাতা রে মেলা দেখিতে লোক চলে কাতার কাতারে।।’ তাছাড়া একটি প্রচলিত প্রবাদে শোনা যায়–

‘জয়পুরের রাস পূর্ণিমা
বরাবাজারের ইদ্ রে
কাশীপুরের দুগ্গাপূজা
চাকলতোড়ের ছাতা রে।'

সাধারণতঃ ভাদ্র মাসের সংক্রান্তিতে অনুষ্ঠিত হয় চাকলতোড়ের ছাতা পরব। পুরুলিয়া টাউন থেকে বাস ধরে চাকলতোড় যাওয়া যায়। দূরত্ব প্রায় ১০ কিমি। আবার নিকটবর্তী টামনা স্টেশনে নেমেও পায়ে হেঁটে যাওয়া যায়। ছাতা পরব বা ছাতা মেলা মূলতঃ একদিনের তবে মানুষের এই মেলায় যাওয়ার আকাঙ্ক্ষা ৩৬৫ দিনের। পুরুলিয়া বাদেও মেদিনীপুর, বাঁকুড়া, রাঁচি, হাজারিবাগ, চাষ, বোকারো, সিংভূম, টাটা, জামশেদপুর থেকে হাজার হাজার লোক এসে জড়ো হয় এদিন মেলা প্রাঙ্গণে।

আগত মানুষদের ৯০ শতাংশই সাঁওতাল এবং পুরুষের সংখ্যাই বেশি। তুলনায় মেয়েদের সংখ্যা কম। শত শত গাড়িতে ভরে যায় স্থানীয় মেলা প্রাঙ্গণ। কোন কোন আদিবাসীরা গোটা পরিবার নিয়ে দু-তিনদিন আগেই এসে হাজির হয় মেলায়। তাঁবু খাটিয়ে সংসার গড়ে তোলে। তারা ছোট ছোট দলে বিভক্ত হয়ে ছেলেমেয়ে মিলিতভাবে হাত ধরাধরি করে নাচে গানে মেতে ওঠে। ধামসা মাদলের বোলে তারা সম্মিলিতভাবে গেয়ে ওঠে–

‘মিৎপন বার গণ্ডা পুয়সা মাইরী এমাঃ মে
তুকুর মাইরী চিনি লাডু দ
চাকুলতাড়ি ছাতা মাইরী...’

লোকমুখে শোনা যায় যে হারিয়ে যাওয়া মেয়েদের নাকি এই মেলায় খুঁজে পাওয়া যায়। আবার এই মেলাতে সাঁওতাল ছেলেমেয়েরা ফুল পাতায় অর্থাৎ বন্ধুত্ব তৈরী করে। আদিবাসীরা মনে করে এই মেলায় বন্ধুত্ব পাতানো হলে সম্পর্ক কোনদিন ছিন্ন হবে না, অটুট থাকবে চিরকাল।

চাকলতোড়ের ছাতা মেলাকে কেন্দ্র করে নানান কাহিনী ও কিংবদন্তি প্রচলিত আছে জনসমাজে। স্বাধীনতা আন্দোলনে পশ্চিমবঙ্গের অন্যান্য জেলার মধ্যে পুরুলিয়া জেলারও একটি বিশেষ ভূমিকা আছে। পঞ্চকোটরাজ নীলমণি সিংদেও স্বাধীনতা আন্দোলনে বিশেষ ভূমিকা নিয়েছিলেন। তাঁরই নেতৃত্বে ১৮৫৭ সালের ৫ই আগস্ট পুরুলিয়ার মানুষ বিদ্রোহে ফেটে পড়ে। ট্রেজারি থেকে ১ লক্ষেরও বেশি টাকা লুট হয়। দু-তিনশো কয়েদিকে জেল থেকে মুক্ত করে দেওয়া হয়। ভয়ে ভীত সন্ত্রস্ত হয়ে ইংরেজরা পুরুলিয়া থেকে পালিয়ে গিয়ে রানীগঞ্জে আশ্রয় নেয়। দীর্ঘ ২৩ দিন পুরুলিয়া জেলা ব্রিটিশ শাসন থেকে মুক্ত হয়।

ঠিক একই সময়ে সাঁওতালরাও ইংরেজ সরকারের বিরুদ্ধে বিদ্রোহ ঘোষণা করে। এই সাঁওতাল শক্তিকে কাজে লাগান নীলমণি সিংদেও। সকলেই সম্মিলিতভাবে ব্রিটিশ বিরোধীতায় নামে। প্রচলিত কথায় শোনা যায়, ভাদ্র মাসের এই সংক্রান্তির দিনটিতে পঞ্চকোটরাজ এর নির্দেশে হাজার হাজার সাঁওতাল-আবালবৃদ্ধবনিতা সকলেই সমবেত হন এই চাকলতোড়ের বিস্তীর্ণ মাঠে এবং তাঁরা সকলেই শপথ নেন সমবেত আন্দোলনে নামার। এবং এই দিনটিতে সমস্ত আদিবাসী প্রতিজ্ঞাবদ্ধ হন তাঁরা প্রতি বৎসর এই দিনটিতে যথাসময়েই মিলিত হবেন অন্তত একদিনের জন্যও। সমস্ত সাঁওতাল সমাজ রাজার সঙ্গে এদিন মিলিত হবে। এই দিনটিকে স্মরণীয় করে রাখতে ১৮৫৭ সাল থেকে সমানভাবে এই মেলা অনুষ্ঠিত হয়ে আসছে।

সাঁওতাল সমাজে আজও একটা সংস্কার আছে তাঁদের মেয়েদের জীবনে, অন্তত একবার এই মেলায় যেতে হবে। এর পেছনে কী কারণ আছে জানা নেই, তবে ঘরের চার দেওয়ালের মধ্যে আবদ্ধ থেকে এই মেলায় মেয়েরা যখন এসে নাচে গানে অংশ নেয়। তখন তার মনের উদারতা বাড়ে। আদিবাসী সংস্কৃতি সম্পর্কে সে হয়ে ওঠে সচেতন। মেলা গবেষক স্বর্গীয় সিরাজুল হক এর মতেঃ 

‘এর আরও একটা অন্তর্নিহিত রহস্য আছে বলে অনুমান করা যায়। পূর্বপুরুষদের দেওয়া বৎসরান্তে মিলনের প্রতিশ্রুতি যেন বজায় থাকে। জনসমাগম ক্রমশ কম হয়ে যেন মেলার অস্তিত্ব হারিয়ে না যায়। সাঁওতাল গণসংগ্রামের ইতিহাস যেন মাটি চাপা না পড়ে। তাই এটাকে লৌকিকতা নিয়মের আওতায় আনা হয়েছে।’

আদিবাসীদের প্রচলিত লোকগানেও এই মেলায় মেয়েদের যাওয়ার তাৎপর্য তুলে ধরা হয়েছে। ‘...চাকুত-তাড়ি  ছাতা মাইনা
কোসজুড়ি পাতা
দে সাইনা জেলার চালা: থান।
দিন বাংলা: বছর রুওয়াত
ঘুরে ফিরে রুওয়াড়
নওয়া হড়ম না ওয়া জিউরী য়াং রুওয়াড়া...’

অর্থাৎ,  চল বোন চাটলতোড়ের ছাতা আর কোস জুড়ির পাতা নাচ দেখতে যাব। দিন চলে যায় বছর আসে কিন্তু এই দেহ এই জীবন আর ফিরে আসবে না।
অন্য আরেকটি গানে বলা হয়েছে এই জীবন দু দিনের। এখনই আছে এখনই নেই তাই জীবনটাকে হেলায় শেষ করা ঠিক নয়। যতক্ষণ জীবন আছে নাচে গানে আনন্দে মেতে থাক–

‘নওয়া জীবন রাসি জীবন
নওয়া জীবন আধ বাম ঞাম–আঁ- আঁ
........
তুমদা দুহলাও
বানাম রাহলাও,
ধমসা হুঁদড়াও,
না ওয়া জীবন আধ বাম ঞাম–আঁ-আঁ...’

অর্থাৎ ‘এই সুন্দর মানবজীবন আর কোনদিন ফিরে পাবে না। অতএব প্রতিটি মুহূর্তকে নাচে গানে ভরিয়ে তোলো। মাদল ধামসা সুমধুর সুরে বাজাও। বাজাও বাঁশি। এইসব রঙিন দিন আর ফিরে পাবে না।’
তাই এই মেলা গানের মেলা–নাচের মেলা।এখানে কী নাচ নেই ? পাতা, দং, লাগড়ে, সহরাই, ডাহার আরো কত কী। সারা রাত ধরে হ্যাজাকের আলোয় কোথাও বা লন্ঠনের আলোয়, কোথাও জেনারেটরের আলোয়, কোথাও বা চাঁদের আলোয় চলতে থাকে নাচ-গানের আসর। অজস্র ছোট ছোট নাচ আর গানের আসর বসে যায় মেলা প্রাঙ্গণে। পুরুষেরা নাচের সাজে সজ্জিত হয়ে–ধুতি, মাথায় লাল গামছা ময়ূরের পাখা। মেয়েদের লাল পেড়ে সাদা শাড়ি। তবে সকলেই যে নাচের সাজে সজ্জিত হয়ে নাচে অংশ নেয় তা নয় যার যে পরিধান থাকে তাই পরেই নাচে অংশ নেয়। ধামসা, মাদলের বোল আর বাঁশির মোহময় আহ্বানে না নেচে থাকা যায় না। মন আপনি টেনে নিয়ে যায় নাচের আসরে। মহুয়া পান এই মেলার আর এক বৈশিষ্ট্য। মহুল থেকে তৈরি মদকে বলে মহুয়া স্থানীয় ভাষায় মহুল্যা। এই মহুল্যা পান করে সবাই নেশায় বিভোর। স্থানীয় গ্রামগুলি  থেকে অনেকেই আসে মহুল্যা বিক্রি করতে। এই মেলায় ছেলে-বুড়ো সকলেই মহুল্যা পান করে। তবে তার ফলে কোনো বিশৃঙ্খল অবস্থার সৃষ্টি হয় না। নেশার ঘোরে মাদলের ধিতাং বোলে সবাই নাচতে থাকে আপন আপন খেয়ালে।

মেলাকে কেন্দ্র করে সারি সারি দোকান বসে যায় মেলা চত্বরে। চপ, পাড়ি, মুড়ি, ডিম সিদ্ধ, লুচি-তরকারি, চা, নানান মিষ্টান্ন দ্রব্যের দোকান, ছোট ছেলেমেয়েদের খেলনা, জেলেদের মাছ ধরার জাল, চাষের নানান যন্ত্রপাতি, লোহার হাঁড়ি, কড়াই, খুন্তি,বঁটি প্রভৃতিরও বিশাল বিশাল দোকান বসে। তবে সব থেকে বেশি চোখে পড়ে মাদল, ধামসা। এই মেলা থেকেই আদিবাসীরা মাদল ক্রয় করেন। শতাধিক মাদল বিক্রেতাদের টুং টাং আওয়াজে মেলা মুখরিত হয়ে ওঠে। আদিবাসীদের মূলতঃ সাঁওতালদের সারা বছরে যতগুলি ধামসা মাদলের প্রয়োজন হয় তাঁরা এই মেলা থেকেই তা ক্রয় করেন। মেলায় ঘুরতে ঘুরতে হঠাৎ একটা গান আমার কানে এল–

“দেন দাদা পুইসা
চাকুলগাড়ি ছাতা ঞে ঞে চালা: আ
জয়ী লহিগে যে দাদা
ধমসা লিব রে ধমসা লিব।”

একটি সাঁওতালি মেয়ে এসেছে মেলা দেখতে। বাপের বাড়ি থেকে চাকলতোড়ের মেলা সামনেই। তাই মেলা দেখার ভান করে বাপের বাড়িতে থেকে গেছে দীর্ঘদিন। মেলা ঘুরতে ঘুরতে হঠাৎ তার মনে পড়ছে স্বামীর কথা। সে ভাবতে থাকে স্বামীর জন্য মেলা থেকে কী নিয়ে যাবে? হঠাৎই তার মনে পড়ে বিরাট বিরাট ধামসা মেলায় বিক্রি হচ্ছে। সেও তখন দাদার কাছে পয়সা খোঁজে। এই হলো গানের বিষয়বস্তু।

২০০৫ সালে মেলায় ঘুরতে ঘুরতে সাক্ষাৎ হয়েছিল চাকলতোড়ের রাজপরিবারের সন্তান হরিহরলাল সিংদেও মহাশয়ের সঙ্গে। তাঁর বয়স তখন ৮৫ বৎসর। দেখলাম এই বৃদ্ধ বয়সেও তিনি কী সুন্দরভাবে মেলা পরিচালনা করছেন। তাঁর কাছ থেকেই জানতে পেরেছিলাম এই মেলার বয়স প্রায় ২৫০ বৎসর। বর্তমানে যে জায়গাটিতে মেলা অনুষ্ঠিত হচ্ছে সেই স্থানটির নাম ছাতা মাঠ। ১৭৪৩ সালে বর্গীদের নেতা ভাস্কর পন্ডিত এখানে ছাউনী ফেলেছিলেন। অতীতে এই মাঠটি ছিল বিশাল আয়তনের। বর্তমানে জমির মালিকরা নিজে নিজে অংশ বিক্রয় আরম্ভ করেছেন। তার ফলে মেলার স্থান কমে গেছে। এইভাবে কমতে কমতে ভবিষ্যতে হয়তো মেলার জন্য আর জায়গাই থাকবে না। এরকম সংশয় প্রকাশ করলেন হরিহরবাবু। তিনি জানালেন, এখানে অতীতে লক্ষাধিক মানুষের সমাগম হতো। পুরুলিয়া থেকে চাকলতোড় অবধি থাকত পথচলতি মানুষের ভিড়। বর্তমানে কিছুটা কমেছে।

যে ছাতাটি এখানে উত্তোলন করা হয় সেটির উচ্চতা ২৫ থেকে ৩০ ফুট। শালের খুঁটির উপরে বাঁধা ও সাদা রঙের কাপড় দিয়ে তৈরি হয় ছাতা।
অতীতে পালকিতে চড়ে রাজা রাজপ্রাসাদ থেকে মেলায় আসতেন ছাতা উত্তোলন করতে। বর্তমানে আর পালকির ব্যবহার নেই। যুগের সাথে তাল মিলিয়ে রাজা আসেন মারুতি বা টাটা সুমোতে চেপে। অতীতে ছাতা হতো অনেক বড় মাপের। কাপড় লাগত ১৪ গজের মতো। বর্তমানে পরিসর অনেক কমেছে তাই কম লাগে। ছাতা মেশিনে সেলাই করা হয়। আগে প্রতিবছর নতুন শালের খুঁটি ব্যবহার করা হতো, বর্তমানে তা আর হয়ে ওঠে না। এমনিতে কাঠের দাম আকাশছোঁয়া তারপরে শালকাঠ তো দুষ্প্রাপ্য। বর্তমানে পুরনো কাঠকেই সযত্নে রাখা হয় পরের বছরের জন্য।

আগে সাঁওতাল বাদে অন্য জাতের মানুষদের এই মেলায় দেখা যেত না। চাকলতোড় গ্রামের পূর্বে গুঁসাইডি আর পশ্চিমপ্রান্তের কাড়ামারা দুই গ্রাম থেকে মাঝিরা আসত ছাতা তোলার সময়। তারা আসত লেংটি পরে। গলায় ঝুলত গর্গটের মালা। মেয়েদের হাঁটু পর্যন্ত লালপেড়ে কাপড়। কোন কোন বছর রাতের বেলায় মারামারি লেগে যেত মাঝিদের মধ্যে। হয়তো অন্য সম্প্রদায়কে তারা দেখতে পারত না। বর্তমানে তা লোপ পেয়েছে। অতীতে ছাতা উত্তোলনের সময় মাঝিরা জোরে জোরে চিৎকার করে বলত– ‘পেহেল–পেহেল’। বর্তমানে এ শব্দ আর শোনা যায় না। বর্তমানে ছাতা উত্তোলনের সময় একটি নিয়ম প্রচলিত আছে। রাজার ছাতা উত্তোলনের সময় কোনোভাবেই অন্য কারো ছাতা উত্তোলন করা যাবে না। যত জল ঝড় হোক না কেন। ঐ সময়ে কেউ ছাতা মেললে তার ছাতাকে স্থানীয় মানুষজন ইট, পাথর মেরে ভেঙে নষ্ট করে ফেলবে।

রাজপরিবারের আন্তরিকতা আর দূর-দূরান্ত থেকে আগত সাঁওতালদের সম্মিলিত প্রচেষ্টাতেই মেলা দীর্ঘদিন ধরে চলে আসছে। এই মেলায় কাউকে আমন্ত্রণ জানানো হয় না। আসার জন্য অনুরোধ করতে হয় না, নাচ-গানের দলগুলিকে আগাম বায়না ধরাতে হয় না, সবাই আসে অন্তরের টানে। এই মেলা স্বতঃস্ফূর্ত মেলা‌। তাই মেঘ থেকে অবিরল বৃষ্টি নামতে থাকুক, কাঁসাই নদীতে বন্যা আসুক, শত দুঃখে জীবন পুড়ে যাক কিন্তু মেলায় তাদের আসতেই হবে–
‘চল রে চল দ্যেখতে যাব
চাকলতোড়ের ছাতা,
সেনেক, কাঁসাই নদীতে বান পড়েছে
পাইরাব সকলে’।

একক কবিতা সন্ধ্যা



মহুল ওয়েব প্রকাশিত বিভিন্ন সংখ্যা



করোনা Diary



আমাদের কথা

আমাদের শরীরে লেপটে আছে আদিগন্ত কবিতা কলঙ্ক । অনেকটা প্রেমের মতো । কাঁপতে কাঁপতে একদিন সে প্রেরণা হয়ে যায়। রহস্যময় আমাদের অক্ষর ঐতিহ্য। নির্মাণেই তার মুক্তি। আত্মার স্বাদ...

কিছুই তো নয় ওহে, মাঝে মাঝে লালমাটি...মাঝে মাঝে নিয়নের আলো স্তম্ভিত করে রাখে আখরের আয়োজনগুলি । এদের যেকোনও নামে ডাকা যেতে পারে । আজ না হয় ডাকলে মহুল...মহুল...

ছাপা আর ওয়েবের মাঝে ক্লিক বসে আছে। আঙুলে ছোঁয়াও তুমি কবিতার ঘ্রাণ...