বিজ্ঞাপন



ekguccho kobita deepsekhar pracchad mohool in

একক কবিতা সন্ধ্যা ।। দীপ শেখর চক্রবর্তী

 ekguccha kobita deepsekhar mohool in

 
 
আয়ু
 
এই সামান্য আয়ুর ভেতর ভালোবাসা গভীর অসুখের মতো লাগে
পৃথিবী, আকাশ, মায়াবিন্দু থেকে ঝরে পড়ে চেতনার সমুদ্র স্বপ্নের নীল, এই দৃশ্যের ভেতরে
রাতের রুপোলি কাক উড়ে যায়, সে জানে
এই রাত্রির প্রসারিত হাতের ভেতরে ধরা থাকে প্রিয়তম নারীদের রূপ
তবু তো নিষ্ঠুর ব্যথা লাগে, একি জীবিতের শেষতম সুখের মতো?
যা কিছু যত অস্পষ্ট দেখি তত কেন বুকের ভেতরে সেই প্রাচীন লোভের খনি জ্বলে ওঠে
সমস্ত জীবন এলোমেলো, শুধু গুছিয়ে রেখেছি বিরহের বিষ, এসো প্রিয়তমা, পান করো
এসো সমস্ত জীবন তৃষ্ণা নিয়ে, এইতো পূর্ণতা, কতটাই বা যোগ্যতার আসন পেতেছি? তুমি দেখো
নাও এই মুঠো খোলো
অহেতুক কেন এত ভালোবাসা চাও সামান্য আয়ুর ভেতরে?
 
 
অলৌকিক
 
এই অলৌকিক দুপুরের মাঝে জীবনকে কখনও ছুঁতে পারিনা আমি
খালি নিরন্তর দৃশ্য লিখে রাখা, শালিকের দল, পাতার কাঁপনে
বয়ে চলে বিচ্ছেদ দৃশ্যসমূহ-এসকল কথা মনে লেগে থাকে
ভিক্ষুক যে পথে সামান্য ভিক্ষে পায় মনে রাখে
সেই ভিক্ষার পথটুকু। তবু
নিজস্ব আর্তনাদ আমি ডুবিয়ে রেখেছি হৃদয়ের অতলে
ধীর পায়ে, শব্দহীনভাবে এগিয়ে না গেলে দেখেছি
চিরকাল জীবনের শাদা বক হঠাৎ উড়ে যায়
তবু প্রখরতা, তোমাকে কী ভীষণ বিশ্বাস করে চলি
জানি, তুমি যতটা প্রখর তত বেশি ছায়ার ভেতর এসে বসে
নিঃশব্দ জীবনের মায়া
ভালোবাসার সাথে একই দড়ির খেলাতে নেমেছিলাম আমি
দর্শক প্রবল, অথচ আমার হাত থেকে ভারসাম্যের চেনা লাঠি নীচে পড়ে গেছে
দর্শকের চোখেও সেই পরিচিত বিস্ময় আর নেই, তবু খেলা চলে
আমাকে দড়ির খেলাতে একা রেখে
অলৌকিক দুপুরের মাঝে কোথাও হারিয়ে গিয়েছে
ভালোবাসার সকল চিহ্নসমূহ।
 
 
 ঝিঁঝিঁপোকাদের গান
 
 স্তব্ধতার ভেতরে স্তব্ধতা -ঝিঁঝিপোকাদের ডাক আরও সুগভীর করে তোলে
 
যতই প্রসারিত করি আমার অতিক্রম ইচ্ছা
ততই স্মৃতিগাছ কেন ছায়া ফেলে রাখে সমস্ত শরীরে আমার। রাত্রির সুখ প্রবাহিত হয়-
এই সামান্য শরীর
কোন সুগভীর নক্ষত্রজগত- তার মহাকাশ না পাওয়া
জীবনের সমস্তকিছুর সমষ্টির থেকে চিরকাল জীবনকে সামান্য বড় লাগে
তাই বিষাদে নষ্ট হই না, অপমানে-অবহেলায়-আঘাতে নিজেকে পুনরায় তুলে ধরি
আসলে সমস্ত পাওয়ার মোড়কে চিরকাল ভালো লাগে না পাওয়ার সেই গূঢ় মিষ্টতা
হাওয়ার ঝিঁঝিঁরা চিরকাল নিশ্চিত করে
মানুষের সাথে রাত্রির এই সুগভীর বন্ধন
শৈশবে জেনেছিলাম স্রোতের বিপরীত দিকে গেলে, একদিন নিজেকে অতিক্রম করে যাবো
এই লোভ থেকে ধীর পায়ে নেমে আসি, কারণ জেনেছি এতদিনে
এতসব অতিক্রম ইচ্ছা গভীর অসুখের পথ
যত মুঠো শক্ত করে রাখি তত জীবনের রঙিন জলের বক ভেঙে যায়
তাই,রাত্রির ঝিঁঝিঁপোকাদের এই অলৌকিক দেবতার প্রতি গান
নিস্তব্ধ হৃদয়ের মাঝে আমি গ্রহণ করেছি।
 
 
জানালা
 
 জানালাও আমার ভেতর থেকে দেখে
 
দূর থেকে ভেসে আসা সুখচিহ্নমাত্র এই জীবন
ঝিরিঝিরি পাতার কাঁপনে লিখে রাখে
সহজ নয়, ব্যথাহীন যেকোনো ছেড়ে চলে যাওয়া
ফেলে আসা বয়সের স্মৃতি যেন নিজের ভেতরে
পাথর সরিয়ে নিঃশব্দে বাঁচিয়েছে- বিষফল ধরে, সেই গাছ
চতুর্দিকে যন্ত্রণা দেখি, শূন্যতা, অসামান্য জীবনের মাঝে
ক্ষতবিক্ষত প্রাণের আকুতি
তবু এ সকলের মাঝে সামান্য বিষফল
সুগভীর মৌনতা শিখিয়েছে আমাকে
আমি কি বুঝিনা? গভীর ক্ষতের বেদনা? এ কি সুখ?
বাতাসের নিষ্ঠুরতা আয়ত্ত্ব করেছি আমি, উদাসীন পথিকের মতো
সে হেঁটে যায়, তবু পথমাঝে একটি সামান্য বুক পেলে
চিরকাল বুকের ভেতরে রাখি
চোখের আড়াল থেকে যে ভালোবাসা চায়, সে জানে
কিছু কিছু পথের বাঁধা, বাঁধা নয়
নীরবে জানালার কপাট খুলে দেওয়া।
 
 
 
খেলা
 
আমরা সকলে মিলে একটা লুকোচুরি খেলতে চেয়েছিলাম
আমাদের মধ্যে কেউ মূল্যহীন অভিমানগুলো নিয়ে লুকিয়েছিল চিলেকোঠা র ঘরটায়
কেউ আবার চৈত্রের পূর্ণিমার দিন বনের ভেতর গিয়ে বহুদূর গিয়ে কোথায় লুকোলো, আর ফেরেনি
আমাদের কেউ কেউ বলেছিল এই প্রকাশ্যে থাকাই এক লুকোনো
আমাদের মধ্যেই কেউ সাঁতার না জেনে সমুদ্রে লুকোতে গিয়ে খুঁজে  নীল পাথরের গুপ্তধন পেলো
কেউ আবার পাহাড়ে লুকোতে গিয়ে তীব্র চিৎকার করে পেলো না কোন প্রতিধ্বনি
আমাদের মধ্যে কেউ কেউ ঠিক পেছনে দাঁড়িয়েছিল যাতে সাথে সাথেই তাদের বুদ্ধির পরিচয় পেয়ে আমাদের তাক লেগে যায়
কেউ কেউ একটা লুকোনোর জায়গা কখনও পায়নি, পথের পর পথ যেতে যেতে একদিন বুঝেছিল খেলাটাই তার ভুল হয়ে গেছে
আমাদের মধ্যে আমি লুকোনোর একটা জায়গা পেয়েছিলাম ভাগ্য ক্রমে অন্ধকারে, সেই ডেকে নিলে  তোমার পাশেতে জানি সামান্যই জায়গা ছিল
খেলা শেষ হয়ে আসে, বসন্তের হাওয়া জানিয়েছে খেলা শেষ হবে দ্রুত, সবাই একে একে ধরা দিয়ে বাইরে বেরিয়ে এসেছে
মৃত্যু ডাক দিয়ে দিকে দিকে ফেরে আমাদের নাম ধরে
কে আগে বেরিয়ে আসবো আগে বলো?
আমি না তুমি?
খেলা চলে
বন্ধুরা এখনও নানা ইঙ্গিতে আমাদের সতর্ক করেই চলেছে...
 
 
 
 
রঙ
 
শৈশবে কে হাতের ওপর রেখে গেছিল একটা নীল রঙের ঘষা কাঁচ, বলেছিল-নাও, পৃথিবী দেখো
শুধুই কি পৃথিবী? কত যে দেখলাম সেই দিয়ে
অপমান আঘাত অবহেলা
এমনকি যে বললো কেন এলে এই অবেলায়, তাকেও ওই কাঁচ দিয়ে দেখেছি
কিছুই নয়, নীল রঙের একটা ঘষা কাঁচ
হাত থেকে ফেলে দিলেও ঠিক ফিরে আসে
বয়স বাড়ছে এদিকে
এখন কিছু ধূসরতা দেখা ভালো
সবকিছু স্পষ্ট করে দেখাও প্রয়োজন
তবু একটা নীল রঙের কাঁচ শুধু চোখের সামনে ধরা নয়, মাঝেমাঝে হাত কেটে নিই
জিজ্ঞেস করি নিজেকে - তোমার রক্ত কেন এত লাল ?
 
 
 
হৃদয়পুর
 
একে একে বন্ধুরা চলে যায়
এই দুপুর যেন সেই বিচ্ছেদ চিতা, শেষ আগুন আমি মুখে মেখে নিলাম
বন্ধু বন্ধু বন্ধু
ভাই ভাই ভাই
পিতা পিতা পিতা
নিরবিচ্ছিন্ন দুপুররজ্জু, আহ্ আমার সমগ্র জীবন জুড়ে শুধু ছাই
এই অনন্ত শ্রাবণ, যেন কোন প্রেতলোক থেকে আসা হাহাকার
শেষ আগুন আমি মুখে মেখে নিলাম
দুপুর। শ্রাবণ। হাহাকার
এই নিস্তব্ধ পৃথিবীর যজ্ঞের কাঠ, হে হৃদয়পুর।
 
 
তথাগত
 
শ্রাবণের এই বিকেল তার মলিন আকাশে রেখে গেছে কার বেদনার মুখ
আলো নেভে, মনে হয় কতদিন কারও শ্যামল বুকের ছায়ায় রেখে আসিনি এই জলের শরীর
কার স্বপ্নের ভেতর আমি দুমুঠো ভিক্ষা পাবো বলে বসে আছি সমাজ সংসার ছেড়ে?
পিঁপড়েরা সন্ধ্যা বয়ে নিয়ে আসে এই ধূসরলতার গ্রামে, সারিবদ্ধ হয়েছে তারা কোন অলৌকিক গানের ভেতরে।
স্তব্ধতা দেখি লক্ষ বছর ধরে বাগানের ঘাসে শুয়ে থাকা ভিক্ষুকের দুটি চোখে, জানি একদিন এই পৃথিবীর পরম সত্যকে পেয়েছিল সে
আঙুল কাঁপে তার, হাওয়ার ভেতর সে লিখে রাখে জীবনের প্রকৃত মগ্নতা
মনে হয় এই ভরা শ্রাবণের মাঝে কার চোখের নীরবতা ফেলে রেখে এসেছিলাম অবহেলার ভেতরে, তাকে খুঁজি
মনে হয় কতদিন কারো বুকের ছায়ার নীচে লিখে আসিনি আলোর সমর্পণ, যেন শ্রাবণের নি:সাড় তথাগত।
 
 
বৃক্ষের শ্রেষ্ঠত্ব বলতে বুঝি
 
বৃক্ষের শ্রেষ্ঠত্ব বলতে আমি বুঝি
ব্যথার প্রকাশ নির্বাচন। প্রতিটি দ্বিধার কাছে বৃক্ষ
মাথানত করে বসে থাকে হাত পেতে
ফুল বা কাঁটার কথা প্রয়োজনীয় নয়, বৃক্ষ শুধু শিকড়ের কাছে শেখে
শিকড় আমাদের ক্ষমা করে, কান্না শেখায়
প্রতিবার কান্না মানে নিজেকে আরেকটু বাঁচার সুযোগ করে দেওয়া
প্রতিবার ফুল মানে আরেকটি প্রতিহিংসার অঙকুরেই বিনাশ
তবে জীবন শুধু ফুল ফোটানোর কথা নয় বরং কাঁটাগুলো নরম করে রাখা
জীবন শুধু বৃক্ষদের কথা নয় বরং ভেতরে ভেতরে এক সমুদ্র বয়ে চলা
ভেতরে সমুদ্রের কোলাহল অথচ শঙ্খের মতো আমি বৃক্ষহীন, বালির শরীরে জেগে থাকি 
অপেক্ষা এই
প্রেম এসে শূন্য হৃদয়ে তিনবার ফুঁ দিলে
সেই ধ্বনি দিকে দিকে ছড়িয়ে সমুদ্রের তটরেখা জুড়ে বৃক্ষ হয়ে যাবে।
 
 
অন্তিম টান
 
ঘুড়ি ও লাটাইয়ের মাঝে আশ্চর্য ফাঁকটুকু হাতের তালুতে রেখে আমরা জন্ম বাজি ধরেছি
যেন ভাগ্যরেখা, ঘন মৃত্যুবনে খেলা করে যুবতী ফুলের মতো
তার শিখা আগুন আগুন বলে ছুটে যায় নদীর ক্ষমাতে
জল নেই তাই শিখা শিকড় ছড়িয়েছে নিন্দায়
অথচ নদীটিই জানে দুটি প্রতারণার মাঝে জলছাপ পায়ে যে হেঁটে গেছে তার স্নান হয়নি কখনোই
নদীটিকে সে বহন করেছে
তার ঘরে টিমটিম করে জ্বলে দূর থেকে শিশুদের খেলাশব্দ শোনার মতো সুখ
সেসব পাই নি আমি
অন্ধকার জলের ভেতর ঘুড়ি ও লাটাইয়ের মাঝের ফাঁকটুকু নিয়ে আমরা বড়শিতে মুখে গেঁথে অন্তিম টানের অপেক্ষায় বসে আছি।
 
 
জানা
 
ঘরের আলো নিভিয়ে দিই মাঝেমাঝে, দেখি এতটা অন্ধকারের ভেতরে একটা ফাটল রয়ে গেলো কিনা
আমার চরিত্রের ভেতর, ভয় হয়
নিজে তো জানিনি। এমন কেন যে হয়, নিজের অজ্ঞাতেই অনেকে
সাঁতার না জেনে পুকুরের শেষ ধাপে এসে দাঁড়ায়
লোকে বলে নিশি ডেকেছিল
জানি আমি, নিশি বলে কিছু নেই
যা আছে সে বিষয়ে সকলে গোপনে কথা বলে, সকলেই ভেতরে ভেতরে জানে
 
এই জানার ভেতরে সকলে গভীরভাবে একা।
 
 

একক কবিতা সন্ধ্যা



মহুল ওয়েব প্রকাশিত বিভিন্ন সংখ্যা



করোনা Diary



আমাদের কথা

আমাদের শরীরে লেপটে আছে আদিগন্ত কবিতা কলঙ্ক । অনেকটা প্রেমের মতো । কাঁপতে কাঁপতে একদিন সে প্রেরণা হয়ে যায়। রহস্যময় আমাদের অক্ষর ঐতিহ্য। নির্মাণেই তার মুক্তি। আত্মার স্বাদ...

কিছুই তো নয় ওহে, মাঝে মাঝে লালমাটি...মাঝে মাঝে নিয়নের আলো স্তম্ভিত করে রাখে আখরের আয়োজনগুলি । এদের যেকোনও নামে ডাকা যেতে পারে । আজ না হয় ডাকলে মহুল...মহুল...

ছাপা আর ওয়েবের মাঝে ক্লিক বসে আছে। আঙুলে ছোঁয়াও তুমি কবিতার ঘ্রাণ...