আজ এপ্রিলের চোদ্দ তারিখ । আমাদের অনেক আদরের বাংলা নতুন বছরের প্রথম দিন। সকালেই জেনে গেছি লক ডাউন আরো উনিশ দিন বাড়ছে। জানি এটাই হয়তো প্রয়োজন এখন , তবু নিজের বাড়ি ছেড়ে যে অনেক দূরে থাকে তার পক্ষে এই বন্দী দশার মেয়াদ আরো দীর্ঘ হচ্ছে , মেনে নেওয়া কঠিন । আমার কি বাড়ি ফেরা হবে না ? বাড়ি ফেরা কি হবে না আমার ! অবশ্য ভিন রাজ্যে আছি যখন, ফেরাটা সামনের দিনগুলোতেও মসৃণ হবে না জানি। এমনকি উড়ান যদি চালুও হয়, আর আমি মরিয়ার মতো মে মাসের শুরুতেও ফেরার চেষ্টা করি, তখনও সম্ভবত আমার ঠাঁই হবে রাজারহাট কোয়ারেন্টাইনে, সেই রকমই বলছে লোকজন। যখন এসব কল্পনা করি, আমার পুত্রটি হাসে, তোমার চিকিৎসারই তো বাকি অনেক। তা বটে, একটা ভাইরাস তো সব হিসেব গুলিয়ে রেখেছে।
ভাবা যায়! মাত্র কিছুদিনের মধ্যে সবকিছু এত ওলট পালট হয়ে গেল! এই তো জানুয়ারির শেষে না কি ফেব্রুয়ারি মাসের শুরুতে , মনে নেই ঠিক , যখন ইতিউতি শুনছি কি এক মারণঘাতী ভাইরাসে প্রচুর মৃত্যু ঘটছে , সেসময় আমি নিজেও আর এক ভাইরাসের আক্রমণে দিশেহারা । তাছাড়া যদিও মৃত্যু ব্যাপারটা খুবই মর্মান্তিক , কিন্তু সেসব হচ্ছে তো সেই উহানে। চীনারা সব যা তা খায় , হতে পারে তা থেকে, এখানে ওসব হবে টবে না । টুকটাক আলোচনা হয়, আবার সবারই এরকম আলতো গা ছাড়া একটা ভাবও । এমনকি ভার্চুয়াল জগতে যে সবকিছু নিয়েই একগাদা বিশেষজ্ঞ মতামত দিতেই থাকেন ক্রমাগত , তাদেরও খুব একটা হেলদোল দেখিনি সেসময়।
আর আমার নিজের মাথায় তখন আর অন্য কিছু ধরছে না , কিডনি নষ্ট হয়ে যাচ্ছে জেনে । যদিও গত দশ বছর ধরে এই আমার জীবন , শরীরের একটা অঙ্গ সারিয়ে তুলতে না তুলতে আর একটা চাকা বসে যায়।
তো এমন মোক্ষম মুহূর্তে কোভিড ১৯ বা করোনা ভাইরাসের কথা হালকা ভাবে কানে আসছে, আর আমি দৌড়াদৌড়ি করছি নেফ্রোলজিষ্ট , এন্ড্রোকুইনোলজিষ্ট , গাদা টেস্ট এসব নিয়ে । তারপর আরো কিছু উন্নত চিকিৎসা, আরো বিশেষজ্ঞের পরামর্শের আশায় ব্যাঙ্গালোরে চলে আসা ।
জানি না আমি যে উড়ানে এসেছি , সেই উড়ানেই করোনাময়ী দেবী ( নাকি দেব! ) ল্যান্ড করেছিলেন কিনা ব্যাঙ্গালোরের মাটিতে ! তবে হাসপাতাল ডাক্তার ইত্যাদির প্রথম পর্বেই দেখলাম বেশ একটু সতর্ক আশঙ্কার ছায়া সবার মুখে চোখে । শুনলাম সেই চিনা ভাইরাস নাকি আস্তে আস্তে ছড়িয়ে পড়ছে সারা পৃথিবীতে। ব্যাঙ্গালোরে বেশ কয়েকজন পজিটিভ এসেছে।
ঠিকঠাক গুরুত্ব না বুঝে আমরা মাতা পুত্র দু এক দিন মুখে হাতে কোন আড়াল না রেখেই ডাক্তার টেস্ট সব করেছি , তারপর মুখোশের ভেতর ঢুকে যেতে হল । চারদিকে তখন একটা আতঙ্কের ভাব , চারপাশে মুখোশের আড়ালে রোবটের মত মানুষজন । স্কুল কলেজ ঝটাপট বন্ধ হল, সব পরীক্ষা স্থগিত অনির্দিষ্টকালের জন্যে , অনেক অফিসই কর্মীদের হোম ওয়ার্ক শুরু করে দিয়েছে । শুধু আমার পুত্রের অফিসে সম্ভব নয় , তাকে তিনটে স্ক্রিনে একসঙ্গে কাজ করতে হয় । সে এই অবস্থায় আমাকে নিয়ে হাসপাতাল আর অফিসের মধ্যে ব্যালান্স করে ছোটাছুটি করে খুব ঝুঁকি নিয়েই । আর এসব নিয়ে চূড়ান্ত দুর্ভাবনার মধ্যেই আমাকে নতুন ট্রিটমেন্ট নিতে যেতে হয় হাসপাতালে , সেখানে বম্ব ডিসপোজাল স্কোয়াডের মতো নিজেদের নিশ্ছিদ্র আবরণের মধ্যে রেখে রক্ষীবাহিনী তৎপর, মুখোশধারী হতভাগ্য রুগীদের নানা রকম টেস্ট করে হাতে স্যানিটাইজার ঢেলে তবে ভেতরে ঢোকার অনুমতি দিত । তাদের মুখোমুখি দাঁড়াই , কেউ কারো মুখ দেখতে পাই না , শুধু চোখের তারা দুটি নড়েচড়ে তাদের , আমার অস্বস্তি হয় , মনে হয় প্রবল গা ছমছমে ভৌতিক একটা পরিবেশে, অন্য কোন গ্রহে দাঁড়িয়ে আছি । ব্যাঙ্গালোরে তখন করোনা রুগীর সংখ্যা বাড়ছে ক্রমাগত । লাইনে দঁড়িয়ে কেউ হাঁচে কাশে, সবাই ছিটকে পরস্পরের থেকে দূরে যাবার চেষ্টা করে । করোনা রুগী ভর্তি আছে শুনে হাসপাতাল চত্বর খালি হতে হতে ওপিডি বন্ধ হয়ে যায়।
এর মধ্যে একদিন ধনলক্ষ্মী নামের তেলেগু মেয়েটি , আমাদের ফ্ল্যাটে যে গৃহকর্মে সহায়তা করে যায় , সে জানায় আঠারো নং টাওয়ার বন্ধ করে দিয়েছে , ওখানে নাকি কোন ভাইরাস রুগী আছে । সে ওখানেও কাজ করে , তাদের কাউকেই ঢুকতে দিচ্ছে না ।
দুদিনের মধ্যেই আমাদের এই বিশাল আবাসনের প্রায় সব টাওয়ারেই গৃহ সহায়িকা দের আসা বন্ধ হয় । সেই দুদিনের আগেই আমরা আলোচনা করে ধনলক্ষ্মীকে সবেতন ছুটি দিয়ে দিয়েছিলাম। প্রতিদিনের সকাল সন্ধ্যে গমগম করা বিশাল আবাসন চত্বর, হঠাৎ শুনশান হয়ে গেল একদিনে। ফ্ল্যাটের জানলা দিয়ে যে কুচো কাঁচার হইচই ছোটাছুটি দেখে মন ভালো হত, ম্যাজিকের মতো উবে গেল তারা।
এখানে , এই ব্যাঙ্গালোরে যখন এসব চলছে , আমার নিজের রাজ্য পশ্চিমবঙ্গে তখন ঝড়ের আগের শান্তি । তারপর এক সপ্তাহও কাটল না , আমলার ছেলে নামল কলকাতায় , ইউ কে থেকে তাকে আশ্রয় করে এল কোভিড ১৯ । বাকিটা ইতিহাস। সবার শিরদাঁড়ায় হিমশীতলতা ছড়িয়ে কেন, কোথায়, কিভাবে, কতজন সারাদিন এই নিয়ে ব্যস্ত মিডিয়া মরার আগেই আধমরা করে ফেলে মানুষকে। ক্রমশ শহর জেলা মহকুমা গ্রাম সব খান থেকে করোনা আক্রান্তের খবর আসে, মৃত্যুরও।
আমার টিভি দেখার অভ্যেস প্রায় নেই , শুধু ফেসবুকে বিশেষজ্ঞ দের মতামত পড়ি । দীর্ঘ সময় অসুস্থতার কারণে সব কিছুতে চরম উদাসীনতার পর করোনা আবার আমাকে ফেসবুক মুখী করে তোলে । আমার ঘুম এমনিতেই খুব কম , এখন প্রতি রাত প্রায় নির্ঘুম কাটে। যখন তখন ফেসবুকে উঁকি দিই , নতুন খবর খুঁজি, আশার খবর, পাই না। আমার নিজের দেশের স্বজন বন্ধুদের জন্যে উদ্বিগ্ন থাকার সঙ্গে সঙ্গে ইউরোপে বার কয়েক যাবার সুবাদে প্রাপ্ত ডাচ আর ইতালির বন্ধু দের জন্যে বুক কাঁপে । ইতালির প্রায় শ্মশান হয়ে যাওয়া ছবি দেখে জর্জিয়া এলিসা , খুব প্রিয় ফুটফুটে দুই ইতালীয় কন্যার জন্যে কান্না পায় , নেদারল্যান্ডসে দুহাজার পাঁচশ জনের মৃত্যু খবর জেনে আমার প্রিয় ডাচ বন্ধু আস্ট্রিড, ওডেটের জন্যে বুক মুচড়ে ওঠে , ফেস বুকে খুঁজি ওদের, পাই না। এইভাবে অদৃশ্য মারণঘাতী একটা ভাইরাস আমাদের মধ্যে সব দূরত্ব ঘুচিয়ে দিয়ে কবে যেন একটা পরিবারের মতো করে তুলল আমাদের।
নতুন চিকিৎসা শুরু হবার পর সুস্থ হয়ে ওঠার আশা এই পর্যায়ের আগেই থমকে গেছে । বাড়ির বাইরে বেরোনো বন্ধ, ফলে চিকিৎসাও বন্ধ মাঝপথে । কর্ণাটকে , মহারাষ্ট্রে রোজ রোজ করোনা আক্রান্তের সংখ্যা বাড়ছে শুনতে পাই । বেরোনোর উপায় নেই।
একুশ দিনের লক ডাউন ঘোষণার সঙ্গে সঙ্গেই আমার ছেলের অফিসেও ওয়ার্ক ফ্রম হোম চালু হয় । সে এখন বাড়িতে কাজ করে সারাদিন। ইউ কে থেকে সিনিয়র মিখাইলের সঙ্গে তার মিটিং হয় রোজ দুবার , প্রথাগত কাজের আলোচনার বাইরে শুনতে পাই লন্ডন আর ভারতবর্ষের সাম্প্রতিক অবস্থার কথাও বিনিময় হচ্ছে । গত গ্রীষ্মে লন্ডনে থাকাকালীন ক্যানরি হোয়ার্ফ নামের সুন্দর সাজানো শহরটিতে এইচ এস বি সির যে গ্লোবাল হেড কোয়ার্টারের সামনে রোজ বিকেল সাড়ে ছয়টায় গিয়ে দাঁড়াতাম আমি, ছেলের অফিস ছুটির অপেক্ষায়, আর ছেলে নেমে এলে যে রাস্তাটা দিয়ে দুজনে হেঁটে যেতাম টেমস নদীর পাড় ধরে , ওদের সিনিয়র মিখাইল আমাদের যে সুন্দর পথটা চিনিয়ে দিয়েছিল , অফিস পাড়ার যে রাস্তায় অজস্র মানুষের ভিড় থাকে সকাল থেকে রাত্রি অবধি, সব জনশূন্য। সমস্ত পাব রেস্তোরাঁ গুলোতে হাজার হাজার ব্যাংকার দের পার্টি চলত অফিস শেষে , ঝলমল করত চারদিক , সব নিস্তব্ধ এখন , কেউ কোথাও নেই । ল্যাপটপের স্ক্রিন জুড়ে মিখাইলের বিষণ্ণ মুখ ভেসে থাকে, চিনচিন করে বুকের ভেতর।
আমি একবার আমার নিজের মহকুমায় আক্রান্ত সিল করে দেওয়া গ্রামটির কথা জেনে মন খারাপ করে বসে থাকি, খোঁজ নিই বারবার, পরক্ষণেই খবর আসে ক্যালিফোর্নিয়ায় নিউ ইয়র্কে অসুস্থ স্বজনদের, আবার কলকাতায় চোখ রেখে করোনা মৃতের শেষকৃত্যের ভয়ানক পরিণতি দেখি, এইভাবে দেশ বিদেশ সব একাকার হয়ে যায় এই ক্রান্তিকালে। করোনা সবাইকে যেন এক সূত্রে বেঁধেছে। এখন প্রথম দ্বিতীয় তৃতীয় বিশ্বের মধ্যে কোনো পার্থক্য নেই , পুরো গ্রহটার সব মানুষ আতঙ্কের অন্ধকার ঘরে বন্দী করে ফেলেছে নিজেদের । ধনী দেশ গরীব দেশ , এসব আলাদা করে আর কিচ্ছু নেই , আমরা সবাই সেই তেনার করাল গ্রাসের শিকার । বরং ধনী দেশে আরো বেশি সংক্রামক , আরো মৃত্যু , হাহাকার আরো বেশি । এসময় দূষণ মুক্তির নীল আকাশ আর রাস্তায় হরিণের ঘুরে বেড়ানোর গল্পেও উৎসাহ পাই না। বরং রাগ হয়, পৃথিবীরও যে কিছু পরিচর্যা প্রয়োজন, এ কথা একবারও না ভেবে শুধু দূষণ বাড়িয়েই গেছি কেন! তাহলে তো আর নববর্ষের ঝলমলে দিনটা আজ এমন অন্ধকারে ডুবে যেত না।
বাইরের জগতের এই তোলপাড়ের মধ্যে বদ্ধ ঘরে ছোট ছোট সমস্যা মাথা চাড়া দেয়। ছেলের মুখ শুকনো, আমার প্রাণদায়ী নিত্য প্রয়োজনীয় ইঞ্জেকশনটি কোথাও মিলছে না এই লক ডাউনের চক্করে, অথচ একদিনও বন্ধ রাখার উপায় নেই, কি হবে! অবশেষে ভিডিও কনফারেন্সে ডাক্তার রুগীর দেখা সাক্ষাতের সুযোগ আসে। ব্যবস্থা হয় টেস্টের, ইঞ্জেকশনের। ব্যাঙ্গালোর শহরটা নিজেকে খুব কঠিন শৃঙ্খলায় বেঁধে ফেলেছে, আশ্বস্ত লাগে এই সংকট কালে। নিজের রাজ্যের কিছু নির্বোধ মানুষজনের অপরিণামদর্শী কাজকর্মের জন্যে বিপদ বাড়ছে, ভেবে শিরদাঁড়া বেয়ে ঠান্ডা ভয়ের স্রোত নেমে যায়।
লক ডাউন বাড়ল, কতদিনের জন্যে কেউই জানি না ঠিক৷ তবে সবই তো মানুষের ভালোর জন্যে, আমাদের বিপদমুক্ত রাখতে। কিছু অশুভবুদ্ধি সম্পন্ন মানুষ তো এর প্রকৃত অর্থই বুঝতে পারছে না বা চাইছে না। তারা কোন সাবধানবাণীর তোয়াক্কা না করে বাইরে ঘুরছে, জটলা করছে এখানে ওখানে, এটাই মারাত্মক আশঙ্কার। বুঝছে না যে এইভাবে চলতে থাকলে এ ভাইরাস আরো মানুষজনকে খাবে, আমাদের গৃহবন্দীত্বের মেয়াদও বাড়তে থাকবে।
কলকাতার কিছু ডাক্তার বন্ধু আত্মীয়দের সঙ্গে কথা হয়, তাঁরা রাগ ক্ষোভ উগরে দেন। আক্রান্তের সংখ্যা কম দেখানোর জন্যে নাকি টেস্ট হচ্ছে না ভালো করে। অনেক তথ্য চেপে দেওয়া হচ্ছে।
এরকম হতে পারে সত্যি! নীরদ চৌধুরীর আত্মঘাতী বাঙালী কি এই মহাসংকটের সময়ও জীবন নিয়ে এমন ছিনিমিনি খেলতে পারে!
জানি না, কিন্তু মানুষের ধৈর্য এর বাঁধে ফাটল ধরার আওয়াজ পাই।
শব্দহীন জনমানবহীন একটা অপ্রাকৃত জগতে বসে থাকতে থাকতে হিম হয়ে আসছে শরীর! তারপরেও কোথাও একটু আশা ঝিলিক দিয়ে যায় মাঝে মাঝে। কাজ বন্ধ, রোজগার নেই, খেতে না পাওয়া গৃহবন্দী অসহায় মানুষের পাশে যখন কিছু মানুষ হাতটা বাড়িয়ে দিচ্ছেন আশ্বাসের, হয়তো সে হাতের সংখ্যা প্রয়োজনের তুলনায় কমই, সামনে আরো দুর্দিন অপেক্ষায় আছে, তবু এই আলোর হাত গুলো ভরসা জোগায়। খুব মানসিক যন্ত্রণায়, চরম উৎকন্ঠার মধ্যেও হাতগুলো ছুঁয়ে থাকি মনে মনে। প্রত্যাশা করি এর সঙ্গে আমাদের আরো কিছু হাত যোগ হোক, তারপর আরো কিছু, যে যার সাধ্যমতো। তাহলেই নিজেরা বেঁচে ওঠার সঙ্গে সঙ্গে অন্যদেরও বাঁচিয়ে তুলব , সবাই মিলে ঠিক পেরিয়ে যাব অন্ধকার।
একদিন প্রবাস থেকে ফিরে দেখব, আমার বাগানের গাছপালাগুলো আরো সবুজ হয়েছে। আদরের চাঁপা গাছটা অজস্র ফুল ফুটিয়ে একা একাই সেজে উঠেছে।
যারা এতকাল নিজের জন্য ছাড়া অন্য কিছু চেয়েও দেখিনি , তারাও ভাবব বড্ড ভুল হয়ে গেছে, এবার আরো বড় করে ভাবতে হবে। একটা ভাইরাস আমাদের মৃত্যুর মুখোমুখি দাঁড় করিয়ে রেখে শিখিয়ে দিচ্ছে, আমরা এই বিশ্ব থেকে শুধু নিয়েছি, বিনিময়ে দিইনি কিছুই, ভাবিওনি যে এই গ্রহটা সুস্থ না থাকলে জাগতিক সব সঞ্চয় মূল্যহীন হয়ে যাবে। আমরা ভালো থাকতে চাইলে তারও কিছু শুশ্রূষার প্রয়োজন ৷ কি জানি, এই সময়কার গভীর অস্তিত্ব সংকট বাঁচিয়ে জীবনে ফিরতে পারলে এই শিক্ষা কাজে লাগাতে পারব কিনা!
মাঝরাতে আজ নেদারল্যান্ডস থেকে বহুদিন পরে মেসেজ এল আমার প্রিয় ডাচ বন্ধুটির। সেই স্বর্গীয় সৌন্দর্যের দেশ তছনছ করেও অজস্র মৃত্যু, গৃহবন্দী মানুষজন। তবু শূন্যপুরী আলো করে টিউলিপ নিজের নিয়মে ফুটতে শুরু করেছে পর্যটক শূন্য বিজন অপরূপ আমস্টারডামে। কি ইউরোপ, কি ভারতবর্ষ , বিশ্বের কোনখানি প্রকৃতি তার দানে কোন কার্পণ্য রাখেনি এই নিদারুণ সময়েও। কোথাও পলাশ কৃষ্ণচূড়া, কোথাও টিউলিপ, আরো কত কি! প্রতি বছরের মত এবারও একগোছা টিউলিপের সঙ্গে আমার বিদেশী বন্ধুর, আমার বোনের আশাভরা শুভেচ্ছাবার্তা এক ঝলক ভালো লাগার বাতাস আনে। মুহুর্তের জন্যে মনে হয় আর তো কটাদিন, তারপর সব বন্ধ দরজা হুড়মুড় করে খুলে যাবে, আমরা আবার ফিরে যাব আলো বাতাসের জগতে। সেই অলৌকিকের সঙ্গে দেখা হবার আগে শান্ত ভাবে বাড়িতেই আর একটু অপেক্ষা করি না সবাই!