দেবাশিস মুখোপাধ্যায়-এর এক গুচ্ছ কবিতা
অক্ষর লিপি
বিছানা শব্দ করে ৷ অনিদ্রা বাড়ে৷
জানালার আকাশ ছড়িয়ে ঠান্ডা চাঁদ। রূপালীর খোলস খোলে
খোলাখুলি দেখতে দেখতে খুলিরও লালা রাত্রির আগুন উসকে দেয়। লাল হয়ে ওঠে অঙ্গার।
গা একটি র গান গেয়ে ওঠে ।
ঠেক ঠেকিয়ে রাখতে পারে না
রং ৷ রংবাজ জানে কৌশল
শলাপরামর্শ তুলে রেখে দেখো
ঠোঁট কেটে ভোর ঢুকে গেছে
একটি প্রেমের কবিতা
চিরুনি আর কেশ বিন্যাস
সম্পর্ক তৈরী হচ্ছে আয়নায়
মুখ পাল্টে আরেক মুখ এসে
একটা নৌকায় বসে যাচ্ছে কথা
কাছাকাছি নদী আর জোয়ার ভাঁটা
ভূগোলে পড়া নয়
গোলেমালেই জমে পীরিত
বাতাসের ভাষায় ভাসা প্রবল টানে
টোল পড়লে বুঝতে পারি
অটল যা কিছু শ্লথ হয়ে যাচ্ছে
একটা লোভ লভের গল্পে এগিয়ে চলেছে
বিড়াল বিষয়ক নয়
গল্পটা বিড়ালের হলেও বিড়ালের নয়
হয়তো 'মাউস' নয় সুকুমার রায়
রুমালের গন্ধ আগুন উসকে দিলে
মর্জিনা হঠাৎ সাদা হয়ে কুঁকড়ে যেতে থাকে
আর ওমনি কামার্ত বিড়াল ডাকতেই
ইঁদুরটি মেয়ে কিনা আইনজীবী জানতে চায়
'মাউস' ক্লিক দিয়ে থমকে যায়
ক্লার্কের প্যান্টের ভিতর কেমন যেন সুড়সুড়ি
বাইরের অশথ্থ গাছ থেকে একটিই কাক
কিছুটা কর্কশ বাকীটা প্রতিবাদ মুখর
কিন্তু মার্জার মাছের অমার্জিত শরীর অনুসন্ধানে
গবেষকের চোখ নিয়ে সেই পাখির চোখ
সরিয়ে ফেলতে চাইলেও অ্যালুমনির পাত্র আছড়ে
জল গড়িয়ে অনেক অনেক দূর
রক্তদাগ সবটুকু সাফ হলে বিচারকের কিছু করার থাকে না
পরাবাস্তব
বিষন্ন রেখা পেরনোর পর একটা ভাঙা মাটির কলসী
কুকুরের পেচ্ছাপ আর একটি মৃত
পাতা সযত্নে রেখেছে
রাস্তাটি এখন শূন্য সংখ্যা নিয়ে খেলা করলেও
বেশ বুঝতে পারি কিছুক্ষণ এখানে
রাজকুমারী ছিল
ঠাকুরমার ঝুলি তাকে আটকে রাখতে পারে নি
শহর দেখার বায়নায় সে ডাস্টবিনে ছুঁড়ে দিয়েছিল রূপোর কাঠি
আর সঙ্গে সঙ্গে সূর্যের গায়ে পড়া স্বভাব
এইসব রোমান্টিক ছবি দেখার দর্শকও কমে গেছে হঠাৎই
নিষিদ্ধ শব্দটি বেশ আকর্ষণীয়
টান মারে এমন
লক্ষ্মণ গন্ডি ভেঙে
একান্ত নির্জনে কষ্টের কাঁটাগাছগুলি রঙিন থেকে আবার
সাদাকালো
এই নিদাঘ বেলায়
সামুদ্রিক লিপি
নারী। ঝিনুক। নতভঙ্গিমায়
স্পর্শ করছে লবণাক্ত জল
লম্ব। বৃত্ত। জ্যামিতিক প্রতিচ্ছবি
ঝাউয়ের পাতায় রোদের ফলন
নাম না বললেও বুঝে নেয় । সমুদ্র।
মুদ্রাদোষ। বেরোতে দেয় না কিছুতেই
ইন্দ্রিয়। দশ। ক্রমশ বিজয় পতাকা হাতে
বালুর শঙ্খ কুড়িয়ে ফুঃ দিলে
লেখার কালিতে ঢেউ আর ঢেউ
ভুবন বাড়ি ৫
রূপের দরজা । তালা বন্ধ। চাবি শ্রীরূপের কাছে । শ্রীরূপে মিশলেই মিলে যাবে হদিস
স্নান । সারতে হবে । আপাদমস্তক। আহা মুক্তি। আগুনে আগুন বোধ । নেই। সব খোলা
খোল বোল তুলছে । কাঁহা কাঁহা । প্রেম উথলাচ্ছে । ভেঙে পড়েছে ভিতর বাহির মহল
হ্লাদিনী + বীজ =চৈতন্য । বোঝা বড় দায় ।
কুয়াশা কাটলেই । অংক খোলসা । রোদে জলে মণি
মণিময় দেবাশিস । সরাতে সরাতে মায়া । আলোর কারিগরের কাছে পায় আলোলিকা
নতুন কবিতা ১
সকাল একটা ঝরণা পরে নেয়
একটানা স্নান বাড়ি ভরাবার পর
কুয়াশার গুহা খুলে বেরিয়ে আসে সূর্য
তে রাত্তির উপবাসের পর ক্ষিদে এলে
প্রিয়ার বাড়ি ওলোটপালোট
সমস্ত যন্ত্রণা ইন্দ্রজাল জড়িয়ে উধাও
একটা কবিতার মলম ঢাকনা খুলে দিলে উপশম
একটি রূপকথা মাত্র কিভাবে যে ছড়িয়ে গেল
বাড়ি বসে বসেই লিখে ফেলা হলো
এই সব গল্পে ফুল ফুটেছে শব্দের
উৎসব
নিরানন্দ থেকে পাওয়ার উৎসবে ।
বেশ লাভ হয় আর চাওয়ায় থাকে
না । নাচ দুই হাত তুলে মুক্ত করে
বন্ধন আর সে আত্মারাম
মদালসা দোলা দিতে দিতে গাইছে
ত্বমসি নিরঞ্জন । নষ্টবুদ্ধি থেকে
চলেছি নিষ্পাপ আত্মায় । মায়ের
সন্তান মা ই হাত ধরে চেনাচ্ছে আয়না
নারদের বীণা বাজছে ব্রহ্মলোক থেকে মর্তলোকে । কেটে যাচ্ছে
গেরো । নকল আচার বিচার পেরিয়ে
অনুরাগ সংগীতে গোপীরা খেলছে
ঝুলন প্রাণবল্লভের সাথে
থেমে থাকছে না এ রাগের দোলা রূপ থেকে অরূপের পথে
নীলবর্ণ ছুরি
জ্যোৎস্নার গায়ে বোরোলিনের গন্ধ
রাত্রি একটা ভালো লাগা নিয়ে
গান গায় ছাদে
টুপ করে পাতা নামে কবিতার
আইশোলেশন শব্দ মুছে স্মৃতির ভীড়
ভিড়ে যাচ্ছে নৌকা জঙ্গলের কিনারে
সেলাই হবে না এসব কিছুই
অর্ধেক অন্ধকার যখন
রাক্ষুসীর গল্প শোনায়
আরেক অন্ধ লেখে একটি আকার
যা আছে তা চেনা নয়
চোখের হাসির উপর
খিল দিতে নেমে আসছে
নীলবর্ণ ছুরি
ক্ষয় লিপি
এয়োতি মেঘ । ঘোমটা খুলছে আর পরছে । ছম ছম । পায়েল পায় ।
পাওয়া বলতে হলুদ ফুল মাড়িয়ে জল নিচ্ছে কলস ।
লসাগু গসাগুর অংক । কষা নেই পাতায় । মাংস । সবে গায়ে হলুদে ।
দেবতারাও বুঝে নিচ্ছে দেবমহিমার হালে পাণি নেই ।
নেই হয়ে যাচ্ছি । তুমি আমি সুমিতেশ । শরিক হওয়া হচ্ছে না । জীবনবোটে ।
বটগাছ হারিয়ে গেলে ছায়ার অভাব আর বাসাডানার ।
নাড়া দেওয়া যাচ্ছে না । দেয়ালের হেলানো সাইকেলে । বহুকাল । জং ।
জঙ্গল শুনলেই লাফিয়ে ওঠে চোখ আর কখন তোমার ভেতর বুনো ।
নোঙর খুলে বেরোনোর কথা বলে কে কবে আর সমুদ্র জাগাবে .....