Mohool Potrika
Login Here  Login::Register
গুপ্তিপাড়ার রথযাত্রা ।। শৌভিক বন্দ্যোপাধ্যায়

rath66

গুপ্তিপাড়ার রথযাত্রা ।। শৌভিক বন্দ্যোপাধ্যায়

উষ্ণতা এবং ভক্তির একটি প্রাচীন ঐতিহ্য, ভারতের পশ্চিমবঙ্গ রাজ্যের হুগলি জেলার গুপ্তিপাড়ার রথযাত্রা ২৫০ বছরেরও বেশি সময় ধরে এই অঞ্চলের একটি গুরুত্বপূর্ণ উৎসব। গুপ্তিপাড়া পশ্চিমবঙ্গের হুগলী জেলার একটি প্রাচীন জনপদ। এই জায়গাটি চুঁচুড়া সদর মহকুমার বলাগড় ব্লকে অবস্থিত। গুপ্তিপাড়ার পাশ দিয়ে বয়ে গেছে ভাগীরথী নদী। আষাঢ় মাসের শুক্লা দ্বিতীয়া তিথিতে গুপ্তিপাড়ার রথযাত্রা উৎসব পালিত হয়
স্থানীয় গ্রামীণ লোকরা এই উৎসবে অংশগ্রহণের জন্য গৌরবময় বিশ্বাস ও ভক্তির সাথে এখানে জড়ো হয়। এই রথযাত্রা ভারতের ওড়িশায় পুরীর পর দ্বিতীয় বৃহত্তম দূরত্ব অতিক্রম করবে বলে জানা গেছে। ঐতিহ্যের একটি সাধারণ কাজ যা এখন দুই শতাব্দীরও বেশি সময় ধরে পরিচালিত হচ্ছে, এই রথ উৎসব যেখানে জগন্নাথ, বলরাম এবং সুভদ্রার দেবতা (হিন্দু দেবতা শ্রীকৃষ্ণ, তাঁর ভাই বলরাম এবং বোন সুভদ্রার অবতার) দেখার মতো। উৎসব যেখানে তিন দেবতা তাদের মাসির বাড়িতে রথে যাত্রা করছেন বলে বলা হয় যেখানে তারা ৬ রাত অবস্থান করে এবং সপ্তম দিনে একই রথে তাদের প্রত্যাবর্তন যাত্রা শুরু করে। ১৬ শতকের মাঝামাঝি বৃন্দাবনচন্দ্রের একটি বিস্ময়কর প্রাচীন পোড়ামাটির মন্দিরে যে সমস্ত দেবতাদের সারা বছর উপাসনা করা হয়, তাদের ধর্মীয় উপাসনা এবং ভক্তিমূলক গানের পরে তাদের পরিবর্তনগুলি থেকে বের করে এই ঐশ্বরিক যাত্রার জন্য রথে স্থাপন করা হয়। একটি স্থানীয় মেলার উৎসব যা এই অনুষ্ঠানের চারপাশে জড়ো হয় তা একটি সপ্তাহব্যাপী ব্যাপার এবং সরলতায় খুবই অনন্য। স্থানীয় গ্রামবাসীরা এই উৎসবের সময় মন্দিরের চারপাশে ঘোরাঘুরি করার সময় প্রভুর গৌরবে গান করে এবং নাচ করে। গানগুলি "কীর্তন" নামে পরিচিত এবং এটি একটি ঐশ্বরিক পরিবেশ তৈরি করে। স্থানীয় লোকেরা মনে করে যে যাত্রার সময় রথের দড়ি স্পর্শ করা অত্যন্ত শুভ এবং তাই উৎসবের সময় সকল বয়সী মানুষের সমাগম পাওয়া যায়।

 rath61

সকালে বৃন্দাবনচন্দ্র ও জগন্নাথ, বলরাম, সুভদ্রার বিশেষ পূজা সম্পন্ন হয়। তারপর ভোগ। ভোগের পর বাদ্যভান্ড সহকারে প্রথমে সুভদ্রা, তারপর বলরাম ও শেষে জগন্নাথদেবকে তিনবার রথ প্রদক্ষিণ করিয়ে রথে তোলা হয়। গুপ্তিপাড়ার রথ বাংলার সর্ববৃহৎ কাঠের রথ। তবে এখনকার রথ যেটা দেখা যায় সেটা প্রাচীন রথ নয়। সম্ভবত আগে রথ ছিল তেরো চূড়ার। ১৮৭৩ খ্রিস্টাব্দ নাগাদ উল্টোরথের দিন রথের তলায় ৭ জন যাত্রী মারা যায়। ১৮৭৮ সালে রথ তৈরি হয় আকারে আয়তনে অনেক ছোট করা হয়। তারপর ১৯৫৮ খ্রিস্টাব্দ নাগাদ সেটি ন-চূড়া করা হয়। তারপর ১৯৫৭ সালে বন্যায় ক্ষতি হওয়ার ফলে ১৯৫৮ সালে আবার রথ তৈরি হয় মঠের আঠাশতম দন্ডিস্বামী খগেন্দ্রনাথ আশ্রমের আমলে। সেই রথ চলে ২০১২ সাল পর্যন্ত। কিন্তু ১৯৭৮ আর ২০০০ সালের বন্যার ফলে ২৫.০৪.২০১৩ তে নতুন করে রথ নির্মাণ শুরু হয় সেই রথ এখনও গুপ্তিপাড়ার বুকে গড়িয়ে চলে। রথের সঙ্গে থাকে কাঠের পুতুল। এই পুতুল মাধ্যম দিয়ে তখনকার সমাজের একটা ছবি আজও অটুট হয়ে আছে রথের গায়ে।

rath62

রথে ঠাকুর ওঠার পরে ঘোড়া লাগানো একটা অভিনব দৃশ্য। কাঠের তৈরি একটি সাদা আর একটি নীল ঘোড়াকে এনে লাগানো হয় রথের ওপরে। রথে তিন দেবতার উদ্দেশ্য করে থাকে রথের তিন রশি। তার মধ্যে একটি রশি থাকে মহিলাদের জন্য। তারপর রথে চলে একপ্রস্ত পূজা অর্চনা, প্রথম টান সেটি দুপুর ১২.০০ টায়। আবার কিছুক্ষণ বিরতির পর শুরু হয় দ্বিতীয় টান বিকেল ৪.০০ টের সময়। গুপ্তিপাড়া রথ সবচেয়ে বেশি পথ অতিক্রম করে এবং রথ , উত্তর, দক্ষিণ, পূর্ব, পশ্চিম টান হয়।

rath63

নানা মতভেদ থাকলেও ১৭৪০ সালে এই রথ উত্‍সব শুরু করেন মধুসুদানন্দ। ভান্ডার লুট গুপ্তিপাড়ার রথের এক অনন্য বৈশিষ্ট্য। পুরীর রথের সঙ্গে গুপ্তিপাড়ার রথের পার্থক্য এই যে পুরীর রথকে জগন্নাথ দেবের রথ বলে। আর গুপ্তিপাড়ার রথ বৃন্দাবন জীউর। গুপ্তিপাড়ার রথের বৈশিষ্ট্য, উল্টো রথের আগের দিন এখানে ভান্ডার লুট হয়।
অন্য জায়গার মতো এই দিন জগন্নাথদেব তার মাসির বাড়িতে সকল মানুষের অন্তরালে বন্ধ ঘরে থাকেন। এই দিন জগন্নাথদেবকে নিবেদন করা হয় নিরামিষ ভোগ। জগন্নাথের মাসির বাড়িতে ৫২টি লোভনীয় পদে প্রায় ৪০ কুইন্টাল খাবারের 'ভাণ্ডার লুট' পালন হয়। যা ভারতের আর কোথাও হয় না।

rath64

কথিত আছে লক্ষ্মীর সঙ্গে মনকষাকষি করে জগন্নাথ মাসীবাড়িতে থাকার সময় রকমারী ভালোখাবার পেয়ে মাসী বাড়িতেই থেকে যান। লক্ষ্মী ঠাকুর জানতে পেরে লুকিয়ে মাসী বাড়িতে সর্ষে পোড়া ছড়িয়ে আসেন। কিন্তু তাতেও কাজ না হওয়াতে বৃন্দাবন ও কৃষ্ণচন্দ্র লোকজন নিয়ে মাসীবাড়িতে প্রবেশ করে তিনটি দরজা দেখতে পান এবং সেই দরজা ভেঙে ভেতরে ঢুকে নানাবিধ খাবার দেখতে পান এবং তা লুট করেন। যা ভান্ডার লুট নামে পরিচিত। আবার আর এক অংশের দাবী বৃন্দাবন চন্দ্র রাজ্যের শক্তিমান চিহ্নিত করার জন্য এই প্রথা চালু করেন। যারা বেশি সংখ্যায় লুট করবে রাজা তাদের মন্দির পাহারার দায়িত্বে নিয়োগ করতেন৷

rath65

তবে প্রথা চালুর কারণ নিয়ে দ্বিমত থাকলেও প্রাচীন সেই রীতি মেনে এখনও প্রতিবছর উল্টোরথের আগের দিন মাসির বাড়ির মন্দিরের তিনটি দরজা একসঙ্গে খেলা হয়। ঘরের ভিতর রকমারি খাবারের পদ মালসায় করে সাজানো থাকে। দরজা খেলার পর এই প্রসাদ নেওয়ার জন্য মানুষের মধ্যে হুড়োহুড়ি শুরু হয়ে যায়।
ভান্ডার লুটের জন্য গোবিন্দভোগ চালের খিচুড়ি, বেগুন ভাজা, কুমড়ো ভাজা, ছানার রসা, পায়েস, ক্ষীর, ফ্রায়েড রাইস, মালপোয়া, সন্দেশ, ও রাবড়ি সহ মোট ৫২টি পদে খাবার সহ প্রায় ৫৫০ টি মালসা তৈরি করা হয়। প্রতিটি মালসায় প্রায় ৫ থেকে ৮ কেজি করে খাবার থাকে। ঐতিহ্য আর পরম্পরার টানে হাজার হাজার মানুষ আজও ভিড় করেন গুপ্তিপাড়ায়।

 

 

মহুল ওয়েব প্রকাশিত বিভিন্ন সংখ্যা



করোনা Diary



আমাদের কথা

আমাদের শরীরে লেপটে আছে আদিগন্ত কবিতা কলঙ্ক । অনেকটা প্রেমের মতো । কাঁপতে কাঁপতে একদিন সে প্রেরণা হয়ে যায়। রহস্যময় আমাদের অক্ষর ঐতিহ্য। নির্মাণেই তার মুক্তি। আত্মার স্বাদ...

কিছুই তো নয় ওহে, মাঝে মাঝে লালমাটি...মাঝে মাঝে নিয়নের আলো স্তম্ভিত করে রাখে আখরের আয়োজনগুলি । এদের যেকোনও নামে ডাকা যেতে পারে । আজ না হয় ডাকলে মহুল...মহুল...

ছাপা আর ওয়েবের মাঝে ক্লিক বসে আছে। আঙুলে ছোঁয়াও তুমি কবিতার ঘ্রাণ...