iswarchandra vidyasagar

Mohool Potrika
Login Here  Login::Register

logo corona

বন্ধ তালার ভিতর ।। লক্ষ্মীকান্ত মণ্ডল

 

তালাবন্ধ। আপাতত দিনক্ষণ ঠিক হয়েছে  একটা তারিখ পর্যন্ত ।  কিন্তু তারপর ?  খুলে যাবে কি - মুক্ত হবে কি একটা অধিক জনসংখ্যার দেশ স্বাভাবিক গতি -আবার স্বাভাবিক হবে কি ছটপটে ঘিঞ্জি একটা দেশ  -  যার নাম ভারত ।   আশঙ্কা থেকেই যাচ্ছে । তবে খুলবে   -  সেই আসায় এখন চুপচাপ ঘরবন্দী শতকরা সত্তর শতাংশ মানুষ ।  স্রেফ চুপচাপ । আতঙ্ক আর আশঙ্কা ।  এই দুমাস আগে যারা মন্দিরে মসজিদে গির্জায় প্রার্থনা জানাতো,  হত্যে দিত  , তারা এখন কোন দেবতার কাছেই যাচ্ছেন না । বুঝে গেছেন সকলে - দেবতা রক্ষা করতে পারেন না আর - তালা খোলা তো দূরের কথা ,  যখন একটা ভাইরাস কুরেকুরে খাচ্ছে মানুষের ফুসফুস , কুরে খাচ্ছে মানুষের নিশ্বাস তখন দেবতাদের কিচ্ছু করার থাকে না । তারাও বন্দী তালার ভেতর  । নিজের রক্ষার জন্য নিজের চেষ্টাই শ্রেষ্ঠ পথ । অবশ্য যদি  রক্ষা করার মানসিকতা থাকে । কেননা   মানুষই মানুষকে রক্ষা করতে পারে । একটা সভ্যতাকে মানুষই ধ্বংসের মুখ থেকে বাঁচতে পারে , তাই মানুষই সভ্যতার প্রতীক । 
 
তবে ? এই তবে থেকেই বুঝতে পারছি এটা কেবল বাহ্যিক । গালভরা সুত্রের মতো । প্রয়োগ করবে কে ? পরিস্থিতি এমনই  মানুষকে রক্ষা করার মানসিকতাও রাজনৈতিক। একটা ভাইরাস আমাদের  দাঁড় করিয়ে দিয়েছে আরও কত ভাইরাসের মুখোমুখি ।  ১. দারিদ্র্য  ২. শিক্ষার প্রতি বিরূপ মানসিকতা  ৩. অনুন্নত স্বাস্থ্য পরিসেবা  ৪. প্রশাসকের গাফিলতি। 
এছাড়াও আরও কত ভাইরাস জেগে ওঠছে এই সময় । আমাদের এখন যা প্রয়োজন তা হল পরীক্ষা করা , পরীক্ষায় বসা । তা আর হচ্ছে কই ?  ন' কোটি মানুষের বাস এই পশ্চিম বঙ্গে  - প্রতিদিন টেস্ট হচ্ছে মাত্র সীমিত সংখ্যক । সরকার বলছেন পরিসেবা নেই । সরকার স্বীকার করছেন নাকি লুকোতে চাইছেন ?  সে কারনে বুঝতে পারছি না কার সংক্রমণ আছে । আমার পাশের মানুষটি সংক্রমিত নয় তো - কিংবা আমি । যে কারনে আমি মৃত্যুর দিকে ঠেলে দিতে আমার পরিবারকে,  আমার প্রতিবেশি  পাড়া কে,  আমার গ্রামকে । তার দায় অবশ্যই প্রশাসনকে দিতে পারি   - একক হিসেবে আমিও ,  কেন না আমিও তো এই বিপন্নতার অংশীদার । 
 
কী আশ্চর্য দেখুন -আমরা একজনও চাইছি না আক্রমণের আশঙ্কা  দীর্ঘস্থায়ী হোক - সকলেই চাইছি দ্রুত নিরাময় - আবার মুক্ত হাওয়া,  মুক্ত আলো - সরকার থেকে শুরু করে সাধারণ মানুষ । প্রশাসক থেকে নিম্নবিত্ত । বাধাটা কোথায় ? 
 
কিন্তু পারছি কই?  এই যে বাকি তিরিশ শতাংশ ? তারা বলে বেড়াচ্ছে  - দূউউর আমাদের এখানে ওসব ভাইরাস টাইরাস আসবে না ।  তারা এখনও আড্ডা মারছে বেঞ্চি তৈরি করে ।  সেখানে বসে বিড়ি টানছে  - আর পাড়ার পিসি দিদি বৌদিদের সাথে মস্করা করছে ।  যদিওবা হঠাৎ করে সিভিএফ টহল মারতে আসে - তবে নিমেষেই হাওয়া । তারপর যথারীতি একই ।  এ রকম আরও কত ছবি । বেশ আছে  - বিনে পয়সার  রেশন, ধনজন যোজনার পাঁচ'শ টাকা আর উজালার গ্যাস নিয়ে । রেশন  তোলার জন্য ভিড় জমাচ্ছে আর সেই ফাঁকে ডিলারেরা চুরি করে চলছে সেই রেশনের চাল। শোকজ হচ্ছেন বিভাগীয় পদস্থ প্রতিনিধি । কিন্তু সবই প্রহসন । কে বেশি ঠিক? কে বেশি সংবেদনশীল ? কে বেশি নৈতিক ?  এমনকি কার বেশি দুঃখ ?  এসবের ভবিষ্যৎ কী ?  ওই নিয়ে আলাপ আলোচনা আর স্মার্ট ফোনের যতসব মিমিক্রি বুঝতেই পারছে না সংক্রমণ বাড়লে  কি ভয়ঙ্কর পরিনাম হতে পারে । 
 
তারপর আছে লঘু গুরু । কে আর কাকে পাত্তা দেয় ।  ভোট আছে - গনতন্ত্রের নামে প্রকট হচ্ছে সুবিধাবাদ । 
 
এত সবের মাঝেও সরকার চাইছেন সংক্রমণ ওভারকাম করতে । কী রাজ্য সরকার কী কেন্দ্র সরকার ।  প্রশাসক হাতে লাঠির বদলে তুলে নিয়েছেন গান । সচেতনতার জন্য গান গাইছেন তারা ।  আমাদের নিরাময় দিতে চান । লড়াই করছি আমরাও । এ লড়াই ঘরে বসে থাকার লড়াই । এ লড়াই আমাদের কাছে তৃতীয় বিশ্বযুদ্ধ । শত্রু কে আমরা জানি না ।  তার হাতিয়ারও অদৃশ্য । তবু লড়াইয়ে জিততে চাই । জিততে চাই সামজিক দূরত্ব বজায় রেখেই । 
 
আমি দেখতে পাচ্ছি  অতীতের সেই সাদা কালো ছবি  - মন্বন্তরের ছবি ;  মা রূগ্ন সন্তানের মুখে তুলে দিচ্ছে শুকনো স্তন । তাতে ছিটেফোঁটাও রস নেই - সন্তানের ক্ষুধার্ত কান্না নিয়েই শূন্যে এনামেল বাটি তুলে ধরেছে হাড় সর্বস্ব মা । আসতে চলছে কি সেই সময় ?  তার সাথে দেখছি ক্রমশ  অসহিষ্ণুতা  আর অসন্তোষ । হবে নাই বা কেন ? মতপার্থক্য, মূল্যবোধে'র পার্থক্য, সব থেকে বড় কথা ব্যক্তি বিশেষের  পার্থক্য ।  এর মাঝেই বাড়ছে ক্ষুধার পরিধি । চলছে  অর্থহীন তুলনার মাপকাঠি ৷ 
 
এখনও নিজেরা ভাত আর সব্জি খাই । বেঁচে থাকলে হয়তো কিছুদিন পরে শুধু ভাতই পাব।  খেতে খেতে  বারুই পাড়ার বুড়িটার কথা বলি  - যে দু বেলা মুড়ি খেয়েছে গত তিন দিন । শুকনো মুড়ি । জল ঢালে নি  - যদি নেতিয়ে কমে যায় মুড়ি !  তার করোনার ভয় নেই,  আছে পেট খালি হওয়ার আতঙ্ক । 
তবুও প্রতিদিন রাতে শোয়ার আগে এই ভেবে ঘুম আসে যে - আগামী কাল ভোরেই পেয়ে যাব ভাইরাস মুক্তির প্রতিষেধক । সমস্বরে গেয়ে উঠব - আমরাই পেরেছি , জয করছি সমস্ত ভাইরাসের সংক্রমণ । আবারও প্রমাণ হয়ে যাবে  - মানুষ পারে না এমন কিছুই নেই ।

একক কবিতা সন্ধ্যা



মহুল ওয়েব প্রকাশিত বিভিন্ন সংখ্যা



করোনা Diary



আমাদের কথা

আমাদের শরীরে লেপটে আছে আদিগন্ত কবিতা কলঙ্ক । অনেকটা প্রেমের মতো । কাঁপতে কাঁপতে একদিন সে প্রেরণা হয়ে যায়। রহস্যময় আমাদের অক্ষর ঐতিহ্য। নির্মাণেই তার মুক্তি। আত্মার স্বাদ...

কিছুই তো নয় ওহে, মাঝে মাঝে লালমাটি...মাঝে মাঝে নিয়নের আলো স্তম্ভিত করে রাখে আখরের আয়োজনগুলি । এদের যেকোনও নামে ডাকা যেতে পারে । আজ না হয় ডাকলে মহুল...মহুল...

ছাপা আর ওয়েবের মাঝে ক্লিক বসে আছে। আঙুলে ছোঁয়াও তুমি কবিতার ঘ্রাণ...