একক কবিতা সন্ধ্যা ।। শুভদীপ আইচ

IMG 20230414 WA0052

 শুভদীপ আইচ-এর এক গুচ্ছ কবিতা 
 
 
 
পর্দা
 
প্রভাব রাখছে লম্বা ব্যাঙ
পায়ের আড়াল থেকে তুমি উঁকি মেরে যাচ্ছ
ঘোলা জলের আদরে জুম লেগে আছে
যদিও এসব ক্যামেরার কারসাজি
ঝিমঝিম দুপুর
রাংতা মোড়ানো ধোঁয়ার বন্দিশ
আলগোছে তুলে রাখি তাকে
অগ্রসর হও , পাতলা হও আগের মতো
ওজন বাক্স থেকে ধর্মের কাঁটা নড়ে ওঠার আগে
শান্ত শীতল এক আস্ফালন হোক
স্লো -মোশানে নায়ক গড়িয়ে পড়ুক নায়িকার ছাদে
 
 
যাত্রাপথ আর শুয়ে থাকা সাপের গল্প 
 
এখানে খোলস ছাড়ার কথা যদিও বলা হয়নি
তবে সাত নম্বর পাতার তৃতীয় অনুচ্ছেদে
বিষের কথা বলা আছে
আমরা যারা জিভ কাটছি অথবা চটুল আঙ্গুল কাটছি চৌকাঠে দাড়িয়ে
তাদের থোতা মুখ ভোতা করে দিতে এগিয়ে আসছেন জাদুকর ম্যানড্রেক
তাঁর সেই কালো টুপির আড়ালে লুকিয়ে রাখা হাজারো সত্য
এখনো আমাকে ভীষণ তাড়িয়ে বেড়ায়
এমনকি তাঁর কথা পর্যন্ত মনে পড়ে
যাকে ভাবতে গিয়ে  সাদা সাদা গুঁড়ো স্বপ্নের কথা ভেবে ফেলেছি
বেশ কিছু উপসর্গ কিছুদিন যাবৎ আমায় তাড়িয়ে বেড়াচ্ছে
আলোর খোঁজে বেরোলেও আসলে রোজকার হাটে - বাজারে বোরোলিন বিক্রি করি
তাই কাটা-ছেড়ার কাজে আমাকে বিশ্বস্ত বলে ভাবতে পারো
ভাবতে পারো আলোর বিপরীতে একটা গোটা সর্ষে ক্ষেত
অথবা অন্ধকারের বিপরীতে দাড়িয়ে থাকা সামান্য ইতিহাস
 
 
অশরীরী 
 
আমাকে বিচার করছ সময় ধরে
অথচ সময়ের কাছে আমরা কমবেশি সকলেই
হেরে বসে আছি
ঝুলে আছি ডালে যেন কোন আশ্চর্য ভূত
বিতাড়িত হয়েও আবার ফিরে আসতে চাইছি
ভগ্নপ্রায় অট্টালিকায়
দূরে বাদুড় উড়ে যায় আর তার ডানা ঝাপটানোর শব্দ
যেন ইতিহাসের মোচড়, আড়মোড়া ভাঙছে সদর দরজায়
এখানে আলো নিভে গেছে রাজবাতির আর
ঘোড়ার ক্ষুরের শব্দে চিরে যাচ্ছে নির্জন পথ
জাকজমক আর মিথ হতে চাওয়া প্রধান ফটক
এখনো বেঁচে আছে কারো ফেরার অপেক্ষায়
আড়ালের ফিসফাস আর মাকড়সার লালা নিয়ে
ঝুল কালি মেখে থাকা আনাচ কানাচ
পথ চেয়ে বসে আছে যেভাবে
ঘোড়ার ক্ষুরের কাছেবসে থাকে ফড়িং
অথবা বকের পাল খুঁটে খায়
বলদের গা থেকে পোকামাকড়
চাষের অজুহাতে যাকে ইচ্ছেমতো মারা যায়
যেভাবে খোদাই করে লেখা হয় প্রশস্তি
রাজার জৌলুস ফলাও করতে গিয়ে
প্রজার দুর্দশা চাপা পড়ে যায়
তেমনই দুর্যোগের রাতে আমি ফিরতে চাই নিজের লেখায়
যেভাবে কথা দিয়ে গেছে বলে
মৃত্যুর পরেও ফিরে আসতে হয় 
 
 
 
পার্বণ 
 
পাতার ভেপু বানিয়ে দুঃখ বিক্রী করি
বেলা ওঠে, বাড়ে ও ফুলে ওঠে
সকালও শুকিয়ে যায় একটা সময়
আমাদের ধারণা ও ধরণ মেঘ হয়ে আসে
ভেসে বেড়ায় ব্যক্তিগত আকাশে
কখনো বা অন্যেরও
বৃষ্টি খুজে মাতোয়ারা আমি অ্যাসিড চেখে ফেলি
গুটি মেরে শুয়ে থাকি যেভাবে কেন্নো
ঘুমের মতো সরু হয়ে আসি
চোটের মতো টুকরো
কে কবে ব্যথা জেনেছিল
মেরে ফেলেছিল বাঁচার আশায়
সব আহ্লাদ স্বাদ হয়ে নেমে এলে
গুছিয়ে রাখি হাড়ি ও কড়াই
রান্না জমে ওঠে নিজস্ব নিয়মে
 
 
 
নিরাকার 
 
অনুবাদ লিখতে চাইছি
আর শব্দ হারিয়ে ফেলছে ঠোঁট
এখানে আদল অনেকটা অবিকল চেহারা
আর চেহারা অনেকটাই আপছা
যেন গলি থেকে হারিয়ে যাচ্ছে কোন ছায়া
এসব আদল বানানো বা মূর্তি মূর্তি খেলা
কাঠামোর কাছে লুকিয়ে রাখছে হতাশা
আমরা যারা হেলানো মিনার দেখে
এড়িয়ে গেছি ইতিহাসের পাতা
তাদের মাথার ভেতরেও একটা আকার বাসা বাঁধছে
আসলে ছায়ার সাথে ছায়ার যুদ্ধ
আদলের সাথে আদলের
যে চেহারার কথা তোমরা লিখছ
যাকে দেখলে তোমরা ভয়ে কাঁটা
সে আদতে তোমারই অবচেতন
তোমারই আদলে গড়া অসম্পূর্ণ অবয়ব
যাকে তোমরা আত্মা বলে ভয় পেয়েছ
 
 
পাপ 
 
খুব কঠিন এই পিছলে যাওয়া
দ্রাবকের পরিমাণ যতটা গাঢ় হলে তুমিও শ্রাবণ
তার কাছাকাছি এই পর্যবেক্ষণ
এখানে উঠোন চড়ে , বাতি নামে নিজস্ব নামে
ঝুপ শব্দে দুপুর আর কলা বাগানের মাঝে
আত্মহত্যা প্রবণ শেয়াল
নিজের মেজাজে খুঁটে খাচ্ছে পুরোনো চেহারা
আদতে এডিট বলে কিছু নেই
গোটা গল্পের নামে কুড়িয়ে আনা সামান্য বাগান
যার ফুল , ফল ও চারাদের
নেশা খেতে দেখেছি ভূষণ্ডির মাঠে
 
 
চক্র  
 
যখন তখন ঘুরিয়ে দিতে পারি এমন একটা মোড়ের মাথায় দাড়িয়ে আছি
বাতপতাকা ওড়ে , ডেকে ওঠে নিজস্ব মোরগ
সাজানো হাওয়ার ভেতর যে কেউ পাল্টি খেতে পারে
বলা তো যায় না , কখন কিভাবে মাথা ঘুরে যেতে পারে
তাই আলোয় ফেরো, বদলে ঘুরিয়ে খাও প্রিয় অন্ধকার
গোমড়া মুখে রাস্তা পার হবার সময় তুমিও চড়ুই
যে হারিয়ে যাবে কাল যন্ত্রের দাপটে
টোপ গিলবে সধবা মাছেদের মতো
গোলাপ বাগান থেকে ফেরার পথে খুঁজে পাবে হাড় ও শিকড়
সে সবই শাপ, জন্মের অভ্যাসে যাকে তোমরা নিয়তি বলে ভেবেছ
 
 
মরণ 
 
আর প্রয়োজন নেই এভাবে ব্যথার ঝলক
ঘুঙুর ও বদলে নিচ্ছে পছন্দের পা
আলো সারারাত সাঁতার কাটে আর ঘোড়া ডিঙিয়ে ঘাস ফুরিয়ে যায় পুরোনো স্বভাবে
যাঁদের ধোঁয়া থেকে সরিয়ে রেখেছ শ্বাস
মাড়িয়ে এসেছ একমাত্র ফসল
তাঁদের ঘোলাটে চোখের চাহনি
তোমাকেও চমকে দিতে পারে
মৌতাত যতই প্রিয় হোক তার রূপ ও গন্ধে
কম অথবা বেশি আমরা প্রত্যেকেই অপরাধী
বিষয়ের ফুঁটো ছেড়ে এখন বরং পাল্টে ফেলো মন ও মনন
বলা তো যায় না কখন ও কিভাবে নিজের ছায়াটুকুও গলে যেতে পারে 
 
 
বৈতরণী 
 
ঘেরাটোপ টপকে এখন আমাদের বিকল্প আস্তাবল
এযাবৎ যাঁরা আলো ফেলেছিল তাঁদের মধ্যেকার চোরা চালান কারী এখন শিবির বদলেছে
ফেরার কথা ছিল অথচ এখনো ফেরেনি
এমন প্রাণীর সংখ্যা বেড়েই চলেছে রোজ
ভাবছি আর ভাবতে ভাবতে
আলো কুড়িয়ে চলেছি
গভীর হচ্ছে রাতের ভূমিকা
নেশার গরম থেকে যেটুকু শান্তি
তার সমস্ত সুযোগের ভেতর
লুকিয়ে রাখা আছে দিনের হিসেব
রসিকের ঠেকের মতো হে নদের জীবন
উদ্বাহু হয়ে তুমিও তো ভিক্ষুক
অমৃতের লোভে পার করে চলেছ মাংসের নদী 
 
 
টোপ 
 
যোগ আদতে দুটি বিয়োগের কর্মফল
আমাদের আততায়ী কমলার বাগানে
ঝুলে আছে নিজস্ব ঘেরাটোপ নিয়ে
সমূহ সম্ভাবনার ভেতর আলো এসে পড়লে
যে সব তরুণ রোদ পাঁপড়ি মেলে আকাশে
সুপ্ত কোটরের গর্ভে তাদেরও আলুথালু ভার
গোলাপ বাগান আর ঝড়ের কুসুম ফেলে রেখে
মানুষের জ্বালার বিপরীতে এক ঝাঁক ঢেউ
হেলে পড়তে পারে
এমন একটা সুযোগ খাবি খাচ্ছে 

মহুল ওয়েব প্রকাশিত বিভিন্ন সংখ্যা



করোনা Diary



আমাদের কথা

আমাদের শরীরে লেপটে আছে আদিগন্ত কবিতা কলঙ্ক । অনেকটা প্রেমের মতো । কাঁপতে কাঁপতে একদিন সে প্রেরণা হয়ে যায়। রহস্যময় আমাদের অক্ষর ঐতিহ্য। নির্মাণেই তার মুক্তি। আত্মার স্বাদ...

কিছুই তো নয় ওহে, মাঝে মাঝে লালমাটি...মাঝে মাঝে নিয়নের আলো স্তম্ভিত করে রাখে আখরের আয়োজনগুলি । এদের যেকোনও নামে ডাকা যেতে পারে । আজ না হয় ডাকলে মহুল...মহুল...

ছাপা আর ওয়েবের মাঝে ক্লিক বসে আছে। আঙুলে ছোঁয়াও তুমি কবিতার ঘ্রাণ...